বিল দিলেও চুলা জ্বলে না
১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০৫ এএম
রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় বছরের বড় একটি সময় গ্যাসের চাপ থাকে না। সম্প্রতি এ সমস্যা আরও বেড়েছে। দিনের বড় একটি সময় রাজধানীর বাসা-বাড়িতে গ্যাস থাকছে না। এ সমস্যাটা সকাল থেকে সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত থাকে। গভীর রাতে গ্যাসের চাপ একটু স্বাভাবিক থাকলেও অন্য সময় একেবারেই নেই। ফলে প্রতিদিনই রান্না করার জন্য রিতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে পড়েছেন ঢাকার গৃহিনীরা। এ ভোগান্তি আর কত দিন জানে না নগরবাসী।
বিইআরসির ঘোষণা অনুযায়ী, বর্তমানে ৩৫ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৩ হাজার ৯৮৫ টাকা ও ৪৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৫ হাজার ১২৪ টাকা। ২৫ কেজি সিলিন্ডার ২ হাজার ৮৪৭ টাকা ও ৩০ কেজি সিলিন্ডার ৩ হাজার ৪১৬ টাকা। পাইপলাইনে গ্যাস না থাকায় যেমন ভোগান্তিতে পড়ছে হোটেলগুলো,তেমনি সিলিন্ডারের ব্যবহারও বাড়িয়ে তুলছে খরচ।
পেট্রোবাংলার তথ্য মতে, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে দেশীয় উৎপাদন ও এলএনজি থেকে আসে মোট ৩০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রেমালে কক্সবাজারের মহেশখালীতে অবস্থিত সামিট গ্রুপের মালিকানাধীন এলএনজি টার্মিনালটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে মঙ্গলবার রাতে এক দুর্ঘটনায় আনোয়ারা-ফৌজদারহাট পাইপলাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে করে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ আরও কমে গেছে। সবমিলিয়ে এখন দৈনিক গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২৫ কোটি ঘনফুটে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে কার্যক্রমে ফিরতে পারে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পাইপলাইন মেরামতে ইতোমধ্যে কাজ করছে গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। তবে তা মেরামতে আরও তিনদিন সময় লাগবে। অর্থাৎ সবমিলিয়ে সপ্তাহের আগে পরিস্থিতি উন্নয়নের তেমন সম্ভাবনা নেই।
বর্তমানে বাসা-বাড়িতে পাইপলাইনের গ্যাসের একটি চুলা ব্যবহারের খরচ ৯৯০ টাকা ও দুইটি চুলা ব্যবহারের খরচ ১ হাজার ৮০ টাকা। চুলায় গ্যাস থাকুক বা না থাকুক, প্রতিমাসেই বিল পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু পাইপলাইনে প্রায় সময় গ্যাস না থাকার ফলে বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার, যা বাড়িয়ে দিচ্ছে খরচ।
ভোক্তাপর্যায়ে প্রতিমাসে এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। চলতি মাসে ১২ কেজি এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৬৬ টাকা। বছরজুড়ে পণ্যটির দাম এর আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে। যদিও গ্রাহকদের কাছ থেকে গড়ে ১৫০০ টাকা করেই নেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। বাসাবাড়িতে সবচেয়ে বেশি ১২ কেজি সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার করা হয়। ফলে সিলিন্ডারের দাম ও পাইপলাইন গ্যাসের বিল মিলিয়ে হিসেবের অঙ্কটা থাকে আড়াই হাজার টাকার কাছাকাছি।
গ্রাহকরা বলছেন, এমনিতেই বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়তি। সেই তুলনায় আয় রোজগার বাড়েনি। মাসের শুরুতেই বেতনের টাকা শেষ হয়ে যায়। এ অবস্থায় লাইনের গ্যাস রেখে সিলিন্ডার ব্যবহার করায় বাড়তি চাপ পড়ছে পাইপলাইনের গ্যাসের সরবরাহ ঠিক থাকলে সিলিন্ডারের বাড়তি খরচের বোঝা টানতে হতো না তাদের।
গ্যাসের এই সঙ্কটের ফলে বিপাকে পড়েছেন হোটেল-রেস্তোঁরার ব্যবসায়ীরাও। অনেক হোটেলেই পাইপলাইন গ্যাসের সংযোগ আছে, আবার অনেক হোটেলেই নেই। তবে এখন সবারই ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে সিলিন্ডার গ্যাস।
গ্যাস সঙ্কটের এই সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে ঘুরে দেখা যায়, রান্নাবান্নার কাজে অধিকাংশ হোটেল ব্যবহার করছে সিলিন্ডার গ্যাস। কেউ কেউ অবশ্য কাঠের চুলাও ব্যবহার করছেন। তবে স্বল্প সময়ে রান্নার ক্ষেত্রে সিলিন্ডার গ্যাসই প্রাধান্য পাচ্ছে।
টিকাটুলী এলাকার গৃহিনী নাজমুন নাহার বলেন, দিনের যে সময় চুলায় গ্যাসের দরকার পড়ে সে সময়েই গ্যাস থাকে না। সকাল ও দুপুরের খাবার রান্না করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। রাতের দিকে একটু গ্যাস আসে। তাই দিয়ে কোনোমতে রান্না করে নিই। কিন্তু এভাবে কয়দিন চলবে সেটাই ভাবছি।
আরেক বাসিন্দা বলেন, প্রতিদিনই অফিস যাওয়ার আগে পরিবারের জন্য খাবার তৈরি করেন তিনি। কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে খাবার রান্না করতে তাকে বেগ পোহাতে হচ্ছে। সাধারণত সকালে অফিস যাওয়ার আগে সকাল ও দুপুরের খাবার এক সঙ্গে তৈরি করে যাই। কিন্তু এখন চুলায় একেবারেই গ্যাস থাকছে না। ফলে রান্না করতে খুব সমস্যা হচ্ছে। এমনও হয়েছে যে বাইরে থেকে খাবার কিনে আনতে হয়েছে।
মানিকনগরের বাসিন্দা শিল্পী বলেন, প্রতিমাসে গ্যাসের বিল দিতে হয়, কিন্তু গ্যাস থাকে না। দিনের যে সময়টায় আমাদের গ্যাস দরকার তখনই পাওয়া যায় না। না খেয়ে তো আর থাকা যাবে না, তাই বাধ্য হয়ে সিলিন্ডার কিনে রান্না করছি।
এক হোটেলের ম্যানেজার বলেন, আমাদের হোটেলে পাইপলাইনের গ্যাস আছে। কিন্তু সবসময় তাতে গ্যাস থাকে না। তাই সিলিন্ডার গ্যাসও ব্যবহার করতে হয়। এতে আমাদের খরচ বেড়ে যায়।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন এন্ড মাইনস) মো. কামরুজ্জামান খান বলেন, গ্যাস সরবরাহ কিছুটা কমে গেছে। এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরবরাহ বন্ধ আছে। এছাড়া পাইপলাইনেও একটা দুর্ঘটনা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রাজনীতির মধ্যে ঢুকতে চায় না ইসি, ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু সোমবার
টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রে পরিষেবা বন্ধ, আইনি নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
ইউল্যাবের হাল্ট প্রাইজ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ
স্পিকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছিলেন হাসিনা : দ্য হিন্দু
আওয়ামী দুঃশাসনের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়: রিজভী আহমেদ
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি, আ.লীগের জয়জয়কার
নাম পাল্টিয়েও শেষ রক্ষা হলো না সাইফের আততায়ীর
থানায় বসে ঘুষ গ্রহণ: সেই এসআই প্রত্যাহার
জেলেদের দিক নির্ণয়ের জন্য বরগুনায় লাইট হাউজ স্থাপন
ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের অভিষেকের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ
বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা বর্ণনার বাইরে
বেনাপোলে ৩০ হাজার মার্কিন ডলারসহ ৪০ লাখ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ
গাজায় যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ ‘অস্থায়ী’: নেতানিয়াহু
রক্তে প্লাবিত শরীর, সিংহের মতো তৈমুরের হাত ধরে হাসপাতালে সাইফ
বড়লেখায় যুবদল নেতাকে হত্যা
মার্কিন বিমানবাহী জাহাজে হামলার দাবি হুথির
সীমান্তের কাঁটাতার: কীসের, কেন আর কবে থেকে এই বেড়া?
জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে শীতার্ত মানুষের পাশে স্বেচ্ছাসেবক দল
নোয়াখালীর চৌমুহনীতে পাওনা টাকার দ্বন্দ্বে কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
ঘরে ফেরার আশায় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা