দোকান বরাদ্দে শত কোটি টাকা লুটপাট
২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) এলাকার গুলিস্তানে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স সিন্ডিকেট গত ১৫ বছরে হাতিয়ে নিয়েছে শত কোটি টাকা। দোকান বরাদ্দের নামে জালিয়াতি ছাড়াও চাঁদাবাজি ছিল ওপেন সিক্রেট। অবৈধ দোকান বৈধতা দেওয়া ও ঢাকা ট্রেড সেন্টার মার্কেটের বরাদ্দ হয় সাবেক বঙ্গবাজার ও গুলিস্তান মার্কেটের ১২শ’ ৪৫ জন দোকান মালিককে দোকান বরাদ্দ দেয়ার জন্য। এখানে অতিরিক্ত ১৪৪ ও ৪৯ টি দোকান জালিয়াতির মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া হয়। এভাবে এসব মার্কেটে দোকান বরাদ্দের নামে চলে বাণিজ্য। কিশোরগঞ্জের সাবেক এমপি একসময়ের ফুটপাথের জুতা বিক্রেতা আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে মার্কেটটিতে দখলদারি চলে। ঢাকা ট্রেড সেন্টার মার্কেটের পাঁচ তলায় প্রায় ৩ শতাধিক দোকান রয়েছে। এরমধ্যে ১৯৩টি দোকানের কাগজপত্র জালিয়াতি করে ভুয়া ছবি ও পরিচয়পত্রের সাহায্যে বরাদ্দ নেয়া হয়।
জানা যায়, ১৯৮৬ সালে গুলিস্থান ফুলবাড়িয়া এলাকার ১০ মার্কেট বাংলাদেশ রেলওয়ের নিকট থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নিকট দোকান মালিকদের তালিকাসহ হস্তান্তর হয়। তালিকায় শুধুমাত্র দোকান মালিকদের নাম ও পিতার নাম ছিল। কোন ছবি বা ঠিকানা ছিল না। এই সুযোগে কিছু স্বার্থান্মেষি মানুষ এক বছর পরে জালিয়াতির মাধ্যমে তৎকালীন বঙ্গবাজারের ৬৩৭ ও গুলিস্তান মার্কেটের ৬০৮ জনের সঠিক তালিকার এক বছর পরে ৪৯টি ও তৎকালীন গুলিস্তান হকার্স মার্কেটের সাথে ১৪৬টি নামের তালিকা ডিএসসিসিতে পাঠায়। যা সম্পূর্ন ভুয়া অর্থাৎ তাদের মার্কেটে কোন দোকান ছিল না। তাদের মধ্যে ৪৯ ও ১৪৪ জনের নামে সিটি করপোরেশনের তহবিলে প্রথম কিস্তি বাবদ ১৫ হাজার জমা দেওয়া হয়। এই বিষয় জানার পর প্রকৃত দোকান মালিকরা এই ভুয়া নাম্বার বাতিলের জন্য সিটি করপোরেশন ও দুর্নীতি দমন সংস্থায় আবেদন করে। সেই প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন এই ভুয়া নাম্বারের হোতাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা দায়ের করে। যাহার নাম্বার ২০(৮) ৮৮। প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তি বাবদ কেউ কেউ ১০ হাজার টাকা সিটি করপোরেশনের তহবিলে জমা দিয়ে দেয়। দুর্নীতি দমন সংস্থার অফিসার মামলা করে এই নাম্বারের টাকা জমা না নিতে সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করে। ফলে টাকা নেওয়া বন্ধ থাকে। তালিকায় তাদের কোন ঠিকানা না থাকায় কাউকেই খুজে পায়নি। এই ১৪৪ জন কোন টাকা জমা দিতে সিটি করপোরেশনে আসেনি এবং আত্মগোপন করে থাকে। ৪৯টি দোকানের সাথে জড়িত ফুলবাড়িয়া এলাকার আরেক দোকান মাফিয়া দেলুয়ার হোসেন দেলু। তিনি বর্তমানে বিদেশে পলাতক রয়েছেন। আফজাল ও দেলুই বিগত সরকারের আমলে এ এলাকার অধিকর্তা ছিল। এই দোকান সিন্ডিকেটের সবাই ঢাকা শহরে অসংখ্য অবৈধ দোকান ও ফ্লাটের মালিক।
২০০৭ সালে মূল দোকান মালিকদের লটারির মাধ্যমে দোকান বরাদ্দ দেয় কিন্তু এই ভুয়া ১৪৪ ও ৪৯ জনকে কোন দোকান দেওয়া হয়নি। ২০১২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন উক্ত মামলার চুড়ান্ত রিপোর্ট দেয়। ফলে আফজাল এমপি, নাজমুল হুদা, ও মোজাম্মেল হক মজু সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার সহযোগিতায় ও পরিকল্পনায় এই ১৪৪ নাম্বারের মধ্যে ১২০-১২৫টি দোকানের কাগজপত্র জালিয়াতি করে বিভিন্ন লোকজনের নিকট ৭০-৮০ লাখ টাকা করে বিক্রি করে। এই ১৪৪ জনের মধ্যে ২০-২৫ জন জীবিত ছিল। তারাই টাকা জমা দিতে আসে এবং ৫ তলায় সিটি করপোরেশনের নির্মিত মার্কেটে দোকান পায়। ৪৯ জনের একই অবস্থা হয়। বাকি সবগুলো দোকানের মালিকের ছবি, ঠিকানা ও ভুয়া আইডি কার্ড দিয়ে টাকা জমা দেয় এবং দোকান বরাদ্দ পায়। এক পর্যায়ে সিটি করপোরেশনের একজন সৎ কর কর্মকর্তা এই অন্যায় ও অপকর্ম করতে রাজী না হওয়ায় তাকে অন্যত্র বদলি করে এসব কাজ করা হয়। সিটি করপোরেশনের গা বাঁচানোর জন্য সাবেক গুলিস্থান হকার্স মার্কেট যা বর্তমানে ঢাকা ট্রেড সেন্টার উত্তর নামে পরিচিত এই মার্কেটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ১৪৪টি দোকান মালিক সমিতির সদস্য না হওয়া সত্বেও তারা সঠিক বলে সমিতির প্যাডে সার্টিফিকেট দিয়ে এই দুর্নীতির মহোৎসবে অংশগ্রহণ করে। এই দুর্নীতি করে আফজালসহ তার সিন্ডিকেট প্রায় ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। তাদের প্রত্যেকের নামে বেনামে অঢেল সম্পদ-দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাড়ী ও ফ্লাট রয়েছে। ২০১১-১২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নাম ভাঙিয়ে মহানগর হকার্স, গুলিস্তান হকার্স ও আদর্শ হকার্স মার্কেট থেকে বেশকিছু দোকান হস্তগত করেন আফজাল ও তার ঘনিষ্ঠরা। তাদের অধিকাংশের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। ঢাকা ট্রেড সেন্টার (উত্তর ও দক্ষিণ) এ দুই মার্কেটে বৈধ দোকান ছিল ১ হাজার ২৪৫টি। এর বাইরে আন্ডারগ্রাউন্ড, লিফটসহ মার্কেটের বিভিন্ন স্থানে নকশাবহির্ভূত ৭০০ দোকান বানান সাবেক এমপি আফজাল ও তার সহযোগিরা। ২০০৮ সালে তিনি প্রথম এমপি হন। এরপর তার ব্যবসা বাড়ে। এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে আফজাল সুজের শোরুম রয়েছে। সেগুনবাগিচায় আছে ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট। সিদ্দিকবাজারে ছয় তলা বাড়ি। দক্ষিণ বনশ্রীতে ছেলে সাঈদ হোসেনের নামে পাঁচ তলা বাড়ি। আশুলিয়ায় আছে শত কোটি টাকার জুতার কারখানা। কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনের সাবেক চারবারের এমপি আফজাল হোসেনের আফজাল সুজ নামে জুতার লোকাল ব্রান্ড রয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একের পর এক রাঘববোয়াল ধরা পড়লেও এখনো অধরা আফজাল। সাবেক এমপি আফজাল হোসেনের বক্তব্য জানতে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা ট্রেড সেন্টার উত্তর দোকান মালিক সমিতির এক সদস্য বলেন, আফজাল এমপিসহ তার তৈরি সিন্ডিকেট অনিয়ম-দুর্নীতি করে মার্কেট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আফজাল এমপির নামে একধিক মামলা রয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু
কী আছে তৌফিকার লকারে?
ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা
অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা
শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা
৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি
৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ