পল্লীবন্ধু এরশাদকে মুছে ফেলার শক্তি কারো নেই : সাদ এরশাদ
০৯ মার্চ ২০২৪, ০২:৪২ পিএম | আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪, ০২:৪২ পিএম
জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের পদভারে মুখরিত ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তন ও প্রাঙ্গণ। সম্মেলন-স্থলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ প্রবেশ করেছেন এবং সম্মেলন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সাড়ে চার থেকে প্রায় ৫ হাজারের উপরে কাউন্সিলর এবং প্রায় ৭ হাজারের বেশি ডেলিগেট উপস্থিতির লক্ষ্য চূড়ান্ত করে সম্পন্ন করা হয় সকল আয়োজন বলে ইনকিলাবকে নিশ্চিত করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদের বিশেষ সহকারী কাজী লুৎফুল কবির।
কাউন্সিল সভায় পল্লীবন্ধুপুত্র রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ এক আবেগঘন বক্তব্য দেন।তিনি বলেন, আজকের এই দিনটি আমার জীবনে একটি স্মরলীয় দিন হয়ে থাকবে। আজ এমন একটি সম্মেলনে আপনাদের সামনে দু’টো কথা বলার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি।আজ আমার অনেক বেশী ভালো লাগছে- আমার আব্বুর রেখে যাওয়া তাঁর প্রিয় সংগঠন জাতীয় পার্টিকে আবার সুসংগঠিত করার অঙ্গীকার নিয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়াতে পেরেছি।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে শিশু বয়সেই মায়ের হাত ধরে আমাকে জেলে যেতে হয়েছিলো। আজ আবার রাজনীতির জন্যে মায়ের হাত ধরে আপনাদের সামনে এসেছি। আপনারা যদি আমাকে আপনাদের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেন- তাহলে আমিও অঙ্গীকার করছি- আব্বুর দেখানো পথ ধরে আমি সব সময় আপনাদের সাথে নিয়ে দেশ ও জনগণের সেবা করে যাবো।
আব্বুর মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টি থেকে পল্লী-বন্ধুর নাম নিশানা প্রায় মুছে ফেলা হয়েছিলো। কিন্তু আজ আপনাদের দেখে মনে হলো- পল্লীবন্ধু এরশাদকে মুছে ফেলার শক্তি কারো নেই। আমরা সবাই এক সাথে এগিয়ে যাবো পল্লী-বন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে- এই আশাবাদ ব্যাক্ত করে আমার বক্তব্য শেষ করছি। আপনারা সবাই আমার মাকে দোয়া করবেন। আমাকে দোয়া করবেন।জাতীয় পার্টি জিন্দাবাদ, পল্লীবন্ধু এরশাদ অমর হোক।
পার্টির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ, সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় কৃষক পার্টির সভাপতি সাইদুর রহমান টেপা, ঢাকা উত্তরের সভাপতি শফিকুল ইসলাম সেন্টুসহ অনেকে। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন জাতীয় পার্টি (জেপি) মহাসচিব সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম। প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায় রায় বলেছেন, সারাদেশ থেকে ৫ হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেট সম্মেলনে যোগ দেবেন। ইতোমধ্যে অনেকেই সম্মেলন স্থলে এসে উপস্থিত হয়েছেন।
দলীয় একটি সূত্র জানায়, এবার কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠনতন্ত্রে আনা হচ্ছে ব্যাপক পরিবর্তন। একক নেতৃত্ব ভেঙ্গে গণতান্ত্রিক পন্থায় দল পরিচালনার জন্য ক্ষমতার ভারসাম্য থাকছে গঠনতন্ত্রে। ছোট করে আনা হচ্ছে দলীয় শীর্ষ নীতি নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম। দলীয় কর্মকাণ্ডকে তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে এবং পার্টির মহাসচিবের কাজকে সহজ করতে আট বিভাগের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে পার্টির গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদ যুগ্ম মহাসচিব। ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে গঠনতন্ত্রে নতুন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। কো-চেয়ারম্যান পদও কমিয়ে আনা হয়েছে।
পার্টির চেয়ারম্যানকে রাজনৈতিকভাবে সহযোগিতার জন্য একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত জানা যায়নি এসব পদ পদবিতে কারা আসছেন দায়িত্ব পালনে। অতি গোপনে এসব সিদ্ধান্ত ও গঠনতন্ত্র সংশোধন-সংযোজন বিষয়ক কাগজপত্র গঠনতন্ত্র উপকমিটির নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। কাউন্সিলের সময় এসব চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কাগজপত্র হস্তান্তর করা হবে নির্বাচন কমিশন প্রধান গোলাম সরোয়ার মিলনসহ সদস্যবৃন্দের হাতে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় পার্টির নবম জাতীয় সম্মেলন।
এদিকে নানা রংবেরঙের পোষ্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে সম্মেলন-স্থল। সড়ক-দ্বীপগুলোতে লাগানো হয়েছে পল্লী-বন্ধুর উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ছবি সম্বলিত ফেস্টুন। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে কাল অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলন। এ উপলক্ষে নির্মাণ করা হয়েছে দ্বিতল বিশিষ্ট মঞ্চ।
দীর্ঘ ৪ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সম্মেলনকে সামনে রেখে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়ে প্রাণচাঞ্চল্য। ব্যস্ত সময় পার করছে সম্মেলন সফলে গঠিত উপ কমিটিগুলোর নেতৃবৃন্দ। তিন চারদিন ঢাকা মহানগর উত্তর দক্ষিণের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো সম্মেলন সফল করতে চালিয়ে যাচ্ছে প্রচার প্রচারণা। বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পল্লীবন্ধু রচিত দলীয় সঙ্গীত বাঁজিয়ে নগরীর পাড়া মহল্লা ও প্রধান প্রধান সড়কে চালিয়েছে প্রচার প্রচারণা। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বনানীতে জাতীয় মহিলা পার্টির প্রচার-কালে বাধা দেয় কতিপয় দুর্বৃত্ত। এসময় মহিলা পার্টির নেতাকর্মীদের প্রতিহতের মুখে পালিয়ে যায় ওইসব দুর্বৃত্ত।
এদিকে শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলন সম্পন্ন করতে রাজধানী রমনা এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। নেয়া হয়েছে দুস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বসানো হয়েছে অতিরিক্ত সিসি ক্যামেরা। শাহবাগ থেকে মৎস্য-ভবন পর্যন্ত মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। র্যাবর পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সম্মেলন-স্থলের আশপাশে মোতায়েন থাকবে র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে ও রাতে দু দফায় সম্মেলনের প্রস্তুতি দেখতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন প্রাঙ্গণে আসেন জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার নেতৃত্বে ভেন্যূ পরিদর্শনে যান মহাসচিব কাজী মামুনূর রশিদ, সাবেক মন্ত্রী গোলাম সরোয়ার মিলন, ঢাকা মহানগর উত্তর জাপার আহবায়ক ও পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, পল্লীবন্ধুপুত্র রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ, সাবেক রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা রফিকুল হক হাফিজ, সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম মিলন, ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, শফিকুল ইসলাম শফিক, যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহজাদা, কেন্দ্রীয় জাপা নেতা ফজলে এলাহি সোহাগ ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৮ জানুয়ারি জি এম কাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন রওশন এরশাদ। সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। রওশন এরশাদ সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। এর মাধ্যমে জাতীয় পার্টি নামে আরেকটি দল হতে যাচ্ছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবদ্দশা থেকেই জাপায় দ্বন্দ্ব চলছে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের।
২০১৯ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয়। বিরোধী দলের নেতার পদ পেয়ে জি এম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে নেন রওশন। তিন বছর পর সমঝোতা ভেঙে যায়। জি এম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে ২০২২ সালের আগস্টে কাউন্সিলের ডাক দেন তিনি। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রওশনকে বিরোধী দলের নেতার পদ থেকে সরাতে চেষ্টা করেন জি এম কাদের। তবে সরকারের সমর্থনে টিকে যান রওশন।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সরকারের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয় জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশনের। তবে কয়েক মাস পর তা ভেঙে যায়।
দ্বাদশ নির্বাচনে মাত্র ১১ আসন পেয়েছে জাপা। ভোটের পর দলটিতে ফের অস্থিরতা শুরু হয়। লাঙলের পরাজিত প্রার্থীরা সভা করে অভিযোগ তোলেন, জি এম কাদের ভোটে গিয়ে টাকা পেলেও অন্যদের দেননি। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আসন ছাড় না পাওয়া, ছাড় পেয়েও হেরে যাওয়া নেতারা জি এম কাদেরের সমালোচনায় মুখর হন।
কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায় ও ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহহিয়া চৌধুরীকে অব্যাহতি দেন জি এম কাদের। তারা সবাই রওশনের পক্ষে যোগ দিয়েছেন। দল থেকে বাদ পড়াদের নিজের পক্ষে টেনেছেন তিনি। রওশন ঘোষিত মহাসচিব কাজী মামুনুর রশিদ বলেছেন, সম্মেলনে নির্বাচিত নেতৃত্ব লাঙ্গল পেতে চেষ্টা করবে। রওশনের নেতৃত্বের জাপাই আসল। তবে আজকের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেউ যাচ্ছেন না। এছাড়া বিএনপির কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে
রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল
‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’
হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী
মার্কিনিদের লেবানন ছাড়ার আহ্বান
সংঘাতের মধ্যে নতুন অস্ত্র সামনে আনলো ইরান
ভারতকে পারমাণবিক সাবমেরিন আন্ডারওয়াটার ড্রোন দেবে ফ্রান্স