পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার জটের শঙ্কা
১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০৫ এএম
ক্লাস ছেড়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখন আন্দোলনে। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা ‘প্রত্যয়’ স্কিম থেকে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার এবং স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন ও প্রতিশ্রুত সুপারগ্রেডে অন্তর্ভুক্তির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। এতে করে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোর বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। আন্দোলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর কবে নাগাদ এই আন্দোলন শেষ হবে তার সঠিক নিশ্চয়তাও দিতে পারছেন না শিক্ষকরা। ফলে সেমিস্টার জটে পড়তে যাচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
গত ২০ মার্চ অর্থ বিভাগ ‘প্রত্যয়’ স্কিম চালুর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী গত ১ জুলাই থেকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা ‘প্রত্যয়’ স্কিমে স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যেসব শিক্ষকরা ১ জুলাই থেকে নিয়োগ পাবেন তারা এই স্কিমের অন্তর্ভুক্ত হবেন। তবে বিদ্যমান শিক্ষকরা এর আওতার বাইরেই থাকবেন। আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলছেন ‘প্রত্যয়’ স্কিমের ফলে মেধাবীরা আর শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহী হবেন না। আর তাই সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ‘প্রত্যয়’ স্কিম থেকে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার, স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন ও প্রতিশ্রুত সুপারগ্রেডে অন্তর্ভুক্তির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
সর্বজনিন এই পেনশন স্কিম গত ১ জুলাই থেকে চালু হলে ওইদিন থেকেই ক্লাস, পরীক্ষা এবং সব দাফতরিক কাজ বন্ধ করে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে কী হচ্ছে না হচ্ছে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তো বন্ধ হয়ে গেছে, এতে যারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন তাদের ঘুম তো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। যদি তা না হয় তাহলে সমস্যা। দেশে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই তো থাকে না। সরকারের সিদ্ধান্ত কী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দেওয়া? এখানে মন্ত্রণালয় দায়িত্ব এড়াতে পারে না। আমাদের দাবি তারা মানবেন না, মানার সামর্থ নেই সেটা অন্য বিষয়। তারা বসবেন না, আলাপ করবেন না, পরিস্থিতি দেখবেন না, তার মানে বিশ্ববিদ্যালগুলোর প্রতি তাদের দায়িত্ব নেই তাই বোঝাচ্ছে।’
পরীক্ষা বন্ধ, ক্লাস হচ্ছে না, সেমিস্টার তো জট হবেই, শিক্ষার্থীদের কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে আছে, অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনও ভূমিকা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কার, ভবনগুলো কার? দুই-একটা দিন অপেক্ষা করতে হবে। আন্দোলন দুই সপ্তাহ হয়ে যাচ্ছে, এরপর আমাদের আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে হবে। তারপরও হয়তো দেখবো কর্তৃপক্ষ কেউ নেই।’
আন্দোলন প্রসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু বলেন, ‘আমরা তো ভালোভাবেই চালাচ্ছিলাম। আমরাও শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেছি। আগামীতে ঢাকায় একটি বৈঠক আছে। শিগগিরই হয়তো একটা সমাধান হয়ে যাবে।’
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা ‘প্রত্যয়’ স্কিমে স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক। গত ১ জুলাই থেকে সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা এ কর্মসূচির মাধ্যমে এর জোর বিরোধিতা শুরু করেন। ঘোষিত আন্দোলন-কর্মসূচির গতকাল ছিল ১১ দিন।
এই পরিস্থিতিতে ফেরারেশনের নেতারা বলছেন, কোনও সমাধান না হলে কঠোর আন্দোলন-কর্মসূচিতে যাবেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যেসব সরকারি কর্মচারী রাজস্ব খাত থেকে বেতন পান, তাদের টাকা জমা হয় জিপিএফে। আর যারা রাজস্ব খাতের বাইরে থেকে বেতন পান, তাদের টাকা জমা হয় সিপিএফে। অবসরে যাওয়ার পর তারা এই টাকা পেয়ে থাকেন।
অর্থ বিভাগের তথ্যমতে, বিদ্যমান সিপিএফ ব্যবস্থায় কর্মচারী দেয় মূল বেতনের ১০ শতাংশ এবং প্রতিষ্ঠান দেয় মূল বেতনের ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ‘প্রত্যয়’ স্কিমে প্রতিষ্ঠান দেবে মূল বেতনের সমান অর্থাৎ ১০ শতাংশ। বিদ্যমান সিপিএফ–ব্যবস্থা থেকে তা ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।
কিন্তু এই স্কিম থেকে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার, স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন ও প্রতিশ্রুত সুপারগ্রেডে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে সর্বাত্মক আন্দোলনে যান দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ক্লাস-পরীক্ষার পাশাপাশি প্রশাসনিক ও দাফতরিক কাজ, সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামসহ সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলা বিভাগের অষ্টম সেমিস্টারের একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও সব পরীক্ষা এখন বন্ধ। আরবি বিভাগের অষ্টম সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল গত ২ জুলাই থেকে। গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়ার কথা আন্দোলন শেষ হলে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত হবে। কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডার পঞ্চম সেমিস্টারের পরীক্ষা গত ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। আন্দোলন কর্মসূচির কারণে সব বন্ধ হয়ে গেছে। একইভাবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সেমিস্টার পরীক্ষা নির্ধারিত সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। ফলে চরম ভোগান্তির শিকার শিক্ষার্থীরা। সেমিস্টার জটের মুখোমুখি তারা। ভবিষ্যতে সেশনজটের আশঙ্কাও করছেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রাজনীতির মধ্যে ঢুকতে চায় না ইসি, ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু সোমবার
টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রে পরিষেবা বন্ধ, আইনি নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
ইউল্যাবের হাল্ট প্রাইজ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ
স্পিকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছিলেন হাসিনা : দ্য হিন্দু
আওয়ামী দুঃশাসনের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়: রিজভী আহমেদ
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি, আ.লীগের জয়জয়কার
নাম পাল্টিয়েও শেষ রক্ষা হলো না সাইফের আততায়ীর
থানায় বসে ঘুষ গ্রহণ: সেই এসআই প্রত্যাহার
জেলেদের দিক নির্ণয়ের জন্য বরগুনায় লাইট হাউজ স্থাপন
ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের অভিষেকের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ
বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা বর্ণনার বাইরে
বেনাপোলে ৩০ হাজার মার্কিন ডলারসহ ৪০ লাখ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ
গাজায় যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ ‘অস্থায়ী’: নেতানিয়াহু
রক্তে প্লাবিত শরীর, সিংহের মতো তৈমুরের হাত ধরে হাসপাতালে সাইফ
বড়লেখায় যুবদল নেতাকে হত্যা
মার্কিন বিমানবাহী জাহাজে হামলার দাবি হুথির
সীমান্তের কাঁটাতার: কীসের, কেন আর কবে থেকে এই বেড়া?
জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে শীতার্ত মানুষের পাশে স্বেচ্ছাসেবক দল
নোয়াখালীর চৌমুহনীতে পাওনা টাকার দ্বন্দ্বে কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
ঘরে ফেরার আশায় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা