রাজধানীতে থৈ থৈ পানিতে চরম জনদুর্ভোগ
১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০৫ এএম
আজব শহর এই ঢাকা এখন পরিণত হয়েছে দুর্ভোগের নগরীতে। নানা দুর্ভোগে অতিষ্ঠ হয়ে এই শহরে বসবাস করছেন প্রায় আড়াই কোটি লোক। এই শহরের নাগরিক সমস্যার যেন অন্ত নেই। অপরিকল্পিত রাস্তা খোঁড়াখুড়ি, গ্যাস সঙ্কট, পানিবদ্ধতাসহ অনেক নাগরিক ভোগান্তি সহ্য করে বসবাস করতে হচ্ছে এই নগরীতে। গতকাল শুক্রবারের কয়েকঘণ্টা বৃষ্টির পানিতে থৈ থৈ অবস্থার সৃষ্টি হয় পুরো ঢাকায়। ডুবে যায় ঢাকার অধিকাংশ এলাকার রাস্তা-ঘাট।
ভোর থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি হয় রাজধানী ঢাকায়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় অনেকেই বাসায় ছিলেন। কিন্তু এদিনও যাদের অফিস থাকে কিংবা জরুরি কাজে বাইরে যেতে হয়, তাদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বিশেষ করে শ্রমিক, দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও চিকিৎসা নিতে হাসপাতালগামীদের বেশ বিপাকেই পড়তে হয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে জবুথবু হয়েই গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে অনেককেই। টানা বর্ষণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে গেছে। আর সুয়ারেজ লাইনের পানির সঙ্গে মিশে পথঘাট হয়েছে একাকার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছুটা ঘুরলেই চোখে পড়ছে ঢাকার পানিবদ্ধতার চিত্র। এ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করতে দেখা গেছে অনেককেই। আর রাস্তায় পানি জমে থাকায় যানবাহন চলছে ধীর গতিতে। ফুটপাথও ডুবে থাকায় হাঁটাও সম্ভব হচ্ছিল না। এই সুযোগে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন রিকশাওয়ালারা। এমনকি কোথাও কোথাও জমে থাকা পানির অংশ পার করে দিতেও ২০-৫০ টাকা করে নিচ্ছেন তারা।
রাজধানী ঢাকার পানিবদ্ধতা নিরসনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বললেও ভারী বা টানা বর্ষণে এই শহর ডুবে যায় চোখের পলকে। বৃষ্টি শেষ হলেও দীর্ঘ সময় সড়ক থেকে সরে না পানি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা দিতে বের হওয়া চাকরিপ্রত্যাশীরা। অতি ভারী বৃষ্টির কারণে পানি জমে খালে পরিণত হওয়া সড়কগুলো দিয়ে রিকশা বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলারও অবস্থা ছিল না। এতে অনেকে নানা ভোগান্তি নিয়ে যেমন পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছান, অনেকে আবার নিয়োগ পরীক্ষা অংশগ্রহণের জন্য যেতেই পারেননি। এ ছাড়া ঢাকায় বৃষ্টির কারণে সকালের দোকানপাট খুলতে দেরি হয়েছে। তার ওপর সড়কে পানিবদ্ধতার কারণে কার্যক্রম পরিচালনা করতেও অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। দোকানের সামনের রাস্তায় পানি জমে থাকায় ক্রেতারাও ফিরে গেছেন বলে অনেকে জানান। সড়কে পানি জমে যাওয়ায় গন্তব্যে পৌঁছাতে দিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে। তারপরও রিকশা ও সিএনজি পাওয়া যাচ্ছে না। এসব সড়কে চলাচলরত যানবাহনের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে গাড়িগুলো বিকল হয়ে পড়লো। মাঝ সড়কে গাড়ি বিকল হওয়ায় সৃষ্টি হলো যানজট। সব মিলিয়ে বৃষ্টি, যানজট আর পানিবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়লেন নগরীর বাসিন্দারা। ধানমন্ডি এলাকায় বেশ কয়েকটি প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য গাড়িও বিকল হয়ে সড়কের মাঝে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
বৃষ্টির কারণে কাকরাইল, মোহাম্মদপুর, শ্যাওড়াপাড়া, কাজীপাড়াসহ মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা এবং মিরপুরে মাজার রোড, অ্যালিফেন্ট রোড, মৎসভবন, সেন্ট্রাল রোড, ধানম-ির ২৭ নম্বর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, তেজগাঁও, বিজয় সরনী, পশ্চিম তেজতুরী বাজার, তেজকুনি পাড়া, দক্ষিণ মনিপুরের মোল্লাপাড়া, মহাখালীর বিভিন্ন রাস্তায় পানি জমেছে। মৌচাক, কাকরাইল, নয়া পল্টন, পুরানা পল্টন, আরামবাগ, শাহজাহানপুর, ফকিরেরপুল, বিজয়নগর সড়কে পানি উঠেছে। পানিতে তলিয়েছে দয়াগঞ্জ মোড়, সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল, নিমতলী, কমলাপুরের কাছে টয়েনবি সার্কুলার রোড, যাত্রাবাড়ী, কাজলা, শনির আখাড়া, রায়েরবাগ, গোলাপবাগের নিচু এলাকাসহ আরও অনেক এলাকা।
মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায়, ইসিবি, মালিবাগ, শান্তিনগর, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট যেতে নতুন রাস্তায়, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন সড়কে পানিবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। পুরান ঢাকা, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, ধানমন্ডি, মিরপুর ১৩, মিরপুর ১০, ১১ নং সেকশন, পীরেরবাগ, কল্যাণপুর, হাতিরঝিলের কিছু অংশ, গুলশান লেকপাড় এলাকার সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে কিছু পরিমাণে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চত্বরে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানির পানিবদ্ধতা থেকে রেহাই পায়নি হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পও। এছাড়া কয়েকটি ওয়ার্ডেও পানি ঢুকে পড়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও স্বজনরা।
হাসপাতালে জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড মাস্টার জানান, সকাল থেকে তুমুল বৃষ্টির কারণে হাসপাতালে চত্বরে প্রায় হাঁটু পানি জমে যায়। এখন পর্যন্ত পানি সরছে না। এছাড়া পুরাতন ভবনের নিচতলায় ভ্যাকসিন সেন্টার বেজমেন্টে পানি প্রবেশ করে। সেখানে এক পর্যায়ে বালুর বস্তা ফেলে পানি আটকানো হয়েছে।
টিকাটুলি এলাকার ব্যবসায়ী সোহাগ বলেন, বৃষ্টির কারণে দোকানের ভিতরে পানি ঢুকছে তাই দোকান খুলতে পারিনি। শুক্রবার সবার ছুটি থাকে। এদিন সবাই বাজার-সদাইয়ের জন্য আসেন। কিন্তু দোকানে পানি থাকায় কোনও কাস্টমারের দেখা নাই।
রিকশা চালক আমিন বলেন, সকাল থেকে তিনটা ট্রিপ দিতে পেরেছি। বেশির ভাগ সময় বসেই ছিলাম। রিকশা ডুবে যায় এমন অবস্থা। তবে পানি পার করে কিছু টাকা আয় করেছি।
আকাশ নামের এক গাড়িচালক বলেন, সকালে গাড়ি নিয়ে বের হই। আরামবাগ আসতেই ইঞ্জিনে পানি ঢুকে গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। অনেক চেষ্টার পরও গাড়ি সচল করতে পারছি না।
ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, আগের মতো এখন আর দিনব্যাপী পানিবদ্ধতা থাকে না। যেহেতু খালগুলো আমরা ভরাট করে ফেলছি, দখল করছি, এ ছাড়া যেখানে-সেখানে পলিথিন, বোতল, আবর্জনা ফেলছি, যেগুলো গিয়ে ড্রেনে পড়ছে, সেগুলো পানি নামা বাধাগ্রস্ত করছে। পানির প্রবাহ নষ্ট হয়ে যেতে না পেরে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সেই পানি নেমে যেতে সময় লাগছে, সেই সময় তো দিতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার পর যেসব জায়গায় আধাঘণ্টার বেশি বৃষ্টির পানি জমা থাকে সেসব জায়গা ও স্থানকে পানিবদ্ধ বলে আমরা চিহ্নিত করছি। ২০২০ সালের পর হতে আমরা এ রকম ১৬১টি জায়গা-স্থান চিহ্নিত করেছি এবং ইতোমধ্যে ১৩৬টি জায়গা ও স্থানে আমরা অবকাঠামো উন্নয়নে করে পানিবদ্ধতা নিরসন করতে সক্ষম হয়েছি। বাকী জায়গাগুলোতে কাজ চলমান রয়েছে। নিউমার্কেট এলাকা, নায়েম সড়ক, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের সামনে গতবছর নতুন করে পানিবদ্ধতা পেয়েছি। পুরাতন ঢাকার মূল জায়গা বংশাল, কোতোয়ালি, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া। পানিবদ্ধতা নিরসনে অনেক অসঙ্গতি আমাদেরকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে এবং ঢাকাবাসীকে পানিবদ্ধতা মুক্ত নগরী উপহার দিতে আমরা সেটা করে চলেছি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকা মহানগরের বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে খালগুলোকে কেন্দ্র করে যে নগর পরিকল্পনার সম্ভাবনা ছিল, সেই সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিয়ে অব্যাহত দখল আর দূষণের মাধ্যমে খাল ও জলাশয়গুলোকে আমরা উন্নয়নের নামে ক্রমাগত ধ্বংস করেছি। ফলে একদিকে যেমন নগরীর পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস হয়েছে, ঠিক তেমনি নগরায়ণের চাপে শহরের খালগুলো ক্রমান্বয়ে দখলের শিকার হয়েছে। একই সঙ্গে খালগুলোর দৈর্ঘ্য কমে যাওয়ার কারণে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার নেটওয়ার্ক হিসেবে নগরের খালগুলো তাদের কার্যকারিতা হারিয়েছে বহুলাংশে। খালগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ নিশ্চিত করার জন্য পরিকল্পনামাফিক প্রকল্প হাতে নিলে খালগুলোর অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যাবে এবং খালের মধ্যে বৃষ্টির পানির ধারণক্ষমতা এবং পানিপ্রবাহের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব হবে।###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলকভাবে করতে হবে’
রাজনীতির মধ্যে ঢুকতে চায় না ইসি, ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু সোমবার
টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রে পরিষেবা বন্ধ, আইনি নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
ইউল্যাবের হাল্ট প্রাইজ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ
স্পিকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছিলেন হাসিনা : দ্য হিন্দু
আওয়ামী দুঃশাসনের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়: রিজভী আহমেদ
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি, আ.লীগের জয়জয়কার
নাম পাল্টিয়েও শেষ রক্ষা হলো না সাইফের আততায়ীর
থানায় বসে ঘুষ গ্রহণ: সেই এসআই প্রত্যাহার
জেলেদের দিক নির্ণয়ের জন্য বরগুনায় লাইট হাউজ স্থাপন
ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের অভিষেকের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ
বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা বর্ণনার বাইরে
বেনাপোলে ৩০ হাজার মার্কিন ডলারসহ ৪০ লাখ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ
গাজায় যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ ‘অস্থায়ী’: নেতানিয়াহু
রক্তে প্লাবিত শরীর, সিংহের মতো তৈমুরের হাত ধরে হাসপাতালে সাইফ
বড়লেখায় যুবদল নেতাকে হত্যা
মার্কিন বিমানবাহী জাহাজে হামলার দাবি হুথির
সীমান্তের কাঁটাতার: কীসের, কেন আর কবে থেকে এই বেড়া?
জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে শীতার্ত মানুষের পাশে স্বেচ্ছাসেবক দল
নোয়াখালীর চৌমুহনীতে পাওনা টাকার দ্বন্দ্বে কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা