ঢাকা   সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮ আশ্বিন ১৪৩১

গোয়ালন্দে ভার্মিকস্পোস্ট সার উৎপাদনে ভাগ্য বদলেছে নারী উদ্যোক্তা জাসমা আক্তারের

Daily Inqilab গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদ দাতা

০৯ মার্চ ২০২৪, ১১:৫৭ এএম | আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪, ১১:৫৭ এএম

 

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় ভার্মি কপোস্ট সার উৎপাদন ও বাজারজাত করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছে নারী উদ্যোক্তা জাসমা আক্তার ও তার প্রতিবেশীরা। এতে করে দিন দিন তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি ও কৃষিতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে। এ সার উৎপাদনে বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হয় না। ভার্মি কস্পোস্ট সার বা কেঁচো সার কৃষি ফসল উৎপাদন অত্যন্ত কার্যকরী একটি জৈব সার। এই সার রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করে গোয়ালন্দে উপজেলার কৃষকেরা ব্যাপক সুবিধা পাওয়ায়
দিন দিন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যাপক হারে।এতে করেও উজানচর ইউনিয়নের নবুনছিম উদ্দিনপাড়া জাসমা আক্তারসহ ছোট ভাকলা ইউনিয়নের স্বরুপারচক গ্রাম ও এর আশপাশের
সীমিত আয়ের প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারের সদস্যরা স্বল্প পুঁজি খাটিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় এই সার উৎপাদন ও বাজারজাত করে বাড়তি আয় করছে।এই আয়ে তাদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে।
সরজমিন ঘুরে জানা গেছে, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় শতাধিক বাড়িতে এই ভার্বিকম্পোস্ট সার বা কেঁচো সার উৎপাদন করা হচ্ছে । ওই গ্রামগুলো দিনে দিনে কেঁচো সার গ্রাম নামে পরিচিত পাচ্ছে। পরিবারের নারী পুরুষ মিলে এই সার তৈরি করে বাড়তি আয় করছে।
ভার্মি কস্পোস্ট সার উৎপাদনে নারী উদ্যোক্তা জাসমা আক্তার বলেন, আমার এক বান্ধবীকে দেখেছি এই কেঁচো সার উৎপাদন করতে। তখন আমি আমার বান্ধবীর কাছ থেকে মাত্র তিন কেজি কেঁচো ৩৬০০ টাকা দিয়ে কিনে এনে।আমার বাড়িতে দুটো গরু ছিলো। সেই গরুর গোবর দিয়ে প্রথমে তিনটি রিং বসিয়ে তার মধ্যে গোবর পচা কলা গাছ কেটে দিয়ে সার উৎপাদনের কাজ শুরু করি।যখন এখান থেকে তিন বস্তা সার পেলাম তখন ভাবলাম এটা কোথায় বিক্রি করব । তখন আমার বান্ধবীকে আমি বলি যে এই সার কোথায় বিক্রি করব। সে আমাকে বলে কৃষি অফিসে যোগাযোগ করো। আমি কৃষি অফিসের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তিন বস্তা সার বিক্রি করেছি।পরবর্তীতে ১০ টি রিংয়ের সার উৎপাদন করি তারপরে বিশাল একটি সেট করে নিয়েছি সেখানেই ভার্মিকম্প সার উৎপাদন করি। তখন কৃষি কর্মকর্তা আমাকে বললেন আপনি কি আরো বড় পরিসরে করতে চান। তখন আমি বললাম জি আমি আরো বড় পরিসরে করতে চাই। সে সময় থেকে কৃষি অফিস আমার সব ধরনের সহযোগিতা করতে লাগলো। তারা ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করার জন্য বিশাল একটি সেট করে দিয়েছে এবং কি সার ছাকনি করার জন্য একটি বড় মেশিন দিয়েছে।ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরিতে প্রাথমিকভাবে এ সার উৎপাদনে ৪২ ইঞ্চি স্কয়ারের একটি পাকা রিং ১২০ কেজি গরুর গোবর ও ৫০০ টি কেঁচো দিয়ে সার উৎপাদনের কাজ শুরু করা যায়। এতে রিং প্রতি এক হাজার টাকার প্রয়োজন হয়। ৫০ থেকে ৬০ দিন পর ৮০কেজি সার পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য ১২শত থেকে ১৪ শত টাকা। এরপর আর কিছু কিনতে হয় না। শুধু গবর কিনতে হয় পরবর্তীতে ওই কেঁচো নতুন রিংয়ের মধ্যে গবরে বসিয়ে দিতে হয়। এ সময় রিং প্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় করা যায়।প্রথমে দশ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে দশটি রিং এর মাধ্যমেও উৎপাদন কাজ শুরু করলে প্রতি মাসে ৮থেকে ৯ হাজার টাকা আয় করা যায় বাড়িতে বসে।
কৃষক হুমায়ুন জানান, আমার যত আবাদি জমি আছে। আমার সব জমিতে আমি জৈব সার ব্যবহার করি এতে করে জমিতে ভালো ফলনপাই। এক বিঘা জমিতে ১৫ থেকে ২০ বস্তা করে জৈব সার লাগে।যে জমিতে জৈব সার দিয়ে শাকসবজি আবাদ করা হয় সে শাকসবজির স্বাদই ভিন্নরকম। তাই এই উপজেলার প্রতিত জমিতে জৈব সার ব্যবহার করে ফসল আবাদ করা হচ্ছে আর ভালো ফলন পাচ্ছে কৃষকেরা। দিনে দিনে এই উপজেলার কৃষকেরা রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করছে।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খোকনুজ্জামান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার কৃষি উন্নয়নে ব্যয় কমিয়ে ফলন উৎপাদন বাড়াতে ভার্মি কম্পোস্ট সার বা কেঁচো সার উৎপাদন করে রাসায়নিক সার ব্যবহার কমানো সম্ভব। তাই আমরা কেঁচো সার উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়েছি। উদ্যোক্তাদেরকে আমরা সব ধরনের সুবিধা ও সহযোগিতা করে যাচ্ছি। নারীরা যাতে করে সংসারের পাশাপাশি বাড়িতে বসেই বাড়ির আঙিনায় রিংয়ের মাধ্যমে ভার্মি কম্পোস্ট কেঁচো সার উৎপাদন করে সারে চাহিদা মেটাতে পারে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার

বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে

রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি

রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি

নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা

নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে

ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে

দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী

দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী

ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়

ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়

বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি

বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল

অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল

‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’

‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’

হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী

হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী

মার্কিনিদের লেবানন ছাড়ার আহ্বান

মার্কিনিদের লেবানন ছাড়ার আহ্বান

সংঘাতের মধ্যে নতুন অস্ত্র সামনে আনলো ইরান

সংঘাতের মধ্যে নতুন অস্ত্র সামনে আনলো ইরান

ভারতকে পারমাণবিক সাবমেরিন আন্ডারওয়াটার ড্রোন দেবে ফ্রান্স

ভারতকে পারমাণবিক সাবমেরিন আন্ডারওয়াটার ড্রোন দেবে ফ্রান্স