কুষ্টিয়ার মাটির তৈরি হাঁড়ি পাতিল যাচ্ছে বিদেশে

Daily Inqilab বিশেষ সংবাদদাতা

১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৪ এএম

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে মৃৎশিল্প। মৃৎশিল্পের বাজার এখন দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক আর অ্যালুমিনিয়ামের পণ্যসামগ্রী। তবে এখনো মাটির আধুনিক মানের তৈজসপত্র তৈরি করছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কল্যাণপুর মৃৎশিল্প সমবায় সমিতির সদস্যরা। এখানকার উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। কুমারখালীর উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামে ৪০ জন সদস্য মিলে গড়ে তুলেছেন কল্যাণপুর মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ৫০-৬০ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ মাটি আর পানি দিয়ে কাদা তৈরি করছেন কেউ থালা, বাটি ও গ্লাস তৈরি করছেন। কেউ কেউ শুকানোর পর তা যতœ সহকারে পরিষ্কার করছেন। সমিতির দায়িত্বরত ম্যানেজার রাজকুমার বলেন, এই শিল্পের অতীত ঐতিহ্য খুবই সমৃদ্ধশালী। একসময় ঘরে ঘরে হাঁড়ি-পাতিল থেকে শুরু করে ঘর-গৃহস্থালি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার হতো মৃৎশিল্পের নানান তৈজসপত্র।
আমরা এখানে মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র তৈরি করি। তিন বছর ধরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন চৈতালি দাস। তার স্বামী মারা গেছেন। একটা মেয়ে আছে। তাই কোনো উপায় না পেয়ে সংসার চালাতে এই কাজ বেছে নিয়েছেন। চৈতালি জানান, এ কাজ করে মাসে তিনি তিন হাজার টাকা আয় করছেন। শিল্পী নামের আরেক শ্রমিক বলেন, এখানে কাজ করে মাস শেষে যে বেতন দেয় তার তিন ভাগের এক ভাগ যাতায়াতেই খরচ হয়ে যায়। টানাটানির মধ্যে সংসার চালাতে হয়।
মাটির তৈরি জিনিসপত্র কিনতে আসা আব্দুল লতিফ বলেন, মৃৎশিল্প বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য। তবে এখন সেসব পণ্য নেই বললেই চলে। তাই কিছু পণ্য কিনতে এসেছি। কল্যাণপুর মৃৎশিল্পের পরিচালক বটোকৃষ্ণ পাল জানান, আমার এই প্রতিষ্ঠানে ৬০ জন শ্রমিক কাজ করেন। বর্তমানে দেশের চেয়ে বর্হিবিশ্বে এই শিল্পের বেশ চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে অনেক চাহিদা তৈরি হয়েছে।
মফিজুল ইসলাম নামের ঢাকার একজন ব্যবসায়ী এখান থেকে পণ্য নিয়ে কাতারে রপ্তানি করেন। হাসান নামের আরেক ব্যবসায়ী রপ্তানি করেন সউদি আরব। অপর দুজন ব্যবসায়ী এখানকার পণ্য নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রে পাঠান। তবে গতানুগতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এই শিল্প বেশি দিন ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব। তিনি বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন দরকার আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। কিন্তু প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবে তাদের পক্ষে এসব আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে চাহিদা মোতাবেক পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছি। বারবার আবেদন নিবেদন জানানোর পরও সমবায় অধিদপ্তর কিংবা সরকারি কোনো দপ্তর থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যাচ্ছে না।
কুষ্টিয়া জেলা সমবায় অফিসার আনিছুর রহমান বলেন, প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের ব্যবহার কমে গেছে অনেকাংশে। এ শিল্পের জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিকসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী। তবে আশার কথা কুষ্টিয়ার তৈরি মাটির তৈরি এসব জিনিসপত্র আবারও নতুন করে সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ফুটেজের ব্যক্তি আর শরিফুল শেহজাদ একজন নয়,মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর দাবি পিতার
এক-এগারোর ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না: রিজভী
এবার মা, ছোট ভাই ও আন্দোলনে আত্মত্যাগীদের জন্য দোয়া চাইলেন তারেক রহমান
বিজিবি মহাপরিচালকের ভারত সফর নিয়ে কোনো গোপনীয়তা নেই: বিজিবি
সুইজারল্যান্ড থেকে ঢাকার পথে প্রধান উপদেষ্টা
আরও

আরও পড়ুন

ফুটেজের ব্যক্তি আর শরিফুল শেহজাদ একজন নয়,মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর দাবি পিতার

ফুটেজের ব্যক্তি আর শরিফুল শেহজাদ একজন নয়,মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর দাবি পিতার

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকলে যুদ্ধ বাঁধতো না : পুতিন

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকলে যুদ্ধ বাঁধতো না : পুতিন

ক্যালিফোর্নিয়া গভর্নরের সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাৎ

ক্যালিফোর্নিয়া গভর্নরের সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাৎ

যুক্তরাষ্ট্র নতুন ত্রাণ তহবিল স্থগিত করেছে, ইসরাইল-মিসরের জন্য ব্যতিক্রম

যুক্তরাষ্ট্র নতুন ত্রাণ তহবিল স্থগিত করেছে, ইসরাইল-মিসরের জন্য ব্যতিক্রম

কুমিল্লায় মাদকের বিরুদ্ধে ব্যাডমিন্টন

কুমিল্লায় মাদকের বিরুদ্ধে ব্যাডমিন্টন

বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলি

বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলি

বহুদলীয় গণতন্ত্রের একটি সংবিধান দিতে হবে: নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী

বহুদলীয় গণতন্ত্রের একটি সংবিধান দিতে হবে: নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী

অভাবনীয় ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ

অভাবনীয় ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ

টাই-ব্রেকিং ভোটে পিট হেগসেথ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিশ্চিত

টাই-ব্রেকিং ভোটে পিট হেগসেথ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিশ্চিত

এক-এগারোর ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না: রিজভী

এক-এগারোর ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না: রিজভী

এবার মা, ছোট ভাই ও আন্দোলনে আত্মত্যাগীদের জন্য দোয়া চাইলেন তারেক রহমান

এবার মা, ছোট ভাই ও আন্দোলনে আত্মত্যাগীদের জন্য দোয়া চাইলেন তারেক রহমান

এই প্রথম ভারতে স্বর্ণের দাম বেড়ে ৮৩ হাজার রুপি

এই প্রথম ভারতে স্বর্ণের দাম বেড়ে ৮৩ হাজার রুপি

বিজিবি মহাপরিচালকের ভারত সফর নিয়ে কোনো গোপনীয়তা নেই: বিজিবি

বিজিবি মহাপরিচালকের ভারত সফর নিয়ে কোনো গোপনীয়তা নেই: বিজিবি

সুইজারল্যান্ড থেকে ঢাকার পথে প্রধান উপদেষ্টা

সুইজারল্যান্ড থেকে ঢাকার পথে প্রধান উপদেষ্টা

উপদেষ্টা নাহিদের কাছে ক্ষমা চাইলেন সাইফ

উপদেষ্টা নাহিদের কাছে ক্ষমা চাইলেন সাইফ

সিংগাইরে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন উপদেষ্টা ড.আসিফ নজরুল

সিংগাইরে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন উপদেষ্টা ড.আসিফ নজরুল

সামরিক বিমানে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

সামরিক বিমানে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

আজও দূষণের শীর্ষে ঢাকা, বায়ুর মান ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’

আজও দূষণের শীর্ষে ঢাকা, বায়ুর মান ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’

চীনে বাংলাদেশিদের জন্য ই-পাসপোর্ট চালু

চীনে বাংলাদেশিদের জন্য ই-পাসপোর্ট চালু

ইসলামী আদর্শে ইসরায়েলি বন্দিদের প্রতি মানবিক আচরণ: আল-কাসাম কমান্ডার

ইসলামী আদর্শে ইসরায়েলি বন্দিদের প্রতি মানবিক আচরণ: আল-কাসাম কমান্ডার