বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান ড. মোহাম্মদ ইউনূস বলেছেন যে, সার্ক ব্লকে রয়েছে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা নিয়ে গঠিত আট সদস্যের দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) এই অঞ্চলের অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘সার্কের চেতনার› পুনরুজ্জীবন হওয়া উচিত। দীর্ঘদিন যাবৎ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। আমরা একসঙ্গে থাকলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।’

ঢাকায় তার সরকারি বাসভবনে পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউনূস ড. ইউনূস জানিয়েছেন, এই মাসের শেষের দিকে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে সাক্ষাতের এবং সার্কভুক্ত দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে মিলিত হয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করবেন।
ড. ইউনূস বলেন, ‘অবশ্যই, আমরা (মোদির) সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করব। আমি চেষ্টা করব যদি সার্কভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা একত্রিত হয়ে ছবি তুলতে এগিয়ে আসেন। সার্ক একটি একটি মহৎ উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছিল; এটি এখন শুধুমাত্র কাগজে কলমেই বিদ্যমান এবং কাজ করছে না। আমরা সার্কের নাম ভুলে গেছি; আমি সার্কের চেতনা পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছি।’

জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের সাধারণ বিতর্ক ২৪ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সংস্থাটি কর্তৃক জারি করা বক্তাদের একটি অস্থায়ী তালিকা অনুসারে, নরেন্দ্র মোদি ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন।
সার্ক ব্লকে রয়েছে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা। ২০১৪ সালে কাঠমান্ডুতে এর দ্বিবার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০১৬ সাল থেকে সার্কের কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়ে। নেপালও সার্ক সক্রিয় করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

নোবেল বিজয়ী উল্লেখ করেছেন যে, যদিও সার্কের মতো অনুরূপ কাঠামোতে গঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়ন পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অনেক কিছু অর্জন করেছে, কিন্তু সার্ক এখনও এটি অর্জন করতে পারেনি।
ড. ইউনুস বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে ইউরোপীয় দেশগুলো অনেক কিছু অর্জন করেছে। সার্ক যাতে কাজ করে তা নিশ্চিত করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে তাকিয়ে দেখুন এটি কতটা চমৎকারভাবে কাজ করছে। পাকিস্তান নিয়ে কোনো সমস্যা হলে ভিন্ন সামধান বের করা যেতে পারে। কিন্তু সার্কের কার্যক্রম বন্ধ করা চলবে না।’

এছাড়া, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বর্তমান সরকার প্রধান বলেছেন যে তিনি মিয়ানমারকে তার নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে রাজি করার জন্য ভারতের কাছে সাহায্য চাইবেন। ইউনূস আরও বলেন, সঙ্কট মোকাবিলায় ঢাকার জন্য ভারত ও চীন উভয়ের সহায়তা প্রয়োজন।

ড. ইউনূস বলেন, ‘সমস্যা সমাধানে আমাদের ভারত ও চীনের সাহায্য দরকার। প্রায় দশ লাখ মানুষ বাংলাদেশে এসেছে, এবং এখন এই জনসংখ্যা বাড়ছে। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছে। কিছু দেশ তাদের নিচ্ছে কিন্তু স্বল্প সংখ্যায়। মিয়ানমারের সাথে ভারতের সুসম্পর্ক থাকায় মিয়ানমারকে ফিরিয়ে নিতে রাজি করাতে আমাদের ভারতের সাহায্য দরকার।’

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নৃশংস সামরিক দমন-পিড়নের পর ২০১৭ সালে দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। জাতিসঙ্গ এবং অন্যান্য গোষ্ঠি এই সহিংসতাকে জাতিগত নির্মূল হিসাবে অভিহিত করেছে। বর্তমানে এই রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব এবং মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে কক্সবাজারে বিশ্বের অন্য বৃহত্তম এবং সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ আশ্রয় শিবিরে বসবাস করছেন। সূত্র: দ্য উইক।