অস্বাস্থ্যকর বাতাসে নগরজীবন
১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
দূষণে ঢাকার বাতাস ভারী হয়ে যাচ্ছে। এই বাতাসে বুকভরে শ্বাস নেওয়াই কঠিন। শ্বাসের সঙ্গে যেসব দূষিত বায়ু দেহে প্রবেশ করে, তা মানুষকে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছে। মানুষ ঢাকায় বুকভরে শ্বাস নিতে চায়। এ জন্য সরকারের দিক থেকে দৃশ্যমান, কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চায় জনগণ। নগরের বায়ুদূষণ রোধে পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ নগর পরিকল্পনাবিদের। তারা বলছেন, এতদিন যেহেতু কোনও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, তাই এখন সময় আগামীতে এই বায়ুদূষণ রোধে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা নেওয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে দুর্যোগপূর্ণ হিসেবে রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ বিশ্বে শীর্ষে পৌঁছে বেশ কয়েকবার। এছাড়া শুষ্ক আবহাওয়ায় ঢাকার বায়ুমান প্রায় সময় থাকে অস্বাস্থ্যকর। এমন অবস্থায় বায়ুদূষণ কমাতে কার্যকর কোনও ভূমিকা নেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। নেই কোনও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। ক্রমাগত রাজধানীর বায়ুদূষণের মান আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁছালেও কার্যকর কোনও উদ্যোগ নেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন রুটিন করে পানি ছিটালেও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দৃশ্যত কোনও উদ্যোগ নাই। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ছাড়াও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে পরিবেশ অধিদফতর। তবে কারও মধ্যে কোনও সমন্বয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারও ঢাকার বাতাসের মান খুব একটা ভালো ছিলো না। বাতাসের মান ছিল ২৫১, যা খুবই অস্বাস্থ্যকর বলে নির্দেশ করে। এছাড়া এই মান নিয়ে সারা বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে আছে ঢাকা। তালিকায় ২১৫ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারতের দিল্লী, ২০৩ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর, ২০২ স্কোর নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে আছে নেপালের কাঠমান্ডু এবং ১৭১ স্কোর নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে আছে ইরাকের বাগদাদ। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান নির্ধারণ সংস্থা আইকিউএয়ার থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। আইকিউএয়ারের মানদ- অনুযায়ী, স্কোর শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে বায়ুর মান ভালো বলে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি বা সহনীয় ধরা হয় বায়ুর মান। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর (অসুস্থ বা শিশু-বৃদ্ধ) জন্য অস্বাস্থ্যকর ধরা হয়। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত থাকলে সে বাতাস অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে খুবই অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচনা করা হয় এবং ৩০১ এর বেশি হলে তা দুর্যোগপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকার বায়ুমান বর্তমানে সময়ে মাঝে মধ্যেই অস্বাস্থ্যকর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে বলে জানিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে এ অবস্থায় সবাইকে বাইরে গেলে মাস্ক পরার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিকদের এবং সাধারণ মানুষকে ৬টি পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
পরিবেশকর্মী নয়ন সরকার বলেন, বায়ুদূষণ দূর করা সময়সাপেক্ষ। তবে দ্রুত কিছু পদক্ষেপে বায়ুর মানের উন্নতি হবে। প্রতিদিন দুই বেলা করে সড়কে পানি ছিটাতে হবে। সড়কে যেসব খোঁড়াখুঁড়ি বা নির্মাণকাজ চলছে, তা নির্মাণবিধি মেনে সাত দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। নয়তো শীতের এই দুই মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করতে হবে। বায়ুমানে অবনতি হলে নির্মাণকাজ বন্ধ করার নির্দেশনা দিতে হবে। গাবতলী, যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা দিয়ে যেসব ট্রাক বালু-ইট নিয়ে শহরে প্রবেশ করে, সেসব মালামাল ঢেকে রাখার নিয়ম কার্যকর করতে নজরদারি বাড়াতে হবে। পরিস্থিতির অবনতি হলে এসব ট্রাকের শহরে প্রবেশ সীমিত করতে হবে বা নিষিদ্ধ করতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) জানায়, শুষ্ক মৌসুমে নিয়মিত ডিএনসিসির প্রতিটি অঞ্চলে পানি ছিটানোর কার্যক্রম চলমান। এছাড়াও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কোথাও কোনও নির্মাণাধীন প্রকল্পে নির্মাণসামগ্রী রেখে পরিবেশের ক্ষতি করতে দেখলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এগুলো ছাড়া অন্যান্য চলমান প্রকল্প এবং যেকোনও ভবন নির্মাণের সময় ধুলাবালি সৃষ্টি হয়ে যেন বায়ুদূষণ ও পরিবেশের ক্ষতি না হয় সে জন্য সমন্বয় সভায় নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ডিএনসিসির পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়। স্থায়ী উদ্যোগ হিসেবে ফুটপাথ, মিডিয়ান এবং খালের পাড়ে বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে বলে জানায় ডিএনসিসি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, কেবল পানি ছিটিয়ে শহরের বায়ুদূষণ রোধ করা সম্ভব না। প্রয়োজন ছিল পরিকল্পিতভাবে কাজ করার। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আগে এখনই সব অংশীজনের সমন্বয়ে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর কাজ অনুসরণ করা যেতে পারে। বায়ুদূষণের উৎসগুলো চিহ্নিত করে তার সমাধান করতে হবে। নগর কর্তৃপক্ষকে নিবেদিত হতে হবে এই কাজে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এফএ কাপে সিটির গোল উৎসব
মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত
অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে
দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১
নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে
অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন
ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের
পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ
মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি
রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী
বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের
আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া
ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী
সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির
রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার