যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের পরিবর্তে অনিয়ম-দুর্নীতিকে সুরক্ষা দিচ্ছে বিআরটিএ : টিআইবি
০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০৫ এএম
ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন খাতে শুদ্ধাচার বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র (টিআইবি) গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি’র (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। ঢালাওভাবে প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে বাস্তবতাকে আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের পরিবর্তে সত্যকে অস্বীকার করার এ দৃষ্টান্ত অনিয়ম-দুর্নীতিকে সুরক্ষা দেয়ার হচ্ছে উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি। গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, টিআইবির গবেষণাটি সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণার প্রতিষ্ঠিত রীতি অনুসরণ করে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স¤পৃক্ত ব্যক্তি ও এই বিষয়ে অভিজ্ঞ সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি বর্তমান ও সাবেক কর্মীসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সেবাগ্রহীতা, বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে গুণগত ও পরিমাণগত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে সম্পন্ন করা হয়েছে। গবেষণার অন্তর্ভুক্ত জরিপে বাস মালিক, কর্মী/শ্রমিক ও যাত্রীদের কাছ থেকে কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশের ৬৪ জেলা থেকে ৩২টি জেলা প্রতিনিধিত্বশীল নমুনায়নের মাধ্যমে নির্বাচন করে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপটি পরিসংখ্যান বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ মানদÐ ও চর্চা অনুসারে পরিচালিত হয়েছে এবং এটির বৈজ্ঞানিক মান ও পদ্ধতিগত উৎকর্ষ নিশ্চিতের সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তাছাড়া জরিপে প্রাপ্ত তথ্য বাস মালিক, কর্মী/শ্রমিক ও যাত্রীদের অভিজ্ঞতাভিত্তিক, টিআইবি কেবলমাত্র বিশ্লেষণ করে উপস্থাপন করেছে। এছাড়াও গবেষণা তথ্যের উৎকর্ষ ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিতে সকল সুনির্দিষ্ট তথ্য একাধিক উৎস থেকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই করে গবেষণায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
এই গবেষণা প্রতিবেদনে বিআরটিএ সংশ্লিষ্ট ফলাফলকে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ “বাস্তবতা বর্জিত, কাল্পনিক, অনুমান নির্ভর, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যা কাপুরুষোচিত আচরণ ও সমালোচনা সইবার মানসিকতার অভাবের পরিচায়ক।
বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়, গবেষণা প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষভাবে তথ্য সংগ্রহের সময় মুখ্য তথ্যদাতা হিসেবে বিআরটিএ-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে যা অসত্য। তাছাড়া বিষয়টি প্রকাশের জন্য এ বিষয়ে বিআরটিএ’কে অবহিত করা হয়নি। টিআইবি বলছে, বিআরটিএ চেয়ারম্যান মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছেন। এই গবেষণার তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিআরটিএ-এর চেয়ারম্যান অথবা তাঁর মনোনীত প্রতিনিধির সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য টিআইবির নির্বাহী পরিচালক স্বাক্ষরিত একটি চিঠি চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বরাবর পাঠানো হয়। পরবর্তীতে ২৩ অক্টোবর চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য গবেষণা দলকে ডাকলেও তিনি তাঁর কার্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সাথে ফোনে যোগাযোগের প্রেক্ষিতে পুনরায় ১২ নভেম্বর সাক্ষাৎকারের জন্য তিনি ৫ মিনিট সময় দেন এবং সে সাক্ষাৎকারে কোনো প্রকার তথ্য প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করেন। এমনকি, বিআরটিএ চেয়ারম্যানের পরিবর্তে অন্য কোনো কর্মকর্তাকে সাক্ষাৎকারের জন্য মনোনীত করার অনুরোধ করলেও তিনি তা প্রত্যাখান করেন। পরবর্তীতে গবেষণা দল থেকে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও বিআরটিএ-এর চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে টিআইবির গবেষণা দল নিজস্ব সূত্রে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত বিআরটিএ-এর কার্যালয়ের বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে।
প্রতিবেদনে-সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হওয়া ও সেবা পেতে ৩০ দিন সময় ব্যয় প্রসঙ্গে বিআরটিএ’র দাবি- অনলাইনে আবেদন দাখিলের পর নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ অফিসে মোটরযান সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক একই দিনে রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রদান করা হচ্ছে। সুতরাং এক্ষেত্রে সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট সেবা পেতে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখিত গড় ব্যয়িত সময় ৩০ কর্মদিবসের বিষয়টি অসত্য ও কল্পনাপ্রসুত।
টিআইবি বলছে, গবেষণায় মোট ১৬৮ জন বাস মালিকের কাছ থেকে একটি কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যানবাহন নিবন্ধন/রেজিস্ট্রেশনে যে সময়ক্ষেপণ ও অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য বাস মালিকদের ওপর পরিচালিত জরিপ থেকে প্রাপ্ত, এক্ষেত্রে টিআইবি নির্মোহভাবে জরিপে অংশগ্রহণকারী মালিকদের দেওয়া তথ্য তুলে ধরেছে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিআরটিএ হতে বাসের নিবন্ধন নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি বাসের নিবন্ধন নিতে গড়ে ৩০ কার্যদিবস সময় লেগেছে, এবং ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ বাসের জন্য বাস মালিকরা ঘুষ বা নিয়মবহিভর্‚ত অর্থ দিয়েছেন বা দিতে বাধ্য হয়েছেন। এ সকল তথ্যকে অসত্য বা কল্পনাপ্রসূত বলার কোনো যুক্তি নেই।
ফিটনেস নবায়ন সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হওয়া প্রসঙ্গে বিআরটিএ’র দাবি ফিটনেস নবায়ন অনলাইনে অ্যাপয়নমেন্ট গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অ্যাপয়নমেন্ট অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে মোটরযান সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে হাজির করে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উপযুক্ততা সাপেক্ষে ফিটনেস সার্টিফিকেট একই দিনে প্রদান করা হয়। ফিটনেস নবায়নে ১৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টার মধ্যে সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফিটনেস সনদ প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে যেহেতু স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে সেহেতু সংশ্লিষ্ট সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয় এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
টিআইবি বলছে- জরিপে অংশগ্রহণকারী বাস মালিকরা তাদের গত এক বছরে বাসের ফিটনেস সনদ ইস্যু/নবায়নে বাসপ্রতি গড়ে ১৩ দিন সময় লেগেছে বলে জানিয়েছেন। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ফিটনেস সনদ ইস্যু/নবায়নে ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ বাস মালিককে ঘুষ দিতে হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে যোগসাজশ ও পরীক্ষা না করে ফিটনেসসহ অন্যান্য সনদ সংগ্রহের কথা উল্লেখ করেন জরিপে অংশগ্রহণকারী বাস মালিকেরা।
রুট পারমিট ইস্যু/নবায়নে সময়ক্ষেপণ প্রসঙ্গে বিআরটিএ-এর বক্তব্য- ‘রুট পারমিট সার্টিফিকেট ইস্যু/নবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্রের যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির সুপারিশের আলোকে বিআরটিএ থেকে নির্ধারিত সময়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রুট পারমিট সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির সভা অনুষ্ঠানের বিলম্ব হওয়ার কারণে রুট পারমিট ইস্যু/নবায়নে সময়ক্ষেপন হতে পারে। তবে এই সময় কোনোক্রমেই প্রতিবেদনে উল্লেখিত ৪৫ কর্মদিবস নয়। এক্ষেত্রে সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।
টিআইবি বলছে-জরিপে অংশগ্রহণকারী বাস মালিকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিআরটিএ থেকে রুট পারমিট ইস্যু/নবায়নে গড়ে ৪৫ দিন সময় প্রয়োজন হয়। এছাড়া ৪২.৬ শতাংশ বাস মালিক জানিয়েছেন বাসের রুট পারমিট ইস্যু/নবায়নে তাদের ঘুষ বা নিয়মবহিভর্‚ত অর্থ দিতে হয়েছে। এখানে টিআইবির কোনো নিজস্ব সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য বা মন্তব্য উপস্থাপিত হয়নি।
টিআইবি মনে করে, গবেষণাটি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ নয় বরং দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের শূন্য সহনশীলতার দৃঢ় অঙ্গীকারকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে এবং এক্ষেত্রে একটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসায় শুদ্ধাচার পর্যালোচনা করা হয়েছে। এই খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হিসেবে বিআরটিএ যদি সুযোগ দিতে সম্মত হয়, তবে তার শুদ্ধাচার সংক্রান্ত সহায়তা প্রদানের জন্য সবসময় পাশে আছে টিআইবি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গোল উৎসবে বার্সার ছয়ে ছয়
রোনালদোর দ্রততম শত গোলের রেকর্ড ছুঁলেন হল্যান্ড
ঘটনাবহুল ড্রয়ে শেষ আর্সনাল-সিটি মহারণ
বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে
রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল
‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’
হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী