মৃদু বাতাসে দোল খায় সূর্যমুখীর হাসি
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
সূর্যের তাপ বাড়তে শুরু করেছে। বসন্ত দ্বারপ্রান্তে। বেলা তখন ১১টা ছুঁই ছুঁই। সামান্য কসরতে শরীর থেকে ঝরছে ঘাম। পিচের সড়কে বেড়ে গেছে সাদা ধুলো। কোকিলের মহিনী সুর অনেকটাই মনকে করছে প্রফুল্ল। কোকিলের সুরকে লক্ষ্য করে একটু এগুতেই চোখ আটকে যায়। ক্লান্ত চোখ যেন প্রশান্তি পায়। সূর্যমুখী ফুলে হলুদের আভায় পুরো এলাকা যেন হলুদ মেখেছে।
সূর্যমুখী ফুলে ফুলে উড়ে বেড়াচ্ছে মৌমাছি চড়–ই আর বুলবুলি পাখি। সুযোগ পেলেই সূর্যমুখীর ডগা থেকে নিচ্ছে আহার। কিশোর-কিশোরীরা মুঠো ফোনে সেলফিতে ব্যস্ত। কেউ কেউ করছেন সখের ফটোগ্রাফি। এমন মনোমুগ্ধকার পরিবেশেরে সৃষ্টি হয়েছে খুলনা মহানগরীর মুজগুন্নি এলাকার মিতালী কলোনী এলাকায়।
খুলনা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এবার খুলনা জেলায় ১ হাজার ৬৯৮ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষাবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে হাইসান-৩৩, হাইসান-৫৫, আরডিএস-২৭৫, বারি সূর্যমুখী-১ এবং বারি সূর্যমুখী-৩ জাতের আবাদ করা হয়েছে। গত বছর এই জেলা থেকে ২ দশমিক ৩৮০ মেট্রিক টন সূর্যমুখী উৎপাদন হয়েছিল।
খুলনা মহানগরীর ডাক বাংলোর মোড় থেকে আড়াই কিলোমিটার গেলেই খুলনা বেতার। এখান থেকে একশ’ ফুট সামনে গিয়ে বাঁ দিকে গেছে একটি সড়ক। এই সড়ক ধরে যেতেই চোখে পড়বে খুলনা ডায়াবেটিকস হাসপাতাল, কয়েকটি সরকারি দফতর। আরেকটু সামনে গেলেই কানে ভেসে আসে কোকিলের সুর এবং মানুষের শোরগোল। সেদিকে চোখ ঘোরালে আটকে যাবে চোখ। সেখানে বড় বড় সবুজ পাতাকে আড়ালে ফেলে বিচরণ করছে হলুদ সূর্যমুখী ফুল।
মাঘের রোদে বেড়েছে তার উজ্জ্বলতা। আর মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে ফুল আর সেইসাথে মেতেছে ভ্রমর। যান্ত্রিক জীবনের বিসন্নতা থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে সকল বয়সের নারী পুরুষ ভিড় করছেন সেখানে। এই মধুর স্মৃতিকে ধরে রাখতে মুঠো ফোন বা ক্যামেরায় নজর অনেকেরই। আর কঞ্চি (বাঁশের চিকন লাঠি) হাতে ঘুরে সেখানে পাইচারি করছেন নাসরিন খাতুন।
কথা হয় নাসরিন খাতুনের সাথে তিনি জানান, আমরা হতদরিদ্র হওয়ায় সরকারি জমি ডিসিআর কেটে নিয়ে চাষাবাদ করছি। এখানে আমাদের রয়েছে প্রায় ৩৩ শতকের মতো। এই পুরো জমিতে সূর্যমুখীর চাষাবাদ করেছি। গত বছরও এখানে সূর্যমুখীর চাষাবাদ করেছিলাম। প্রতিদিন অনেক মানুষ এখানে আসে দেখতে, ছবি তুলতে। যারা আসে তারা আমাকে বিশ পঞ্চাশ টাকা করে দেয়। এনিয়ে আমাদের প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার টাকা আয় হয়। যতদিন এখানে মানুষ আসবে ততদিন আমাদের এমন আয় হবে। আমাদের এখানে ফসলের থেকে যে আয় হয়, তার থেকে বেশি আয় হয় দর্শনার্থীদের কাছ থেকে। বছরের অন্য সময়ে আমরা এখানে ধান চাষাবাদ করি। তবে সূর্যমুখী চাষাবাদে আমাদেও লাভ বেশি হয়।
সূর্যমুখীর খেতে ঘুরতে আসা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন আমতলা মোড় এলাকার সাদিয়া আহমেদ জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সূর্যমুখী ফুলের ছবি দেখি। সেই ছবি দেখে আমরা এখানে ঘুরতে এসেছি। এখানে আমরা ৫০ টাকা দিয়েছি। একটি ফুলও নিয়েছি। অনেক মজা হয়েছে। শহরের মধ্যে এমন একটি দৃশ্য সত্যিই অসাধারণ। এখানে শুধু আমরা নয়, অনেক এলাকা থেকে এখানে মানুষ ঘুরতে আসতেছে। ভালই লাগছে।
খুলনা নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মো. মেসকাত, রিফাত আরমান, সায়লা জামান, আশিকা ও রাতুল হাসান জানান, আমরা কয়েকবার এখানে এসেছি। অনেক সুন্দর সুন্দর ছবিও তুলেছি। ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিলেই অনেকেই কমেন্টস করে, কোথা থেকে এই ছবি তোলা হয়েছে। শহরের মধ্যে এমন একটি জায়গা আসলেই সকলকে মুগ্ধ করে। সময় কাটানো এবং স্মৃতিতে ধরে রাখার মতো।
একই এলাকায় সূর্যমুখীর চাষাবাদ করছেন মো. সোবহান গাজী। তিনিও প্রতিদিন তার খেত থেকে ২ হাজার থেকে ২৫শ’ টাকা আয় করেন বলে জানান। তিনি বলেন, এবার ফলন তেমন ভাল হয়নি। জানুয়ারিতে বৃষ্টি হওয়ায় ফলন অনেকটা ঝিম মেরে গেছে। আমরা জানুয়ারি প্রথম দিকে বীজ বপন করি। খুলনা কৃষি অফিস থেকে আমাদেরকে বীজ এবং সার দিয়েছে। এছাড়া প্রায় সময় পরামর্শ দিয়ে থাকে। আমার ডিসিআর ভুক্ত জমির পরিমাণ প্রায় ৩৩ শতক। আশা করছি গতবারের মতো এবারও ২০-২৫ দিন আমাদের বেশ আয় হবে। সবমিলিয়ে ৪০-৫০ হাজারতো হবেই।
খুলনা মেট্রোপলিটন কৃষি (লবনচরা) অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রশান্ত মন্ডল জানান, আমরা এই কৃষকদেরকে বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি। একইসঙ্গে কৃষকদেরকে বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় পরার্মশ দিয়ে যাচ্ছি। তারা ভাল করছে।
খুলনা জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় সূর্যমুখীর চাষাবাদ করা হয়েছে ১ হাজার ৬৯৮ হেক্টর। জেলার অধিকাংশ জায়গায় বেশ ভাল সূর্যমুখী হয়েছে। এমনকি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়েও অনেক ভাল সূর্যমুখী ফুল হয়েছে। তবে খুলনা মহানগরীর মধ্যে মুজগুন্নি মিতালী কলোনীতে অনেক ভাল ফলন হয়েছে। অনেক মানুষ সেখানে দেখতে আসে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সোনারগাঁয় ভোট কিনতে এসে টাকাসহ যুবক আটক
তিন দশক পর ঢাকা আসছেন অস্ট্রেলিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এভারেস্ট জয় করলেন বাংলাদেশি বাবর আলী
গাজায় ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১২১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা ইসরায়েলের
সউদীতে আরো এক বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু
স্মার্টফোনের আয়ু আর দশ বছর! বিস্ফোরক দাবি মেটার শীর্ষ এআই বিজ্ঞানীর
গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের হামলা, নিহত অন্তত ১৭
বিশ্বের দীর্ঘতম ট্রেন, একদিকে থেকে অন্যদিকে হেঁটে যেতে কতক্ষণ লাগবে জানেন?
অপরাজিত থেকেই শাবির লেভারকুসেনের শিরোপা উৎসব
বদলে যাবে পূর্ব অভিজ্ঞতা, ২০২৪ সালেই স্মার্ট গ্লাসে ‘বিপ্লব’ আনতে চলেছে গুগল!
২৬ বছর পর ‘হারিয়ে যাওয়া কিশোরে’র খোঁজ মিলল প্রতিবেশির ঘরে
কিরগিস্তানে আতঙ্কে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ভিক্ষুক, মোট সম্পত্তি ৭.৫ কোটি
মেসির ফেরার ম্যাচে মায়ামির নাটকীয় জয়
ভারতের কোভ্যাক্সিনেও রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
নেতানিয়াহুকে গাঞ্জের পদত্যাগের আলটিমেটাম
মোদি বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারতে নির্বাচনের চেষ্টা করছেন : কেজরিওয়াল
রাজনীতিবিদের সুন্দরী স্ত্রীকে নিয়ে হইচই
‘কারা আগে যাবে’ নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২ গ্রুপের দ্বন্দ্ব, নিহত তরুণ
সমীকরণ মেলানোর রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা শেষে চেন্নাইকে বিদায় করে প্লে-অফে বেঙ্গালুরু