ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১
মার্কিন নির্বাচনে বড় ভূমিকা রাখছে পররাষ্ট্রনীতি

ট্রাম্পের প্রস্তাব পছন্দ হতে পারে ভোটারদের

Daily Inqilab দ্য গার্ডিয়ান

২২ মার্চ ২০২৪, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪, ১২:১৫ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনটি একটি ভিন্নমাত্রা বহন করছে, যেখানে পররাষ্ট্রনীতির ওপর মার্কিন ভোটারদের নজর স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি এবং একটি যেখানে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী দুই প্রতিদ্ব›দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জো বাইডেন বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভ‚মিকা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি বহন করেন।

যদিও ট্রাম্প রিপাবলিকানদের পক্ষে মনোনয়ন চুড়ান্ত না হতেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন, তবে ভোটারদের পছন্দের তালিকায় তার অবস্থান বেশ শক্তিশালী। রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই জানেন যে, মার্কিন ভোটাররা সাধারণত বৈদেশিক নীতির বিষয় নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামান না, যা দেশটির অর্থনৈতিক বা সামাজিক সমস্যাগুলির তুলনায় ¤্রয়িমান। তবে, ২০২৪ সালে তাদের এই ধারা ধরে রাখার সম্ভাবনা নেই। বেশিরভাগ সাম্প্রতিক জরিটগুলি বলছে যে, আমেরিকানরা পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে ক্রমশ উদ্বিগ্ন। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রতি ১০ জন ভোটারের মধ্যে ৪ জন তাদের শীর্ষ উদ্বেগের মধ্যে বিষয়টিকে স্থান দিয়েছেন।

বিদেশে দুটি বড় যুদ্ধ এবং চীনের হুমকির ক্রমবর্ধমান ধারণার সাথে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি বিগত বছরগুলির তুলনায় ২০২৪ সালে আরও জরুরি বলে মনে হচ্ছে। এই প্রবণতাটি ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে যখন রাজনীতিবিদরা ক্রমবর্ধমানভাবে অভ্যন্তরীণ শিল্পনীতি, জ্বালানি নীতি এবং এমনকি অভিবাসন সংক্রান্ত প্রশ্নগুলিকে পররাষ্ট্রনীতি বা জাতীয় নিরাপত্তা সমস্যা হিসাবে তুলে ধরছেন।

পূর্বের প্রতিদ্ব›িদ্বতাগুলির বিপরীতে, রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট দলের মধ্যে একটি তীক্ষè দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে। জো বাইডেন পররাষ্ট্রনীতির ওপর ভর করে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর বলে মনে হচ্ছেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তিনি তার বক্তৃতাগুলিতে ইউক্রেনের যুদ্ধের কান্ডারী হয়েছেন এবং গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের টিকে থাকার সাথে যুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। বাইডেন বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রকে বর্তমান সময়ের প্রধান সমস্যা হিসাবে দেখেন।

এদিকে, ট্রাম্প সর্বদা একটি কঠোর জাতীয়তাবাদী বিশ্বদর্শনকে সমর্থন করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের পুলিশ হিসাবে উপস্থাপন করা বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গির ঠিক বিপরীত। ফেব্রæয়ারির শুরুর দিকে তিনি সমর্থকদের বলেছিলেন যে, তিনি ন্যাটো সদস্য সেই দেশগুলিকে রক্ষা করবেন না যেগুলি জোটের প্রতিরক্ষা ব্যয়ের লক্ষ্য প‚রণ করে না এবং সম্ভবত ইউরোপে রাশিয়ার আধিপত্য নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।

এই মুহুর্তে মার্কিন রাজনীতির সামগ্রিক চিত্রটি হয়ে উঠেছে ট্রাম্পের আমেরিকা-প্রথম জাতীয়তাবাদ বনাম বাইডেনের বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের যুদ্ধ। ট্রাম্প নি:সন্দেহে যুক্তি দেবেন যে, ওহাইওতে কারখানার শ্রমিক বা মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন সৈন্যরা হোক না কেন, বাইডেন সেই বিশ্ববাদী, যিনি মার্কিন ভোটারদের স্বার্থের উপরে বিদেশী দেশগুলির চাহিদাকে গুরুত্ব দেন। অন্যদিকে, বাইডেন যুক্তি দেবেন যে, ট্রাম্প একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী যিনি বিশ্বব্যাপী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রচারের অপরিহার্য জাতি হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপ‚র্ণ ভ‚মিকা বোঝেন না।

তবে, বিশ্বজুড়ে চলমান বিশৃঙ্খলার সাথে মিলিত এই যুদ্ধের ফল বাইডেনের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। মার্কিন ভোটাররা এই ধারণা নিয়ে ক্রমশ সংশয় প্রকাশ করছে যে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অপরিহার্য জাতি, বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা মানবাধিকারের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের প্রতিশ্রæতির বিষয়ে সন্দীহান এবং গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতি বাইডেনের সমর্থনে তারা হতবিহŸল।

বাইডেন অবশ্য ভোটারদের মনে করিয়ে দিতে পারেন যে ট্রাম্পের প্রথম প্রেসিডেন্ট মেয়াদ কতটা অস্থিতিশীল এবং বিশৃঙ্খল ছিল। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের প্রেসিন্টে হলে তিনি সম্ভবত নতুন শুল্ক এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা সহ চীনের উপর একটি উল্লেখযোগ্যভাবে কঠোর লাইন গ্রহণ করবেন। মুক্ত বাণিজ্যের প্রতি ট্রাম্পের বিদ্বেষ সর্বজনবিদিত। তিনি প্রায় নিশ্চিতভাবেই এশিয়ার পক্ষে যেয়ে ইউরোপের গুরুত্ব কমিয়ে দেবেন।

বাইডেনের জন্য সম্ভবত সবচেয়ে বড় সম্ভাব্য পররাষ্ট্রনীতির বিপদ যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে ঝুলছে, যেখানে আশ্রয়ের দাবি করে বিশ্বজুড়ে অভিবাসীদের ক্রমবর্ধমান আগমনকে অনেক আমেরিকান হুমকি বলে মনে করেন। ট্রাম্প এটিকে একটি জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু হিসাবে বিবেচনা করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন এবং সীমান্তে সেনা মোতায়েন করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। এমনকি তিনি মেক্সিকো বা অন্য কোথাও অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপে জড়িত থাকার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন।

তারওপর মার্কিন ভোটররা প্রথম মেয়াদের ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু নীতি আশ্চর্যজনকভাবে বাইডেন প্রশাসনের দ্বারা অনুকরণকৃত হিসেবে দেখতে পারে। বাইডেন প্রশাসন ইতিমধ্যেই চীনের শুল্ক যুদ্ধ থেকে শুরু করে সউদী আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ট্রাম্প নীতি বজায় রেখেছে। ট্রাম্পের কংগ্রেস মিত্ররা ইতিমধ্যেই ইউক্রেনকে সাহায্য দেয়া নিয়ে সন্দিহান, কিয়েভকে উল্লেখযোগ্য আরও ব্যয় বা অস্ত্র অনুমোদন করার সম্ভাবনা তাদের কম।

সাম্প্রতিক জরিপগুলি ইঙ্গিত দেয়, বেশিরভাগ আমেরিকান মনে করে যে ইউক্রেনকে একটি আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য চাপ দেওয়ার সময় এসেছে। এবং তাদের একটি বিশাল অংশ বিশ্বাস করে যে, ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য সংখ্যা কমানো বা সম্প‚র্ণভাবে প্রত্যাহার করে নেয়া উচিত এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বব্যাপী একটি প্রধান, কিন্তু নেতৃস্থানীয় নয়, ভ‚মিকাতে দেখতে চায়। ফলে, ট্রাম্প ২০২৪ জুড়ে বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করার পাশাপাশি, তার আমেরিকা-ফার্স্ট দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করার ক্ষমতা থেকে উপকৃত হবেন।

 

 

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা