২০২২ সালের নভেম্বরে পেশাদার কূটনীতিক মাসুদ বিন মোমেন অবসরে যান। কিন্তু তৎকালীন হাসিনা সরকার তাকে ২ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করে। যার প্রতিদান দিতে তিনি পেশাদারিত্বের বদলে বিবেক-বিবেচনাহীনভাবে হাসিনার শাসন পোক্ত করার পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখেন। সর্বশেষ ছাত্র-জনতার সর্বাত্মক আন্দোলনের বিরুদ্ধেও বলিষ্ঠ অবস্থান ছিলো তার। অবশেষে চুক্তির মেয়াদ অবশিষ্ট থাকতেই বিদায় নিতে হলো তাকে। গতকাল রোববার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে বিদায় দেয়া হয়।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশের ২৬তম পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন। চাকরির বয়সসীমা অনুযায়ী তার ২০২২ সালের ডিসেম্বরে অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হাসিনা সরকার ২০২২ সালের নভেম্বরে চুক্তিতে আরও দুই বছর একই পদে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

মাসুদ বিন মোমেনকে ৬ ডিসেম্বর বা যোগদানের দিন থেকে দুই বছরের জন্য সিনিয়র সচিব হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে আদেশ দিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মাসুদ বিন মোমেন পদত্যাগ করেননি। তার অতীতের কর্মকান্ডে অনেকেই ক্ষুদ্ধ ছিলেন। সে কারণে তার চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

সূত্র জানায়, হাসিনা সরকারের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য এহেন কাজ নেই যা তিনি করেন নি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়ও হেলিকপ্টার থেকে গুলির ঘটনা অস্বীকারের চেষ্টা ছিল তার অন্যতম উদাহরণ। এ জন্য ৫ই আগস্ট পট-পরিবর্তনের পর থেকেই পররাষ্ট্র সচিবের বিদায়ের আওয়াজ উঠে। তিনিও মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। অবশেষে গতকাল তার নাটকীয় বিদায়ের ঘটনা ঘটলো।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, নীতিনির্ধারকদের সিগন্যাল পেয়েই সচিবকে বিদায় দেয়া হচ্ছে। আজ সোমবার থেকে তার অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) শুরু হবে।
উল্লেখ্য, পররাষ্ট্র সচিব হলেন বাংলাদেশ সরকারের একজন সিনিয়র কূটনীতিক। তিনি সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কিন্তু অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে রিপোর্ট করার দায়বদ্ধতা রয়েছে তার। ২০২৪ সালে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত পাতানো নির্বাচন নিয়ে দিল্লিতে পররাষ্ট্র সচিবের দৌঁড়ঝাঁপের কারণে তাকে ‹অ্যাক্টিভিস্ট ডিপ্লোম্যাট› বলে আখ্যা দিয়েছিলো ইন্ডিয়ান মিডিয়া। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে পররাষ্ট্র সচিবের চেয়ারে ছিলেন মাসুদ বিন মোমেন।

এদিকে, চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। আজ সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) তিনি পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন। জসীম উদ্দিন বিসিএসের ১৩তম ব্যাচের পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগ দেন। তিনি এর আগে কাতারে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এছাড়াও তিনি টোকিও, দিল্লি ওয়াশিংটন ডিসি ও ইসলামাবাদের বাংলাদেশ মিশনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। জসীম উদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন।
এছাড়া তিনি যুক্তরাজ্যের মডার্ন ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ থেকেও এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। পাশাপাশি ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এনডিসি কোর্সও সম্পন্ন করেন তিনি।