মশার কারখানা রামচন্দ্রপুর খাল
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খাল পুনরুদ্ধার হওয়ার পর আবার বেদখল হয়ে যাচ্ছে। খালের ভেতর দেয়াল তুলে, মাটি ভরাট করে দখলের চেষ্টা করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। যে ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে খাল খনন শুরু হয়েছিল, সেখানে এখন ইট ভাঙার মেশিনের স্ট্যান্ড করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা গেছে, খালের পাড়ে ময়লা ফেলা রোধে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে যাতে খালগুলো পরিষ্কার করার পর আর কেউ ময়লা ফেলতে না পারে। পর্যায়ক্রমে একের পর এক অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। উদ্ধারের পর খালগুলো সংস্কার করা হবে। খাল উদ্ধারের পর খালের পাশে ওয়াকওয়ে করা হবে, সাইকেল লেন করা হবে। স্থায়ীভাবে এসবের সমাধান করা হবে। খাল পরিষ্কার থাকলে রোগবালাই কম হবে। মশার প্রজনন কমে যাবে। দুর্গন্ধ থাকবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাল রক্ষার জন্য যে ধরনের জনবল ও পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার, তা সিটি করপোরেশনের নেই। বড় বড় কথা ও লোক দেখানো প্রচার চালিয়ে খালের পানি প্রবাহ ধরে রাখা যায় না। খাল ভালোভাবে খনন করে নদীর সাথে সংযুক্ত করতে হবে। তরল এবং কঠিন বর্জ্য খালে পড়তে দেওয়া যাবে না। খালের দুই পাড়ে মানুষের হাঁটাচলার জন্য সুন্দর ব্যবস্থা করতে হবে। তখন মানুষ আর খালে ময়লা আবর্জনা ফেলবে না। খালের দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করতে হবে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। খালটিতে অতিরিক্ত ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে খালটি প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে। প্রতিদিনই ফেলা হচ্ছে কঠিন ও তরল বর্জ্য।
ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খাল। পানির প্রবাহ বন্ধ থাকায় এটি এখন মশার প্রজননক্ষেত্র। তার ওপর খালটি উদ্ধার করে খনন কাজ শুরু হলেও এখন সেটি থমকে আছে। উত্তর সিটির যে কয়েকটি এলাকা থেকে হাসপাতালে বেশি রোগী যাচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হলো মোহাম্মদপুর। মোহাম্মদপুর এলাকার রামচন্দ্রপুর খালের দুই পারে রয়েছে মোহাম্মদিয়া হাউজিং, নবোদয় হাউজিং, মোহাম্মদিয়া হোমসসহ বেশ কিছু বস্তি। প্রতিদিন অসংখ্য ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে খালটির অনেকাংশই ভরাট হয়ে যাচ্ছে। খালটিতে পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হলেও বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং অতিরিক্ত ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে খালটি দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এই খালটি মোহাম্মদপুর এলাকার বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। খালের বিভিন্ন অংশে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ জমে আছে। খালের আশেপাশে থাকা বাসিন্দারা নিয়মিত ময়লা আবর্জনা ফেলছে। এতে করে খালের গভীরতা কমে গেছে। খালের দুই পাশে বিভিন্ন রকমের আগাছা জন্মেছে। মানুষ চলাচলের কোনো সুব্যবস্থা নেই। খালের পাশে থাকা গরুর খামার থেকেও বর্জ্য ফেলতে দেখা গেছে।
স্থানীয়দের দাবি, অনেকদিন পর পর সিটি করপোরেশেনের লোকজন এসে মশার ওষুধ ছিটিয়ে চলে যায়। তবে সেই ওষুধে মশা মরে না। বরং খালের মশা এসে বাসায় ঢুকে পড়ে। এলাকায় ডেঙ্গু রোগীও বেড়েছে। উত্তর সিটির যে কয়টি এলাকায় ডেঙ্গুর উপদ্রব বেশি তার অন্যতম মোহাম্মদপুর। রামচন্দ্রপুর খাল পরিষ্কার করে মশার উপদ্রব কমাতে না পারলে, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবার শঙ্কা এলাকাবাসির।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে মোহাম্মদপুর বছিলার লাউতলা এলাকায় খালের ওপর গড়ে ওঠা ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে খাল উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করে ডিএনসিসি। খননকাজ শেষে মেয়র আতিকুল ইসলাম নৌভ্রমণও করেন। লাউতলা থেকে খালটি মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান, সাতমসজিদ আবাসিক এলাকা হয়ে চন্দ্রিমা হাউজিং, বছিলা গার্ডেন সিটি ও দয়াল হাউজিংয়ের মধ্য দিয়ে তুরাগ নদে গিয়ে মিশেছে। এই খালটির দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ১০ কিলোমিটার। প্রস্থে কোথাও ৪০ ফুট, কোথাও ২০ ফুট। লাউতলার একটু পরেই রামচন্দ্রপুর খালের একটি শাখা বছিলা ফিউচার পার্ক, বছিলা গার্ডেন সিটি, সূচনা হাউজিং, বছিলা মডেল টাউন, শাহজালাল হাউজিং ও বছিলা সিটি ডেভেলপারের পাশ দিয়ে বুড়িগঙ্গায় পড়েছে। স্থানীয়ভাবে এটি বছিলা উত্তরপাড়া খাল নামে পরিচিত।
এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, সিটি করপোরেশন যখন খালটি খনন করে তখন খালটি অনেক প্রশস্ত ছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খালের দুই পাশে থাকা মাটিগুলো বৃষ্টির পানিতে ভেঙে খালে গিয়ে পড়েছে। এতে খালটি দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। খালটির আশেপাশে যে আগাছা গুলো জন্মেছে সেগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়নি বলে তিনি জানান।
খালের পাড়ে ময়লা ফেলা রোধে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। খাল দূষণকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আমরা খালগুলো পরিষ্কার করার পর আর কেউ ময়লা ফেলতে পারবেন না। খালের পাড়ে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দেব। খালে ময়লা ফেললেই নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। দখলদাররা নিজ দায়িত্বে খাল দখলমুক্ত করে দেবেন। আমরা যখন উচ্ছেদ অভিযান শুরু করব, তখন কিন্তু আর সময় পাবেন না।
তিনি বলেন, ঢাকার যেসব খাল এভাবে দখল করা হয়েছিল, সবগুলোই কিন্তু ধীরে ধীরে আমরা উদ্ধার করেছি। খাল উদ্ধারের পর খালের পাশে ওয়াকওয়ে করা হবে, সাইকেল লেন করা হবে। স্থায়ীভাবে এসবের সমাধান করা হবে। মেয়র বলেন, খাল পরিষ্কার থাকলে রোগবালাই কম হবে। মশার প্রজনন কমে যাবে। দুর্গন্ধ থাকবে না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা কংগ্রেসের ভোটব্যাংক : অমিত শাহ
ইসরায়েলকে ফিলিস্তিন থেকে বের করে দাও, স্লোগানে উত্তাল মার্কিন ক্যাপিটল
সউদীতে সাঁতারের পোশাকে ‘ঐতিহাসিক’ ফ্যাশন শো!
তেঁতুলিয়ায় ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে এবার নতুন নির্দেশনা বিআরটিএর
লাঠিসোটা হাতে সড়কে অটোরিকশাচালকরা, যান চলাচল বন্ধ
কান চলচ্চিত্র উৎসবে শুভকে প্রশংসায় ভাসালেন নাসিরুদ্দিন শাহ
কানে নজরকাড়া লুকে চমকে দিচ্ছেন ভাবনা
ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য গ্যান্টজের পদত্যাগের হুমকি
তীব্র হচ্ছে রুশ হামলা, গোলাবারুদের জন্য অধীর আগ্রহে ইউক্রেনীয় সেনারা
কুড়িগ্রামে নির্বচনী সংঘর্ষে আহত ১০
সোনারগাঁয় ভোট কিনতে এসে টাকাসহ যুবক আটক
তিন দশক পর ঢাকা আসছেন অস্ট্রেলিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এভারেস্ট জয় করলেন বাংলাদেশি বাবর আলী
গাজায় ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১২১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা ইসরায়েলের
সউদীতে আরো এক বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু
স্মার্টফোনের আয়ু আর দশ বছর! বিস্ফোরক দাবি মেটার শীর্ষ এআই বিজ্ঞানীর
গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের হামলা, নিহত অন্তত ১৭
বিশ্বের দীর্ঘতম ট্রেন, একদিকে থেকে অন্যদিকে হেঁটে যেতে কতক্ষণ লাগবে জানেন?
অপরাজিত থেকেই শাবির লেভারকুসেনের শিরোপা উৎসব