মরুর পথে নদীমাতৃক বাংলাদেশ
১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
ভারতের পানি আগ্রাসনের ফলে নদীমাতৃক বাংলাদেশ এখন মরুকরণের পথে। শীতের শুরুতেই পানির অভাবে মরণদশায় পড়েছে দেশের শত শত নদ-নদী। উজানের পানিপ্রবাহ কম হওয়ায় কোনো নদী শুকিয়ে গেছে, কোনোটার পানি প্রবাহ তলানিতে পড়েছে। পদ্মার উজানে ফারাক্কা এবং তিস্তার উজানে গজলডোবা বাঁধ দিয়ে ভারত একতরফা পানি উঠিয়ে নেয়ায় ভয়াবহ এ অবস্থা পড়েছে বাংলাদেশের নদ-নদী। ভারতের পানি আগ্রাসনে দেশের মানচিত্র থেকে ইতোমধ্যেই হারিয়ে গেছে তিন শতাধিক নদ-নদী। অন্যদিকে উপকূলের কাছাকাছি নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেন ভারত নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি উঠিয়ে নেয়ায় দেশের নদ-নদীর পানির প্রবাহ এই অগ্রহায়ণ মাসেই স্বাভাবিক মাত্রায় নেই। নদীতে প্রবাহ কম হওয়ায় সমুদ্রের লোনা পানি স্থলভাগের কাছাকাছি চলে আসছে। এতে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাচ্ছে এবং কৃষিকাজে অনুপযোগী হয়ে পড়ছে ফসলি জমি। ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশের নদীগুলো আজ অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। পানির অভাবে দেশের প্রধান নদী পদ্মা, তিস্তা, যমুনা, সুরমা, ব্রহ্মপুত্রÑ সবার বুকেই এখন ধূ ধূ বালুচর। নাব্য সঙ্কটের কারণে নদীগুলো হারাচ্ছে অস্তিত্ব, বন্ধ হচ্ছে নৌপথ। শুকনো মৌসুমে পানি নেই। বর্ষা মৌসুমে ভারত ফারাক্কা ও গজলডোবা বাঁধের সব গেট খুলে দিলে এ নদীই আবার দুই কূল ছাপিয়ে ভাসিয়ে দেয় বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ঘরবাড়ি, ফসল হারিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ে এ দেশের মানুষ। এমন অনেক নদী আছে, যে নদীতে এক সময় স্টিমারসহ বড় বড় নৌকা চলত, সেসব নদী আজ হেঁটে পার হওয়া যায়। বাংলাদেশের মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা নদীর আজ খুবই করুণ দশা।
নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে নদীর প্রাণ ফিরিয়ে দিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। দখলে-দূষণে মরছে নদী। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ৩৯ হাজার ৫৫৮ জন নদী দখলদারে তালিকা প্রকাশ করেছে। দখলদারদের মধ্যে দেশের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ, প্রতিষ্ঠান ও নামিদামি শিল্পগোষ্ঠীও রয়েছে। অথচ সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেনি। অপর দিকে, ভারতের ফারাক্কা ও গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে এবং উজানে তৈরি করা ৪০টি ড্যাম ও ব্যারাজ পানির গতি পরিবর্তন করে এ দেশের নদীগুলোকে কার্যত হত্যা করছে। এ ব্যাপারেও দেশের সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তিস্তাসহ উত্তরাঞ্চলের অনেক নদী একেবারেই পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার ছাড়াও নদী দখল, নানা ধরনের শিল্প বর্জ্যরে দূষণে নদীর প্রাণ বৈচিত্র্যও এখন হুমকির মুখে। নদী মরে যাওয়ায় নদীকেন্দ্রিক জীবন-জীবিকাও মারাত্মক হুমকির মুখে। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় হুমকিতে মৎস্যসম্পদ। সেই সাথে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে কৃষি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের উপর।
বাংলাদেশে বর্তমানে কতগুলো নদী আছে তার প্রকৃত হিসাব নেই পানি উন্নয়ন বোর্ড বা নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছে। নদীর প্রকৃত সংখ্যা বের করতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। সে প্রকল্পেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অবশেষে দেশে বর্তমানে এক হাজার ১৫৬টি নদ-নদী আছে বলে একটি খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে। তবে এটিও অসম্পূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পানিসম্পদ সচিব নাজমুল আহসান বলেন, দেশে বর্তমানে এক হাজার ১৫৬টি নদ-নদীর সংখ্যা পাওয়া গেছে। এটিকে খসড়া তালিকা হিসেবে ধরে আগামীতে বাদ পড়া নদীগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নদী দখলমুক্ত করার এখনই সময়। আমরা যেকোনো মূল্যে নদী দখল ও দূষণমুক্ত করব। নদী না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। তাই দেশকে বাঁচাতে আমাদের নদীকে রক্ষা করতে হবে। সংখ্যা নয়, নদীকে বাঁচাতে হলে নাব্য বাড়াতে হবে। দূষণ বন্ধ করতে হবে। অবৈধ বালুমাহলগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।
ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকা- আর দখল রাজত্ব নদীকে তিলে তিলে মারছে। নদীর সঙ্গে মরছে নদীর ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশও। কৃষিপ্রধান উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ দেখা দিয়েছে, সেচ চাহিদা মেটাতে হচ্ছে মাটির নিচের পানি তুলে। তাতে বিপদ আরো বাড়ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে, মাটির গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটছে। নদীভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। নদীর মাছ হয়ে উঠছে অমূল্য পণ্য। নদীতে মাছ ধরা, নৌকায় নদী পারাপার করা জেলে-মাঝিদের জীবনধারা বাস্তব থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। গঙ্গা নদীর পানি ভারতের একতরফাভাবে সরানোর কারণে শুধু যে বাংলাদেশের পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে তা নয়; বরং এর ফলে বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প, বন ও নৌ-পরিবহন ব্যবস্থা ব্যাপক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। চার দশকের বেশি সময় ধরে ফারাক্কার প্রভাবে দেশের দক্ষিণ-উত্তরাঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের অন্যতম প্রধান নদী পদ্মায় শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে যাচ্ছে। এতে পদ্মা নদীর অববাহিকায় থাকা সব নদী তীরবর্তী অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মা শুকিয়ে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। পদ্মায় পানি কমে যাওয়ায় এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহমান পদ্মার শাখা নদীগুলোও শুকিয়ে গেছে। এ অঞ্চলের সবুজ-শ্যামল বাংলা হয়তো অচিরেই মরুভূমিতে পরিণত হবে। শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানি অপসারণের ফলে বাংলাদেশের কৃষি, মৎস্য, বনজ, শিল্প, নৌ-পরিবহন, পানি সরবরাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক লোকসান হচ্ছে। আর্থিক মূল্যে প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়। পদ্মার পানিপ্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের উত্তর অববাহিকায় রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকার ভূ-গর্ভস্থ পানির প্রথম স্তর ১৫ থেকে ২০ ফুট নিচে নেমে গেছে। মৌসুমি বৃষ্টিও এই স্তরের পানির অভাব পূরণ করতে পারছে না।
অন্যদিকে, তিস্তা নদীর পানি চুক্তি সম্পন্ন না হওয়ায় বাংলাদেশের উত্তারাঞ্চলের নদ-নদী এখন পানিশূন্য। তিস্তা নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে লালমনিরহাট জেলার ডালিয়া পয়েন্টে। এই নদী বাংলাদেশের প্রায় ১২টি জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে এসে মিলেছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল এবং এই ১২টি জেলার অর্থনীতি প্রত্যক্ষভাবে তিস্তা নদীর ওপর নির্ভরশীল। তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের মোট চাষযোগ্য জমির শতকরা ১৪ ভাগ তিস্তা নদীর সেচ প্রকল্পের ওপর নির্ভরশীল। প্রায় ৬০০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি চাষের জন্য পানি প্রয়োজন সাড়ে তিন হাজার কিউসেক। কিন্তু বর্তমানে তিস্তার পানিপ্রবাহ ৬০০ থেকে ৭০০ কিউসেক। যেখানে ১৯৮৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করার আগে তিস্তার পানিপ্রবাহ ছিল প্রায় পাঁচ হাজার কিউসেক।
এ বিষয়ে পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, তিস্তার মূল প্রবাহ ভারত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তিস্তায় ডালিয়া ব্যারাজে উজান থেকে আসা পানিপ্রবাহ প্রায় শূন্য। এখন যে ৬০০-৭০০ কিউসেক পানি যা আসছে তা ধারণা করি, ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের ভাটির উপনদী থেকে। বাংলাদেশ অনেক দর কষাকষি করেও তিস্তা চুক্তিতে এগুতে পারেনি। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তা চুক্তি চাইলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনিচ্ছার কারণে এই চুক্তিতে এগোচ্ছে না। বাংলাদেশের একটি বৃহৎ ভূখ- এবং সেই ভূখ-ের বাসিন্দারা প্রত্যক্ষভাবে তিস্তা নদীর ওপর নির্ভশীল। শুধু তিস্তা নয়, ধরলা, ব্রহ্মপুত্রসহ উত্তারাঞ্চলের অনেক নদী এখন পানিশূন্য। ভারত বাংলাদেশকে তার পানির ন্যায্য হিস্যা দিচ্ছে না। যার সরাসরি ফলাফল হিসেবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল এবং বৃহৎ জনগোষ্ঠী হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ দেখা দিয়েছে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রকৃতি, জনজীবন, চাষাবাদ প্রায় সবই নদীনির্ভর। তাই বলা হয়Ñ নদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। অর্থাৎ, বাংলাদেশের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। ভারতের পানি আগ্রাসনের ফলে বাংলাদেশ এখন সে পথেই এগিয়ে চলেছে। বহু নদী এর মধ্যেই মরে গেছে। বহু নদী মৃত্যুর পথে। নদীগুলোর গভীরতা কমে যাওয়ায় বন্যা ও পানিবদ্ধতা অবধারিত হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট হচ্ছে। অথচ ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের শাসনামলে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বিগত প্রায় ১৬ বছর হাসিনা সরকার ভারতকে ট্রানজিটসহ সব কিছু দিয়ে গেছে কিন্তু বাংলাদেশের ন্যায্য পানির হিস্যা নিয়ে কোনো কথা বলেনি। কখনো নিয়ে কিছুু আলোচনা হলেও ভারত শুধু আশ্বাস দিয়েই এ বিষয়ে ইতি টেনেছে। আর ভারতের পদলেহি সরকার তাতেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর এ দেশের মানুষের মনে অনেক আশা জেগেছিল যে, এবার হয়তো ভারতের সাথে পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দায়িত্ব নেয়ার পরপরই এ বিষয়ে বেশ জোরালো বক্তব্য দিয়ে মানুষের মনে সেই আশার প্রদীপকে আরো উসকে দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই তিনিও এখন এ বিষয়ে নীরব হয়ে গেছেন। এনজিওদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়াম নিয়ে তিনি এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। দেশের বৃহৎ স্বার্থ নিয়ে তিনি এখন আর সরব নন এমন অভিযোগ অনেকের। তবে বাংলাদেশের মানুষ এখন এ বিষয়ে বেশ সোচ্চার। ভারতে চোখ রাঙানিকে মানুষ এখন আর ভয় করে না। তারা তাদের অধিকার আদায়ের বিষয়ে সচেতন। তাই তো অন্তর্বর্তী সরকারকে এ বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। দেশের স্বার্থে তাদের কাজ করতে হবে। অন্যথায় জনগণ তাদেরকেও ক্ষমা করবেন না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, গত দুই দশকে দেশে তিন শতাধিক নদী শুকিয়ে গেছে। বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে এসব নদী হারিয়ে গেছে। এ ছাড়া আরো প্রায় চার শতাধিক নদী মরণাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বেতনা, শালিখা, শালিতা, হামকুড়া, চুনা ও হাতিটানার মতো তীব্র স্রোতের নদী এখন শুকিয়ে বসতি এলাকায় পরিণত হয়েছে। এসব নদীর মতোই সারা দেশে তিন শতাধিক নদীর মৃত্যু হয়েছে। অনেক নদীতে পানিপ্রবাহ কমে গিয়ে এক দিকে শুকিয়ে যাচ্ছে, অন্য দিকে পানি দূষিত হওয়ার কারণেও নদী মরে যাচ্ছে। অনেক নদীতে পানির প্রবাহ থাকলেও সে সব নদী এত মাত্রায় দূষিত হয়ে পড়েছে যে, সেখানকার পানি মোটেও ব্যবহারের উপযোগী নেই। মারাত্মক দূষিত নদীর তালিকায় রয়েছে শীর্ষে রাজধানী ঢাকার চারপাশের নদী বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী, তুরাগ ও বালু।
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের নদী নিয়ে গবেষণা করছেন প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নদীগুলো জালের মতো বিস্তৃত, একটির সঙ্গে আরেকটি সম্পর্কিত। তাই একটি নদী কোনো কারণে শুকিয়ে গেলে বা আরেকটির সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তার প্রভাব অন্য নদীর ওপরে পড়ে। উজানে গঙ্গায় বাঁধ দিয়ে পানি সরিয়ে নেয়ার ফলে পদ্মা পানি পাচ্ছে না। পদ্মার সাথে সংযুক্ত শাখা নদীগুলোও পানির অভাবে মরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে নদ-নদীতে অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে এর পানি প্রবাহের সঙ্গে পলির ব্যবস্থাপনা বিবেচনায় নেয়া হয়নি। আবার যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল, সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে অনেক নদী শুকিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে অন্তত ৩০০ নদী শুকিয়ে গেছে। নদীগুলো রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনা জরুরি।
নদীতে পানিপ্রবাহ না থাকায় দখল ও দূষণে এবং অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণের প্রভাবে বগুড়ার ২৮টি নদ-নদীর মধ্যে ২৩টিই বিলুপ্ত হয়ে কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। আর অস্তিত্ব সঙ্কটে রয়েছে বাকি পাঁচটি। এখনই খনন, পুনর্খনন বা দখল ও দূষণ মুক্তির কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ধুঁকেধুঁকে অস্তিত্ব টিকে থাকা অবশিষ্ট নদ-নদীগুলোরও অপমৃত্যু হয়ে কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে বলে নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষের আশঙ্কা।
ভারতের বাঁধ, নদী দখল, ময়লা-আবর্জনা, নদীতে প্রবাহ না থাকায় মাগুরা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত আটটি নদী নাব্যতা হারিয়ে শুষ্ক মৌসুমে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়ে পড়েছে। নদীগুলো চর পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পানি ধারণক্ষমতা না থাকায় অকাল বন্যা আর শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্য হয়ে পড়ে। মাগুরা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলো হচ্ছেÑ মধুমতি, গড়াই, নবগঙ্গা, কুমার, চিত্রা, ফটকি, হানু ও বেগবতি প্রধান। বর্তমানে ফটকি, বেগবতি, চিত্রা ও হানু নদীর বেহাল দশা। মানচিত্রে থাকলেও এসব নদীর চিহ্ন বাস্তবে এখন না থাকার মতো। শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই হাওরাঞ্চল কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট এসব জেলার নদ-নদী শুকিয়ে শীর্ণকায় হয়ে গেছে। অনেক নদীর বুকে হচ্ছে চাষাবাদ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এফএ কাপে সিটির গোল উৎসব
মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত
অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে
দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১
নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে
অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন
ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের
পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ
মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি
রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী
বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের
আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া
ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী
সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির
রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার