একাই ২৮ রাউন্ড গুলি ছোড়েন হরি ফরিদ!
২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর একাই ২৮ রাউন্ড গুলি ছুঁড়েছিলেন সন্ত্রাসী তৌহিদুল ইসলাম ওরফে হরি তৌহিদ ওরফে ফরিদ (৩২)।
পতিত সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ক্যাডার হিসাবে পরিচিত এই পেশাদার অস্ত্রধারীর বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় পাঁচটি হত্যাসহ ১২টি মামলা রয়েছে। তার গডফাদার নওফেলের নির্দেশে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগে সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে পাকড়াও করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) একটি চৌকস দল। এই নিয়ে গত তিন মাসে চট্টগ্রামে ছাত্র-জনতার ওপর প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণকারী ৫৭ খুনিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অনেকে এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ভারি যুদ্ধাস্ত্রসহ অবৈধ বেশিরভাগ অস্ত্রও থেকে গেছে অধরা। খুনি হাসিনা ও তার অন্যতম সহযোগী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে চট্টগ্রামে ছাত্র-জনতার ওপর বর্বর হামলা ও হত্যাযজ্ঞে নেতৃত্বদানকারী নওফেল ও তার সহযোগীরাও এখনও ধরা পড়েনি। সিএমপির কর্মকর্তাদের দাবি জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণকারীদের চিহ্নিত করার কাজ শেষ, এখন তালিকা ধরে ধরে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তাদের প্রত্যাশা খুনিদের সাথে তাদের ভাণ্ডারে থাকা অবৈধ অস্ত্রও ধরা পড়বে।
গতকাল শনিবার নগরীর দামপাড়ায় সিএমপি সদর দফতরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় বিগত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার সমাবেশে গুলি বর্ষণকারীদের অন্যতম হরি ফরিদ। তাকে গত শুক্রবার রাতে সাতক্ষীরা সদর থানার কামালনগর এলাকা থেকে পাকড়াও করা হয়। পুলিশের কাছে তথ্য ছিল ফরিদ সীমান্ত পথে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ওই খবরের ভিত্তিতে নগরীর চান্দগাঁও থানার একটি দল সেখানে অভিযানে যায়।
সিএমপি মুখপাত্র উপ-কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) রইছ উদ্দিন বলেন, সরকার পতনের একদিন আগে নগরীর বহদ্দারহাটসহ আশপাশের এলাকায় আন্দোলরত ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণ করে ফরিদ। ভারি অস্ত্র হাতে তার নির্বিচারে গুলিবর্ষণের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়। দীর্ঘদিন নজরদারী শেষে তাকে পাকড়াও করা সম্ভব হয়।
রইছ উদ্দিন বলেন, গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফরিদ জানিয়েছে তার হাতে থাকা অস্ত্রটি পাকিস্তানি একটি ভারি অস্ত্র। ওই অস্ত্র দিয়ে সে ৪ আগস্ট একটানা ২৮ রাউন্ড পর্যন্ত গুলি ছুঁড়েছে। ফরিদকে একজন পেশাদার অপরাধী এবং অস্ত্রধারী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই দিনের আগেও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র আন্দোলনে সে গুলিবর্ষণ করেছে। তার বিরুদ্ধে পাঁচটি হত্যাসহ ছিনতাই, অস্ত্রবাজি, ডাকাতিসহ নানা অভিযোগে ১২টি মামলা থাকার তথ্য জানান তিনি।
হরি ফরিদসহ ছাত্রদের ওপর যারা গুলিবর্ষণ করেছে তাদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারেও অভিযান চলছে। চট্টগ্রামে হাসিনা বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ১১ জন শহীদ হয়েছেন। এসব ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। প্রতিটি হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত চলছে জানিয়ে সিএমপির ওই মুখপাত্র বলেন, প্রকৃত হত্যাকারী এবং অপরাধীদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে। সেই সাথে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে এসব মামলায় গ্রেফতার কিংবা হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়েও পুলিশ সতর্ক রয়েছে। আর এই কারণেই হত্যাকারীদের গ্রেফতারে কিছুটা বেশি সময় লাগছে বলেও জানান তিনি।
ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী হরি ফরিদ নগরীর চান্দগাঁও থানার শমশের পাড়া বড় পুকুরপাড় এলাকার মনু সওদাগর বাড়ির মো. সেকান্দরের পুত্র। স্থানীয়রা জানায়, সে একজন পেশাদার অস্ত্রধারী। নওফেলের অনুসারিদের সাথে সে ছাত্র আন্দোলন দমনে মাঠে নামে। নগরীর মুরাদপুর, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র-জনতার সমাবেশেও সে হামলায় অংশ নেয়। হাসিনার পতনের পর সে আত্মগোপনে চলে যায়। সেখান থেকে তার গডফাদারের নির্দেশে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার যাবতীয় প্রস্তুতিও নেয় এই খুনি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে নির্বিচারে গুলি করে এগারো জনকে হত্যা করা হয়। আহত হয়েছেন শত শত মানুষ। এসব হামলার ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয় নওফেলের অনুসারি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। তারা পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে অস্ত্রহাতে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সমাবেশ পণ্ড করতে গাড়িভর্তি করে অস্ত্র নিয়ে যান যুবলীগ ক্যাডার হেলাল আকবর চৌধুরী বারব। তার সাথে ছিলেন অপর যুবলীগ ক্যাডার নুরুল আজিম রনি। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের শতাধিক ক্যাডার। তাদের মধ্যে প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণকারী ৫০ জনকে চিহ্নিত করা হয়। তাদের বেশ কয়েকজনসহ এই পর্যন্ত সরাসরি গুলিবর্ষণকারী ৫৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এসব ঘটনায় নেতৃত্বদানকারী অনেকে এখনো ধরা পড়েনি।
হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কার্যত দেশে কোনো সরকার না থাকার সুযোগে খুনিরা পালিয়ে যায়। এসব খুনিদের গডফাদার নওফেলসহ অনেকে প্রতিবেশি দেশ ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুলিশে ব্যাপক রদবদল হয়। আর পুলিশি অভিযান জোরদার না হওয়ায় ওই সময়েও অনেকে পালাতে সক্ষম হয়। বিষয়টি স্বীকার করে সিএমপির মুখপাত্র রইছ উদ্দিন বলেন, রদবদলের কারণে পুলিশের অনেকে এখানে নতুন, এই কারণে অভিযানেও কাঙ্খিত সাফল্য আসেনি।
তবে এখন পুলিশের সক্ষমতা বেড়েছে, তারা পেশাদারীত্বের সাথে কাজ করছে। কয়েকটি থানা এলাকায় নিষিদ্ধি ঘোষিত ছাত্রলীগের মিছিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করেছে তাদের অনেককে আমরা গ্রেফতার করেছি, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। খুনসহ প্রতিটি অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গ্রেফতার কারা আসামী যুবদল নেতাকে গারদ ভেঙ্গে নিয়ে গেলো শ্রীনগর বিএনপি
লক্ষ্মীপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ২ জনের, আহত ৯
দেশের হয়ে আর খেলবেন না তামিম
গোপালগঞ্জে বিএনপি-আওয়ামীলীগ সংঘর্ষ
হেরেই চলেছে ঢাকা, পরাজয়ের বৃত্ত ভাঙল সিলেট
মুকসুদপুরে ক্যালেন্ডার বিতরনকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ আহত ২০ জন
১০ জেলায় শৈত্যপ্রবাহসহ সারাদেশে তীব্র শীত
আ.লীগ ক্রীড়াঙ্গনেও ব্যাপক দলীয়করণ করেছিল : মির্জা ফখরুল
নালিতাবাড়ীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযানে ড্রেজার মেশিন ও পাম্প জব্দ
ছাগলনাইয়ায় এসএসসি ব্যাচ-২০০০’র বন্ধুদের মেজবান ও মিলনমেলা
রাতের আধারে দুস্থ রোগীদের শীতবস্ত্র দিলেন ইউএনও
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা স্থিতিশীল : চিকিৎসক
ঝগড়ার সময় স্ত্রীকে বাপের বাড়ী চলে যেতে বা মন ইচ্ছামতো চলতে বলা প্রসঙ্গে।
ফারুক হাসানের উপর হামলা ও আসামিদের জামিন পাওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয় : খসরু
মানিকগঞ্জে ওয়ারেন্টের ৫ আসামী গ্রেফতার
আশুলিয়ায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পিঠা উৎসব
সন্ধান মিললো ফ্যাসিস্ট গণহত্যার শিকার আরও ৬ শহীদের লাশ!
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লাভলু হত্যার বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ
ছাগলনাইয়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ
কেরানীগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনায় প্রতিপক্ষের হাতে নিহত ১