তবুও বেপরোয়া ব্যাটারি রিকশা
২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৯ এএম | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৯ এএম
রাজধানীতে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতায় যানজট পরিস্থিতিরও উন্নতি হয়েছে। তবে যানজট নিয়ন্ত্রণে আসেনি ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের কারণে। পুলিশের চোখের সামনেই প্রধান সড়কে অবাধে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। বরং অবাধে চলতে চলতে এগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নিয়ম ও আইনের তোয়াক্কা না নিজের মতো মূল সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব বাহন। কোনো সিগন্যাল না মেনে যেখানে-সেখানে থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করছে এগুলো। এতে বাড়ছে জনভোগান্তি, সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের হিসাব মতে, স্বৈরাচারি হাসিনার পতনের পর শিথিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সুযোগে কমপক্ষে ৮ লাখ ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইক ঢুকে পড়েছে রাজধানীতে। ঢাকার বাইরে থেকে এখনও সমানে ঢাকায় ঢুকছে।
রাজধানীর মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইকের দাপট বেড়েছে। গণপরিবহনকেও ওভারটেক করতে পিছপা হয় না এসব বাহন। এ বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কথা হলেও কোনোভাবেই এসব বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ট্রাফিক পুলিশ কেন এসব নিষিদ্ধ যানের বিষয়ে নমনীয়তা দেখাচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সরেজমিনে সায়েন্সল্যাব, নিউ মার্কেট, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী, কলাবাগন, মিরপুর, ধানমন্ডি, শ্যামলী, মহাখালী ও বাড্ডা এলাকাসহ প্রায় সব মূল সড়কে অসংখ্য ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক চলতে দেখা গেছে। এসব অটোরিকশা যখন-তখন দ্রুতগতির যানবাহনের সামনে চলে আসছে, কোথাও হঠাৎ করেই বাঁক নিচ্ছে। এতে পেছনের যানবাহনের চালকরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। আবার দ্রুতগতিতে সড়কে উল্টোদিকে চলে অন্য যানবাহনের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে।
এ বিষয়ে একজন বাস চালক বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে রাস্তায় অন্য গাড়ি চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এগুলো কোনো ধরনের সিগন্যাল না মেনে উল্টো দিকে ছুটে চলে। এ কারণে গণপরিবহনসহ সব ধরনের গাড়ি চলতে বাধার সম্মুখীন হয়। তাছাড়া ট্রাফিক পুলিশও এসব যানবাহন চলতে বাধা দিচ্ছে না। ব্যাটারিচালিত গাড়ির চালকরা এলোপাতাড়ি যাতায়াত করে। কোনো সিগন্যাল না মেনে ওভারটেক করে। আগে মেইন রোডে চলার কারণে ব্যাটারিচালিত রিকশাকে জরিমানা করা হতো, ডাম্পিং করা হতো। এসব রিকশায় দিকনির্দেশনা দেওয়ার কোনো লাইট নাই। ধীরগতির কারণে পেছনের গাড়িরও গতি কমিয়ে দিতে হয়। এতে সড়কে যানজট তৈরি হয়।
একাধিক ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আগে ট্রাফিক পুলিশ অনেক সমস্যা করতো, তাই মূল সড়কে উঠতো না। শুধু রাতে মূল সড়কগুলোতে চলাচল করতো তারা। কিন্তু বর্তমানে অবস্থা পাল্টে গেছে। কারণ পুলিশ কিছু বলে না। আর এই সুযোগে তারা কাউকে তোয়াক্কা না করেই চলাচল করছে। মূল সড়কে নিয়ম না মেনে অন্যান্য গাড়ির সমানে যাচ্ছে এসব চালক। এতে করে যানজট হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন তারা। তাদের দাবি, গলির সড়কের চেয়ে মূল সড়কে বেশি ইনকাম করা যায়।
সরকার পরিবর্তনের পর থেকে ভেঙে পড়া পুলিশি ব্যবস্থার সময়ে কিছুদিন ছাত্র-জনতা নিজেদের উদ্যোগে রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। সে সময় অননুমোদিত এসব রিকশার মূল সড়কে চলাচল শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ নামলেও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে অনেকটাই বাধাহীনভাবে। এতে অদক্ষ চালকের এলোমেলো চলাচল, আইন না মানার প্রবণতা, উল্টোপথে চলা, যেখানে-সেখানে হুটহাট রিকশা ঘোরানো- সব মিলিয়ে রাজধানীতে রাস্তায় প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ঢাকার বাইরে থেকে অনেক ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করেছে। এসব চালকের কোনো ধরনের নিবন্ধন ও অভিজ্ঞতা নেই। এতে নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। এগুলোকে বিআরটিএ ও সিটি করপোরেশন থেকে কোনো ধরনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অবৈধভাবে চলার কারণে সিগন্যাল ও নিয়মনীতি মানছে না। ট্রাফিক পুলিশের নিয়মনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা খুবই জরুরি। ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা একবার যদি মূল সড়কে চলার স্থায়ীভাবে সুযোগ পেয়ে যায় তাহলে পরে তাদের সরানো কষ্ট হয়ে যাবে।
ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ খোকন ইনকিলাবকে বলেন, ৮ লাখ ব্যাটারি রিকশাকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো জনবল ট্রাফিক পুলিশের নেই। উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন, একটা সিগনালে দুশ’ ব্যাটারি রিকশা থাকলে পুলিশ থাকে সর্বোচ্চ তিনজন। তারা কিভাবে এগুলোকে বাধা দিবে? তিনি বলেন, এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে রাতে গ্যারেজগুলোতে অভিযান চালিয়ে ট্রাক দিয়ে তুলে এনে সব ধ্বংস করতে করতে হবে। দুদিন এমন অভিযান চালালেই আর কেউ প্রধান সড়কে চলাচলের সাহস করবে না।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের প্রফেসর ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো রাজধানীর জন্য বড় ধরনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বাহনের জন্য নীতিমালা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ঢাকার মতো ছোট শহরের মূল সড়কে এসব বাহন চলার ফলে সড়কে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে।
যাত্রীদের ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকগুলোতে না ওঠার আহ্বান জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, যানজট নিরসনে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাছাড়া এসব বাহন যেন মূল সড়কে উঠতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখার চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে যাত্রীরা যদি তাদের এড়িয়ে চলেন তাহলে কাজটি করতে সহজ হবে। এসব গাড়ির জন্যই দিন দিন যানজটের মাত্রা বেড়ে চলেছে। আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে ডাম্পিং ব্যবস্থা চালু রাখা হবে।
এদিকে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। গত শনিবার ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের এ অভিযানে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হয় ৭৫ লাখ ১১ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া অভিযানকালে ১২৪টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৬২টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
গতকাল রোববার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দুইবার লিড নিয়েও লিভারপুলকে হারাতে পারল না আর্সেনাল
সঠিক অবস্থানে বিএনপি
রিজিকদাতা একমাত্র আল্লাহ, ইবাদত একমাত্র আল্লাহর-১
নানা আয়োজনে সারা দেশে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
প্রেসিডেন্ট ইস্যুতে হঠকারি সিদ্ধান্ত না নেয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের
বিএনপির অবস্থানেই ১২ দলীয় জোট
দক্ষদের পদোন্নতি দেয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানালো বাংলাদেশ
এসডিজি শুধু ঘোষণা দিলে হয় না, জবাবদিহির ব্যবস্থা রাখতে হবে : ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
রেমিট্যান্স গ্রামীণ অর্থনীতিতে চাহিদা বাড়িয়েছে
আইন-শৃঙ্খলার অবনতি : নিরাপত্তার দাবিতে মোহাম্মদপুরে থানা ঘেরাও
বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার -নাহিদ ইসলাম
পুলিশের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ৩৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ
পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের অফিসিয়াল পাসপোর্ট বাতিল হচ্ছে
রেমিট্যান্স জোয়ার অব্যাহত
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে আরো ৩৯ গুমের অভিযোগ
ভারতে হিন্দুদের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে বর্ণবৈষম্য
ট্রাম্পকে সমর্থন জানালেন আরব ও মুসলিম নেতারা
প্রতিবন্ধী মাকে কাঁধে নিয়ে দেশভ্রমণ
চিড়িয়াখানায় রহস্যময় প্রাণী