সরকারের পতনের একদফা দাবিতে ডাকা বিএনপির মহাসমাবেশে অংশ নিতে গতকাল সন্ধ্যা থেকেই আসতে থাকে নেতাকর্মীরা। রাতভর তা অব্যাহত ছিল। রাতে নয়াপল্টনের অন্তত ২০ স্থানে রান্না করা হয়েছে খিচুরি। সেগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের খাওয়ানো হয়।

শুক্রবার সকাল ৮টায় সরজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মিছিল সহকারে নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে আসছে। ইতিমধ্যে পরিপূর্ণ বিজয়নগর থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত।

এদিকে, ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে পুলিশী বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তারা অভিযোগ করেছেন, যারা বাস রিজার্ভ করে সমাবেশস্থলে আসছিলেন তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এরপর নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে, কৌশল করে নয়াপল্টনে আসছেন।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগের আজকের সমাবেশ ঘিরে রাজনীতির মাঠ এখন উত্তপ্ত। সমাবেশ ঘিরে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে জনমনে। আজকের এই সমাবেশের দৃশ্যমান প্রভাব পড়েছে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে।
শুক্রবার সকালে দেখা গেছে, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে অন্যান্য দিনের তুলনায় বাস ঢুকছে কম। পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, অন্য দিনের তুলনায় ঢাকার বাইরে থেকে আজ ৫-১০ শতাংশ গাড়ি কম ঢুকছে।

সকালে টার্মিনালের প্রবেশ পথে ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে চারটি বাস ঢুকতে দেখা গেছে। এর মধ্যে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে ঢাকা থেকে রায়পুরে চলাচলকারী জোনাকী পরিবহনের একটি বাস টার্মিনালে ঢোকে। এরপর ঢাকা থেকে নবীনগরে চলাচলকারী তিশা ছাড়াও ঢাকা-হোমনার একটি বাস ঢুকতে দেখা যায়। সর্বশেষ জোনাকী পরিবহনের আরেকটি বাস টার্মিনালে ঢোকে।

পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, অন্যান্য দিন যেখানে টার্মিনালের প্রবেশ পথে সিরিয়াল লেগেই থাকে আজ সেখানে বাস একেবারেই কম আসছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গেটে দায়িত্বে থাকা একজন শ্রমিক বলেন, আজ গাড়ি অনেক কম চলছে। বলতে গেলে ৯০ শতাংশ গাড়ি আসছে না টার্মিনালে। শুনেছি ঢাকায় সমাবেশ আছে। এজন্য হয়তো গাড়ি কম চলছে।

আরেকজন শ্রমিক বলেন, কী কারণে বাস একেবারে কম চলছে তা আমরা জানি না। এগুলো মালিকরা বলতে পারবেন।
হিমাচল এক্সপ্রেসের টিকেট বিক্রেতা আলাউদ্দিন বলেন, গাড়ি চলাচল কম দেখছি। তবে কী কারণে কম চলছে তা আমরা জানি না।
ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচলকারী একটি পরিবহনের চালক নাম প্রকাশ না করে বলেন, শুনেছি ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ আছে। এজন্য অনেকগুলো গাড়ি আজ চলছে না।

সকালে রাজধানীতে ঢোকার অন্যতম প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি নিরাপত্তা চোখে পড়েনি।
যাত্রাবাড়ী মোড়ে কথা হয় ব্যবসায়ী আমিনুরের সাথে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ আছে শুনেছি। তাতে আমাদের কী? আমরা সাধারণ মানুষ। কর্ম করেই খেতে হবে।

সায়েদাবাদ এলাকাতেও একই চিত্র দেখা গেছে। এখানেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা যায়নি।
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি এবং তার দেড় কিলোমিটারের মধ্যে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে আজ সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন। পরিস্থিতি যেন সংঘাতের দিকে না গড়ায়, সেজন্যই দুই পক্ষকেই ২৩টি শর্ত দেওয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
শুক্রবার দুপুর ২টায় শুরু হতে যাওয়া বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অন্যদিকে এর এক ঘণ্টা পর বিকেল ৩টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের যৌথ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।