ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১
সুনাম অক্ষুন্ন রাখার লড়াইয়ে লিপ্ত তাঁতশিল্পীরা

কুমিল্লার খাদি এখনো জনপ্রিয়

Daily Inqilab সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে

২২ মার্চ ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪, ১২:১০ এএম

শৈল্পিক ছোঁয়ায় কুমিল্লার খাদি এখন দেশ-বিদেশে সমাদৃত


বর্তমানে দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে রাজনৈতিক অঙ্গণ সবখানেই চলছে ‘ইন্ডিয়া আউট’ বা ভারতীয় পণ্য বর্জন ক্যাম্পেইন। এমন বাস্তবতায় কুমিল্লার খাদি বা খদ্দরের কথা স্বাভাবিক ভাবেই সবার মনে পড়বে। কারণ আজ থেকে শত বছরেরও বেশি সময় আগে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময়ও স্বদেশী আন্দোলনের নেতারা বিদেশী পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে ছিলেন। ‘স্বদেশী পণ্য গ্রহণ কর আর বিদেশি পণ্য বর্জন কর’ এই ¯েøাগানে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন যত দানা বাঁধে ,কুমিল্লার খাদি তথন ততই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সেই থেকে আজো স্বমহিমায় অদ্বিতীয় কুমিল্লার খাদি। তবে অত্যন্ত দু:খের এবং পরিতাপের বিষয় যে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি তালিকায় এখনও অন্তর্ভূক্ত হয়নি কুমিল্লার খাদি। এনিয়ে কুমিল্লাবাসীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

কুমিল্লার খাদি শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা জানিয়েছেন, শতবর্ষেরও বেশি সময়ের ঐতিহ্য, সুনাম ও খ্যাতি অক্ষুন্ন রাখার লড়াইয়ে এখনো টিকে রয়েছে কুমিল্লার খাদি। স্বদেশ প্রেমের এক নিটোল পণ্য থেকে কালের পরিক্রমায় খাদি পরিণত হয়েছে বাঙালির অন্যতম ফ্যাশন প্রিয়তায়। শৈল্পিক ছোঁয়ায় কুমিল্লার খাদি এখন দেশ-বিদেশে বেশ সমাদৃত। খাদি কুমিল্লাকে যেমন ব্র্যান্ডিং করে, তেমনি এটি বৃহত্তরভাবে প্রিয় বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করে তুলে। বর্তমানে খাদি শিল্পে অনেক নতুন নতুন ডিজাইন এসেছে, কারণ ১৯২১ সালের প্রেক্ষাপট ও চাহিদা এক নয়। শতবছরের বেশি সময়ে খাদি পণ্য তার গুণগত মান বজায় রেখে আধুনিকতার সংমিশ্রণে হাল-ফ্যাশনের প্রতিযোগিতার বাজারে চাহিদা ধরে রেখেছে। পৃথিবীর যেখানেই বাঙালি কমিউনিটি আছে সেখানেই খাদি কাপড়ের চাহিদা রয়েছে। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের বাইরে অবাঙালিদের মাঝেও খাদি জনপ্রিয় হচ্ছে।

সমবায় আন্দোলনের পথিকৃৎ ব্যক্তিত্ব ও বার্ডের প্রতিষ্ঠাতা ড. আখতার হামিদ খানের চেষ্টায় ১৯৫২ সালের দিকে কুমিল্লার শহরের মনোহরপুরে অভয় আশ্রমে ‘দ্য খাদি অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠিত হয়। অভয় আশ্রমের কর্মীদের প্রচেষ্টায় কুমিল্লার গ্রামগুলোতে হাতে সুতাকাটা ও হস্তচালিত তাঁতের ব্যবহার শুরু হয়। বিশেষ করে চান্দিনা উপজেলার আওরাল, বাড়েরা, মাধাইয়া, কুটুম্বপুর, বেলাশ্বর, হারং, রাড়িরচর, কলাগাঁও, গণিপুর, দেবিদ্বারের বরকামতা, সাইতলা, ফুলতলী, দোবারিয়া, বাখরাবাদ, ভানী, গুঞ্জর, দাউদকান্দির গৌরীপুর, মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুর, রামকৃষ্ণপুর, ঘোড়াশাল, জাফরাবাদসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় হস্তচালিত তাঁতশিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে এবং তাঁতশিল্পকে কেন্দ্র্র করে গ্রামের মানুষ হাতে সুতা কাটার পেশায় জড়িয়ে পড়ে। সময়ের পরিক্রমায় নানা সমস্যায় বর্তমানে তাঁতির সংখ্যা কমেছে। বর্তমানে কুমিল্লা সদর, চান্দিনা, দেবিদ্বার, মুরাদনগরে হাজার খানেক তাঁতি রয়েছেন। দেবিদ্বারের বরকামতায় ৫০টির জায়গায় এখন তাঁত চালু রয়েছে প্রায় ২০টি।

কুমিল্লার বাজারে সারা বছর খাদিপন্য বিক্রি হলেও ঈদ, নববর্ষ বা বাঙালি সংস্কৃতির নানা উৎসবে খাদির পোষাকের ব্যবহার বেড়ে যায়। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রকমারি ডিজাইনের খাদিবস্ত্র তৈরি শুরু হয়েছে আরও মাসখানেক আগ থেকেই। এরপরও প্রতিদিনই খাদি কাপড় তৈরির কারখানাগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। বর্তমানে কুমিল্লা শহরে খাদির নাম সংযুক্ত দোকান আছে চার শতাধিক। নগরীর রাজগঞ্জ বাজারের পশ্চিম দিক থেকে কান্দিরপাড়ের রামঘাটলা পর্যন্ত এসব দোকানের অবস্থান। কুমিল্লার খাদি পণ্যের দোকানগুলোতে হাতে বুনা সুতার কাজ, এন্ডিকটন, এন্ডিসিল্ক, আদি, এপ্লিক বাটিক, মটকা খাদি এবং খাদির মোটা ও পাতলা কাপড়ে স্কিন প্রিন্ট ও এম্বয়ডারিসহ সব ধরণের পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে। এখন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে খাদি কাপড়ের বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি, থ্রি-পিস, টু-পিস, কুর্তা, শার্ট, ফতুয়া, টপস ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে। তবে আধুনিক ডিজাইনের চাদরের ভিড়ে এখনও খাদির বøক প্রিন্টের চাদরের চাহিদা রয়েছে।

প্রবীণ ব্যবসায়ী ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত খাদিঘর’র স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কুমার রাহা (কান্তি) বলেন, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি ও মজুরি খরচ বাড়ায় বর্তমানে খাদি কাপড়ের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে এটি ঠিক যে, দামে ও গুণমানে কুমিল্লার খাদির চেয়ে এত কম মূল্যে কোনো ব্র্যান্ডের কাপড় পাওয়া যায় না। হাতে তৈরি কাপড় হওয়ায় খাদির পোশাক পরে খুবই আরাম পাওয়া যায়। একটা ন্যাচরাল ফিল পাওয়া যায়। তিনি বলেন, বর্তমানে খাদির কাপড়ের দেশের বাইরেও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। বিদেশে ছোট-ছোট লটে খাদি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। ফ্রান্স, স্পেন, ডেনমার্ক, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশে এই পণ্য রপ্তানি হয়। বাংলাদেশের বিদেশি দূতাবাসে খাদিসহ দেশীয় পণ্যের প্রদর্শনী করা যেতে পারলে এ পণ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটাবে।

কবি নজরুল গবেষক অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কুমিল্লার খাদি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়া দুঃখজনক। জিআই পণ্য নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের এবং কুমিল্লার জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে আরও আন্তরিক হতে হবে।

 

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা