চুয়াডাঙ্গায় জনপ্রিয়তা পাচ্ছে তুলা চাষ
০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:১০ এএম
চুয়াডাঙ্গায় তুলা চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ চাষ লাভজনক এবং জমির উর্বরা শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। ফলে তুলা চাষে আগ্রহ বেড়েছে এ অঞ্চলের চাষিদের। দেশের বাজারে তুলার চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। তুলা চাষে আকৃষ্ট করতে সরকারিভাবে প্রণোদনা ও তুলার দামের স্থিতিশিলতার দাবি করেছে চাষিরা। দাম ওঠানামার কারণে এটি চাষে চাষিরা কিছুটা আগ্রহ হারাচ্ছে। আমদানী নির্ভরতা কমাতে দেশে হাইব্রিড জাতের চারা তৈরী, তুলা চাষে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও সাথী ফসলের সঙ্গে তুলা চাষ করে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অঞ্চলে এ চাষ সম্প্রসারিত করতে কাজ করছে চুয়াডাঙ্গা তুলা উন্নয়ন বোর্ড।
চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক তুলা উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য মতে, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার সমন্বয়ে চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে ২০১৯ থেকে ২০২০ অর্থবছরে দু’জেলায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। অর্জিত হয়েছিল ৩ হাজার ৫৪০ হেক্টর। এসময় চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৬ হাজার ৯২২ জন ও মেহেরপুর জেলায় ৬ হাজার ২৮৮ জন চাষি তুলা চাষ করে এবং ৮ হাজার ৮৫০ মেট্রিকটন তুলা উৎপাদন হয়। ২০২০ থেকে ২০২১ অর্থবছরে দু’জেলায় ৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। ওই বছর অর্জিত হয়েছিল ৩ হাজার ৭৬০ হেক্টর। এসময় চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৭ হাজার ২৬০ জন ও মেহেরপুর জেলায় ৬ হাজার ৭২৫ জন চাষি তুলা চাষ করে এবং ৯ হাজার ৯৮০ মেট্রিকটন তুলা উৎপাদন হয়। ২০২১ থেকে ২০২২ অর্থবছরে দু’জেলায় ৪ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। অর্জিত হয় ৩ হাজার ৯০৫ হেক্টর। এসময় চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৭ হাজার ৫১০ জন ও মেহেরপুর জেলায় ৬ হাজার ৯৮০ জন চাষি তুলা চাষ করে এবং ১১ হাজার ৯৫০ মেট্রিকটন তুলা উৎপাদন হয়। ২০২২ থেকে ২০২৩ অর্থবছরে দু’জেলায় ৪ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। অর্জিত হয় ৪ হাজার ২৬ হেক্টর। এসময় চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৭ হাজার ৮৬৫ জন ও মেহেরপুর জেলায় ৭ হাজার ৩০ জন চাষি তুলা চাষ করেছিল এবং ১২ হাজার ৮০ মেট্রিকটন তুলা উৎপাদন হয়। ২০২৩ থেকে ২০২৪ অর্থবছরে দু’জেলায় ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়, এ বছরে অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার ১৮২ হেক্টর। এ অর্থবছরে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৮ হাজার ৩১০ জন ও মেহেরপুর জেলায় ৭ হাজার ১১২ জন চাষি তুলা চাষ করেছে এবং এ বছরে ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন তুলা উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে। এঅঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ করছেন চাষিরা। তুলা ৬ মাসের ফসল হলেও লাভজনক চাষ। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের উচ্চ ফলনশীল জাতের তুলা বোর্ড-১২, ১৩ ও ১৪ জাত, রূপালী-১, হোয়াইট গোল্ড-১ ও ২, ডিএম-৪ এবং শুভ্র-৩ জাতের তুলা চাষ হচ্ছে। এবার গোলওয়ার্ম পোকা রোধের জন্য চাষিদের বিটি জাতের তুলা চাষ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কারণ এ জাতের তুলা গাছ ক্ষতিকারক গোলওয়ার্ম পোকা প্রতিরোধক। দেশে উৎপাদিত ধবধবে সাদা রঙ ও গুণগত মান ভাল হওয়ায় এ তুলার বেশ চাহিদা রয়েছে।
দোআঁশ ও পলিযুক্ত মাটি এবং উচুঁ জমি তুলা চাষের জন্য উপযোগী। বৈরী আবহাওয়া ঠেকাতে বীজ বপণের ১০ থেকে ১২ দিন পর মূল জমিতে চারা রোপণ করতে চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রতি মৌসুমে ১৫ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে জমিতে চারা রোপণ করে। হাইব্রিড জাতের বীজ আগাম বপণ করতে হয়। তুলার জমিতে জৈব সারের ব্যবহার বেশি। শুধু পোকামাকড় দমণের জন্য কীটনাশক ব্যবহার হয়।
তুলা চাষে প্রতি বিঘা জমিতে ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে নিজেই জমিতে কাজ করলে খরচ তুলনামূলক কম হয়। বিঘায় ১২ থেকে ১৫ মণ তুলা পাওয়া গেলে খরচ বাদে লাভ হবে ৪৫ থেকে ৫২ হাজার টাকা। প্রতি মণ তুলার বর্তমান বাজার দাম ৩ হাজার ৯০০ টাকা। এছাড়া তুলা তোলার পর শুকনা গাছ জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করে। প্রতি বিঘা জ্বালানি প্রায় ৩ হাজার টাকা।
চুয়াডাঙ্গা শহরতলী দৌলাতদিয়াড়ের তুলা চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ৫ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছে। আশা করি ৬০ থেকে ৭০ মন তুলা উৎপাদন হবে। খরচ বাদে আড়াই লাখ টাকা মত লাভ থাকবে। চুয়াডাঙ্গা বেলগাছী এলাকার তুলা চাষি সারজেত বলেন, তিনি ১৫ কাঠা জমিতে তুলার সাথে মাসকলাই আবাদ করেছিলেন। বৃষ্টির কারণে মাসকলাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তবুও খরচ বাদে এগুলো বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা লাভ করবেন বলে জানান।
চুয়াডাঙ্গা প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা সেন দেবাশীষ জানান, এবার অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে গাছ ভাল হওয়ার পরও কিছু ফুল ও কড়া ঝরে যাওয়ার ফলে ফলন কিছুটা কম হবে। তারপরও কৃষকদের পরামর্শ দেয়ায় তারা ভাল ফলন পাবে বলে আশা করা যায়। আমরা কৃষকদের বিভিন্নভাবে তুলা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। যেহেতু তুলা ছয় মাসের ফসল, সে কারণে দু’লাইনের মধ্যবর্তী স্থানে লালশাক, মুলা ও মাসকলাই লাগানোর পরামর্শ দিয়েছি। যাতে তারা একই সময় দুটি ফসল চাষ করে বেশি লাভবান হতে পারে এবং জমির সর্বোচ্চ সৎ ব্যবহার করতে পারে। আগামীতে কর্মসূচী আকারে কৃষকদের সাথী ফসলের সঙ্গে তুলা চাষে সহায়তা করা হবে। গত বছর বিটি জাতের তুলা বীজ প্রদর্শনী আকারে কৃষকদের দেয়া হয়েছে। বিটি জাতের তুলা চাষে কিটনাশক খরচ কম হবে ও পরিবেশ দূষণ কমবে।
দেশে ৮৪ শতাংশ রফতানী আয় হয় বস্ত্র খাত থেকে। যার কাঁচামাল হচ্ছে তুলা। প্রতি বছর বস্ত্র উৎপাদনে ৮০ থেকে ৮২ লাখ বেল তুলা প্রয়োজন হলেও চাহিদার মাত্র ২ শতাংশ জোগান দিতে পারে দেশে উৎপাদিত তুলা। যা অত্যন্ত নগণ্য। তাই সরকারের প্রতি তুলা খাত আরো সম্প্রসারিত করে এ চাষ সমৃদ্ধশালী করার আহŸান জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গোল উৎসবে বার্সার ছয়ে ছয়
রোনালদোর দ্রততম শত গোলের রেকর্ড ছুঁলেন হল্যান্ড
ঘটনাবহুল ড্রয়ে শেষ আর্সনাল-সিটি মহারণ
বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে
রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল
‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’
হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী