খুবির ভিসিসহ সকল প্রভোস্ট ও প্রকল্প পরিচালকের পদত্যাগ
২১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ এএম
পদত্যাগ করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর প্রেরিত পদত্যাগপত্রে তিনি ‘ব্যক্তিগত কারণ’ উল্লেখ করেন। এর আগে দুপুরে তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে পদত্যাগের সিদ্ধান্তের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
একই সাথে পদত্যাগ করেছেন প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী। আরও পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি হলের প্রভোস্টবৃন্দ। এছাড়াও পদত্যাগ করেছেন সিন্ডিকেটের দুইজন সদস্য, শারীরিক শিক্ষা চর্চা বিভাগের পরিচালক, আইকিউএসির পরিচালক ও অতিরিক্ত পরিচালকবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক। বিদায়ী রেজিস্ট্রার এসব পদত্যাগের কথা নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে এক বদলীর আদেশে জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মো. মঈনুল হোসেন, উপাচার্যের সচিব সঞ্জয় সাহা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. হাসানুজ্জামানসহ ১৩ কর্মকর্তাকে তাদের কর্মস্থল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য দফতরে বদলী করা হয়।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের এই পদত্যাগকে অনেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিনা মেঘে বজ্রপাত হিসেবে দেখছেন কর্মরত এবং সাবেক অনেক শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা। শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগের পর বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ অনেকের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারীদের দাবি বা শ্লোগান, অবরুদ্ধ রাখা, কার্যালয়ে তালা বন্ধ রাখার মতো ঘটনা ঘটলেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো ব্যতিক্রম। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও তার কাজের পরিচ্ছন্নতা, সততা ও শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাওয়াতে সবাই অত্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলো। কেবল বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের চোখে তিনি ছিলেন ক্লিন ইমেজের। তাঁর সাথে উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রারও ছিলেন ক্লিন ইমেজের। তাদের কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। বলা চলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশেই রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ ভিসির পদত্যাগের খবরে বিশ্ববিদ্যালয় যেনো হতাশার ছায়া নেমে আসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী ফারহানা ইয়াসমিন আশা ভিসির পদত্যাগের খবরে বলেন, আমি মর্মাহত। কারণ, স্যার এই কোটা আন্দোলন অত্যন্ত সুন্দরভাবে সামলিয়েছেন। তিনি ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করতে দেননি। তিনি যা করেছেন তা আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে করতে পারেনি। তিনি সারাদেশে ভিসিদের মধ্যে উদাহরণ। তিনি খুবই ভালো শিক্ষক, গবেষক। আমি তাঁর পদত্যাগের বিষয়টি মেনেই নিতে পারছি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের সাদিয়া তো ভিসির পদত্যাগের খবরে কেঁদেই ফেলেন। তিনি বলেন, আমি তো ভাবতেই পরছি না। স্যার, ওরিয়েন্টেশনের দিনে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন এবং একটি সেশন পরিচালনা করেছিলেন তা আমার জীবনে বড় পাওয়া। আমি কখনও তা ভুলেনি। তাঁর সেই মোটিভেশনাল স্পিচ আমার জীবনের অনেক কিছুই মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। স্যার ভিসি হয়ে অত্যন্ত ব্যস্ত থাকলেও ক্লাস নিতেন। ঠিক ৯টার এক দু মিনিট আগে ক্লাসে ঢুকতেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক প্রফেসর ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী বলেন, ভিসি হিসেবে প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কাজ করার অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মো. সাইফুদ্দিন শাহ্ বলেন, ভিসি প্রফেসর ড. মাহমুদ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। দেশের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম ওবিই কারিকুলা প্রবর্তন, পিএইচডি গবেষণায় গুরুত্ব প্রদানে আমার কর্মমেয়াদে যে উদ্যোগ নিয়েছিলাম, তিনি সেক্ষেত্রে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করেছেন। আইকিউএসিকে অত্যন্ত শক্তিশালী করেছেন। সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা, গবেষণা, উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিয়ে গেছেন। আমি তার পদত্যাগ প্রত্যাশা করি না।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেবল শিক্ষা গবেষণা ও অবকাঠামোগতভাবেই এগিয়ে নেয়া নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অবস্থান করে নেয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পরিবারের মতো পরিবেশ সৃষ্টির কারণে সকলের সহযোগিতা প্রাপ্তিতে ভিসি প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেনের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টারই ফসল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি মানুষের সীমাহীন আস্থার সৃষ্টি। আর এ কারণেই ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থান পূর্ববর্তী ও পরবর্তী পরিবর্তীত পরিস্থিতিতেও একমাত্র খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসই রয়েছে রক্ষিত, যেখানে একটি ঢিলও ছোড়েনি কেউ। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমর্যাদা যে উচ্চতায় নিয়েছেন এটা তারই নিদর্শন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৫ মে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে যোগদান করেন প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। এ ছাড়া প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর প্রো-ভিসি হিসেবে যোগদান করেন। ট্রেজারার হিসেবে প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট যোগদান করেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সচিবালয়ে প্রবেশের সব অস্থায়ী পাস বাতিল, ঢুকতে পারবেন না সাংবাদিকরাও
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৩৭, আহত ৯৮
ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে সিলেট সীমান্তে আরেক যুবক খুন
খাঁটি মুসলমান হতে হলে পরিপূর্ণভাবে ইসলাম মেনে চলতে হবে-ছারছীনা পীর সাহেব
জুলাই হতাহতের বিচার আদৌ হবে কিনা সংশয় স্বজনের মধ্যে
হরিণাকুন্ডুতে যুবদল সভাপতির উপর গুলি অল্পের জন্য রক্ষা
সচিবালয়ে আগুন, টঙ্গী হত্যাকাণ্ড ও ইসকনের আস্ফালন একই সূত্রে গাঁথা : যুব সমাবেশে মাওলানা মামুনুল হক
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে :পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সেই সুখরঞ্জন বালির ভারতে গুমের লোমহর্ষক কাহিনী
খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন শাস্তি হলে হাসিনার সুযোগ নেই :অ্যাটর্নি জেনারেল
থার্টি ফাস্ট নাইট নিষিদ্ধ করতে হবে আইন করে :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান
হাসিনা-জয়ের ৩০০ মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের প্রমাণ পেয়েছে এফবিআই
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের রহস্য নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন
সংস্কারের সঙ্গেই নির্বাচন প্রস্তুতি
‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে বিকল্প সোলার সিস্টেম চালু করুন’
আসিফ মাহমুদের হেলিকপ্টারে ছয় দিনে ২৮ বার সফর বিতর্ক
বন্ধ রয়েছে পায়রা বন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রম
ডেঙ্গুতে মৃত্যুহীন ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৫৩
নববর্ষ উদযাপনে ৭ বছরে শব্দদূষণ বেড়েছে ৭৪ শতাংশ
হাসিনা পরিবারের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরুর পরই সচিবালয়ে আগুন : রিজভী