আ.লীগকে রক্ষার চেষ্টায় জড়িত আনসার কর্মকর্তারা বহাল
৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সদর দফতরের নিষ্ক্রিয়তায় আনসার বাহিনীতে এখনো ঘাপটি মেরে আছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার উপর নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে গুলি করে হতাহতে জড়িত কর্মকর্তারা। শেষ পর্যন্ত আ’লীগ সরকারকে রক্ষায় এসব কর্মকর্তারা শুধু উচ্চ পর্যায়ে বসে ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দিয়ে বসেছিলেন না, মাঠপর্যায়ে নির্দেশ বাস্তবায়নে নিজেরাও সশরীরে উপস্থিত হয়ে গুলি করেছেন আন্দোলনকারীদের উপর। এসব কর্মকর্তাদের অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হলেও বহাল তবিয়তে থেকে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ দোষী বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা এবং নির্দেশদাতাদের বিচারের মুখোমুখি করা শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি। গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর গুলির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় জনমনে রয়েছে ক্ষোভ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আনসার কর্মকর্তা ও সদস্যদের নির্বিচারে চালানো গুলিতে নিহতের পাশাপাশি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন শত শত ছাত্র-জনতা। এদের মধ্যে অনেকেই অন্ধ ও পঙ্গু হয়ে গেছেন। আনসার সদস্যদের সাথে সে সময় সাধারণ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা। অথচ যাদের নির্দেশে আনসার সদস্যরা শত শত ছাত্র-জনতাকে হত্যা এবং হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে পঙ্গু-অন্ধ করেছে সেই আনসার বাহিনী গুলির নির্দেশদাতা কর্মকর্তারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবি। একই সাথে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কাজ হওয়া উচিত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের গুলি করার সাথে জড়িত বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য ও কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা।
জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ভূমিকা ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সরাসরি মাঠে থেকে আন্দোলন প্রতিহত করতে গুলি করার নির্দেশদাতা আনসার কর্মকর্তারা এখন বহাল তবিয়তে রয়েছেন। সালমান এফ রহমানের আশীর্বাদ পুষ্ট কর্মকর্তা যিনি আন্দোলনের সময় গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই ফয়ফুজ্জামান ও আলমগীর এখনো সুবিধাজনক পদে রয়েছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় থেকে রাস্তায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি করা আনসার কর্মকর্তা মুশতাককে ভালো পদে বদলি করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আনসারের কুমিল্লার কমান্ডার জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার উপর হামলার জন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের গাড়ি দিয়ে সাহায্য করলেও তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আনসার কর্মকর্তা আলী রেজা রাব্বিরের বিরুদ্ধে মাঠে থেকে ছাত্র-জনতার উপর গুলি করার অভিযোগ রয়েছে। এর পরেও তাকে সুবিধাজনক পদে পদায়ন করা রহস্যজনক। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর গুলির মাস্টার মাইন্ড আহসান উল্লাহ মোটা অংকের টাকা খরচ করে এখনো সক্রিয় রয়েছে। আ’লীগ সরকারের সময় তার সব কার্যক্রম ছিল ছাত্রলীগ নেতার মতো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা শুক্রবার ইনকিলাবকে বলেন, সরকারি যানবাহন ব্যবহার করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় যারা সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা ও আহত করেছে তারা এখনো সুবিধাজনক পদে রয়েছেন। শীর্ষ কর্মকর্তারা বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদন্ত করে এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় যে সব আনসার কর্মকর্তারা একের পর এক বৈঠক করে আন্দোলন দমানোর পরিকল্পনা করেছেন এবং ছাত্রদের উপর গুলি করতে সাধারণ আনসারদের বাধ্য করেছেন তারা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে তা ওপেন সিক্রেট। ফেস বুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছবি ও ভিডিও রয়েছে তা তদন্ত করছেন ছাত্র-জনতার উপর গুলি-হামলার জড়িতদের বিষয়গুলো শনাক্ত করা যাবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, আনসার বাহিনীতে আন্দোলনের সময় গুলির নির্দেশদাতাদের বিষয়ে তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তে নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশদাতাদের বিষয়ে জানা গেছে। তাদের নির্দেশনাগুলো কতটুকু যৌক্তিক ছিল, বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে মামলার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে। যারা গুলি করে ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
মাঠ পর্যায়ের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আনসার সদস্যদের অনেক স্পটেই গুলি করেছে এমন তথ্য উঠে এসেছে। অনেক স্পটে দেখা গেছে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিজেরাও ছাত্র-জনতার উপর গুলি করছেন এবং আনসার সদস্যদের গুলি করতে নির্দেশ দিচ্ছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে শত শত প্লাটুন আনসার মোতায়েন করা হয়। যারা বেপরোয়ার আচরণ করেছেন তাদেরও শনাক্ত করার কাজ চলছে। তবে দ্রুত এদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে এদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকবে। যা মোটেই কাম্য নয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সীমান্ত হত্যায় ব্যবহৃত চাকুসহ আরো এক আসামী গ্রেফতার
সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও ৬০ দিন বাড়লো
৪২ মিনিটেই নেইমারের আয় ১০১ মিলিয়ন ইউরো
মাগুরায় পিলখানা হত্যাকান্ডে হত্যাকারী ও পরকল্পনাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
কসাই থেকে নদীখেকো জাফর
পাঁচ দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঁচ কর্মকর্তা প্রত্যাহার
ফ্যাসিবাদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে সক্রিয় ছিল ইবি ছাত্রদল
সামনের বর্ষায় ঘাসে ঢাকা হবে রাজধানীর অনাবৃত সড়ক বিভাজন: উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
মাদারীপুরে ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর সদস্যদের ৩ দফা দাবিতে মানববন্ধন
পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতি : দুদকের মামলায় হাসিনা-পুতুলসহ ১৬ আসামি
কোকোর দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আরাফাত রহমান বড় ভূমিকা ছিল: কাজী রিপন
তারেক রহমান একজন মানবিক মানুষ: কাইয়ুম চৌধুরী
রাবির সাত হলে কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় উত্তাল ক্যাম্পাস, তদন্ত কমিটি গঠন
ডিসেম্বরে সর্বাধিক রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও সউদী আরব থেকে
যশোরে চাকুরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের চাকুরি পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন
অপরাধী যদি আমার ভাই হয়, তাকেও ছাড় দিবেন না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
আবারও সিলেটের নায়ক জাকির, খুলনার টানা দ্বিতীয় হার
এবার হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে নারী আইনজীবীর মামলা
ব্যবসায়ীকে কোপানোয় শাস্তির হুঁশিয়ারি উপদেষ্টা আসিফের
৩৮ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া