স্বাস্থ্য খাতে চরম বিশৃঙ্খলা
২১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০২ এএম
দেশের স্বাস্থ্য খাতে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। বৈষম্য বিরোধী চিকিৎসক কর্মকর্তার ব্যনারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর লাগাতার ঘেরাও, মৌন মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে। এদের মারমুখী সেøাগান ও আচরনে আতঙ্কিত হয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অধিদপ্তরে অনুপস্থিত থাকছেন। সরকার পরিবর্তনের পর ক্যাডার ও ননক্যাডারদের দুটি বিপরিতমুখী আদেশ জারি হওয়ায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মরত কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মীরা দাবি আদায়ে ঢাকায় আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল-বিএমএন্ডডিসি মেডিকেল এ্যাসিট্যান্টদের নিবন্ধন দিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে দেশের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলে শুরু থেকেই এ খাতে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিপ্তরের দুই অতিরিক্তি মহাপরিচালককে ওএসডি করলেও তাদের স্থলে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অপরদিকে স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরে নতুন একজন মহাপরিচালক নিয়োগ করা হলেও বৈষম্য বিরোধী চিকিৎসক কর্মকর্তাদের প্রতিরোধে তিনি এখন পর্যন্ত অফিস করতে পারেননি। অভিযোগ আছে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ডা. রোবেদ আমিন আওয়ামী সরকারের দালাল। তিনি হাসিনা সরকারের নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। এমনকি শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে সর্বদা মাঠে ছিলেন। এছাড়া অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রশাসন এবং পরিচালক প্রশাসন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। অথচ এ নিয়ে মন্ত্রণালয় উদাসীনতা লক্ষনীয়।
তারা বলছে, অন্যান্য উপদেষ্টাদের মতো স্বাস্থ্য উপদেষ্টার তৎপরতা লক্ষনীয় নয়। এক্ষেত্রে দ্রুত স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিশন করে দেশের স্বাস্থ্য বা জনগনের স্বাস্থ্য নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নয়তো দেশের স্বাস্থ্য সেবা মারাত্মক বিঘ্নিত হবে, এমনকি স্বাভাবিক সেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
জানা গেছে, গত ৫ আগষ্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ম্যাটস, ডিএমএপ, এলএমএ পাশ করা মেডিকেল এ্যাসিসটেন্টরা বিএমডিসি থেকে নিবন্ধন নিয়ে নেয়। এতে এমবিবিএম ও বিডিএস চিকিৎসকদেও মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এর প্রতিবাদে এমবিবিএম ও বিডিএস চিকিৎসকরা আগামী আজ ২১ আগষ্ট সকাল ১০টায় লাং মার্চ টু বিএমডিসি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
এর প্রেক্ষিতে বিএমডিসির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী কোন মেডিকেল প্রতিষ্ঠান থেকে তিন বছরের কম নয় এরূপ সময় ব্যাপি মেডিকেল চিকিৎসা-প্রশিক্ষণ সমাপ্তির পর উক্ত মেডিকলে চিকিৎসা ডিপ্লোমাধারী মেডিকেল সহকারীরা এই আইনের অধীনে কাউন্সিল কর্তৃক নিবন্ধন হইবার যোগ্য। তবে ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রী প্রাপ্তরা ছাড়া কেউ ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারবে না। তবে এটাকে স্ববিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিরা। কারণ বিগত সরকার হোমিও কাউন্সিল আইনে গ্রাজুয়েট হোমিও ফিজিশিয়ানদের ডা. ব্যবহারের স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন ২০২৩’ পাশ হয়েছে। এর মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাশাস্ত্রে ডিগ্রিধারীরা এখন থেকে নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন। ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের অনুপস্থিতিতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন আইনটি পাশের জন্য জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন। কণ্ঠভোটের মাধ্যমে আইনটি পাশ হয়।
এদিকে পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টারস এসোসিয়েশন তাদের বকেয়া ভাতাসহ বিভিন্ন দাবিতে মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস এন্ড সার্জনস -বিসিপিএস ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে। গত তিন দিন ধরে দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে ঢাকায় অবস্থান করছেন কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারা। তারা চাকরী রাজস্যখাতে অন্তভূক্তির দাবিসহ নানা দাবিতে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তারা বলছেন, দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে একই বেতনে চাকরি করায় বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার ‘কমিউনিটি হেলথ্ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি) দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী লাগাতার কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত সোমবার রাজধানীর শাহবাগে সারা দেশ থেকে আসা ১৪ হাজার সিএইচসিপি এ দাবি জানান। সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, দেশে প্রতি ৬ হাজার প্রান্তিক জনগোষ্ঠির দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য-পুষ্টি সেবা পৌঁছে দিতে প্রতিটা কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন করে সিএইচসিপি দিন-রাত পরিশ্রম করছেন। এখন তাদের প্রধান দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে সবার চাকরি রাজস্বখাতে নিতে হবে।
এদিকে ২০২৪’র গণ-হত্যার নায়ক খুনি হাসিনার ফাঁসির দাবীতে এবং ফ্যাসিষ্ট খুনি হাসিনার দোসর, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটকারী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অযোগ্য দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণ ও বিচারের দাবীতে স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের (টিবিগেইট-মহাখালী) সম্মুখে বিক্ষোভ-সমাবেশ পালন করছে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের সংগঠন এম-ট্যাব।
সামগ্রীক বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক্তন পরিচালক প্রফেসর ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, এই বিশৃঙ্খলতা ঠেকাতে ভূমিকা নিতে হবে মন্ত্রণালয়কে। দাবি প্রত্যাশি সব গ্রুপের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এক্ষেত্রে একটি কমিশন করতে হবে। কমিশনের পরার্মশের ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান করতে হবে। নয়তো দেশের স্বাস্থ্য সেবা বন্ধ হয়ে যাবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ভারতে ৯ মাস কারাভোগের পর ৬ বাংলাদেশী জেলেকে হস্তান্তর করেছে ভারতীয় পুলিশ
সচিবালয়ে প্রবেশের সব অস্থায়ী পাস বাতিল, ঢুকতে পারবেন না সাংবাদিকরাও
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৩৭, আহত ৯৮
ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে সিলেট সীমান্তে আরেক যুবক খুন
খাঁটি মুসলমান হতে হলে পরিপূর্ণভাবে ইসলাম মেনে চলতে হবে-ছারছীনা পীর সাহেব
জুলাই হতাহতের বিচার আদৌ হবে কিনা সংশয় স্বজনের মধ্যে
হরিণাকুন্ডুতে যুবদল সভাপতির উপর গুলি অল্পের জন্য রক্ষা
সচিবালয়ে আগুন, টঙ্গী হত্যাকাণ্ড ও ইসকনের আস্ফালন একই সূত্রে গাঁথা : যুব সমাবেশে মাওলানা মামুনুল হক
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে :পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সেই সুখরঞ্জন বালির ভারতে গুমের লোমহর্ষক কাহিনী
খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন শাস্তি হলে হাসিনার সুযোগ নেই :অ্যাটর্নি জেনারেল
থার্টি ফাস্ট নাইট নিষিদ্ধ করতে হবে আইন করে :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান
হাসিনা-জয়ের ৩০০ মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের প্রমাণ পেয়েছে এফবিআই
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের রহস্য নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন
সংস্কারের সঙ্গেই নির্বাচন প্রস্তুতি
‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে বিকল্প সোলার সিস্টেম চালু করুন’
আসিফ মাহমুদের হেলিকপ্টারে ছয় দিনে ২৮ বার সফর বিতর্ক
বন্ধ রয়েছে পায়রা বন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রম
ডেঙ্গুতে মৃত্যুহীন ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৫৩
নববর্ষ উদযাপনে ৭ বছরে শব্দদূষণ বেড়েছে ৭৪ শতাংশ