হাইকোর্টের মন্তব্য

হেলিকপ্টার থেকে গুলি এবং গুলির নির্দেশদাতা সবাই অপরাধী

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম

যারা হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেছে এবং গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে তারা সবাই অপরাধী। বলা যায় আমরা যারা এই সিস্টেমের সঙ্গে ছিলাম তারা সবাই অপরাধী। এ মন্তব্য করেছেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ এবং বিচারপতি বজলুর রহমানের ডিভিশন বেঞ্চ।

গতকাল বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাড়িতে থেকেও গুলিতে শিশু নিহত হওয়ার কারণ জানতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানিকালে হাইকোর্ট উপরোক্ত মন্তব্য করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে আজ (বৃহস্পতিবার) আদেশের তারিখ ধার্য করেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার।

এর আগে তিনি গত ৩১ জুলাই রিটটি ফাইল করেন। রিটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র কার গুলিতে যেসব শিশু নিহত হয়েছে- সেই হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট করেন তিনি। রিটে বিচার বিভাগীয় তদন্ত ছাড়াও নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদানের আর্জি জানানো হয়। এছাড়া পরবর্তী সময়ে যদি আরো কোনো শিশু গুলিতে নিহত হওয়ার সন্ধান পাওয়া যায় তাদের পরিবারও এই ক্ষতিপূরণের আওতাভুক্ত করা হবে।

রিটের শুনানিকালে উচ্চ আদালত বলেন, যারা হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেছে ও নির্দেশ দিয়েছে তারা সবাই অপরাধী। বলা যায় আমরা যারা এই সিস্টেমের সঙ্গে ছিলাম তারা সবাই অপরাধী। আদালত আরো বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রজ্ঞাপনে আন্দোলনকারীদের দোষী করা হয়েছিল।
আন্দোলন চলাকালে বাড়িতে এবং বাড়ির আশেপাশে নিহত শিশুদের নাম যুক্ত করা হয় রিটে। এর মধ্যে রয়েছে, আব্দুল আহাদ (৪), রিয়া গোপ (৬), সাফকাত সামির (১১), নাইমা আক্তার সুলতানা (১৫), ইফাত (১৬), আহমিদ (১৪) ও মোবাররক (১৩)।

একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘জানালার পাশে এসে দাঁড়াতেই গুলি এসে কেড়ে নিলো শিশুটিকে’, ‘বাসার ছাদে বাবার কোলে ঢলে পড়ে ছোট্ট মেয়েটি’, ‘বারান্দায় দাঁড়ানো আহাদের ডান চোখে লাগে গুলি’ এবং আরেক জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘ফুল হয়ে ফোটার আগেই ঝরলো ওরা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট করা হয়।

রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র‌্যাবের মহাপরিচালককে (ডিজি) বিাবদী করা হয়েছে।
অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, জাতিসংঘের কনভেশন ও সংবিধান অনুযায়ী শিশুদের বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। সেখানে কোনো শিশুকে বিনা কারণে হত্যা করা হয়েছে কি না, সেটি নিয়ে জনস্বার্থে সুপ্রিমকোর্টের একজন আইনজীবী হিসেবে রিটটি করেছি। রিটে শিশুদের প্রত্যেকের পরিবারকে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে আর্জি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে এসব ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত চাওয়া হয়েছে।
গত ১৯ জুলাই বিকেলে আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকার এক বাড়িতে গুলি লাগে শিশু আহাদের (৪)। সে বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। তার ডান চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাথার ভেতরেই আটকে যায়। আহাদের বাবা আবুল হাসান আয়কর বিভাগের উচ্চমান সহকারী। তার বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া গ্রামে।

একই দিন নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকায় বাসার ছাদে খেলার সময় মাথায় গুলি লাগে রিয়া গোপের (৬)। বাসার সামনে হইহুল্লোর শুনে বাবা ছুটে যান ছাদ থেকে মেয়েকে ঘরে আনতে। মেয়েকে কোলে নিতেই একটি বুলেট এসে বিদ্ধ হয় মাথায়। মুহূর্তেই ছোট্ট দেহটি নিথর হয়ে পড়ে বাবার কোলে।

মিরপুর ১৪ নম্বরের হাউজিং স্টাফ কোয়ার্টারে গুলিতে নিহত হয় সাফকাত সামির (১১) ও তার চাচা মশিউর রহমান (১৬)। তারা বাসার বেডরুমে জানালার পাশে টেবিলে বসে পড়াশোনা করছিল। এসময় একটি গুলি মশিউরের ডান কাঁধ ভেদ করে সামিরের ডান চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। সামিরকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এছাড়া রাজধানীর উত্তরায় কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন বাসার চারতলার বারান্দায় গুলিতে নিহত হয় নাইমা আক্তার সুলতানা।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ১৯ জুলাই উত্তরায় ৫ নম্বর সড়কে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছিল। সেখানে পুলিশ-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। ওই সড়কের পাশেই একটি ভবনের চারতলায় পরিবারের সঙ্গে থাকতো উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী নাইমা আক্তার সুলতানা। বারান্দায় শুকানো কাপড় আনতে গিয়ে মাথায় গুলি লাগে তার। সেখানেই লুটিয়ে পড়ে সে। পরে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ২০ জুলাই নাইমাকে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শুধু নির্বাচনের জন্য মানুষ জীবন দেয়নি : আসিফ মাহমুদ
চাঁদপুরে সেভেন মার্ডার: নৃশংসতার বর্ণনা দিলো র‌্যাব
আন্দোলনে নামলেন এবার ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা
রূপগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক নিহত
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের দেশের গর্ব : সেনাপ্রধান
আরও

আরও পড়ুন

চুয়াডাঙ্গায় সারাবাংলা ৮৮ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সপ্তাহ ব্যাপী কম্বল বিতরণ কার্যক্রম শুরু

চুয়াডাঙ্গায় সারাবাংলা ৮৮ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সপ্তাহ ব্যাপী কম্বল বিতরণ কার্যক্রম শুরু

কালিগঞ্জে বিভিন্ন সড়ক মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ ডাম্পার

কালিগঞ্জে বিভিন্ন সড়ক মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ ডাম্পার

রাজনৈতিক মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে জামির আলী মার্কেট দখলের পাঁয়তারা

রাজনৈতিক মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে জামির আলী মার্কেট দখলের পাঁয়তারা

দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজনৈতিক সংকট ,অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন আদালতে হাজির হননি

দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজনৈতিক সংকট ,অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন আদালতে হাজির হননি

সালথায় দু'গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫, বাড়ি-ঘর ভাঙচুর

সালথায় দু'গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫, বাড়ি-ঘর ভাঙচুর

শুধু নির্বাচনের জন্য মানুষ জীবন দেয়নি : আসিফ মাহমুদ

শুধু নির্বাচনের জন্য মানুষ জীবন দেয়নি : আসিফ মাহমুদ

নোয়াখালীর কবিরহাটে ১৩ বান্ডেল জাল ডলার ও টাকা জব্দ, গ্রেপ্তার-১

নোয়াখালীর কবিরহাটে ১৩ বান্ডেল জাল ডলার ও টাকা জব্দ, গ্রেপ্তার-১

জম্মু-কাশ্মীরে ৫ ভারতীয় সেনা নিহত

জম্মু-কাশ্মীরে ৫ ভারতীয় সেনা নিহত

অ্যাবারক্রোম্বি সিইও যৌন পাচার মামলায় অভিযুক্ত

অ্যাবারক্রোম্বি সিইও যৌন পাচার মামলায় অভিযুক্ত

চাঁদপুরে সেভেন মার্ডার: নৃশংসতার বর্ণনা দিলো র‌্যাব

চাঁদপুরে সেভেন মার্ডার: নৃশংসতার বর্ণনা দিলো র‌্যাব

ধার্মিক জামাই পেলে শোবিজ ছাড়বেন প্রিয়াঙ্কা, শেষ ইচ্ছা হাফেজ হওয়া

ধার্মিক জামাই পেলে শোবিজ ছাড়বেন প্রিয়াঙ্কা, শেষ ইচ্ছা হাফেজ হওয়া

আন্দোলনে নামলেন এবার ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা

আন্দোলনে নামলেন এবার ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা

রূপগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক নিহত

রূপগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক নিহত

চাঁদপুরে জাহাজে সাতজনকে হত্যা: সেই ইরফান গ্রেপ্তার

চাঁদপুরে জাহাজে সাতজনকে হত্যা: সেই ইরফান গ্রেপ্তার

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় মোজাম্বিকে নিহত ১০৩

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় মোজাম্বিকে নিহত ১০৩

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের দেশের গর্ব : সেনাপ্রধান

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের দেশের গর্ব : সেনাপ্রধান

ব্যারিস্টার ফুয়াদের ছবি সম্পাদনা করে ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার

ব্যারিস্টার ফুয়াদের ছবি সম্পাদনা করে ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার

সৈয়দপুরে তালাবন্ধ ঘর থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার

সৈয়দপুরে তালাবন্ধ ঘর থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার

পাকিস্তান থেকে সরাসরি আসছে জাহাজ, আমদানি বেড়েছে ২১ শতাংশ

পাকিস্তান থেকে সরাসরি আসছে জাহাজ, আমদানি বেড়েছে ২১ শতাংশ

হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশের ও নিজের সর্বনাশ করেছে, বাপকে ডুবিয়েছে, দেশকে ডুবিয়েছে: ফজলুর রহমান

হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশের ও নিজের সর্বনাশ করেছে, বাপকে ডুবিয়েছে, দেশকে ডুবিয়েছে: ফজলুর রহমান