দূষিত পানি পরীক্ষার সরকারি ল্যাব বিক্রি!
১৫ জুলাই ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪, ১২:১১ এএম
নদী মাতৃক বাংলাদেশে নদীই হচ্ছে প্রাণ। অথচ দখল আর দূষণে নদীগুলোর সর্বনাশ হয়ে গেছে। দেশে ৫৬টি নদীর দূষণের মাত্রা পরীক্ষা করে অতিমাত্রায় দূষিত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নদীর পানির দূষণ পরীক্ষার লক্ষ্যে নৌপরিবহন অধিদপ্তর কোটি কোটি টাকা পানির দূষণ পরীক্ষার ল্যাব যন্ত্রপাতি ও কেমিক্যাল বিদেশে থেকে আমদানি করেছে। আমদানি করা সেই ল্যাব দীর্ঘদিন থেকে বিকল ও কেমিক্যাল নষ্ট। অভিযোগ উঠেছে দূষিত পানি পরীক্ষার ল্যাব বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এ ল্যাবের দায়িত্ব থাকা নৌপরিবহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ফাওজিয়া রহমান (সহকারী কেমিষ্ট) এর লাগামহীন দুর্নীতি ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের কারণে অন্য শাখায় বদলী করা হয়েছে। আই এম ও এর লন্ডন কনভেনশন বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত প্রকল্পটির অধীনে যন্ত্রপাতি ফেলে রাখার ফলে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো পরিমাণ দূষিত হয়ে যাচ্ছে তা নৌপরিবহন অধিদপ্তর মনিটর করতে পারছে না।
জানতে চাইলে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম ইনকিলাবকে বলেন, আসলে আমি যোগদান কবার পরে এ অধিদপ্তরের নানা সমস্যা। তার মধ্যে প্রধান সমস্যা জনবল কম,কাজ বেশি। সমস্যা গুলো সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের নদীর পানি পরীক্ষা ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি কেমিক্যাল নষ্ট। যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে সে জন্য একটি কমিটি করে যন্ত্রপাতিগুলো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া হয়েছে।
দেশে ৫৬টি নদীর দূষণের মাত্রা পরীক্ষা করে অতিমাত্রায় দূষিত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্রুত কোনো ব্যবস্থা না নিলে ৫৬টি নদীর দূষণ সারা দেশের ৭৫৪টি নদীতে ছড়িয়ে পড়বে। এতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে নদী তীরবর্তী মানুষের জীবন, জীবিকা, সেইসাথে কৃষি, জলজ স্বাস্থ্য, জনস্বাস্থ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির যোগানও হুমকি মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা। আই এম ও এর লন্ডন কনভেনশন বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত প্রকল্পটির অধীনে যন্ত্রপাতি ফেলে রাখার ফলে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো কি পরিমাণ দূষিত হয়ে যাচ্ছে তা নৌপরিবহন অধিদপ্তর মনিটর করতে পারে নাই। গত ২০০০ সালে ৮ কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে ৬ কোটি টাকার ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি কেমিক্যাল। প্রকল্পের অধীন জনবল ল্যাবরেটরিতে কাজ না করে অন্য কাজে নিয়োজিত করার ফলে সরকারের নির্দেশনা সঠিকভাবে প্রতিপালিত হয় নাই। সহকারী কেমিস্ট ফাওজিয়াসহ ল্যাবরেটরিতে নিয়োজিত জনবল বর্তমানে প্রধান কার্যালয়ে নিয়োজিত থাকায় তাদের নিয়োগের শর্তাবলী লঙ্ঘিত হয়েছে। সরকারের অনুমোদন ছাড়াই স্থায়ী সম্পদ অন্য প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দেওয়ায় আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। এই বিষয়ে তদন্ত করে দায়ী ব্যাক্তিদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন। বর্তমানে ল্যাবরেটরি না থাকায় প্রকল্পের অধীনে নিয়োজিত জনবল কে উদ্ধৃত ঘোষণা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করা প্রয়োজন। সেটি করতে পারেনি নৌপরিবহণ অধিদপ্তর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে এ প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছেন। অর্থচ আজ প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আছেন তার সরকারের অনুমোদন না নিয়ে এ প্রকল্পের ল্যাবরেটরি নষ্ট দেখিয়ে বিক্রি করা হয়েছে।
এদিকে দূষণ ও দখলের কারণে ঢাকার চারপাশের নদী ও জলাশয়ের পানি ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ায়, নগরীর প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ বাসিন্দার ঘরে ও শিল্প-কারখানায় সরবরাহ করা প্রায় ৭০ শতাংশ পানি উত্তোলন করতে হচ্ছে মাটির নিচ থেকে। শুধু ঢাকা ওয়াসাই প্রতিদিন প্রায় ৩৩ লাখ ঘনমিটার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হয়। ইতোমধ্যে গাজীপুরের লবণদহ, নরসিংদীর হাঁড়িধোয়া ও হবিগঞ্জের সুতাং এই তিনটি নদীর অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। এই নদীগুলোয় সহনীয় মাত্রার চেয়ে তুলনামূলক বেশি দূষণের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নদীর পানি দূষণমুক্ত কিনা পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে সরকারী ভাবে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা নৌপরিবহন অধিদপ্তরের পানির দুষণ পরীক্ষার ল্যাব যন্ত্রপাতি ও কেমিক্যাল আমদানি করলেও সেই ল্যাব আজ যন্ত্রপাতি বিকল ও কেমিক্যাল নষ্ট। আবার কেউ বলছে এ ল্যাব বিক্রি করা হয়েছে। এ ল্যারে দায়িত্ব থাকা নৌপরিবহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ফাওজিয়া রহমান (সহকারী কেমিষ্ট) এর লাগামহীন দুর্নীতির ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের কারণে অন্য শাখায় বদলী করা হয়েছে।
জানা গেছে, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অধীনে ঢাকার অভ্যন্তরীণ নৌপথ গুলোর পরিবেশ দুষণ প্রতিরোধ ও পরিবীক্ষণের জন্য ল্যাবরেটরি স্থাপনের জন্য ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার সেই সময় একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছিলেন। পরে বরাদ্দ না থাকায় কারণে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। পরবতীতে ২০১৫ সালে ল্যাবরেটরির কেমিক্যালস, ইকুইপমেন্ট, এক্সেসরিজ এবং কেমিক্যালসের জন্য ব্যবহার্য আসবাবপত্র নারায়নগঞ্জে অবস্থতি ল্যাবরেটরি ভবনে স্থানান্তর করা হয়। দীর্ঘদিন ল্রাবরেটরি ভবন অন্যাণ্য কাজে ব্যাবহৃত হওয়ার কারণে সকল ধরনের কানেটিভিটি অকেজো হয়ে যায়। সরকারের বিশাল অংকের টাকার ল্যাবরেটরি সামগ্রী বর্তমানে অফিসিয়াল কাজে ব্যবহার অযোগ্য। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাথীদের প্রয়োজনার্থে ব্যবহার করা যায় কি না যাচাই এবং ব্যবহার অনুপযোগী সামগ্রী পরিবেশবান্দব পদ্ধতিতে ধ্বংস করার জন্য গত বছর ২৩ আগাষ্ট অধিদপ্তর থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির আহবায়ক করা হয়, ক্যাপ্টেন কাজী মুহাম্মদ আহসান, সদস্য সচিব করা হয়, নৌপরিবহন অধিপ্তরের সরকারি কেমিষ্ট ফাওজিয়া রহমানকে। আর সদস্য করা হয় অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার মোহাম্মদ এহতেছানুল হক ফকির এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড, মো. শাহিনুর ইসলামকে। কমিটি চারটি সুপারিশ করে এর মধ্যে ক্যমিক্যাল গুলো ২০০০ সালে ক্রয় করা হয়েছে বর্তমানে মেয়াদ নাই। এ গুলো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকাকে দেয়া যেতে পারে। কিন্তু নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অধীনে ঢাকার অভ্যন্তরীণ নৌপথ গুলোর পরিবেশ দুষণ প্রতিরোধ ও পরিবীক্ষণের জন্য ল্যাবরেটরি ভবন স্থাপনের এবং নতুন প্রকল্প গ্রহণ এবং জনবলের সুপারিশ করা হয়নি। এছাড়া সরকারের কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি। দেশের পরিবেশ রক্ষার্থে নদী দূষণমুক্ত রাখার স্বার্থে নদীর পানি পরীক্ষা নিরীক্ষার নিমিত্তে পরিবেশ রক্ষামূলক প্রকল্পকে রেভিনিউ বাজেট এ স্থানান্তর করে অধিদপ্তরের আওতায় নারায়ণগঞ্জের সরকারী প্রতিষ্ঠিত ল্যাবরেটরিতে নিয়োগ দেয়া সত্ত্বেও কোন এক অজানা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রধান কার্যালয়ে তার নির্দিষ্ট কোন কাজ না থাকা সত্ত্বেও তিনি তার নিজের ও পূরণে প্রধান কার্যালয়ে ঘাপটি মেরে বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছেন। রিভার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি) গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের ৫৬টি নদীর গুণগত মান বিশ্লেষণ করে গত ১৪ই মার্চ এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এছাড়া শাহাদাৎ হোসেন নামে এক মানবাধিকারকর্মী নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সচিব, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সচিব এবং দুর্নীতি দমন কমিশন চেয়ারম্যান লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের পরিবেশ শাখার কর্মকর্তা ফাওজিয়া রহমান (সহকারী কেমিষ্ট) ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের তথ্য দেয়া যাবে না। এটা অফিসের নিদেশ। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। আপনী অফিসের প্রশাসন শাখায় কথা বলেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু
কী আছে তৌফিকার লকারে?
ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা
অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা
শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা
৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি
৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ