সারাদেশ থেকে ঢাকা বিচ্ছিন্ন
১৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৪, ১২:২৮ এএম
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ, যুবলীগের হামলা ও পুলিশের সংঘর্ষ, সংঘাতে রণাঙ্গন হয়ে উঠেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকা। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া, কুমিল্লা, খুলনায় কোটা আন্দোলনকারী, ছাত্রলীগ ও পুলিশের ত্রিমুখি সংঘাত সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হয়ে উঠে। রাজধানীর প্রবেশ পথ ঢাকা টু চট্টগ্রাম, ঢাকা টু ময়মনসিংহ, ঢাকা টু মানিকগঞ্জ মহাসড়ক এবং মহাখালিতে রেলপথ অবরোধে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দিনভর দূরপাল্লার কোনো বাস রাজধানীতে প্রবেশ করেনি; ঢাকা থেকেও দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। রেলপথ অবরোধ করায় কয়েক ঘন্টা ঢাকার কমলাপুর থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। গতকাল মঙ্গলবার পুরো রাজধানী ঢাকা কার্যত হয়ে উঠেছিল উত্তাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছাড়াও রামপুরা, কুড়িল বিশ্বরোড, নতুন বাজার, শনির আখড়া, সাইন্স ল্যাবরেটরি, চানখার পুল, আগারগাও, মতিঝিল শাপলা চত্বর, পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক, মিরপুরসহ পুরো ঢাকা শহরের প্রধান প্রদান সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেয় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত লাখো শিক্ষার্থী। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ সংঘর্ষ ও পুলিশের হামলা এবং গুলিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। ঢাকা কলেজের সামনে শির্ক্ষার্থীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় ২ জন নিহত হয়েছেন। রংপুরে সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী মারা যান। ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে আরো কয়েক’শ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের মধ্যে এসব সংঘর্ষের পর এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছে। বগুড়ায় আওয়ামী লীগ নেতার অফিস এবং ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গাড়িতে আগুন দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। সারাদেশে ভয়াবহ সংঘাত সংঘর্ষ এবং পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় শহর রাজধানী ঢাকা, বন্দর নগরী চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর ও বগুড়ায় আধা সামরিক বাহিনী বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
ইনকিলাবের সংবাদদাতারা জানান, গতকাল বেলা তিনটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এ সময় কয়েকজন অস্ত্রধারীকে গুলি করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে হাতবোমার বিস্ফোরণও ঘটানো হয়। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। চট্টগ্রামে নিহত ৩ জনের মধ্যে ২ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন মো. ফারুক (৩২) ও মো. ওয়াসিম (২২)। ফারুক একটি আসবাবের দোকানের কর্মচারী এবং ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে জানা গেছে। অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া আহত অন্তত ২০ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা দুইটার দিকে ওই মিছিলে হামলা চালায় ছাত্রলীগের সশস্ত্র নেতাকর্মীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এর পর থেকে ওই এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এরই মধ্যে বিকেল সাড়ে ৫ টার পর সেখানে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালালে ঢাকা কলেজ এলাকায় আহত হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। ঢাকা কলেজের কাছে পেট্রল পাম্প এলাকায় আরেক যুবককে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। পদচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান। সেখানে কর্তৃব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রংপুরেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আবু সাঈদ (২২) নিহত হন। নিহত শিক্ষার্থী রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলন সমন্বয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
সায়েন্স ল্যাব এলাকায় সংঘর্ষে ২ জনের মৃত্যু: সায়েন্স ল্যাব এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজের কয়েকশ শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিল। এসময় বিক্ষোভকারীরা সায়েন্স ল্যাব মোড়ে অবস্থান নেয় এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় ২ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তাঁর মৃত্যু হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশের নিউমার্কেট অঞ্চলের সহকারী কমিশনার রেফাতুল ইসলাম। তিনি বলেন, সায়েন্স ল্যাব এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন মারা গেছেন।
বেলা দুইটায় থেকে ওই এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ চলে। এর আগে বিকেলে ঢাকা কলেজের সামনে একদল লোক এক যুবককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী ওই যুবকের পরিচয় জানা যায়নি। সন্ধ্যায় যাঁর মৃত্যু হয়েছে, তাঁর বয়সও ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তিনি আহত অবস্থায় সিটি কলেজের সামনে রাস্তায় পড়ে ছিলেন বলে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, পথচারীরা ওই যুবককে উদ্ধার করে প্রথমে পাশের পপুলার হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর পরনে ছিল কালো জিনসের প্যান্ট ও কালো গেঞ্জি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: সোমবার দিনভর ছাত্রলীগ ও কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের পর গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সতর্ক অবস্থানে ছিল ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে হলে সোমবার রাতেই মাইকিং করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে না যেতে সতর্ক করে ছাত্রলীগ। এসময় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাকিবুল ইসলামকে বলতে শোনা যায় -যেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন তেমনই উত্তর পাবেন।
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। দুপুর ২টা থেকে টিএসসি এলাকায় রড, জিআই পাইপ, হকিস্টিক, স্টাম্পসহ অবস্থান করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বহিরাগত অনেক যুবকের দেখা মিলে তাদের কর্মসূচিতে। এসময় বহিরাগতদের ক্যাম্পাস থেকে তাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের একটি অভিযান দেখা যায়। অভিযানে বহিরাগতদের থেকে প্রচুর লাঠিসোঁটা উদ্ধার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মাকসুদুর রহমানের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়। প্রফেসর মাকসুদুর রহমান বলেন, আমরা বহিরাগতমুক্ত একটি ক্যাম্পাস চাই। আমাদের ক্যাম্পাসে কোনো লাঠিসোঁটা থাকবে না। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা আমরা দেখতে চাই না।
টিএসসি এলাকা থেকে অভিযান শেষে বেলা ৪টা ২০ মিনিটের দিকে শহীদ মিনার এলাকায় গেলে সেখানে অবস্থানরত কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা প্রক্টরিয়াল বডির উদ্দেশ্যে ‹ভুয়া ভুয়া› ধ্বনি তোলেন। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আস্থা হারানো বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সাথে আক্রমনাত্মক অবস্থান নিলে দৌঁড়ে পালায় প্রক্টর প্রফেসর ড. মাকসুদুর রহমান। পেছনে পড়ে যান ফার্মেসী অনুষদের শিক্ষক প্রফেসর আব্দুল মুহিতসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক। সিনিয়র এই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রক্টর শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে পালাতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলায় আহত হয়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয় আরো চারজন শিক্ষক। পরে ঢাকা মেডিকেল নিয়ে তাদের সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুর থেকে শহীদ মিনার এলাকা ছিল শিক্ষার্থীদের দখলে। অন্যদিকে টিএসসি এলাকায় ছিল ছাত্রলীগের অবস্থান। হেলমেট পরে হাতে রড, হকিস্টিক, জিআই পাইপসহ লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের অবস্থান করতে দেখা যায়। তবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দুই পক্ষের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। শহীদ মিনার ও আশপাশের এলাকায় কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে অবস্থান নেয় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে ছাত্রলীগ সন্দেহে মারধর করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যাদের মারধর করা হচ্ছে তাদের মোবাইলে ছাত্রলীগের মেসেজ ও বিভিন্ন গ্রুপে যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েই মারধর করা হয়েছে।
এদিকে গত কয়েকদিনের ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে হলে শিক্ষার্থীদের মাঝে ভীতি কাজ করছে। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে বাড়ি কিংবা আশেপাশের আত্মীয় স্বজনদের বাসায় আশ্রয় নিচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, দীর্ঘ দুই বছর ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম করেছি। কিন্তু আজকে যখন শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নিতে যাচ্ছি তখন আমি হয়ে যাচ্ছি রাজাকার কিংবা ছাত্রদল বা শিবির। আমি এই লজ্জা নিয়ে থাকতে পারছি না। নিজের নীতি-নৈতিকতা থেকে ছাত্রলীগের সাথে আর অবস্থান করতে পারছি না। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে হলে থাকতে হলে ছাত্রলীগের হয়ে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থান নিতে হবে। তাই আমি হল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছি।
গত সোমবার দিনভর সংঘর্ষের পর থেকেই হল ছেড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। এদিন সন্ধ্যায় এক জরুরি মিটিং ডেকে প্রতিটি হলে রাতে অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রভোস্ট স্যান্ডিং কমিটি। তাই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকল হলে রাতে হাউজ টিউটর ও প্রভোস্টদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। মঙ্গলবার সকাল থেকেই হলগুলো ছিল কার্যত ফাঁকা। অনেককেই সকাল থেকে হল ছাড়তে দেখা যায়। সকালে সূর্যসেন হলের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসে এখন একটা জোর আওয়াজ হলেই প্রথমে আমাদের হল থেকে শোনা যায়। একটা ইট-পাটকেল ছুড়লেও সেটা এসে পড়ে আমাদের হলে। তাই মা বাবার অনুরোধে হল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছি। এছাড়া ছাত্রলীগের সাথে এখন অবস্থান করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একদিকে বিবেক বলছে শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনে নামতে, অন্যদিকে ছাত্রলীগ জোরপূর্বক মাঠে নিয়ে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করায়। এমন পরিস্থিতিতে হল ছাড়াই একমাত্র উত্তম উপায় বলে মনে করছি।
চাঁনখার পুলে ৪ জন গুলিবিদ্ধ: পুরান ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকায় স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। তাঁদের মধ্যে অন্তত চারজন গুলিবিদ্ধ হন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমাবেশ ছিল। এ জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শহীদ মিনারের কাছে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কে সমবেত হন। এর আগে থেকেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর বিন আবদাল আজিজের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা চানখাঁরপুল মোড়ে অবস্থা নেন।
বিকেল চারটার দিকে শহীদ মিনারের সামনের সড়ক দিয়ে গুলিস্তানের দিকে একটি যাত্রীবাহী মিনিবাস যাওয়ার সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বাসটি থামান। তাঁরা বাসের ভেতরে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। যাত্রীদের কয়েকজনকে ছাত্রলীগের কর্মী বলে তাঁদের সন্দেহ হয়। এতে আন্দোলনকারী ছাত্ররা ক্ষুব্ধ হয়ে বাসটি ভাঙচুর করেন এবং ওই সন্দেহভাজনদের বাস থেকে নামিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের ভেতর নিয়ে যান।
এই ঘটনার পর কাউন্সিলর ওমর বিন আবদাল আজিজের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের দলটি ছাত্রদের ওপর হামলা করে। এরপর বিকেল সোয়া চারটার দিকে উভয় পক্ষের মধ্যে মারধর ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শহীদুল্লাহ হলের সামনে এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা চানখাঁরপুলের সড়কের ওপার অবস্থান নিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছেন। বিকেল পাঁচটার পরপর ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীদের অবস্থান থেকে কয়েকটি হাতবোমা নিক্ষেপ করা হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪জন গুলিবিদ্ধ: বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করা হয়েছে। এতে চারজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে তিনটায় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। জজ কোর্ট পার হয়ে রায়সাহেব বাজারের দিকে যাচ্ছিলো মিছিলটি। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এতে চারজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ একজন শিক্ষার্থী ম্যানেজজমেন্ট বিভাগের ফেরদৌস আহমেদ। আরেকজন ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী অনিক। তাদেরকে ন্যাশনাল মেডিকেলে নেয়া হয়। সেখান থেকে পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মহাখালী: মহাখালী রেলগেটে রেললাইন অবরোধ করেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এতে রেললাইনের দুপাশে দু’টি ট্রেন আটকে থাকে। এক পর্যায়ে স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ বক্সের সামনে ২টি মোটর সাইকেলে আগুন দেয়া হয়। অবরোধ ও সংঘর্ষে সারাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি মহাখালী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
ফার্মগেট: কোটা সংস্কারের দাবিতে ফার্মগেটে সড়ক অবরোধ করেছে বিজ্ঞান কলেজের ছাত্ররা। এ সময় তারা দল বেঁধে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অবরোধ করে। এতে কাওরান বাজার থেকে ফার্মগেট মোড় পর্যন্ত এবং বিজয় স্মরণি ও খামারবাড়ি রাস্তায় গাড়িগুলো আটকে যায়।
মিরপুর ১০: মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি ও বাংলা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করেন। তবে দুপুরের দিকে স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটাসহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
মোহাম্মদপুর: শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও কোটা বাতিলের দাবিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা।
মতিঝিল: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার এবং গতকাল রোববার রাতে সারা দেশের বিভিন্নস্থান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেন নটরডেম কলেজ শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার পর থেকে নটরডেম কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী রাজধানী মতিঝিলের শাপলা চত্বরের বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা শুরু করেন।
নতুন বাজার: দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর নতুন বাজার এলাকায় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় নতুন বাজার থেকে বাঁশতলা পর্যন্ত পুরো সড়কে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে মিছিল করতে থাকেন। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে সকাল ১১ টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। তবে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ধাওয়া করলে তারা পালাতে বাধ্য হয়। ছাত্রলীগের ২০-৩০ জনের নেতাকর্মী শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন। সড়ক থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের বাধার কথা না শুনে পাল্টা ধাওয়া দেয়।
বাড্ডা-রামপুরা: ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ও ইমপেরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা রামপুরা ব্রিজ অবরোধ করায় রামপুরা থেকে আবুল হোটেল হয়ে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া পর্যন্ত এবং অন্যদিকে বাড্ডা লিঙ্ক রোড ও হাতিরঝিল সড়ক পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একই সময়ে মেরুল বাড্ডা এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা।
বনানী: বনানীর কাকলীতে সড়ক অবরোধ করেন প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এতে বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের সাথে সংঘর্ষে নিহত ৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো ও চবি সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। তাদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে টানা কয়েক ঘণ্টার সংঘর্ষে নগরীর মুরাদপুর থেকে ষোলশহরসহ কয়েক কিলোমিটার এলাকা দৃশ্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করে হেলমেট পরা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। নিরস্ত্র শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রকাশ্যে গুলি ছুঁড়লেও পুলিশ ছিল নীরব দর্শক। এ সময় ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা পুলিশের প্রতি লক্ষ্য করে ভুয়া ভুয়া ধ্বনি তোলেন। অস্ত্রধারী যুবকদের গুলিবর্ষণের একাধিক ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ও সীতাকু-ের কুমিরায় আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনসহ বিভিন্ন সড়কে অবরোধের ফলে সারাদেশ থেকে মূলত বিচ্ছিন্ন এবং অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম নগরী। বিকেলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে তিনজন নিহতের ঘটনায় নগরজুড়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
নিহত মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- মো. ফারুক (৩২) ও মো. ওয়াসিম আকরাম (২২)। ফারুক ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী ও যুবলীগের কর্মী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তিনি ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীদের সাথে শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় অংশ নেন। ওয়াসিম আকরাম চট্টগ্রাম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার মেহেরনামা গ্রামে। চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ওয়াসিম আকরামের বাসা নগরীর বহদ্দারহাটে। এছাড়া অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি। তার বয়স ২৪। তার পিঠে গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। অন্যদিকে ফারুকের বুকে গুলি লাগে। আহত অন্তত ২০ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ষোলশহর এলাকায় জমায়েত হয়। এ সময় ছাত্রলীগ যুবলীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী চারদিক থেকে ঘেরাও করে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা শুরু করে। বেশ কয়েকজন অস্ত্রধারী প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ করে। এ সময় ব্যাপক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগ যুবলীগ কর্মীদের হাতে ছিল লাঠি, লোহার রড, জিআই পাইপ ও হকিস্টিক। এর জবাবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। লাটি ও রডের আঘাতে অনেক শিক্ষার্থী রক্তাক্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। সহপাঠিরা তাদের রিকশা, ভ্যানে তুলে হাসপাতালে নেওয়ার পথেও তাদের উপর হামলা করে ছাত্রলীগ যুবলীগের কর্মীরা। বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। আহতদের চমেক হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তিনজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তাদের মধ্যে ফারুক ও ওয়াসিম আকরামকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কার আন্দোলন কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটায় কর্মসূচি ছিল চট্টগ্রামের ষোলশহর রেলস্টেশনে। তবে এর আগে থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে ষোলশহর রেলস্টেশনে অবস্থান নেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এর মধ্যে খ- খ- জমায়েতে শিক্ষার্থীরা ষোলশহরের দিকে আসতে থাকেন। আসার পথে মুরাদপুরে একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুরুতে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করলেও পরে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ শুরু হয়। কয়েকজন অস্ত্রধারীকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। পরে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এভাবে চলছে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে নগরীর ব্যস্ততম সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্কিত হয়ে সাধারণ মানুষ এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। শিক্ষার্থীদের কয়েকটি অংশ অলিগলিতে ঢুকে পড়লে সেখান থেকেও খুঁজে বের করে হামলা করা হয়েছে।
এদিকে সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির ব্যাটালিয়ন-৮ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহেদ মিনহাজ সিদ্দিকী।
রংপুর থেকে, স্টাফ রিপোর্টার জানান, কোটা বিরোধী আন্দোলনে রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিক্ষার্থীর নাম আবু সাঈদ। তিনি বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুপুরে বেরোবির কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের লালবাগ এলাকা থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যান। পরে তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোঁড়ে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। পরে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হলে সাঈদ মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করে রংপুর পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গুলিতে একজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী জানিয়েছেন, ‘কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
সীতাকু-ে সড়ক-রেলপথ অবরোধ, সংঘর্ষে আহত ১৬
সীতাকু- (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সীতাকুন্ডে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) এর শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এ অবরোধ পালিত হয়। এসময় টানা ৫ ঘন্টা চট্টগ্রামের সাথে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। একই সাথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অন্তত ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। অবরোধের শুরুতে সড়ক ও রেলপথে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু দাবী আদাায়ের লক্ষ্যে অবস্থানে অনড় থাকেন শিক্ষার্থীরা। এসময় সেখানে উপস্থিত হন সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম, উপজেলা ভূমি সহকারী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলাউদ্দীন। তবে শিক্ষার্থীরা স্ব-উদ্যোগে বেলা ২ টা ৩০ মিনিটে অবরোধ তুলে নিলে রেল ও সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অন্যদিকে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে সরকার দলীয় কর্মীদের সাথে আইআইইউসির শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় ১৬ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এ এস এম আকতারুজ্জামান কায়সার। এছাড়া সীতাকুন্ড বাজারের দক্ষিণ বাইপাস এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের বহনকারী একটা বাসেও হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বেলা তিনটার দিকের এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হন।
ঝিনাইদহে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলায় আহত ১২
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ঝিনাইদহে মঙ্গলবার শহরের উজির আলী স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে হেলমেট পরে এই হামলা চালানো হয়। হামলায় অন্তত ১২ জন কমবেশি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে আব্দুল্লাহ আল মামুন, কালীগঞ্জের মাহিন, স্টেডিয়ামপাড়ার শারমিন সুলতানা, সাথি খাতুন, আবু হুরাইরা, এলমা খাতুন, সাইদুর রহমান, রিহান ও আবু সাইদের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরমধ্যে মাহিনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত শারমিন সুলতানা জানান, কোটা বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকালে বিক্ষোভ মিছিল করার জন্য তারা শহরের উজির আলী স্কুুল মাঠে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় শহরের পায়রা চত্বর এলাকা থেকে ছাত্রলীগের একটি মিছিল লাঠি-সোটা নিয়ে পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। হামলায় তাদের ১২ জন শিক্ষার্থী আহত হন বলে তারা দাবি করেন।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, কর্মসূচি সফল করতে গিয়ে দুই ঘণ্টা ধরে ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলা, বোমাবাজি সহ্য করে অবশেষে পাল্টা হামলা চালিয়ে বগুড়া শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথার দখল করে রাখে কোটা সংষ্কার ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। বিকেল সাড়ে ৫টায় বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র ছিলো পুরোপুরি ছাত্রলীগ মুক্ত। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্ররা সরকারি আজিজুল হক কলেজ, শহীদ জিয়া মেডিক্যাল কলেজ, সরকারি শাহসুলতান কলেজ এবং বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাসে মিছিল ও সমাবেশ করে। সমাবেশের কিছু সময় পরে আজিজুল হক কলেজে ছাত্রলীগের সশস্ত্র কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে। এসময় শিক্ষার্থীরা হামলা প্রতিরোধের চেষ্টা করলে তাদের ওপর ককটেল ছুড়ে মারা হয়। ককটেলের আঘাতে মামুন, মিলন, তাফসির নামের ৩ শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর বিকেল পর্যন্ত দুপক্ষের মধ্যে চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এদিকে বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও শাহসুলতান কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বনানী মোড়ে রোড ব্লকেড দিতে গেলে তারা ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়ে। বিক্ষুব্ধরা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত শীর্ষ স্থানীয় নেতা সুলতান মাহমুদ খান রনির ব্যক্তিগত অফিস ভেঙে ফেলে। একই সাথে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ফেলে যাওয়া কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। সন্ধ্যা ৬ টায় এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন ঘটনায় সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম, আল মুমিন ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার হন।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, শিক্ষানগরী রাজশাহী উত্তাল হয়ে উঠে। সকাল থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। নগরীর খড়খড়ি এলাকায় অবস্থিত বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে সামনের রাজপথে অবস্থান নেয়। বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে থাকা মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়াসহ শহরের বিভিন্ন অংশে খন্ড খন্ড বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে কর্মসূচি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে আছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে করে আতংক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সকালে সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে কোটা বিরোধীদের বিপক্ষে পথসভা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের উপর নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জিয়া পরিষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সংগঠনের সভাপতি প্রফেসর ড. মোহা. এনামুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. ফরিদুল ইসলাম প্রেরিত এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
ময়মনসিংহে কোটাবিরোধী সন্দেহে রিকশাযাত্রীদের মারধর
ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, ময়মনসিংহে আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে প্রতিবাদে মানববন্ধন থেকে কোটাবিরোধী সন্দেহে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা যাত্রীদের মারধর করা হয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকজনকে দৌঁড়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ময়মনসিংহ নগরীর জেলা পরিষদের সামনের সড়কে এই মারধরের ঘটনা ঘটে। তবে পালিয়ে যাওয়া আহতদের নাম পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশালের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা যুক্ত হবার মুখে গতকাল বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হবার পরে আন্দোলনকারীরাও লাঠি নিয়ে রাজপথ অবরোধে সামিল হয়। বিএম কলেজে হামলার ঘটনায় শেরে এ বাংলা মেডিক্যাল কজে হাসপাতালে ৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নগরীর নবগ্রাম রোড-চৌমহনী, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকার নিয়ন্ত্রণ ছাত্রÑছাত্রীদের হাতেই ছিল।
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, নারায়ণগঞ্জে সকাল সাড়ে ১১ টায় নগরীর চাষাড়া প্রেসক্লাবে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এরপর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চাষাড়া চত্বর ঘুরে বঙ্গবন্ধুসহ প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
মিছিল থেকে বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুনে নানা লিখায় কোটা সংস্কারের দাবিতে ও ঢাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদ জানানো হয়।
সাভার ধামরাইরে বিভিন্ন মহাসড়ক অবরোধ
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে জানান, আশুলিয়ার বেসরকারি গণ-বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল এন্ড রিসার্চের (নিটার), বেপজা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মির্জা গোলাম হাফিজ কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জাবি অভিমুখে পদযাত্রা করে। এসময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও নবীনগর চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখলে উভয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে আশুলিয়ায় বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিরুলিয়া সেতুর কাছে গিয়ে সড়কে অবস্থান নেন। পরে তাঁরা পুনরায় বেলা আড়াইটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে খাগান এলাকায় যান।
শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি জানিয়ে জাবিতে সাভারের স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আট হাজার শিক্ষার্থী: জাবি সংবাদদাতা জানান, শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানিয়ে সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়সহ সাভারের বিভিন্ন স্কুল কলেজ থেকে প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এসে জড়ো হয়েছে। রাস্তায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের বাধা উপেক্ষা করে এসেছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিভিন্ন সেøাগান নিয়ে মূল গেইটসহ আরো কয়েকটি গেইট দিয়ে আসতে থাকে। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে আসা এক শিক্ষার্থী জানায়, নবীনগর, সাভারসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ছাত্রলীগ, যুবলীগ অবস্থান নিয়েছে। তারা আমদেরকে আসতে বাধা দিয়েছে। কিন্তু আমারা তাদের বাধা মানিনি। পরে আমরা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় তারা আসতে দিতে বাধ্য হয়েছে। গতকাল রাতে দিবাগত রাতে কয়েক দফায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার চালায় শাখা ছাত্রলীগ ও তাদের ভাড়াটেরা। পরে আন্দোলনকারীরা ভিসির বাসভবনে ঢুকলে সেখানেও হামলা চালায় আক্রমণকারীরা। এসময় পুলিশ প্রশাসনকে হামলাকারীদের জন্য পথ ছেড়ে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পরে সব হল থেকে শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে বের হয়ে আসেন। তারা হামলাকারীদের হটিয়ে ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভিসির বাসভনে অবরুদ্ধ শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এর পর থেকেই উত্তপ্ত জাবি ক্যাম্পাস।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর শাখা ছাত্রলীগের হামলার পর ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। ফলে ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এই হামলার ঘটনার প্রতিবাদে খোদ শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর পদত্যাগ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ‘ন্যাক্কারজনক’ হামলার প্রতিবাদে পদত্যাগ করছেন। গত রোববার রাত থেকে এ পর্যন্ত ফেসবুক স্ট্যাটাসে অনেকেরই পদত্যাগের খবর মিলছে। পদত্যাগকারীদের মধ্যে রয়েছেন, শেখ রাসেল হল শাখা ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ সামি (দফতর সম্পাদক শেখ রাসেল হল), শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ইমরান আহমেদ (বাংলা ৪৮), শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আফরিন আলম রিমি, নিয়ামুল আরফে (বিএমবি ৪৭), খাদিজা জুই (গণিত ৪৯), সিদরাতুল মুনতাহা (নবাব ফয়জুন্নেছা হল সেক্রেটারি), রিপনুল ইসলাম রবিন প্রমুখসহ অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মীরা।
এদিকে, এই কথাই হয়তো শেষ কথা’, ‘ভাই আমাদের বাঁচান’, এমন আকুতি করছিলেন গতকাল ১৫ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনে ভিসির বাসভবনে আটকে পড়া শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এই আকুতিতেও মন গলেনি জাবি ভিসি প্রফেসর মো. নূরুল আলমের। তিনি তখন দিব্যি রুমেই অস্থান করছিলেন। গত সোমবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী মিছিলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় শাখা ছাত্রলীগ। তার বিচার চাইতে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভিসির বাসভবনে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানেই হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও ভাড়াটিয়ারা। হামলার এক পর্যায়ে ভিসির বাসভবনে ঢুকে বারবার গেইট খুলে দেওয়ার আকুতি জানান শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এতেও মন গলেনি ভিসিসহ দায়িত্বশীল প্রশাসনিক ব্যক্তিদের।
কুবি শিক্ষার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে অর্ধশতাধিক ছাত্রলীগ নেতার পদত্যাগ
কুবি সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় হামলার চালায়। এই হামলার প্রতিবাদে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে শুরু করে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিভিন্ন হলের প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) পোস্ট দিয়ে পদত্যাগ করেছেন।
জানা যায়, বর্তমানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার দায়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হল, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। সদ্য পদত্যাগ করা শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত হলের আইন বিষয়ক সম্পাদক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে লিখেন, ছাত্র রাজনীতি ছিল আমার পছন্দের জায়গা, ভালোবাসার স্থান। গতকাল পর থেকে ছাত্রলীগের সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। কেউ আমাকে ডাকবেন না। দত্ত হল কারও বাপের না। সদ্য পদত্যাগকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান লিখেন, দুনিয়াই সবকিছু না, আখেরাত বলেও কিছু আছে। যে সংগঠনের কেউ মারা গেলে সবাই আলহামদুলিল্লাহ পড়ে এমন সংগঠনে আমার নাম না থাকুক।
নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করে পোস্ট করে লিখেন, আমি লজ্জিত যে আমি এমন সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলাম। সদ্য ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগকারী ও ২০২১-২২ ব্যাচের তানজিনা আক্তার লিখেন, আমি সহ নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের ১৬ তম ব্যাচের সকল মেয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা ছাত্রলীগ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। গতকাল থেকে ছাত্রলীগের কোনো প্রোগ্রামে আমরা যাবো না। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন একজন ছাত্র হয়ে আরেকজন ছাত্রের শরীরে এমন নির্মমভাবে যারা আঘাত করতে পারে সেই দল থেকে ইস্তফা দিলাম। শিক্ষার্থীদের আটকাতে ছাত্রলীগের দেয়া তালা ভেঙে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও বিশ্বরোডের পাশে অবস্থিত পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। এসময় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কয়েকহাজার শিক্ষার্থী যোগ দেন।
কোটা সংস্কারের দাবিতে উত্তাল ইবি
ইবি সংবাদদাতা জানান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল মঙ্গলবার বেলা এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা প্রাঙ্গণ থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটক সংলগ্ন মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় অর্ধ-সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। মিছিলে ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ঢাবিতে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই, ইত্যাদি সেøাগান দেন তারা । এসময় কোটা আন্দোলনকারীদের পক্ষে সংহতি জানিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারহা তানজীম তিতিল বলেন, তোমাদের যৌক্তিক আন্দোলনে একাগ্রতা প্রকাশ করছি। তিনি শিক্ষার্থীদের এ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন থেকে পিছপা না হওয়ার প্রত্যাশা করেন। সমাবেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের যৌক্তিক দাবিকে যেভাবে মন্তব্য করেছেন তা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। সারাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ভাই-বোনের উপর ছাত্রলীগের যে নির্মম হামলা হয়েছে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। কোটা সংস্কারের যৌক্তিক এক দফা দাবি মানতে হবে। যতদিন পর্যন্ত দাবি না আদায় হবে আমরা রাজপথে সংগ্রাম অব্যাহত রাখবো। পরে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সমাবেশটি সমাপ্ত হয়।
সাতক্ষীরায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল
সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিছিলে অন্যতম শ্লোগান ছিলো কোটা নয় “মেধা মেধা”, তুমি কে আমি কে “রাজাকার রাজাকার”। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তারা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফেরত আসে। সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ন্যায় সঙ্গত দাবি চাওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সরকার রাজাকারের ট্যাগ লাগানোর চেষ্টা করেছে। সরকারের পোষা বাহিনী দিয়ে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তান্ডব চালাচ্ছে। তাদেরকে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়েছে। সাতক্ষীরার শিক্ষার্থীরা এহেন কর্মকান্ডের সষ্ঠু বিচার দাবি জানিয়ে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে।
পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা জানান, সারা বাংলায় খবর দে,কোটা প্রথা কবর দে। এই সেøাগানে কোটা বাতিলের দাবিতে পঞ্চগড়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল দুপুরে মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের সামনে থেকে মিছিলটি বের হয়। শিল্পকলা একাডেমীর সামনে মিছিলে বাঁধা দেয় ছাত্রলীগ। তাদের সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বাকবিত-ায় ছেড়ে দেয় তারা। পরে মসজিদ পাড়া হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। সমাবেশে তারা সকল শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে নারী, প্রতিবন্ধী, অনুন্নত জনপদ, অনগ্রসর জাতিসত্তা ও বঞ্চিত শ্রেণীর জন্য যৌক্তিক মাত্রায় কোটা নিশ্চিত করে কোটা পদ্ধতি সংস্করণের দাবি জানান।
পাবনা জেলা সংবাদদাতা জানান, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে পাবনা-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এতে দুইপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা সেøাগানে বলেন আমার ভায়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবনা, সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে, মেধা না কোঠা, মেধা মেধা, কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক, আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই, আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম, দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ ইত্যাদি সেøাগানে সেøাগানে রাজপথ মুখরিত করেন তারা।
টাঙ্গাইলে কোঠা বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল শহরের বিভিন্ন সড়ক
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে আন্দোলনে উত্তাল শহরের বিভিন্ন পথ ও মহাসড়ক। এদিকে সকালে কোঠা বিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রলীগ অবস্থান নিলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তারা শহীদ মিনার ত্যাগ করে। সকাল ১১টায় কোঠা বিরোধী আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়। এর প্রেক্ষিতে জেলা ছাত্রলীগ সকাল থেকেই শহীদ মিনারে লাঠি-সোটা নিয়ে অবস্থান গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে কোঠা আন্দোলনকারীরা জমায়েত হতে থাকলে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় ছাত্রলীগের হামলায় একজন কোঠা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হয়। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন কলেজের কোঠা আন্দোলনকারীরা একত্রিত হয়ে টাঙ্গাইল পৌরউদ্যান ও প্রেসক্লাবের সামনে জমায়েত হয়। পরবর্তীতে টাঙ্গাইল ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের কোঠা আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে টাঙ্গাইল শহীদ মিনারের কাছাকাছি আসলে জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শহীদ মিনার এলাকা ত্যাগ করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোটা আন্দোলনকারীদের সভায় ছাত্রলীগের বাধা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদ সভায় বাধা দিয়েছে ছাত্রলীগ। এতে আন্দোলনকারীরা সংক্ষিপ্তভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করে। মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারি ফাহিম মুনতাসির জানান, মঙ্গলবার দুপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কার ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে সভার আয়োজন করা হয়। কর্মসূচির শুরুতেই জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক শাহদাৎ হোসেন শোভনসহ ছাত্রলীগের কর্মীরা সমাবেশস্থলে অবস্থাননেয়। এ সময় তারা আন্দোলনে জামাত-বিএনপির সম্পৃক্ত থাকার কথা উল্লেখ করে কোনো বিশৃঙ্খলা হলে দায় দায়িত্ব আন্দোলনকারীদের নয়ার কথা জানায়। এছাড়া ছাত্রলীগের কর্মীরা অনেকটা মারমূখী অবস্থানে থাকায় সমাবেশটি সংক্ষিপ্ত করা হয়। সমাবেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারি সানিউর রহমান, শাহালম পালোয়ান, আশিকুর রহমানসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহদাৎ হোসেন শোভন জানান, যৌক্তিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগ দেশের কোথাও বাধা দেয়নি। জামাত-বিএনপি এই আন্দোলনকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে বিশৃঙ্খলা করতে চাচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে তাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে জনগণের জানমাল রক্ষায় যেকোন ধরেণের অপতৎপরতাকে প্রতিহত করা হবে।
মানিকগঞ্জে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন মানিকগঞ্জে কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপরে সদর উপজেলার দিঘি এলাকায় মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ একাডেমিক ভবনের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি গড়পাড়া সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবার কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজের ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল
পটুয়াখালী জেলা সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় টিএসসি থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে মেইন গেইট দিয়ে লেবুখালী- বাউফল সড়ক দিয়ে মিছিলটি ১ নং গেট দিয়ে আবার ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে জয় বাংলার পাদদেশে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ শেষে বক্তব্য রাখেন শিক্ষার্থী মোশাইদুল ইসলাম মিলু, নুরুন্নবী সোহান, হাসিবুল এলাহি, আব্দুল আজিজ, ফজলে রাব্বি প্রমুখ।বক্তারা যে কোন পরিস্থিতিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন।
নোয়াখালীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ছাত্রলীগেরও পাল্টা মিছিল
নোয়াখালী জেলা সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালী জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) সহ নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এতে অংশ গ্রহণ করে । মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টায় “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন” র আয়োজনে নোয়াখালী শহরের বিশ্বনাথ থেকে পৌর বাজার পর্যন্ত হাজার- হাজার শিক্ষার্থীর স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিলটি হয়।
নরসিংদীতে ঢাকা সিলেট মহাসড়ক অবরোধ থাকে তিন ঘণ্টা
নরসিংদী জেলা সংবাদদাতা জানান, নরসিংদী জেলখানার মোড় ঢাকা সিলেট অবরোধ করে রেখেছে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা। বিকেল তিনটার দিকে কোটাবিরোধী ছাত্র ছাত্রীদের আন্দোলন পন্ড করার লক্ষ্যে করার লক্ষ্যে ৫০ থেকে ৬০ জনের ছাত্রলীগের একটি মিছিল প্রথমে এসে এক ছাত্রীকে মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করে তারপর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে। নরসিংদী জেলখানার মোড় ঢাকা সিলেট মহাসড়ক গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটা হইতে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত অবস্থান নেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
ধামরাই (ঢাকা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাই থানা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়কের মাঝখানে বসে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে রাখে। ফলে মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়ে হাজার হাজার যাত্রী। প্রায় ২ ঘণ্টা অবস্থানের পর শিক্ষার্থীরা স্থান ত্যাগ করে চলে যায়। এসময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে থানা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সতর্ক অবস্থান থাকে পুলিশ।
যশোর জেলা সংবাদদাতা জানান, যশোরে শিক্ষার্থীদের উপরে হামলা করার অভিযোগ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডারের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সাড়ে ১১টার দিকে যশোর জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্তরে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আন্দোলন চলাকালিন শিক্ষার্থীরা পানি পান করার জন্য ডিসি অফিস চত্তরে টিউবওয়েল যান। এসময় যশোর সন্তান কমান্ডার নেতৃবৃন্দরা বাঁশের লাঠি দিয়ে চার-পাঁচ জন শিক্ষার্থীকে মারপিট করে। ছত্রভঙ্গ হওয়ে আন্দোলনকারীরা পালিয়ে যান। পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলন কারী শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। মিছিলটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে।
কাপ্তাই বিএসপিআই শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (বিএসপিআই) শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ২০মি. সকল শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে ক্যাম্পাসের ভিতরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা জানান, পঞ্চগড়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের সামনে থেকে মিছিলটি বের হয়। শিল্পকলা একাডেমীর সামনে মিছিলে বাঁধা দেয় ছাত্রলীগ। তাদের সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বাকবিত-ায় ছেড়ে দেয় তারা। পরে মসজিদ পাড়া হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিরলে ৫ দিন ব্যাপি চতুর্থ উপজেলা কাব ক্যাম্পুরীর শুভ উদ্বোধন
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ
তারুণ্যের উৎসবে আনন্দের ঢেউ
মুক্ত বাতাসে বাবরের জুমার নামাজ আদায়
কাপ্তাই জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক ইউনিয়ন সিবিএ কর্তৃক শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ
কুষ্টিয়ায় দুষ্কৃতকারীদের হুমকিতে গড়াই খননকাজ বন্ধ,থানায় অভিযোগ
মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় আবু সাঈদকে নিয়ে প্রশ্ন
কম্বোডিয়ার পরিবর্তে অনৈতিক কাজে সউদী পাঠানোর প্রস্তাব পাসপোর্ট আটকে রেখে টাকা দাবি
গৌরনদীতে দাদাবাড়ি বেড়াতে এসে শিশু খুনের ঘটনায় ২ নারীসহ গ্রেফতার ৪
জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ভালুকা উপজেলা
ব্রাহ্মণপাড়ায় এইচএমপিভি সচেতনতায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রচারণা
চবি ছাত্রদলের প্রীতিভোজে হামলার অভিযোগে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
মতলবে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুর মৃত্যু
ভোট ডাকাতি করে ওবায়দুল কাদের চারবার এমপি হয়েছিল: ফখরুল ইসলাম
দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি নির্বাচন দিয়ে দেশটাকে স্থিতিশীলতায় নিয়ে আসুন : এ্যানি
কুয়েটে ‘ওবিই কারিকুলাম ডিজাইন টিচিং লার্নিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ
স্মার্টফোনের দাসত্ব থেকে মুক্তির উপায়
ডিমলায় ‘স্বপ্ন পূরণের প্রত্যয়ে আমরা, সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ’র ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
দারিদ্র্য বিমোচনে যাকাত : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ