শিগগিরই ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করবেন প্রধান উপদেষ্টা
২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম
গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন (দ্য কমিশন অব এনকোয়ারি অন এনফোর্সড ডিসাপিয়ারেন্স) গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় বিকেল সাড়ে ৫টায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে গুমের ঘটনায় তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানিয়ে ‘জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল’ যা ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিতি পেয়েছে সেগুলো পরিদর্শনের অনুরোধ জানিয়েছেন কমিশনের সদস্যরা।
উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানানো হয়। প্রধান উপদেষ্টা আয়নাঘর পরিদর্শন করলে গুমের শিকার ব্যক্তিরা আশ্বস্ত বোধ করবেন ও অভয় পাবেন বলে জানান তারা। বৈঠকে কয়েকটি গুমের ঘটনার নৃশংস বর্ণনাও প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। এমনকি ছয় বছরের শিশুকেও গুমের বর্ণনা কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে বলে জানান তারা। প্রধান উপদেষ্টা কমিশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বলেন, আপনাদের তদন্তে যে ঘটনাগুলো উঠে এসেছে তা গা শিউরে ওঠার মতো। আমি শিগগিরই আয়নাঘর পরিদর্শনে যাব।
সুইডেন ভিত্তিক স্বাধীন নিউজ পোর্টাল নেত্র নিউজের একটি অনুসন্ধানী হুইসেলব্লোয়ার প্রতিবেদন প্রকাশ করে যে অভিযোগ করা হয় যে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আয়নাঘরে (আয়নাঘর) বলপূর্বক গুমের শিকারদের আটক ও নির্যাতন করছে। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাউন্টার-টেরোরিজম ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (সিটিআইবি) দ্বারা পরিচালিত একটি গোপন আটক কেন্দ্রের নাম আয়নাঘর। ধারণা করা হয়, এখানে কমপক্ষে ১৬টি কক্ষ রয়েছে, যেখানে একসঙ্গে ৩০ বন্দি রাখার সক্ষমতা রয়েছে। আয়নাঘরটি বাংলাদেশের ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত বলে ধারণা করা হয়। সুইডেন ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল গোপন কারাগারের সম্ভাব্য অবস্থানও প্রকাশ করেছে, যেখানে বলপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের বাংলাদেশে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রতিবেদনটি বলপূর্বক গুমের শিকার দুই ব্যক্তি হাসিনুর রহমান এবং শেখ মোহাম্মদ সেলিম-এর অন-দ্য রেকর্ড অ্যাকাউন্টের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যারা বলেছেন যে তাদের ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কারাগারের ভিতরে রাখা হয়েছিল। ভারতের জি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয়নাঘর। শুনতে যতটা সাদামাটা ততটাই রহস্যময়। শেখ হাসিনার আমলে তৈরি এই আয়নাঘরেই রাখা হতো গুম করে রাখা মানুষদেরকে। আলো বাতাসহীন একটি কক্ষ। সেখানে সারাক্ষণ ঘড়ঘড়িয়ে চলে ফ্যান। শেখ হাসিনার আমলে বিরোধীদলের বহু নেতাকর্মী নিখোঁজ হয়ে গেছে। তারা কোথায় তাদের কোনো খোঁজ নেই। এমনকি সেনাবাহিনীর লোকজন রয়েছেন ওই তালিকায়। আয়নাঘর আসলে গোয়েন্দাদের একটি গোপন বন্দিশালা বা ডিটেনশন ক্যাম্প। আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আয়নাঘর’ হচ্ছে ‘গুমখানা’। হাসিনার শাসনকালে ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেখানে মোট ৬০৫ জনকে গোপনে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে নিখোঁজ হন ৪০২ জন মানুষ। এ তথ্যটি প্রকাশ করে ঢাকা ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। ২০১৪ থেকে জুলাই ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩৪৪ ব্যক্তি গুমের শিকার হয়। তাদের মধ্যে ৪০ ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, ৬৬ জনকে সরকারি হেফাজতে গ্রেফতার অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে ২০৩ জন এখনো গুম রয়েছেন। যারা দীর্ঘদিন গুম থাকার পর ফিরে আসেন, তারা গুমের ব্যাপারে মৌন অবলম্বন করেন। ধারণা করা হয় এসব মানুষদের গুম করে রাখা হয় আয়নাঘরে। আয়নাঘরে যারা বন্দি থেকেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ মোবাশার হাসান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায়। এছাড়াও আয়নাঘর থেকে সম্প্রতি ছাড়া পেয়েছেন বাংলাদেশী ব্যারিস্টার এবং জামায়াতে ইসলামী নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে মীর আহমদ বিন কাসেম, সাবেক সামরিক জেনারেল এবং জামায়াতে ইসলামী নেতা গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আজমি, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সংগঠন ইউপিডিএফের মুখপাত্র মাইকেল চাকমা। বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-সহ এইসব ঘটনার জন্য জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার রক্ষাকারী সংস্থা, যেমন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারকে নিন্দা প্রস্তাব জানায়। এসময় গুম হয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যরা মায়ের ডাক নামে একটি প্লাটফর্ম তৈরি করেন। এখানে যাদের পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে সরকারি সংস্থা কর্তৃক বলপূর্বক গুমের শিকার হয়েছে সে ঘটনাসমূহকে সামনে আনার জন্য এ সংগঠনের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ বেসরকারি একটি সংবাদ মাধ্যম থেকে ধারণা করছে, যে দেশের বিভিন্ন স্থানে এরকম আরও বেশ কিছু নির্যাতন ও আটক স্থান থাকতে পারে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে সদ্য দেশ থেকে পলায়ন করা শেখ হাসিনা বিরুদ্ধ মত সহ্য করতে পারছিলেন না। আর সেই কারণে রাজনৈতিক বন্দিদের জন্য তৈরি করেছিলেন আয়নাঘর। যা ছিল রাজনৈতিক বন্দিদের কাছে ত্রাস বা বিভীষিকাময়। হাসিনার তৈরি বিরুদ্ধ রাজনৈতিক কর্মীদের গুমঘর। প্রতিবাদীদের কণ্ঠরোধ করার একটি উপায়। সারাদেশে ডিজিএফআই’র ২৩টি গোপন আটক কেন্দ্র রয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি রয়েছে ঢাকায়। ২০২৪ সালের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট অনুযায়ী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার বছর, ২০০৯ সাল থেকে তার পতন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬০০টিরও বেশি গুম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী আয়নাঘর থেকে খুব কম বন্দি মুক্তি পেয়েছে। তবে কিছু বন্দিকে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্তি দেওয়া হয়। অনেকেই আবার এনকাউন্টারের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশে এজাতীয় ঘটনার তদন্ত প্রায় হয়নি বললেই চলে। আয়নাঘরে রাখা অনেকেই দিনের পর দিন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মারা যায়। তারপর লাশ সরিয়ে দেওয়া হয়। যাদের গ্রেফতার করা হয় তাদের খাতা কলমে কোনো তথ্য রাখা হয় না। আর যারা হাসিনার আস্থাভাজন ছিলেন তারাই আয়নাঘরের দায়িত্ব পেতেন। আয়নাঘরের বন্দিদের সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যদের দেখা করা বা যোগাযোগের কোনও আইন ছিল না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ব্রাইটনের বিপক্ষেও বিপর্যস্ত ইউনাইটেড
‘ন্যায়বিচারকে হত্যা’ করা হয়েছে: পিটিআই
নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের
রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছে অনেক আফ্রিকান সেনা
পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি
বাংলাদেশি কর্মী নিতে প্রস্তুত রাশিয়া: রাষ্ট্রদূত
রাজনৈতিক দলগুলো বেশি কিছু সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন: প্রেস সচিব
এবার ওলমোর ইনজুরি দুঃসংবাদ বার্সার
কুড়িগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ইমন ও আলামিন
এসএমই ফাউন্ডেশনের নতুন চেয়ারপার্সন মো. মুশফিকুর রহমান
বিয়ের ওপর কর বাতিলের দাবি
শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে আ.লীগ : মির্জা ফখরুল
নামাজের প্রথম কাতারে জামাত পড়াবস্থায় অজু ভেঙ্গে যাওয়া প্রসঙ্গে।
কয়েক মিনিটে বাংলাদেশ দখল করে নিতে পারে ভারত: শুভেন্দু অধিকারী
নরসিংদীতে নিখোঁজের ৫ দিন পর নদীতে পাওয়া গেল স্কুল ছাত্রের লাশ
বিএনপি : দেশবাদ যার রাজনীতির মূল কথা
পাহাড়ি উপজাতিরা আদিবাসী নয়
সংস্কার প্রতিবেদন : জাতির নতুন অধ্যায়ে অভিযাত্রা
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিনিয়োগে জোর দিতে হবে
ভারতে ৫ বছর সাজাভোগ করে দেশে ফিরলেন স্বামী-স্ত্রী