ভারতের ইতিহাস বিকৃতি অ-হিন্দুদের প্রতি নিপীড়ন বাড়াবে
১৬ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫২ পিএম | আপডেট: ০১ মে ২০২৩, ১২:১২ এএম
ভারতে এ মাসে নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতে হাজার হাজার স্কুলে ১২ বছরব্যাপী শিক্ষাক্রমে ইতিহাস ও রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন ঘটানো সিলেবাস এবং পাঠ্যপুস্তক তুলে দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের হাতে। পরিবর্তন ভাল, যখন তা একটি ইতিবাচক শৃঙ্খলা বা সঠিকভাবে নতুন চিন্তাকে প্রতিফলিত করে। কিন্তু, ভারতের ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং এখন আর এটির তত্ত¡াবধান করে না। বরং, তারা ‘হিন্দুত্ববাদ’ নামক কঠোর জাতীয়তাবাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং তার নেতা নরেন্দ্র মোদি এই হিন্দুত্ববাদের প্রচারক, যা ভারতের প্রকৃত ইতিহাসকে অবজ্ঞা করে ভারতকে সম্প‚র্ণরূপে একটি হিন্দু ভ‚মি হিসাবে উপস্থাপন করছে।ভারতে মুঘল সম্রাটদের বিশাল ভ‚মিকার প্রশংসা না করলে দেশটির ইতিহাস বোঝা অসম্ভব। মধ্য এশিয়ার এই পরাক্রমশালী মুসলিম রাজবংশ ১৬ থেকে ১৮ শতক পর্যন্ত ভারতবর্ষের বেশিরভাগ অংশ শাসন করেছিল। ভারতের ঐতিহ্যের কথা বলতে গেলে মোঘলদের বিশ^খ্যাত তাজমহল এবং দিল্লিতে হুমায়ুনের সমাধির কথা মনে হয়। মুঘল প্রশাসন হিন্দুদের বিশিষ্ট পদে নিয়োগ করত। ভারতের ১শ’ ৪০ কোটি জনসংখ্যার এক সপ্তমাংশ মুসলমান আজ মুঘল শাসনের চিহ্ন বহন করে। তবুও মোদির নতুন পাঠ্যপুস্তকে মুঘলদের অধ্যায়গুলি ছেঁটে ফেলা হয়েছে বা বাতিল করে দেয়া হয়েছে।ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্র দ্বারা উন্মোচিত মোদি সরকারের ম‚ল কাটছাঁটগুলির মধ্যে রয়েছে মোহনদাস গান্ধীর হত্যা। আগের পাঠ্যপুস্তকগুলিতে ছিল যে, গান্ধীর হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের অবিচল সাধনা হিন্দু চরমপন্থীদের এতটাই উস্কে দিয়েছিল, যে তারা তাকে হত্যা করার জন্য বেশ কয়েকটি চেষ্টা করেছিল। এবার এই তথ্যটি গায়েব করে দেয়া হয়েছে। উল্টো, গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে উচ্চ ব্রাহ্মণ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ভারতের পাঠ্যপুস্তক এখন আর বলে না যে, গান্ধীকে বিশেষভাবে অপছন্দ করতেন তারা, যারা ভারতকে শুধুমাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য একটি দেশ হিসেবে চেয়েছিলেন। পাঠ্যপুস্ক থেকে এই ঘটনাটিও বাদ দেয়া হয়েছে যে, গান্ধীর মৃত্যুর পর বিজেপির হিন্দুত্ববাদের আধাসামরিক শাখাকে ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)’ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।ভারতের পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রতিক ইতিহাসও মোদি সরকারের কাটছাট থেকে রেহাই পায়নি। ২০০২ সালে গুজরাটে ভয়ানক সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ১হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল, যাদের অধিকাংশই ছিল মুসলিম। মোদি সেই সময়ে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং হিন্দু সহিংসতাকারীদের কার্যকলাপের বিষয়ে চরমভাবে নীরব ছিলেন। শিক্ষার্থীদের আগে শেখানো হতো যে, গুজরাটের মতো ঘটনাগুলি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অনুভ‚তি ব্যবহার করার সাথে জড়িত বিপদ সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করে। এটা গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ। এবারের সংস্করণে এই শিক্ষাও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ভারতের শিক্ষা পরিষদের প্রধান বলেছেন যে, পরিবর্তনগুলি ঘটিয়ে দয়া করা হয়েছে। করোনা মহামারী চলাকালীন কঠিন সময় কাটানো বাচ্চাদের ওপর শিক্ষার চাপ হ্রাস করা হয়েছে। বিজেপির নেতা কপিল মিশ্র অবশ্য এতোটা ভণিতা করেননি। তিনি বীরদর্পে মতো টুইট করেছেন যে, মুঘল সম্রাটরা আর ইতিহাসের বইতে নেই, তারা এখন রয়েছেন ডাস্টবিনে।মোদি নিজেই এর আগে সহস্রাব্দের গুরুত্বপ‚র্ণ মুহুর্তে ইরান ও অন্যান্য স্থানের অভিবাসন সম্পর্কে এবং বৈচিত্র্যময় সন্নিবেশের জায়গা হিসাবে ভারতের সম্পর্কে একটি বানোয়াট ঐতিহাসিক বর্ণনার অভিযোগ করেছিলেন। ২০১৭ সালে তিনি ভারতের প্রাথমিক ইতিহাস পুনর্লিখনের জন্য মুসলিম, খ্রিস্টান বা নারী বিবর্জিত একটি কমিটি গঠন করেছিলেন। সদস্যরা বলেছেন যে, এর উদ্দেশ্য হল, হিন্দুরা ভারতের আদি বাসিন্দাদের সরাসরি বংশধর এবং (এখানে কেন থামবেন?) এটি প্রমাণ করা যে, হিন্দুধর্মের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলি কল্পকাহিনী নয়, বরং সত্য। কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, হিন্দুরা লাখ লাখ বছর ধরে বাকি সমস্ত মানবজাতির আগে থেকে পৃথিবীতে বিচরণ করার প‚র্বাভাস দিয়ে আসছে। সর্বোপরি, মোদির হিন্দুত্ববাদ হল, যেমনটা লেখক মুকুল কেশবন কেশভান বলেছেন, অন্যদের প্রতি এক তীব্র ঘৃণা। বিজেপির সহিংস আরএসএস, যা ২০ শতকের প্রথম দিকের ইউরোপীয় ফ্যাসিবাদী আন্দোলন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছিল, অত্যন্ত বিপজ্জনক। ভারতীয় ইতিহাস থেকে অহিন্দুদের বিতাড়িত করা এবং বাস্তবে তাদের নিপীড়ন করা বিজেপির সেই বর্জনকৃত ধর্মগুলির প্রতি ঘৃণার ফলাফল। এটা দু:খজনক যে, লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের ভারতকে বৈচিত্র্য, প্রতিযোগিতা এবং বাসবাসের মহান ও অনুপ্রেরণাম‚লক গল্প হিসাবে বুঝতে শেখানো হবে না। মোদির বিকৃত ইতিহাস আমন্ত্রণ জানাবে অ-হিন্দুদের প্রতি বর্ধিত নিপীড়নকে, যা এখন আরও উদ্বেগজনক।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
৭ বিয়ে নিয়ে যা বললেন সোহেল তাজ
তিউনিসিয়ায় দুই নৌকাডুবিতে ২৭ অভিবাসীর মৃত্যু
লাস ভেগাসে সাইবারট্রাক বিস্ফোরণ: বিশেষ বাহিনীর সেনার আত্মহত্যা
৮ ডিগ্রিতে নামলো তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা, বাড়ছে জনদুর্ভোগ
আরিচা-কাজিরহাট ফেরি ৬ ঘণ্টা পর আবার চলাচল শুরু
আজিমপুর কবরস্থানে চাঁদাবাজি, বিএনপি নেতা বহিষ্কার
দ.কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউনকে গ্রেপ্তার অভিযানের প্রস্তুতি, বিক্ষোভে উত্তাল দেশ
ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ
গাজায় চিকিৎসা সংকট সমাধানে ডব্লিউএইচও প্রধানের আহ্বান
ঢাবি শিবিরের নতুন সভাপতি ফরহাদ, সেক্রেটারি মহিউদ্দিন
ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় নিহত আরও ৭১ ফিলিস্তিনি
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে দাবি আদায়ে তুমুল যুদ্ধ: অবশেষে সংস্কারের আশ্বাস দিলেন এডিএম
সীতাকুণ্ডে হাত-পায়ের রগ কেটে শ্রমিক দল নেতাকে হত্যা
আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ
যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ
এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ
টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
শিক্ষা ও গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার
মানুষের দুর্দশা মোচনে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে
সেনাবাহিনী ক্ষমতার বিকল্প সত্তা নয়