ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

স্বাধীনতার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে : প্রেসিডেন্ট

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৫ মার্চ ২০২৩, ০৮:৫০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৭ পিএম

প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, স্বাধীনতার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
প্রেসিডেন্ট ২৬ মার্চ ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান।
প্রেসিডেন্ট এ দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ চালায়। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ন’মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদ এবং জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সমর্থক, বিদেশি বন্ধু এবং সর্বস্তরের জনগণকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। দারিদ্র্যের হার কমার পাশাপাশি মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে।
নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেল ইতোমধ্যে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, কর্ণফুলী টানেল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজও নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ-স্মার্ট দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত ও সাহসী পদক্ষেপের ফলে সরকার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। সরকার টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে আর্থসামাজিক ও বিনিয়োগধর্মী নানামুখী প্রকল্প, কর্মসূচি এবং কার্যক্রম গ্রহণের ফলে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এ সংকট মোকাবিলায় আমাদেরকেও সম্পদ ব্যবহারে হতে হবে মিতব্যয়ী এবং ভোগবিলাসে কৃচ্ছতা অনুসরণ করতে হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বিগত বছরসমূহে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রম এবং আর্থসামাজিক সূচকসমূহে সরকারের অভূতপূর্ব অর্জনের ওপর ভিত্তি করে আমরা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারব, ইনশাল্লাহ।
আবদুল হামিদ বলেন, “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ বঙ্গবন্ধুর এ আদর্শ অনুসরণে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাসহ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও আমাদের অর্জন প্রশংসনীয়। বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ও নির্যাতিত লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ উন্নত আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশ এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী। আমি এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য মিয়ানমারসহ জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহত করতে হবে। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেওয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য।
রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকচক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে তাঁর নীতি-আদর্শকে মুছে ফেলার পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে চিরতরে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বাঙালি বীরের জাতি। কোনো কিছুই বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু হলেন মৃত্যুঞ্জয়। মৃত্যু তাঁকে নিঃশেষ করেনি বরং বাঙালির চিত্তাকাশে আরো উজ্জ্বল ও মহিমান্বিত করেছে। নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বোঝাতে হবে, আজ তারা যে পথটি দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তা তৈরি করে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভবিষ্যতেও তাঁর দেখানো পথই হবে উন্নয়ন ও অগ্রগতির সোপান।
তিনি বলেন, ‘দেশের অগ্রযাত্রা বেগবান করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে জাতি এগিয়ে যাক বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ার পথে মহান স্বাধীনতা দিবসে এ আমার প্রত্যাশা।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বল হাতে বাংলাদেশের ভালো শুরু

বল হাতে বাংলাদেশের ভালো শুরু

বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস

বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস

'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা

'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা

অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার

অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার

তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল

তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল

মানবপাচারকারীদের প্ররোচনায় : স্বপ্ন পূরণে হাতছানি!

মানবপাচারকারীদের প্ররোচনায় : স্বপ্ন পূরণে হাতছানি!

অবিলম্বে ফারাবিসহ সকল মাজলুম আলেমদের মুক্তি দিন, বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ

অবিলম্বে ফারাবিসহ সকল মাজলুম আলেমদের মুক্তি দিন, বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ

জগন্নাথের সহকারী প্রক্টরকে গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ

জগন্নাথের সহকারী প্রক্টরকে গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ

আপনারা এখন কোথায়: আ.লীগকে জামায়াত নেতা

আপনারা এখন কোথায়: আ.লীগকে জামায়াত নেতা

আনন্দে গুলি ছুড়তে গিয়ে নিজেই গুলিবিদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু ভারতীয় শিক্ষার্থীর

আনন্দে গুলি ছুড়তে গিয়ে নিজেই গুলিবিদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু ভারতীয় শিক্ষার্থীর

বিশ্বস্ত পাম বন্ডিকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে বেছে নিলেন ট্রাম্প

বিশ্বস্ত পাম বন্ডিকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে বেছে নিলেন ট্রাম্প

জনসমর্থন হারাচ্ছে জার্মানির ক্ষমতাসীন দল

জনসমর্থন হারাচ্ছে জার্মানির ক্ষমতাসীন দল

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে আহত, নিহত ও কারা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে বিএনপি'র সব সময় থাকবে!

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে আহত, নিহত ও কারা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে বিএনপি'র সব সময় থাকবে!

বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা হবেন বিপ্লবী, তাদের চেতনা থাকবে গতিশীল: রিজভী

বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা হবেন বিপ্লবী, তাদের চেতনা থাকবে গতিশীল: রিজভী

আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল এখন ঢাকায়

আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল এখন ঢাকায়

‘আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবে কানাডা’

‘আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবে কানাডা’

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাকে আধুনিকায়ন করা হবে- রেলপথ উপদেষ্টা

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাকে আধুনিকায়ন করা হবে- রেলপথ উপদেষ্টা

দেড় যুগ পর গোলাপগঞ্জে প্রকাশ্যে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে জনতার ঢল

দেড় যুগ পর গোলাপগঞ্জে প্রকাশ্যে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে জনতার ঢল

উইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল বাংলাদেশ

উইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল বাংলাদেশ

ভাইরাল ভিডিওতে কটাক্ষের শিকার সামান্থা

ভাইরাল ভিডিওতে কটাক্ষের শিকার সামান্থা