কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় সারা দেশে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত। কারফিউ জারির পঞ্চম দিন গতকাল বুধবার সারা দেশে ছিল সংঘাত-সহিংসতামুক্ত। চলমান ঘটনায় সারা বরিশালে শতাধিক গ্রেফতার, খুলনায় ৩৪, রংপুরে বিএনপির ৩৩ নেতাকর্মী, ময়মনসিংহে ১৪ মামলায় আসামি ৪ হাজার, নিকলীতে বিএনপির ৬ জন ও বগুড়ার আদমদীঘিতে বিএনপির ১৯ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলবাহিনী। এদিকে বিভিন্ন জেলায় ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করছে পরিস্থিতি। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে’র প্রতিবেদনে-

বরিশালে শতাধিক গ্রেফতার
নাছিম-উল-আলম, বরিশাল থেকে জানায়, প্রায় এক সপ্তাহ পরে সরকারি ও আধাসরকারি অফিস ব্যাংকসমূহ খুলে দেওয়ায় বরিশাল অঞ্চলে জনমনে অনেকটাই স্বস্তি নেমে এসেছে। বরিশাল মহানগরীতে বুধবার সকাল ৯টা সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। তবে কারফিউর আগে ও পরে আইনশৃঙ্খলা তৎপরতা দেখা গেছে। গতকাল সকাল ৭টায় সেনাবাহিনীর একটি টিম বরিশাল মহানগরী, ফরিদপুর ও বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কে অভিযান পরিচালনা করে। প্রায় এক সপ্তাহ পরে ব্যাংকগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। সরকারি-আধাসরকারি অফিসগুলো যে যার প্রয়োজনে কাজ করার জন্য ছুটে গেছেন। এদিকে কোটাবিরোধী আন্দোলনে ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। সঠিক গ্রেফতার সংখ্যা না জানা গেলেও বিভিন্ন সূত্রে ইতোমধ্যে শতাধিক সংখ্যা জানা গেছে।

খুলনায় গ্রেফতার ৩৪
আসাফুর রহমান কাজল, খুলনা থেকে জানান, খুলনায় কারফিউর ৫ম দিনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্রকারীদের সন্ত্রাস ও নাশতকা মামলায় খুলনা মহানগরে ৩ মামলায় ৯ জনকে ও জেলায় ১২টি মামলায় ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খুলনায় কারফিউ শিথিল ছিল। খোলা ছিল অফিস আদালত দোকানপাট। ফলে এ সময়ে সড়কে ছিল মানুষের ভিড়। সাধারণ যানবাহনের বিচরণ ছিল সকল সড়কে। তবে ছিলা না ইন্টারনেট। ফলে অনলাইন ভিত্তিক কার্যক্রমে ছিল বিড়ম্বনা।

রংপুরে বিএনপির ৩৩ নেতাকর্মী গ্রেফতার : আজ আসছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আব্দুল হালিম আনছারী, রংপুর থেকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর মহানগর ও রংপুর জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা বিএনপির অন্যতম সদস্য ও রংপুর সিটির মেয়র প্রার্থী কাউসার জামান বাবলাসহ ৩৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ছয় দিনে এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে পুলিশের পক্ষ থেকে ৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব আবুল কাশেম বাদী হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বাদী হয়ে আরও একটি মামলা করেন। এনিয়ে মামলার সংখ্যা ১০টি। এদিকে, রংপুর নগরে আবার কর্মব্যস্ততা ফিরেছে। গতকাল সকালে নগরে রিকশা, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন পরিবহনের যানজটও চোখে পড়েছে। নগরের পুলিশ সুপার কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সামনের সড়কের সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। নগরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে পুলিশ সদস্যদের পাহারায় থাকতে দেখা যায়। এদিকে আজ দুপুরে রংপুরে আসছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সকাল ১১টায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন।

ময়মনসিংহে ১৪ মামলায় আসামি ৪ হাজার
মো. শামসুল আলম খান, ময়মনসিংহ থেকে জানান, সাম্প্রতিক ঘটনায় ময়মনসিংহে ১৪টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামি হয়েছে প্রায় চার সহস্রাধিক। গতকাল বুধবার বিকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. শামীম হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত তিনদিনে জেলা ডিবি ও থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে মোট ১২২ জন গ্রেফতার হয়। তাদেরকে ইতিমধ্যে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক লিটন আকন্দ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির কোষাধক্ষ্য রতন আকন্দ, দক্ষিণ জেলা কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন খান, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন জনি, বাকৃবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক, মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজীব, বিএনপিনেতা নূর মোহাম্মদ মীর, আনোয়ারুল ইসলাম রতন প্রমুখ।

নিকলীতে বিএনপির ৬ জনকে গ্রেফতার
মো. হেলাল উদ্দিন, নিকলী (কিশোরগঞ্জ) থেকে জানান, নিকলীতে পুলিশের সাথে কোটা সংস্কা আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আশরাফ উদ্দিনসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট বদরুল আলম মিঠু বলেন, অন্যায়ভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে। এতে উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীর মাধে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রতিদিন তাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশি অভিযানের ফলে নেতাকর্মীরা নিজ বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যাচ্ছে। এ কারণে সমস্থ উপজেলায় বিএনপি শূন্য।
এবিষয়ে নিকলী থানার ওসি মোশারফ হোসেন মুঠোফোনে গ্রেফতারে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বগুড়ার আদমদীঘিতে বিএনপির ১৯ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার
মো. মনসুর আলী, আদমদীঘি (বগুড়া) থেকে জানান, বগুড়ার আদমদীঘিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশ গত কয়েকদিনে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঘনের ১৯ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। আদমদীঘি থানা পুলিশ জানায়, কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- শান্তাহার পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শহরের চা বাগান এলাকার মামুনুর রশিদ (৫০) প্রবাসি পাড়ার সুমন ইসলাম (৪০) কালসার মানিক (৩৮) ঢাকা পট্টির সিজ্জাতুল ইসলাম (২৮) উপুরপরতা গ্রামের জাহিদুর রহমান নিপু (৪৩) আব্দুল মান্নানসহ ১৯ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। আদমদীঘি থানার ওসি রাজেস কুমার গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

নাটোরে বিএনপি জামায়াতের আরোও ১৭ নেতাকর্মী আটক
মো. আজিজুল হক টুকু, নাটোর থেকে জানান, নাটোরে বিএনপি জামায়াতের আরোও ১৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে জেলা পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে নাশকতা ও পুলিশ পেটানো মামলায় তাদের আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঞাঁর বরাতে জানা যায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জেলায় সকাল ১০ টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে।

রাজশাহী নগরে প্রাণ ফিরেছে
মো. রেজাউল করিম রাজু, রাজশাহী থেকে জানান, কয়েক দিন ধরে ঝিমিয়ে থাকা রাজশাহী নগরে গতকাল যেন প্রাণ ফিরেছে। নগরের সব বিপণিবিতান খোলা হয়েছে। কর্মজীবী লোকজন পাঁচ দিন বন্ধের পর আজ কর্মস্থলে গেছেন। গতকাল সকাল থেকে নগরের সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। বাস চালু হওয়ায় রাজশাহীতে আটকে পড়া লোকজন বিভিন্ন গন্তব্যে ফিরতে শুরু করেছেন। গত শনিবার রাতে কারফিউ জারি হলে সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও স্থবিরতা নেমে আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় লোকজন বেশি বাইরে বের হননি। কারফিউ শিথিলের সময় অল্প কিছু মানুষ জরুরি প্রয়োজনে বের হতেন। গতকাল সকাল ১০ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকায় মানুষের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে। ফিরেছে স্বস্তি। রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, কারফিউ চলাকালে অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে না পেরে সমস্যায় পড়েছেন। এ কারণে কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে। রাজশাহীতে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী তৎপর রয়েছে।

বগুড়ায় ফিরেছে কর্মব্যস্ততা
মহসিন আলী রাজু, বগুড়া থেকে জানান, বগুড়ায় নগরে আবার কর্মব্যস্ততা ফিরেছে। গতকাল সকালে নগরে রিকশা, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন পরিবহনের যানজটও চোখে পড়েছে। নগরের পুলিশ সুপার কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সামনের সড়কের সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। নগরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে পুলিশ সদস্যদের পাহারায় থাকতে দেখা যায়। কারফিউ চলাকালে অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে না পেরে সমস্যায় পড়েছেন। কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী তৎপর রয়েছে।

সিলেটে কারফিউর পঞ্চম দিন স্তব্ধ জনজীবন
ফয়সাল আমীন, সিলেট থেকে জানান, সিলেটে চলমান কারফিউ’র চতুর্থ দিন ছিলো গতকাল । যথারীতি স্তব্ধ ছিলো জনজীবন। দুপুর ১টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকলেও সকাল থেকেই রাস্তায় লোকজনের আনাগোনা গেল কয়েকদিনের চেয়ে বেশি দেখা গেছে। তবে মানুষজনের আনাগোনা বাড়লেও রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা ছিল খুব কম। ইন্টারনেট না থাকায় অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সিলেটবাসীর। সবাই মুখিয়ে আছে ইন্টারনেটের জন্য। শহরে বেশকিছু রিকশা দেখা গেলেও সিএনজি ছিল গুটিকয়েক, যার প্রায় সবগুলো ছিল রিজার্ভ। এদিকে চলমান ঘটনায় সিলেটে বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের মাঝে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। এবং যে যেভাবে পারছেন নিজেদের রক্ষার জন্য নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশানার জাকির হোসেন জানান, সিলেটে যে নাশকতা ও সহিংসতা হয়েছে তার সাথে ছাত্ররা জড়িত ছিল না। ছাত্রদের সাথে বিভিন্ন সন্ত্রাসী দল গোষ্ঠী এই নাশকতা চালিয়েছে। তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের প্রত্যেককে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।

শ্রীমঙ্গলজুড়ে ইন্টারনেট না থাকায় চরম ভোগান্তি
আনোয়ার হোসেন জসিম, শ্রীমঙ্গল থেকে জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি, ইন্টারনেট বন্ধ এবং সারা দেশে কারফিউ জারি থাকায় শ্রীমঙ্গলে বিপর্যয়ের মুখে ব্যবসাবাণিজ্য। ইন্টারনেট-ভিত্তিক লেনদেনে চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংক-বীমায় সবধরনের আর্থিক লেনদেনে অনেক ভোগান্তি পেতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এখন পর্যন্ত দূর পাল্লার কোনো যানবাহন যাতায়াত করছেনা। চলমান ঘটনার কারণে পর্যটন হোঁচট খাচ্ছেন চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলের পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। বছরের এই সময়ে শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে প্রচুর পর্যটক থাকলেও সেগুলো এখন ফাঁকা।

গাজীপুরে শিল্পকারখানা চালু
দেলোয়ার হোসেন, গাজীপুর থেকে জানান, চার দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল বুধবার সকাল থেকে গাজীপুরে শিল্পকারখানা খুলেছে। তবে কারখানাগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে শ্রমিকের উপস্থিতি কিছুটা কম বলে জানা গেছে। কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন ঘিরে দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজীপুরের বিভিন্ন স্থাপনা। তবে সংঘাতময় পরিস্থিতি গত দুই দিন অনেকটা স্বাভাবিক হলেও জনমনে এখনো আতঙ্ক কাটেনি। এখনো স্বাভাবিক হয়নি যান চলাচল। সকাল থেকে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের যৌথভাবে টহল দিতে দেখা গেছে।

সকাল থেকে গাজীপুরের দুই মহাসড়ক ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, সেখানে নেই চিরচেনা চিত্র। দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল না করলেও স্বল্প পরিসরে স্বল্প দূরত্বের পরিবহনগুলো চলাচল করছে। লোকজন এখনো স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম বাইরে যাচ্ছেন। জরুরি প্রয়োজনে যারা বের হচ্ছেন, তারা অটোরিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে যাচ্ছেন। মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের টহল আছে।
সকালে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীতে টহলে এসে বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রায় চার-পাঁচ দিন গার্মেন্টস বন্ধ ছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হওয়ায় গার্মেন্টস কারখানা খুলে দিয়েছে। এখন গার্মেন্টস শিল্পে যাতে কোনা দুষ্কৃতকারী এসে নাশকতা সৃষ্টি না করতে পারে, নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য আমরা নিয়োজিত আছি।’

গাজীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে ১৮ জুলাই থেকে। তবে সেই আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয় ১৯ জুলাই দুপুরের পর। শহরের শিববাড়ী, বাসস্ট্যান্ড, নেয়ামত সড়ক, ডুয়েট, চন্দনা চৌরাস্তা, গাছা, বোর্ডবাজার, বড়বাড়ি, টঙ্গী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক ধাওয়া–পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। টানা দুই দিন সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে পুরো এলাকা, ঘটে প্রাণহানি। আগুন দেওয়া হয় চারটি পুলিশ বক্স, পুড়িয়ে দেওয়া হয় অর্ধশত গাড়ি। হামলা করা হয় সড়ক ভবন, ডেসকো, থানাসহ সরকারি অনেক স্থাপনায়। তবে গত সোমবার থেকে গাজীপুরের কোথাও নতুন করে হামলা বা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।