হাটের নামে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি, বাসাবাড়ির গেটে জোরপূর্বক বসানো হয় দোকানের চৌকি-ভ্যানগাড়ি

হাটের কারণে নাগরিক দুর্ভোগ

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০৫ এএম


রাজধানীর মেরাদিয়ায় আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে হাট বসিয়ে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি চলছে। প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা উঠানো হয় বলে এমন অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। অবৈধভাবে হাট বসানোর কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতি বুধবার মেরাদিয়ায় হাট বসিয়ে সুবিধাভোগীমহল লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি করে থাকে। বাড়ির মালিকদের অনুমতি ছাড়া বাড়ির গেটে এবং সামনে দোকানের চৌকি বসানো হয়। ভ্যানগাড়ি বসানো হয় বাসা-বাড়ির সামনে ও রাস্তা দখল করে সাজানো হয় নানা পণ্যের পসরা। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। বাসার সামনে দোকান বসানোতে বাধা দিলে হাটের লোকজন বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়, গালিগালাজ করে, অনেক সময় বাসার দারোয়ান বা কেয়ারটেকারদের মারধর করে এমন অভিযোগও রয়েছে ভুক্তভোগীদের।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাপ্তাহিক এই হাটের কারণে জরুরি প্রয়োজনে গাড়ি বা যানবাহন বাসা থেকে বের করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কেউ অসুস্থ হলে রোগীর গাড়ি বের করা অথবা অ্যাম্বুলেন্স ডাকলে তা বাড়ির কাছে আনা সম্ভব হয় না। হাটের দিন হাটের লোকজন বাসার গেটের সামনে দোকান বসিয়ে অনেক সময় বাসা থেকে গাড়ি বের করতে দেয় না। হাটের পরিত্যক্ত ময়লা, পলিথিন, প্লাস্টিক ইত্যাদি বর্জ্য রাস্তা ও বাসাবাড়ির সামনে যত্রতত্র ছড়ানো থাকে যা পরিষ্কার করার কেউ থাকে না। সরকারি কোন দফতর ওই ময়লা পরিস্কারের দায়িত্ব নেয় না। হাটবারের দিন এলাকায় চুরি, ছিনতাই বেড়ে যায়। বাসাবাড়িতে বাড়িতে চুরি হয়। হাটে পকেটমার, মোবাইল চুরি, মেয়েদের গলার চেইন কানেরদুল চুরি-ছিনতাই হয়। নেশাখোরদের আনাগোনা বেড়ে যায়। এতে এলাকার বাসিন্দাগণ নিরাপত্তাহীনতায় দিনতিপাত করেন। হাটে কোন গণশৌচাগার না থাকায় যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করে পরিবেশ দূষিত করে তুলেছে। সাপ্তাহিক হাটের কারণে রামপূরা-বনশ্রী-ডেমরা লিংক রোডে ভয়াবহ যানজট দেখা দেয়। সড়কে চলাচল করা গাড়িগুলো প্রবেশ করে এলাকার বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি করে।

স্থানীয়রা আরো জানান, স্থানীয় একটি চক্র দক্ষিণ বনশ্রী এইচ ও জে ব্লক এভিনিউ রোড, এম ব্লক মেইন রোড, এইচ ব্লকের ৪ নম্বর সড়েকের কিছু অংশে হাট বসায়। হাট বসানোর কারণে রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এতে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন। বুধবারের সাপ্তাহিট হাট ছাড়াও মেরাদিয়া বাজার থেকে আড়ং পর্যন্ত (জে-ব্লক ও এম-ব্লক এভিনিউ রোড) প্রতিদিন শতশত রিকশাভ্যানের উপর অস্থায়ী বাজার বসানো হয়। এতে এলাকার পরিবেশ ও সৌন্দর্য নষ্ট হয়। বর্তমানে এই সড়ক রোডে স্কুল, ব্যাংক, সুপারশপ, বিভিন্ন স্বনামধন্য দেশি ব্র্যান্ডের বিভিন্ন পণ্যের দোকান, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল, ডিআইজি টুরিস্ট পুলিশ ও পিবিআই (মেট্রো দক্ষিণ) এর কার্যালয় রয়েছে। হাট ও বাজারের কারণে একটি আবাসিক এলাকা ধীরে ধীরে ময়লার ভাগাড়ে পরিনত হচ্ছে।
অত্র এলাকায় স্কুল, ইন্সটিটিউট ও নার্সিং কলেজসহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় তিন হাজার ছাত্র-ছাত্রী প্রতিদিন মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় যাতায়াত করে। প্রতি বুধবার হাটের দিন ভোর হতে হাটের দোকানদারদের চৌকি ও দোকান বসানোর কারণে সকাল হতেই অত্র এলাকায় স্বাভাবিক চলাচল বিঘিœত হয়। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা হাটের দিন ভিড়ের মধ্যে চলাচল করতে গিয়ে রিকশা এবং অন্যান্য বাহনের সাথে ধাক্কা লেগে আহত হওয়ার মত ঘটনাও রয়েছে। এছাড়া কয়েকটি হাসপাতাল রয়েছে এসব হাসপাতালের রোগীদেরও যাতায়াতে সমস্যা সৃষ্টি হয়।

মেরাদিয়া এলাকার এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই এলাকায় একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল রয়েছে। আবাসিক এলাকার মধ্যেই হাট বসানো কারণে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। প্রভাবশালী মহলের প্রভাবে এই হাট বসানো হয় বলে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, এই হাট নিয়ে এখনোতো কেউ কোনো মমলা বা অভিযোগ করেনি। এলাকায় হাট থাকায় এলাকার লোকজনেরই উপকার হয়। স্থানীয় লোকজনই এই হাটে আসেন। দূর থেকেতো আর লোকজন আসেন না।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রে পরিষেবা বন্ধ, আইনি নিষেধাজ্ঞার প্রভাব

টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রে পরিষেবা বন্ধ, আইনি নিষেধাজ্ঞার প্রভাব

ইউল্যাবের হাল্ট প্রাইজ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ

ইউল্যাবের হাল্ট প্রাইজ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ

স্পিকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছিলেন হাসিনা : দ্য হিন্দু

স্পিকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছিলেন হাসিনা : দ্য হিন্দু

আওয়ামী দুঃশাসনের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়: রিজভী আহমেদ

আওয়ামী দুঃশাসনের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়: রিজভী আহমেদ

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি, আ.লীগের জয়জয়কার

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি, আ.লীগের জয়জয়কার

নাম পাল্টিয়েও শেষ রক্ষা হলো না সাইফের আততায়ীর

নাম পাল্টিয়েও শেষ রক্ষা হলো না সাইফের আততায়ীর

থানায় বসে ঘুষ গ্রহণ: সেই এসআই প্রত্যাহার

থানায় বসে ঘুষ গ্রহণ: সেই এসআই প্রত্যাহার

জেলেদের দিক নির্ণয়ের জন্য বরগুনায় লাইট হাউজ স্থাপন

জেলেদের দিক নির্ণয়ের জন্য বরগুনায় লাইট হাউজ স্থাপন

ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের অভিষেকের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ

ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের অভিষেকের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ

বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা বর্ণনার বাইরে

বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা বর্ণনার বাইরে

বেনাপোলে ৩০ হাজার মার্কিন ডলারসহ ৪০ লাখ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ

বেনাপোলে ৩০ হাজার মার্কিন ডলারসহ ৪০ লাখ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ

গাজায় যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ ‘অস্থায়ী’: নেতানিয়াহু

গাজায় যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ ‘অস্থায়ী’: নেতানিয়াহু

রক্তে প্লাবিত শরীর, সিংহের মতো তৈমুরের হাত ধরে হাসপাতালে সাইফ

রক্তে প্লাবিত শরীর, সিংহের মতো তৈমুরের হাত ধরে হাসপাতালে সাইফ

বড়লেখায় যুবদল নেতাকে হত্যা

বড়লেখায় যুবদল নেতাকে হত্যা

মার্কিন বিমানবাহী জাহাজে হামলার দাবি হুথির

মার্কিন বিমানবাহী জাহাজে হামলার দাবি হুথির

সীমান্তের কাঁটাতার: কীসের, কেন আর কবে থেকে এই বেড়া?

সীমান্তের কাঁটাতার: কীসের, কেন আর কবে থেকে এই বেড়া?

জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে শীতার্ত মানুষের পাশে স্বেচ্ছাসেবক দল

জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে শীতার্ত মানুষের পাশে স্বেচ্ছাসেবক দল

নোয়াখালীর চৌমুহনীতে পাওনা টাকার দ্বন্দ্বে কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

নোয়াখালীর চৌমুহনীতে পাওনা টাকার দ্বন্দ্বে কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

ঘরে ফেরার আশায় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা

ঘরে ফেরার আশায় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা

জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতা যুদ্ধে মা-বোনদের খুন ও সম্ভ্রমহানির সাথে জড়িত ছিল: হাফিজ ইব্রাহিম

জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতা যুদ্ধে মা-বোনদের খুন ও সম্ভ্রমহানির সাথে জড়িত ছিল: হাফিজ ইব্রাহিম