বিতাড়িত স্বৈরাচার ও দোসরচক্র মাথাচাড়া দেয়ার অপচেষ্টা করছে
২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
বিতাড়িত স্বৈরাচার ও তাদের দোসরচক্র নানা কৌশলে আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠার অপচেষ্টা শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, অপশক্তি দেশের ভেতরে এবং বাইরে থেকে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টির পায়তারায় লিপ্ত রয়েছে। তবে সবাই যদি আমরা সর্তক থাকি বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ থাকবে না বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে শোক প্রস্তাব, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়।
তারেক রহমান বলেন, সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও বিএনপির কোনো বিরোধ নেই। সংস্কার আগে, না নির্বাচন আগে? যারা এই ধরনের প্রশ্ন তুলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ভিন্ন। বিএনপি মনে করে সংস্কার কার্যক্রম এটি কোনো শেষ হওয়ার বিষয় নয়। একজন সংস্কার কার্যক্রম শুরু করলে আরেকজন প্রয়োজনীয় সংস্কার এগিয়ে নিয়ে যায়। কারণ সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, সরকারে কিংবা সরকারের বাইরে আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখা দরকার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুণগত উত্তরণ ছাড়া পূঁথিগত সংস্কার অনেকটা অকার্যকর। সংস্কার কার্যক্রমকে কার্যকর করতে চাইলে সবার আগে জনগণের নিত্যদিনের দুদর্শা লাঘবের ব্যবস্থা করা দরকার, জনগণের নিত্য প্রয়োজনীয় সরবারহ নিশ্চিত করা না গেলে সংস্কার কার্যক্রমের কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যাবে না।
গণতন্ত্রকামীদের সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিতাড়িত স্বৈরাচারের পলায়নের পর গণতন্ত্রকামী জনগণের আকাক্সক্ষা পুরণের এক বিশাল দায়িত্ব নিয়ে আজকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে গণতন্ত্রের পক্ষের সকল শক্তি ও সাংবাদিক সমাজকে সতর্ক থাকা দরকার। আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে চলামান যাত্রা বাধাগ্রস্থ করতে কিন্তু এরই ভেতরে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।
বিএনপিসহ বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপরে গুম-হত্যা-নির্যাতনের কথা তুলে ধরে বিএনপি প্রধান বলেন, শহীদদের আকাক্সক্ষা একটি গণতান্ত্রিক মানবিক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করা আমাদের দায়িত্ব। একই সঙ্গে পলাতক স্বৈরাচার ও তার দোসরা যাতে রাজনীতিকে পুনর্বাসিত হতে না পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহন করাও কিন্তু আমাদের কর্তব্য। এজন্য যথাযথ আইনগত ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। পলাতক মাফিয়াদের পুনর্বাসন ঠেকাতে তাদেরকে একদিকে আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন। অপরদিকে তাদেরকে অবশ্যই জনগণের রাজনৈতিক বিচারের প্রত্যাখাত হওয়ার পরিস্থিতিতে ফেলতে হবে। যদি এই দুইয়ের সমন্বয় ঘটাতে পারি তাহলে গণবিরোধী বিতাড়িত অপশক্তি বাংলাদেশে রাজনীতিতে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হবে না।
যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন প্রয়োজন উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, খুনী, লুটেরা, মাফিয়া এবং স্বৈরাচারী রাজনৈতিক অপশক্তিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে হলে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। ভোটের অধিকারের সুযোগ পেলে জনগণ তাদের রাজনীতি ক্ষমতা প্রয়োগ করে গণহত্যাকারী খুনী, লুটেরা, পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদেরকে রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় করে দিতে সক্ষম হবে। বিএনপি মনে করে সংস্কার কার্যক্রমে পাশাপাশি একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠ্না অবশ্যই প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন পূনর্গঠনের সিদ্ধান্তকে ‘গুরুত্বপূর্ণ ধাপ’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা একসাথে যায় না মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের আগের স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ কিংবা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে দেড় দশকের বাংলাদেশ বর্তমান প্রজন্ম দেখিয়ে দিয়েছে যে, আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতা এক সাথে যায় না। আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একে অপরের শত্রু। অপরদিকে বিএনপির কাছে গণতন্ত্র বা ব্যক্তি স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিরাপদ। এমন রাষ্ট্র চাই যেখানে নিশ্চিতভাবে বাক স্বাধীনতা থাকবে।
তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনীতি বিদ্যমান অবস্থা-ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে ২০২২ সালে বিএনপি প্রথম ২৭ দফা সংস্কার উপস্থাপন করেছিলো। পরবর্তি সময়ে বাংলাদেশের পক্ষে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিকগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শেষে ২০২৩ সালে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে বিএনপি।
বিএনপির উপস্থাপিত সংস্কার প্রস্তাবে গণমাধ্যমে স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি অভিজ্ঞ মিডিয়া ব্যক্তিদের নিয়ে একটি মিডিয়া কমিশনের কথা বলা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন। আমরা এমন একটি রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছি সেখানে সাগর-রুনির বিচারের ব্যাপারে রাষ্ট্র উদাসীন থাকবে না, নিশ্চিত থাকবে মানুষের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা। এই লক্ষ্যে অর্জনে আপনাদের সকলের সহযোগিতা চাই।
সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, ফ্যাসিবাদের আমলে গণমাধ্যমের প্রতিটি শাখায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা প্রায় হারিয়ে গিয়েছিলো। লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী কিংবা যেকোনো মানুষের মধ্যেই যেকোনো বিষয়ে যেকোনো ইস্যুতে দ্বিমত ভিন্নমত থাকবে, থাকতেই পারে। এটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সৌন্দর্য্য। ভিন্নমত অথবা দ্বিমতকে শত্রুতা কিংবা নির্লজ্জ দলাদলিতে পরিণত করলে কি পরিণতি হতে পারে গত দেড় দশকে দেশের জনগন তা হাঁড়ে হাঁড়ে টের পেয়েছেন। পলাতক স্বৈরাচারের সঙ্গে তার অবৈধ মন্ত্রী, এমপি, বুদ্ধিজীবী বা বিচারপতি, বায়তুল মোকাররমের খতিব, প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কিংবা কতিপয় সাংবাদিকের পলায়নের মধ্য দিয়ে আবারো প্রমাণিত হয়েছে অবৈধ রাষ্ট্র শক্তি নয়, বরং শেষ পর্যন্ত জনগণের রায়ই কিন্তু চূড়ান্ত।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরে ‘স্বাধীন ও মুক্ত পরিবেশে’ সম্মেলন অনুষ্ঠান হচ্ছে উল্লেখ করে তারেক রহমান তার বক্তব্যের শুরুতে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজীসহ অভ্যুত্থানে নিহতের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন। ফ্যাসিবাদী আমলে চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন সংবাদপত্রের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে সভাপতি শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং দিদারুল আলম ও সাঈদ খানের যৌথ সম্পাদনায় আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহানগর দক্ষিণের জামায়াতের আমীর নরুল ইসলাম বুলবুল, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম আবদুল্লাহ, বর্তমান মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ইউনিয়নের সাবেক নেতা এম এ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, বারেক হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, সহ-সভাপতি রাশেদুল হক বক্তব্য রাখেন।
এই অনুষ্ঠানে বিএনপির আসাদুজ্জামান রিপন, অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, আবদুল সালাম আজাদ, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মীর সরাফত আলী সপু, ইথুন বাবু, জাগপার খন্দকার লুৎফুর রহমানসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা ছিলেন।###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু
কী আছে তৌফিকার লকারে?
ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা
অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা
শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা
৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি
৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ