ঢাকা   সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪ | ১৩ কার্তিক ১৪৩১

রেমিট্যান্স গ্রামীণ অর্থনীতিতে চাহিদা বাড়িয়েছে

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৫ এএম | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৫ এএম

ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সময় স্বৈরাচার হাসিনাকে প্রতিরোধে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ রাখেন। হাসিনার সময়ে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানো অর্ধেকে নামিয়ে আনেন। পরে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা ভারতে পলায়ন করলে নতুনভাবে দেশ গড়তে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর পাশাপাশি উপার্জনের অর্থ আগের থেকে বেশি পাঠাচ্ছেন। আর রেমিট্যান্স বাড়ায় গ্রামীণ অধিকাংশ পরিবার আগে যেখানে খরচ কম করত বা দামি খাদ্যসামগ্রী পরিহার করত, সেই একই পরিবার হাসিনার পতনের পর বাড়তি রেমিট্যান্স পাওয়ায় তাদের খাদ্যপণ্য ক্রয় থেকে শুরু করে জীবন-জীবিকায় পরিবর্তন এনে আগের থেকে চাহিদা বাড়িয়েছে।

বরিশালের উজিরপুরের প্রবাসী সাদ্দাম হোসেনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত জুলাইতে তিনি হাসিনা সরকারের শিক্ষার্থীদের উপর গুলি ও দেশব্যাপী হত্যাযজ্ঞ চালানোয় রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে দেন। পরিবারকে জানান, এখন কষ্ট করে দিন অতিবাহিত করার জন্য। তবে হাসিনার দেশ ত্যাগে পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতি মাসে রেমিট্যান্স পাঠানো বাড়িয়ে দেন সাদ্দাম। এতে পরিবারের খাদ্যাভ্যাস ও চাহিদায় পরির্তন এসেছে বলে জানান সাদ্দাম হোসেনের স্ত্রী রাহিমা খাতুন। তিনি জানান, আগে যেখানে সবজি ও সপ্তাহে এক দিন মাছ-গোশত খেতাম, এখন প্রায় প্রতিদিনই খাবারের তালিকায় তা রাখছেন। শুধু সাদ্দাম হোসেনের পরিবারই নয়; গত কয়েক মাসে এভাবে অনেক প্রবাসী রেমিট্যান্স বেশি পাঠানোয় পরিবার খরচ বা চাহিদা বাড়িয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। অথচ এই সময়ে দেশের খাদ্যপণ্য বা অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন বাড়েনি। নানামুখী অস্থিরতায় ব্যবসা-বাণিজ্য এখনো তেমন গতি আসেনি। যার প্রভাবে চাহিদার তুলনায় পণ্য সরবরাহ কমে পাচ্ছে মানুষ। আর তাই বাজারে ডিমসহ অন্যান্য পণ্য চাহিদার তুলনায় কম থাকায় দাম বেড়ে যাচ্ছে। শুধু ডিম নয়; অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেই একই অবস্থা।

শরিয়তপুরের আরেক প্রবাসী মাসুমের স্ত্রী মরিয়ম জানান, আগে স্বামী টাকা কম পাঠাতেন, তখন সন্তানকে দিনে একটি ডিম খাওয়াতেন। গত কয়েক মাসে বাড়তি টাকা পাঠাচ্ছে বলে এখন সন্তানকে দিনে দুটি ডিম খাওয়াচ্ছেন।

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মারুফ বলেন, গত কয়েক মাস থেকে হাসিনার সময়ে থাকা বিপর্যস্ত দেশ ও অর্থনীতি গড়তে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো বৃদ্ধি করেছেন। এমনকি অনেকে বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অন্যদেরকে উদ্বুদ্ধ করছে। রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের জন্য ভূমিকা রাখায় প্রবাসী বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন শেখ মোহাম্মদ মারুফ। সম্প্রতি আমেরিকায় বাংলাদেশ রেমিট্যান্স ফেয়ারের যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বৈধ উপায়ে রেমিটেন্স পাঠানোর কোনো বিকল্প নেই। সূত্র মতে, স্বৈরাচার হাসিনাকে প্রতিরোধে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানো প্রায় বন্ধ করে ফেলেন। আর এতে প্রয়োজন থেকে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাননি অনেক প্রবাসী। যে কারণে গত জুলাইয়ে ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স আসে। সরকার পতনের পর আগস্ট মাস থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে শুরু করে। এরপর থেকে প্রতি মাসে প্রবাসীরা বিপুল রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। আর যে কারণে তলানীতে থাকা রিজার্ভ আবার বাড়তে শুরু করে। এর ফলে ক্রমেই কমতে থাকা রিজার্ভের নিম্নগতি থামানো সম্ভব হয়েছে। প্রতি মাসে এমনকি প্রতিদিনই প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি বাড়ায় দেশে বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করেÑ রিজার্ভের পতন থামানো গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের পর চলতি অক্টোবরেও দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২০০ কোটি ডলার ছাড়াচ্ছে। গত আগস্টে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার ও সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার এসেছিল। আর চলতি অক্টোবরের প্রথম ২৬ দিনে ১৯৪ কোটি ৯৩ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পলায়ন এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পর থেকেই রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া লেগেছে। প্রতি মাসেই রেকর্ড রেমিট্যান্স আসছে দেশে। সেই ধারাবাহিকতায় অক্টোবরে গড়ে প্রতিদিন দেশে এসেছে সাড়ে সাত কোটি ডলার। সেই হিসাবে মাসের বাকি পাঁচ দিনে আসতে পারে ৩৫ কোটি ডলারেরও বেশি। তাই অক্টোবরেও ২০০ কোটি ডলারের মাইলফলক ছাড়াবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুইবার লিড নিয়েও লিভারপুলকে হারাতে পারল না আর্সেনাল

দুইবার লিড নিয়েও লিভারপুলকে হারাতে পারল না আর্সেনাল

সঠিক অবস্থানে বিএনপি

সঠিক অবস্থানে বিএনপি

রিজিকদাতা একমাত্র আল্লাহ, ইবাদত একমাত্র আল্লাহর-১

রিজিকদাতা একমাত্র আল্লাহ, ইবাদত একমাত্র আল্লাহর-১

নানা আয়োজনে সারা দেশে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

নানা আয়োজনে সারা দেশে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

প্রেসিডেন্ট ইস্যুতে হঠকারি সিদ্ধান্ত না নেয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের

প্রেসিডেন্ট ইস্যুতে হঠকারি সিদ্ধান্ত না নেয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের

বিএনপির অবস্থানেই ১২ দলীয় জোট

বিএনপির অবস্থানেই ১২ দলীয় জোট

দক্ষদের পদোন্নতি দেয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

দক্ষদের পদোন্নতি দেয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানালো বাংলাদেশ

ইরানে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানালো বাংলাদেশ

এসডিজি শুধু ঘোষণা দিলে হয় না, জবাবদিহির ব্যবস্থা রাখতে হবে : ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

এসডিজি শুধু ঘোষণা দিলে হয় না, জবাবদিহির ব্যবস্থা রাখতে হবে : ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

আইন-শৃঙ্খলার অবনতি : নিরাপত্তার দাবিতে মোহাম্মদপুরে থানা ঘেরাও

আইন-শৃঙ্খলার অবনতি : নিরাপত্তার দাবিতে মোহাম্মদপুরে থানা ঘেরাও

বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার -নাহিদ ইসলাম

বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার -নাহিদ ইসলাম

পুলিশের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ৩৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ

পুলিশের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ৩৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ

পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের অফিসিয়াল পাসপোর্ট বাতিল হচ্ছে

পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের অফিসিয়াল পাসপোর্ট বাতিল হচ্ছে

রেমিট্যান্স জোয়ার অব্যাহত

রেমিট্যান্স জোয়ার অব্যাহত

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে আরো ৩৯ গুমের অভিযোগ

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে আরো ৩৯ গুমের অভিযোগ

ভারতে হিন্দুদের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে বর্ণবৈষম্য

ভারতে হিন্দুদের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে বর্ণবৈষম্য

ট্রাম্পকে সমর্থন জানালেন আরব ও মুসলিম নেতারা

ট্রাম্পকে সমর্থন জানালেন আরব ও মুসলিম নেতারা

তবুও বেপরোয়া ব্যাটারি রিকশা

তবুও বেপরোয়া ব্যাটারি রিকশা

প্রতিবন্ধী মাকে কাঁধে নিয়ে দেশভ্রমণ

প্রতিবন্ধী মাকে কাঁধে নিয়ে দেশভ্রমণ

চিড়িয়াখানায় রহস্যময় প্রাণী

চিড়িয়াখানায় রহস্যময় প্রাণী