দুই সহোদরের একজন শহীদ অপরজন যুদ্ধাহত
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন কলেজ শিক্ষার্থী তোফায়েল আহমেদ (২১)। তার গুলিবিদ্ধ ঝাঁজরা শরীর দেখে নিজেকে স্থীর রাখতে পারেননি মাদরাসা পড়–য়া ছোটভাই মোনায়েল আহমেদ ইমরান (১৬)। কিন্তু বিধি বাম। শরীরে ৭৯টি গুলির ক্ষত নিয়ে যখন বিছানায় কাতরাচ্ছিলেন তোফায়েল, ঠিক সেই সময়ে চিপস কেনার কথা বলে বের হন ইমরান। যোগ দেন আন্দোলনে। কিন্তু হাসিনার লেলিয়ে দেয়া হায়েনার গুলি পেছন থেকে ঢুকে বুক দিয়ে বের হয় ইমরানের। আর হাসপাতালে নেয়ার পথেই তিনি শহীদের মর্যাদা লাভ করেন। ঢাকার সাইনবোর্ড এলাকার মহাসড়কের একই স্থানে গুলিবিদ্ধ হন কৃষক বাবার শহীদ ও যুদ্ধাহত দুই সন্তান। জুলাইয়ের ১৮ এবং ২১ তারিখ মাত্র ২ দিনের ব্যবধানে এ হৃদয় বিদারক ঘটনা দু’টি ঘটে একটি পরিবারে।
গুলিবিদ্ধ তোফায়েলের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার কামালপুরে। বাবার নাম ছোয়াব মিয়া। না’গঞ্জ পার্ক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজি বিষয়ে ৮ম সেমিষ্টারের শিক্ষার্থী তোফায়েল। সানারপাড়ের দক্ষিন সাহেবপাড়ার একটি ভাড়া বাড়িতে তাদের বসবাস।
শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এ মেধাবী শিক্ষার্থী। গত ১৮ জুলাই আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখনও তিনি ছিলেন সামনের কাতারে। ওই দিন বিকেল ৩টা। সাইনবোর্ড মহাসড়ক তখন ছাত্র জনতার দখলে। রাস্তা অবরোধ করে রেখেছিলো আন্দোলনকারীরা। এমন সময় মহাসড়কে পার্কিং করা কয়েকটি ট্রাকের আড়াল থেকে পুলিশ গুলি করে। এতে একে একে করে শরীরে মোট ৭৯টি গুলি বিদ্ধ হয় তোফায়েলের শরীরে। প্রথমে তাকে ভর্তি করা হয় স্থানীয় প্রো-এ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তার শরীর থেকে ওইদিন মোট ৫৭টি গুলি বের করা হয়। এরপর চলতি মাসের ৩ তারিখে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ওই দিনই তার বাম হাতের শোল্ডার থেকে আরো একটি গুলি বের করা হয় অপারেশনের মাধ্যমে। শোল্ডারে পচন ধরায় কিছু অংশ কেটে ফেলতে হয়। চার দিনের চিকিৎসা শেষে তিনি বাসায় ফেরেন। কিন্তু এখনো তার শরীরে রয়েছে গেছে ২১টি গুলি। যেগুলো আর বের করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তার দুই হাতের আঙ্গুল ও তালুতে রয়েছে অসংখ্য গুলি। যে কারনে হাত মুষ্টিবদ্ধ করতে পারেননা। ঘুমাতে পারেন না বাম কাত হয়ে।
এদিকে ১৮ তারিখ তোফায়েলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার দৃশ্য দেখে ঢাকায় বেড়াতে আসা তার ছোট ভাই এবং লাখাইয়ের জিরন্ডা মানপুর তোফায়েলিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার ৮ম শেনীর ছাত্র ইমরান সহ্য করতে পারেননি। ফুলবাড়িয়া কওমী মাদরাসা থেকে হাফিজি শেষ করা ইমরানও সরকার বিরোধী আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে। বড় ভাই তোফায়েলকে বাসায় রেখেই ১৯ তারিখ থেকে ইমরান আন্দোলনে যোগ দেয়। রাত না হলে বাসায় ফিরতো না। রাস্তায় হালকা খাবার খেতো। পরদিন ২০ জুলাই ভোর হতেই ইমরান ছুটে যায় মহাসড়কে। অন্যদের সঙ্গে সাধ্যমতো মিছিলে শ্লোগান দেয়। ঢাকার রাস্তা-ঘাট অচেনা বিবেচনায় বিকেলে বাসায় ফিরলে বাবা-মা তাকে রুমে আটকে রাখে। ২১ তারিখ সকালেও ইমরানকে রুমের ভেতর রেখে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাইরে যাবার জন্য ঝটফট করছিলো ইমরান। অনেক কাকুতি-মিনতি করে তালা খুলে দেয়ার জন্য। কিন্তু কেউ তালা না খোলায় শেষে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে এ কিশোর। বাইরে গিয়ে এক কাপ চা ও চিপস খেয়ে ফিরে আসবে বলে ওইদিন বেলা দেড়টার দিকে বাসা থেকে বের হয়। সে যাওয়াই তার শেষ যাওয়া। সানারপাড় মোড়ে বেলা পৌনে ৩টার দিকে পেছন থেকে গুলি করে পুলিশ। পুলিশের হেলমেট পরা সিভিল ড্রেসে থাকা ব্যক্তির চাইনিজ রাইফেলের গুলি তার পেছন থেকে ভেদ করে বুকের সামনে দিয়ে বের হয়। তাকে দ্রুত নেয়া প্রো এ্যাকটিভ মেডিকেল। চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার জন্য রেফার করেন। কিন্তু সেখানে আসার পথে রায়েরবাগে পুলিশ তাকে বহনকারী এ্যাম্বুলেন্স আটকে দেয়। এ্যাম্বুলেন্সে তার সাথে থাকা সহ আন্দোলনকারীদের মারধর করার পাশপাশি মোবাইল ফোনও কেড়ে নেয় পুলিশ। প্রায় আধাঘন্টা আটকে রাখায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরন হলে ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা বিষয়টা জানতে পারেন রাত ১২টার দিকে। ঢামেক মর্গে গিয়ে ছেলের লাশ সনাক্ত করেন ইমরানের বাবা ছোয়াব মিয়া। শহীদ এ ছেলেটি বামৈ ফুফুর বাসায় থেকে লেখাপড়া করতো। তোফায়েল ও ইমরানের অপর ২ বোন জিনিয়া নাসরিন ও জেরিন নাসরিন দু’জনই শিক্ষার্থী। অভাবের কারনে বোনেরা স্বজনদের আশ্রয়ে থেকে শিক্ষা জীবন চালু রেখেছেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সালথায় দু'গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫, বাড়ি-ঘর ভাঙচুর
নোয়াখালীর কবিরহাটে ১৩ বান্ডেল জাল ডলার ও টাকা জব্দ, গ্রেপ্তার-১
জম্মু-কাশ্মীরে ৫ ভারতীয় সেনা নিহত
অ্যাবারক্রোম্বি সিইও যৌন পাচার মামলায় অভিযুক্ত
ধার্মিক জামাই পেলে শোবিজ ছাড়বেন প্রিয়াঙ্কা, শেষ ইচ্ছা হাফেজ হওয়া
আন্দোলনে নামলেন এবার ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা
রূপগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক নিহত
চাঁদপুরে জাহাজে সাতজনকে হত্যা: সেই ইরফান গ্রেপ্তার
নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় মোজাম্বিকে নিহত ১০৩
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের দেশের গর্ব : সেনাপ্রধান
ব্যারিস্টার ফুয়াদের ছবি সম্পাদনা করে ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার
সৈয়দপুরে তালাবন্ধ ঘর থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার
পাকিস্তান থেকে সরাসরি আসছে জাহাজ, আমদানি বেড়েছে ২১ শতাংশ
হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশের ও নিজের সর্বনাশ করেছে, বাপকে ডুবিয়েছে, দেশকে ডুবিয়েছে: ফজলুর রহমান
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের
স্বৈরশাসক হটানোর পর গণতন্ত্র পুনঃনির্মাণে শিক্ষার্থীরা
সার্চ কমিটি করে গ্রহণযোগ্যদের স্থানীয় সরকারে প্রশাসক নিয়োগ করার দাবি
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক
অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতে ১৬ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার
গণহত্যার পূর্ণাঙ্গ তথ্য জাতিসংঘকে দিতে নাগরিক কমিটির দাবি