ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১

পোশাকশিল্প অন্য দেশের হাতে তুলে দিয়ে ক্ষমতার গ্যারান্টি চায় শেখ হাসিনা : ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রিজভী

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩১ এএম | আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩১ এএম

দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প তৈরি পোশাক ব্যবসা অন্য দেশের হাতে তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ক্রেতাদের মতামত উপেক্ষা করে শোষণ নীতির পক্ষে সরকারের অবস্থান, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী দমনে হত্যা নিষ্পেষণ, অপিরনামদর্শী সিদ্ধান্ত এবং প্রতিবেশী দেশের স্বার্থে সর্ববৃহৎ শিল্পকে (পোশাকশিল্প) ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নেয়া হয়েছে। শ্রম অধিকার সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র নতুন শ্রমনীতি ঘোষণার পর বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রায় অবধারিত বলে আশঙ্কা করছেন মালিকরা। পোশাক খাতে আতঙ্কের বিষয়টি মালিকদের সংগঠন-বিজেএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের কথাতেই স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেছেন, “নিষেধাজ্ঞা আসলে বিদেশিরা পণ্য নেবে না। ইতোমধ্যে পণ্যের আদেশ দাতারা এমন শর্ত জুড়ে দিয়েছেন ঋণপত্র খোলার সময়। এমনকি পণ্য জাহাজীকরণের পর নিষেধাজ্ঞা আসলেও পণ্য নেবে না তারা।” গতকাল বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার লক্ষ্য দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। দেশকে নিজের জমিদারী মনে করা শেখ হাসিনার মধ্যে একটা মালিকানালিপ্সা, আধিপত্যবোধ, শঠতা ও বল প্রয়োগের প্রবণতা প্রবল। আর এ কারণেই তিনি দেশের সার্বভৌমত্ব অন্যের হাতে ক্রমান্বয়ে তুলে দিচ্ছেন। ভোটার বিহীন গণবিরোধী সরকার বাংলাদেশকে উপসংহারহীন পরিস্থিতির দিকে ধাবিত করছে। সমস্ত অর্থনৈতিক সেক্টর ধ্বংসের পর এবার তাদের কুনজর পড়েছে বৈদেশিক রফতানী আয়ের সবচেয়ে বড় খাত পোশাক শিল্পের দিকে। সরকার অত্যন্ত সুকৌশলে পোশাক শিল্প ধ্বংসের নীল নকশা বাস্তবায়ন করছে। এমনিতেই শেখ হাসিনার আত্মীয় স্বজন ও দলের লোকেরাও এতো টাকা বিদেশে পাচার করেছে যে, তাদের চৌদ্দ জেনারেশন বসে বসে খেতে পারবে।

ইতোমধ্যে পোশাকখাত ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ব্যবসা হারিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পোশাক শিল্পের মালিকদের ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে উদ্ভট পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বালখিল্য প্রদর্শন করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বললেই পোশাক রফতানি বন্ধ হবে না। নিষেধাজ্ঞা দিলে কিছুই হবে না। শেখ হাসিনা বলেছেন , যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলে আমরাও দিবো। এমন পরিস্থিতির মধ্যে লাখ লাখ গরীবের রুটি রুজির একমাত্র কর্মক্ষেত্র গার্মেন্টস শিল্পের ধ্বংস ডেকে আনছে গণবিচ্ছিন্ন নিশিরাতের সরকার। কারণ দেশের মোট পোশাক রপ্তানির ৮২ শতাংশ যায় ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোয়। এসব দেশে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হলে এ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে। মানুষের হাতে ভিক্ষার ঝুলি তুলে দিতে পারবেন শেখ হাসিনা।

রিজভী বলেন, বাংলাদেশের লাখ লাখ শ্রমিক এই রপ্তানি খাত গড়ে তুলেছেন। উদ্যোক্তারা নানান পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে শিল্প গড়ে তুলেছেন। আর এই সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য বাংলাদেশের সমস্ত কলকারখানা, মানুষের পেটে লাথি মারার চিন্তা করছে। বাংলাদেশের বাজারকে হুমকির মধ্যে ফেলছে। সুতরাং আগামী একতরফা নির্বাচন শুধু শেখ হাসিনার ক্ষমতার নবায়ণ নয়, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার লাইসেন্স। এই সরকার এভাবে জনগণের পেটে যে লাথি মারছে তা না, তারা পুরো দেশ নিয়ে বাজি ধরছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে শেখ হাসিনা গং বোকা ভাবেন, বিদেশীদেরকেও তারা বোকা ভাবতে শুরু করেছেন। তারা ভেবেছে এভাবে সবার চোখে ধুলো দেওয়া যাবে। বাংলাদেশের সকল মানুষ জানে, এমনকি যারা আওয়ামী লীগ করে তারাও জানে যে এই সরকার দেশের মানুষের সঙ্গে সর্বোচ্চ প্রতারণা করছে। বাংলাদেশের সকল মানুষকে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য রাজপথে নামতে হবে। আমরা বারবার বলেছি একতরফা নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে, বিপর্যস্ত করবে। দেশকে বিপযয়ের দিকে ঠেলে দেবে। এই পাতানো নির্বাচন কেবল বয়কট নয় গণ-প্রতিরোধের মাধ্যমে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে একটা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলন গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের আন্দোলন, এই আন্দোলন শুধু বিএনপির নয় এই আন্দোলন গণতন্ত্রকামী সকল রাজনৈতিক দল ও শ্রেণীপেশার মানুষের। জন আকাক্সক্ষার সাথে সম্পৃক্ত এই আন্দোলন। গণতন্ত্র হারা মানুষ আজ লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত। মানুষের মনের মঙ্গলকর ও কল্যাণকর প্রবণতাগুলোর বিকাশ ঘটাতে হলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ বির্নিমান অপরিহার্য। গণতন্ত্র হচ্ছে জীবনের বিপুল সম্ভাবনার ইঙ্গিতবাহী। গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্য দিয়ে চিন্তা প্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তি ও শৃঙ্খলা এবং মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধিত হয়। দেশে মানুষের জীবন, সমাজ, রাষ্ট্র অনেক সুন্দর হতে পারে সর্বজনীন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে।

নির্বাচনের নামে তামাশা পুরোদমে চলছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা শুনে ক্ষিপ্ত প্রধানমন্ত্রী, খড়গ হাতে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে ‘আদার বনে শিয়াল রাজার মতো’ ছুঠে বেড়াচ্ছেন। তিনিই সব, তাঁকে ক্ষমতায় থাকতে হবে। সূতরাং যারা সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের কথা বলে তাদের তিনি ব্যাক্তিগত দুশমন হিসেবে বিবেচনা করেন। আর সেজন্য বিরোধী দলের অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবির আন্দোলন দমাতে নানা পন্থা অবলম্বন করেছেন Ñযেগুলি নির্মম পৈশাচিক। আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের পর রিমান্ড, জার্মানীর ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের’ অতাচারের কাহিনীকেও হার মানাবে। দল পরিবর্তনের জন্য কারান্তরীণ গণতন্ত্রকামী রাজনীতিবিদদের চরম অসম্মানজনকভাবে তাদের সম্মতি আদায়ের জন্য জুলুম করা হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। রিমান্ডে নির্যাতন করে তরুণ নেতা-কর্মীদের মিথ্যা স্বাক্ষ্য আদায়ের চেষ্টা চলছে। বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের নীপিড়ন, নির্যাতন, হেনস্তা ও হেয় করেও এদের পরাস্ত করতে না পেরে উৎপীড়নের পথ অবলম্বন করছে। সরকার আইনপ্রয়োগকারী র‌্যাব-পুলিশ ব্যাবহার করে রাজনৈতিক দলের নীতি-নৈতিকতা অধ:পতনের দিকে ঠেলে দেওয়ার এক সুগভীর নীলনকসা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে শেখ হাসিনার তাতে কোন লাভ হবে না। বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ের আন্দোলনে অটুট বন্ধনে আবদ্ধ।

এসময় তিনি জানান, গত ২৮ অক্টোবর থেকে দলটির ২০ হাজার ২৭৫ জনের অধীক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৫৭১টি। আহত হয়েছেন ৫ হাজার ২৮৩ জনের অধীক এবং নিহত হয়েছেন ১৯ জন নেতাকর্মী। সাম্প্রতিক সময়ে ৩৮টি মামলায় দলটির ৯ জনের মৃত্যুদ-াদেশ ও প্রায় ৬২৯ জন নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-াদেশ দেয়া হয়েছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

'নিরাপদ চাঁদপুর' চাই দাবিতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

'নিরাপদ চাঁদপুর' চাই দাবিতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

৩ মাসেরও বেশি সময় পর ঢাবিতে ক্লাস শুরু

৩ মাসেরও বেশি সময় পর ঢাবিতে ক্লাস শুরু

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ

৩৫ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ সদস্য আটক, চলছে সমালোচনা

৩৫ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ সদস্য আটক, চলছে সমালোচনা

ইবিতে ভিসির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত, মহাসড়ক অবরোধ

ইবিতে ভিসির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত, মহাসড়ক অবরোধ

অভিনেত্রী বাঁধনকে নিয়ে যা বললেন পিনাকী ভট্টাচার্য

অভিনেত্রী বাঁধনকে নিয়ে যা বললেন পিনাকী ভট্টাচার্য

আ.লীগ নেতাদের সম্পর্কে চাঞ্চল্য তথ্য দিলেন যুব মহিলী লীগ নেত্রী

আ.লীগ নেতাদের সম্পর্কে চাঞ্চল্য তথ্য দিলেন যুব মহিলী লীগ নেত্রী

পরিচয় লুকানো ঢাবি শিবিরের সভাপতি কে এই সাদিক কায়েম?

পরিচয় লুকানো ঢাবি শিবিরের সভাপতি কে এই সাদিক কায়েম?

‘হিন্দুপ্রধান’ জম্মু দিয়ে বিজেপির পক্ষে ‘মুসলিম প্রধান’ কাশ্মির জেতা কি সম্ভব?

‘হিন্দুপ্রধান’ জম্মু দিয়ে বিজেপির পক্ষে ‘মুসলিম প্রধান’ কাশ্মির জেতা কি সম্ভব?

গাজীপুরে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে সড়ক অবরোধ

গাজীপুরে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে সড়ক অবরোধ

আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় আসছে চীনের মেডিক্যাল টিম

আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় আসছে চীনের মেডিক্যাল টিম

মীলাদুন্নবী মাহফিল থেকে আমরা ঈমানকে পুনর্জ্জীবিত করতে পারি  -সায়্যিদ মাআন আল হাসানী আল মক্কী

মীলাদুন্নবী মাহফিল থেকে আমরা ঈমানকে পুনর্জ্জীবিত করতে পারি -সায়্যিদ মাআন আল হাসানী আল মক্কী

কলাপাড়ায় নবজাতককে রেখে পালিয়ে গেলেন মা

কলাপাড়ায় নবজাতককে রেখে পালিয়ে গেলেন মা

প্রথম সেশনেই বাংলাদেশের গলায় পরাজয়ের মাল্য

প্রথম সেশনেই বাংলাদেশের গলায় পরাজয়ের মাল্য

সিলেটে একদিনে ৫ থানার ওসি বদলি

সিলেটে একদিনে ৫ থানার ওসি বদলি

সংখ্যালঘু কমিউনিটি থেকে ভিসি-প্রোভিসি নিয়োগের দাবি

সংখ্যালঘু কমিউনিটি থেকে ভিসি-প্রোভিসি নিয়োগের দাবি

তেজগাঁও থানার হত্যা মামলা ইনু-মেনন-পলক-দীপু মনি, মামুন-রুপা-শাকিল গ্রেপ্তার

তেজগাঁও থানার হত্যা মামলা ইনু-মেনন-পলক-দীপু মনি, মামুন-রুপা-শাকিল গ্রেপ্তার

নিজ বাড়িতে কোয়াড নেতাদের আমন্ত্রণ জানালেন বাইডেন

নিজ বাড়িতে কোয়াড নেতাদের আমন্ত্রণ জানালেন বাইডেন

ফিরলেন লিটনও, সঙ্গী পাচ্ছেন না শান্ত

ফিরলেন লিটনও, সঙ্গী পাচ্ছেন না শান্ত

থিতু হয়ে ফিরলেন সাকিব

থিতু হয়ে ফিরলেন সাকিব