টকশোতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উসকানি দেওয়া হচ্ছে -প্রধান বিচারপতি

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১১ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম

টকশোতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উসকানি দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা বুঝে বা না বুঝে আন্দোলন করতেই পারেন। তাদের মনে ক্ষোভ থাকতেই পারে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের বোঝানো যাদের দায়িত্ব উনারা তা পালন করতে পারছেন না।

গতকাল বুধবার মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল চেয়ে করা আবেদনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, টকশোতে যারা কথা বলছেন তাদের কথা শুনে মনে হয় তাদের চেয়ে জ্ঞানীগুণী আর কেউ নেই। আমরা যারা বিচারকের আসনে আছি তারা কিছুই জানি না।

প্রধান বিচারপতি বলেন, শিক্ষার্থীরা যেভাবে আন্দোলন করছে সেটা অ্যাপ্রিশিয়েট করা যায় না। হাইকোর্ট একটা রায় দিয়েছেন। সেই রায় সঠিক হয়েছে কি না, সেটা দেখার জন্য আপিল বিভাগ রয়েছে। আপিল বিভাগ তো হাইকোর্টের রায় বাতিল বা সংশোধন করতে পারেন। আবার বহালও রাখতে পারেন। শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্য আদালতে তুলে ধরতে পারেন। এটাই তো যথাযথ ফোরাম। তিনি বলেন, আমরা আগেও বলেছি আন্দোলন করে রায় পরিবর্তন হয় না। রায় পরিবর্তন আদালতই করতে পারেন।

এ সময় প্রধান বিচারপতি যে দুই শিক্ষার্থী আপিল বিভাগে আবেদন নিয়ে এসেছেন তাদের এবং আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হককে ধন্যবাদ জানান। এরপর আপিল বিভাগ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে ফিরে যেতে বলেন। একই সঙ্গে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কোনো বক্তব্য থাকলে তা লিখিত আকারে আদালতে জমা দিতে বলেছেন আদালত।
শুনানির পর সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করতে বলেন আদালত।
এই আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী।
এর আগে, গত ৪ জুলাই সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

সেদিন আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের ‘স্টে’ আপিলের ওপর শুনানি করেননি, ‘নট টুডে’ বলে আদেশ দেন। আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষকে বলেন, আপাতত হাইকোর্টের রায় যেভাবে আছে, সেভাবে থাকুক। রায় প্রকাশিত হলে আপনারা ‘লিভ টু আপিল’ দায়ের করুন। আমরা শুনব।

গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন এই আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত।

সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছিলেন, সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে নাকি বাতিল হবে এ বিষয়ে আপিল বিভাগই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত বিসিএসসহ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা নেই। শতভাগ মেধাভিত্তিক নিয়োগ চালু আছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) এর প্রকৃত শিক্ষা ও আদর্শে আমাদের কাজ করতে হবে-মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী

আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) এর প্রকৃত শিক্ষা ও আদর্শে আমাদের কাজ করতে হবে-মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী

আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) এর প্রকৃত শিক্ষা ও আদর্শে আমাদের কাজ করতে হবে-মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী

আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) এর প্রকৃত শিক্ষা ও আদর্শে আমাদের কাজ করতে হবে-মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী

১৪৬ কোটি টাকায় ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার

১৪৬ কোটি টাকায় ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার

নির্মাতা ও অভিনেতাসহ ব্যাচেলর পয়েন্ট’র ৬ জনকে লিগ্যাল নোটিশ

নির্মাতা ও অভিনেতাসহ ব্যাচেলর পয়েন্ট’র ৬ জনকে লিগ্যাল নোটিশ

এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী

এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী

ইসলামী ব্যাংকের মুদারাবা হজ্জ ও ওমরাহ সেভিংস স্কিম: সঞ্চয়ে স্বপ্নপূরণ

ইসলামী ব্যাংকের মুদারাবা হজ্জ ও ওমরাহ সেভিংস স্কিম: সঞ্চয়ে স্বপ্নপূরণ

ল’ রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে দেশবাসী আইন অঙ্গন সম্পর্কে জানতে পারে: অ্যাটর্নি জেনারেল

ল’ রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে দেশবাসী আইন অঙ্গন সম্পর্কে জানতে পারে: অ্যাটর্নি জেনারেল

নরসিংদীতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে  বিএনপি নেতা বহিষ্কার

নরসিংদীতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে  বিএনপি নেতা বহিষ্কার

মানিকগঞ্জে প্রতিপক্ষের হামলায় মানববন্ধন পণ্ড

মানিকগঞ্জে প্রতিপক্ষের হামলায় মানববন্ধন পণ্ড

আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আইসিসির

আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আইসিসির

ফেনীর মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১২০ সেন্টিমিটার ওপরে, এবারও বন্যার আশংকা

ফেনীর মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১২০ সেন্টিমিটার ওপরে, এবারও বন্যার আশংকা

মুল্ডারের ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়ে দ. আফ্রিকার নতুন রেকর্ড

মুল্ডারের ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়ে দ. আফ্রিকার নতুন রেকর্ড

সিলেটের জকিগঞ্জে পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধ, ধারালো অস্ত্রের কোপে প্রাণ গেল যুবকের

সিলেটের জকিগঞ্জে পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধ, ধারালো অস্ত্রের কোপে প্রাণ গেল যুবকের

কুড়িগ্রামে ভরা বর্ষাকালে খরা, সময় মতো হালচাষ করতে না পাড়ায় দুশ্চিন্তায় আমন চাষিরা

কুড়িগ্রামে ভরা বর্ষাকালে খরা, সময় মতো হালচাষ করতে না পাড়ায় দুশ্চিন্তায় আমন চাষিরা

চাঁদপুরে কাচ্চির নামে প্রতারণা, অভিযানে জরিমানা

চাঁদপুরে কাচ্চির নামে প্রতারণা, অভিযানে জরিমানা

মনিরামপুরে বাস চাপায় একজন নিহত

মনিরামপুরে বাস চাপায় একজন নিহত

মতলবের আলোচিত জুয়েল হত্যা মামলায় পাঁচ আসামির ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন

মতলবের আলোচিত জুয়েল হত্যা মামলায় পাঁচ আসামির ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন

অর্জিত বিজয়কে অর্থবহ করতে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে হবে: সেলিম উদ্দিন

অর্জিত বিজয়কে অর্থবহ করতে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে হবে: সেলিম উদ্দিন

সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করতে হবে: সাবেক এমপি মাহমুদুল হক রুবেল

সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করতে হবে: সাবেক এমপি মাহমুদুল হক রুবেল

মৃত্যু ও ধ্বংসের মধ্যেও ট্রাম্পের বাস্তুচ্যুতি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান গাজাবাসীর

মৃত্যু ও ধ্বংসের মধ্যেও ট্রাম্পের বাস্তুচ্যুতি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান গাজাবাসীর