মশার টাকা যায় কার পকেটে?
২২ মার্চ ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪, ১২:১১ এএম
রাজধানী ঢাকায় (দুই সিটি কর্পোরেশন) মশার উৎপাত বেড়েছে। ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্তিতে নেই মানুষ। শুধু রাতে নয়, দিনেও মশার কামড়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। রাজধানীর মশা নিয়ে সা¤প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে শুধু ঢাকাতেই মশা বেড়েছে দ্বিগুণ। মশা নিধনে ব্যবহার করা হয়েছে ড্রোন। পানিতে ছাড়া হয়েছে ব্যাঙ, হাঁস, তেলাপিয়া ও গাপ্পি মাছ। কিন্ত এত কিছুর পরও মশা না কমে বরং বেড়েছে। শীত শেষে নেই জমে থাকা পানি, বছরে মশা মারার পেছনে ব্যয় হচ্ছে শত কোটি টাকা। তারপরও কেন মশা বাড়ছে?
দুই যুগ আগে অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মশা মারতে গাপ্পি মাছ আমদানি করেছিলেন। মশার প্রজনন কেন্দ্র ড্রেন ও নর্মমায় সে গাপ্পি মাছ ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু গাপ্পি মাছে মশা নিধন হয়নি। বরং বিষয়টি মানুষের মধ্যে বিরক্তি ও হাস্যরসের সৃষ্টি করেছিল। সেই গাপ্পি মাছ আবারও মশা নিধনের ছাড়া হয়েছিল।
জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কীটতত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, মশা নিধনে গাপ্পি মাছ অনেকটাই কার্যকরী। তবে অনেক সময় মশা মারতে অনেক লেক ও নর্দমায় কীটনাশক ও পোড়া মবিল দেয়া হয়। এগুলোর কারণে সিটি করপোরেশনের ছাড়া গাপ্পি ও অন্য মাছ মরে যায়। যা হয় হিতে বিপরীত। রাজধানীতে মশা বাড়ছে। ডেঙ্গু সিজন আসার আগেই সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা না হলে মশা নির্ম‚ল করা যাবে না।
রাজধানীর মশা নিধনে প্রতিবছর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পর্যাপ্ত বাজেট করা হয়। সিটি কর্পোরেশনের বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঢাকার দুই সিটিতে গত ১২ বছরে ঢাকার মশা মারার আয়োজনে খরচ হয়েছে ১২০০ কোটি টাকা। দুই সিটির চলতি অর্থ বছরে মশা মারার বাজেট ১৫২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে উত্তরের ১২১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৩১ কোটি ১ লাখ টাকা। সিটি করপোরেশনের বাজেট হিসাবে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মশা মারতে বাজেট বরাদ্দ ছিল ৪৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা, পরের বছর ২০২০-২১ সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৮ কোটিতে। চলতি অর্থবছরে ডিএনসিসিতে মশা মারতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৪ কোটি টাকা। প্রশ্ন হচ্ছে এই খরচের টাকা যায় কোথায়?
দুই সিটির মশার যন্ত্রণায় মানুষের নিদারুণ কষ্টের মধ্যে পরিস্থিতি কি ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। মশাবাহী রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে গত মঙ্গলবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সাথে বৈঠকে বসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সিটি করপোরেশনের প্রতি অনুরোধ জানান। এই বৈঠকে ঢাকার উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) মশার জন্য দায়ী করে বলেন, ঢাকার খালগুলো পরিষ্কারের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউক এটি পরিষ্কার না করার কারণেই মশা বাড়ছে।
সম্প্রতি মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি মশা রয়েছে রাজধানীর উত্তরা ও দক্ষিণখানে। যার দুটিই পড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে। গবেষণা করতে গিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ি, উত্তরা, মিরপুর, দক্ষিণখান ও সাভারের কয়েকটি জায়গায় মোট ১২টি ফাঁদ পাতানো হয় মশার ঘনত্ব বুঝতে। কীটতত্ত¡বিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশারের নেতৃত্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলটি প্রতি ২৪ ঘণ্টা পরপর ফাঁদের মশা পরীক্ষা করেন। ফাঁদে জমা মশা নিয়ে এই দলটি গত পাঁচ মাসের একটি তথ্য প্রকাশ করেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, এই ফাঁদগুলোতে গত বছরের নভেম্বর মাসে গড়ে প্রতিদিন ২০০টি করে , ডিসেম্বরে ২২৩টি, জানুয়ারিতে ৩০০টি, ফেব্রুয়ারি ৩৩৮ এবং মার্চে ৪২০টি করে মশা ধরা পড়েছে। ফাদে মশা পরার হিসাব অনুযায়ী, তিন মাসের মধ্যে ঢাকায় মশা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। সবগুলো ফাঁদে আটকা পড়া মশার গড় সংখ্যা ৪২০টি হলেও উত্তরা এবং দক্ষিণখানের চারটি ফাঁদে দৈনিক ধরা পড়ে গড়ে ৬০০টি মশা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষক দলটি বলছে, ফাঁদে যে সব মশা আটকা পড়েছে তার মধ্যে ৯৯ ভাগই ছিল কিউলেক্স মশা। এ নিয়ে অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, গত বছরের তুলনায় এই সময়ে মশা বেড়েছে কি না তা তুলনা করার জন্য কোনও পরিসংখ্যান আমার কাছে ছিল না। সেটি করার জন্যই আমরা এই গবেষণাটি করেছিলাম। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, এই মুহ‚র্তে কিউলেক্স মশা বাড়ছে। তাই এখন কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে এক ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। আবার যখন এডিস মশা বাড়বে তখন নেওয়া দরকার আলাদা পদক্ষেপ।
মশা নিধন প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, রোজার আগে থেকেই মশা নিধনের কার্যক্রম নিয়েছি। কিছুদিন পরপরই বাৎসরিক পরিকল্পনা রিভিউ করা হয়। এখানে আমাদের বিশেষজ্ঞও আছে। তাদের সাথে সমন্বয় করে মশা নিধনে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এতো টাকা খরচের পরও কেন মশা নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মানুষ সচেতন না হলে টাকা খরচ করে যতই অভিযান চালানো হোক কোনও কাজে আসবে না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, রেগুলার আমাদের ফগিং থেকে শুরু করে মশক নিধনে বিভিন্ন কার্যক্রম চালু রয়েছে। সিটির খাল ও নালানর্দমাগুলোতে অনেক মশা জন্ম নেয়। এসব খালের নিয়ন্ত্রণ রাজউক, ওয়াসা-সহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে থাকায় সেগুলো অপরিচ্ছন্ন থাকে। যে কারণে মশা অনেক বৃদ্ধি পায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলবায়ুর পরিবর্তন ও মশা নিধনে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে রাজধানতে দিন দিন মশা বাড়ছে। সমন্বিত পরিকল্পনা ছাড়া উদ্যোগ নিলে মশা কখনওই কমবে না। তাছাড়া কিউলেক্স আর এডিস মশা নিধনে নিতে হবে আলাদা উদ্যোগ। দুই সিটি কর্পোরেশন প্রতিবছর শত কোটি টাকার বেশি মশা মারতে খরচ করছে। মশা মরছে না। তাহলে মশার টাকা যায় কোথায়?
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা