ঢাকায় ভিক্ষুকের ঢল
২২ মার্চ ২০২৪, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪, ১২:১৫ এএম
ভিক্ষুকের ঢল নেমেছে রাজধানীতে। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবারকার ঢলে রয়েছে মাত্রাগত পার্থক্য। বয়সের ভারে ন্যুব্জ, বিকলাঙ্গ, প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রান্তিক নি¤œবিত্ত, নি¤œ আয়ের কর্মচারী, অসুস্থ শ্রমিক, শিশু ও বিধবারা। নগরীতে বিদ্যমান ভিক্ষুকের সঙ্গে নিত্য যুক্ত হচ্ছে ভিক্ষুকের নতুন কাফেলা। প্রতিবন্ধী, বয়োবৃদ্ধ, বিধবা, খোড়া, অঙ্গহীন, অসুস্থতাজনিত পেশাদার ভিক্ষুক তারা নয়। তাদের পুষ্টিহীন পাংশু অবয়বই বলে দেয় তারা দ্রব্যমূল্যের অসীম উল্লম্ফন, মূল্যস্ফীতি, মুদ্রাস্ফীতি, ক্রমবর্ধিষ্ণু বেকারত্বের বিপরীতে উন্নয়নদর্পী সরকার সৃষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্কট আর শোষণ-অভিঘাতের শিকার। জীবন ধারণে আবশ্যকীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পাল্লায় পরাজিত মানুষ এরা। জিডিপি কিংবা মাথাপিছু গড় আয়, অর্থনৈতিক জটিল সমীকরণ তাদের কাছে দুর্বোধ্য। রাষ্ট্রযন্ত্র প্রচারিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা সূচকে ফেলে রাজধানীমুখী ভিক্ষুকের এই ঢলকে নিছক ‘সামাজিক ব্যধি’ হিসেবে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন।
কিন্তু পথে-ঘাটে, কাঁচাবাজার, শপিংমল, রাজধানীর যেকোনো পাবলিক প্লেস, বাস, ট্রেন, লঞ্চ টার্মিনাল, ফুটওভার ব্রিজ, ফলের দোকান, ট্রাফিক সিগন্যাল, মসজিদের প্রবেশদ্বার, অফিস, বাসাবাড়ি, পাড়া-মহল্লায় ভিক্ষুকদের উপস্থিতি বলে দেয় ভিক্ষাবৃত্তি বেড়েছে কতটা। রাজধানীতে এমন পথচারী কিংবা যানবাহন আরোহী নেই, যিনি দিনে কয়েকবার ভিক্ষুকের সামনে পড়েননি। তবে এই অবস্থাকে নেহায়েত ‘ভিক্ষুক সংক্রান্ত সামাজিক সঙ্কট’ বলতে নারাজ অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, দেশে চলছে প্রচ্ছন্ন দুর্ভিক্ষ। যারা হাত পাততে পারছে, তারাই ভিক্ষা করছে। কিন্তু যারা ৮ থেকে ১৪ হাজার টাকা মাসে আয় করছেন, তারা হাত পাততে পারছেন না। বোবা কান্নায় গুমরে মরছেন তারা।
রাজধানীতে ভিক্ষুকের উৎপাত বেড়েছে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। জীবিকা নির্বাহের ব্যয়ভার বহন করতে না পারায় ভিক্ষুকের খাতায় নাম লেখাচ্ছে অনেক কর্মক্ষম নিম্ন আয়ের মানুষ, যা নগরীর সামাজিক সঙ্কটকেই শুধু তীব্রতর করেনিÑ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকেও নির্দেশ করছে। ভিক্ষুকের সংখ্যা নিরুপণে হালনাগাদ সমন্বিত কোনো জরিপ নেই। সর্বশেষ ২০২১ সালে তৎকালীন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী জাতীয় সংসদে জানিয়েছিলেন, দেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা আড়াই লাখ। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ মানুষ ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত। কিন্তু বিভিন্ন সংস্থার জরিপ বলছে, প্রকৃত সংখ্যা ৩০ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই রয়েছে ৩ লাখের বেশি পেশাদার ভিক্ষুক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, বিগত বছরগুলোতে করোনার প্রভাবে শহর থেকে গ্রামে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে বেকারত্ব। মানুষের হাতে কাজ নেই। এর সঙ্গে হালের দ্রব্যমূল্য, মুদ্রাস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা এখন আর কোনো শুমারির মধ্যে নেই। কয়েক বছর আগে সরকারের পক্ষ থেকে দেশে বেকারত্বের হার ২১ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি করা হলেও বর্তমানে এখন বেকারত্ব ৪৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। গার্মেন্টস শিল্পে রফতানি কমে গেছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কর্মহীন হয়ে পড়ছে দক্ষ শ্রমিকরাও। মাসে যারা ৮ থেকে ১৪ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করছে-তাদের মাঝে চলছে প্রচ্ছন্ন দুর্ভিক্ষ। এটিও ভিক্ষুক সৃষ্টি ও অপরাধীর সংখ্যা বাড়াচ্ছে।
ভিক্ষাবৃত্তিতেও দুর্বৃত্তায়ন : নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যই শুধু সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে যায়নি। পেশাদার ভিক্ষুকদের ওপরও রয়েছে সিন্ডিকেটের থাবা। ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ ও নিরসনের পথে এই সিন্ডিকেটকে প্রধান বাধা মনে করছে সরকার। যে কারণেরভিক্ষুক পুনর্বাসনের নামে শত শত কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও ভিক্ষুক নিয়ন্ত্রণ হয়নি। দুর্নীতি আর কর্মকৌশলে ঘাটতি থাকার ফলে ভিক্ষুক নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে বরং বাড়ছে। একবার যিনি ভিক্ষাবৃত্তিতে নাম লেখায় তাকে আর এ পেশা থেকে ফেরানো যায় না। সরকারি এমন দাবির সপক্ষে মিলেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। যেমনÑ অন্য সাধারণ পেশা থেকে ভিক্ষাবৃত্তিতে তুলনামূলক আয় বেশি। ভিক্ষাবৃত্তি ‘পেশা’ হিসেবে স্বীকৃত না হলেও এটির ধর্মীয় ও সামাজিক ভিত্তি বেশ মজবুত। এ পেশায় ঝুঁকি নেই। পুঁজিও লাগে না। আত্মমর্যাদাবোধ এবং সামাজিক লাজ-লজ্জা বিসর্জন দিয়ে হাত বাড়াতে পারলেই হাতে আসছে টাকা। দ্বিতীয়ত, হালের ভিক্ষাবৃত্তি চলে গেছে সিন্ডিকেটের হাতে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিয়ন্ত্রণ করছে ভিক্ষাবৃত্তি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্রামাঞ্চল থেকে বিকলাঙ্গ, শিশু-কিশোরসহ হতদরিদ্র ও বয়োবৃদ্ধ নারী-পুরুষ রাজধানীতে এনে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োগ করছে এ সিন্ডিকেট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্রছায়ায়ই চলে এই সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটভুক্ত না হয়ে কেউ নির্বিঘেœ ভিক্ষা করতে পারে না। সিন্ডিকেট অবুঝ শিশুদের কোলে নিয়ে, কখনওবা শারীরিক প্রতিবন্ধীদের কাজে লাগিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অর্থ। এমনকি সুস্থ মানুষকেও কৃত্রিম উপায়ে প্রতিবন্ধিত্বের কবলে ফেলে চলে ভিক্ষাবৃত্তি। সরকারি হিসেবে ঢাকায় ভিক্ষুকের সংখ্যা ৫০ হাজার বলে দাবি করা হলেও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে এ সংখ্যা ৩ লাখের বেশি। সারা দেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা আড়াই লাখ দাবি করা হলেও এ সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে বেশ আগে।
রাজধানীতে দৈনিক অন্তত ২০ কোটি টাকার ভিক্ষা-বাণিজ্য হয়। এ হিসাবে মাসে লেনদেন হয় ৬শ’ কোটি টাকা। বিপুল এই ‘অর্থনৈতিক লেনদেন’-এর খাত বন্ধ কিংবা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয় মাত্র সাড়ে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা। নগণ্য পরিমাণ এ অর্থ দেশের ভিক্ষাবৃদ্ধি বন্ধ কিংবা নিয়ন্ত্রণে হাস্যকর বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
বাড়ছে উৎপাত : রাজধানীতে ভিক্ষুকের উৎপাত এখন সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে। যদিও এ বাস্তবতা মানতে নারাজ সমাজসেবা অধিদফতর। সংস্থাটি জানায়, রাজধানীর ভিক্ষাবৃত্তি বৃদ্ধি রোধে সরকার রাজধানীর বেশ কিছু এলাকা ‘ভিক্ষুকমুক্ত’ ঘোষণা করেছে। বিমানবন্দরে প্রবেশপথে পূর্ব পাশের চৌরাস্তা, বিমানবন্দর পুলিশ ফাঁড়ি ও এর আশপাশ এলাকা, হোটেল রেডিসন সংলগ্ন এলাকা, ভিআইপি রোড, বেইলী রোড, হোটেল সোনারগাঁও ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল সংলগ্ন এলাকা ও কূটনৈতিক জোনসমূহ। এলাকাগুলো ভিক্ষুকমুক্ত রাখার লক্ষ্যে নিয়মিত মাইকিং, বিজ্ঞাপন, লিফলেট বিতরণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে এসব এলাকায় ভিক্ষুকের জন্য চলাচল করাই দায়। রাজধানীর ফুটওভারগুলোর গোড়ায় পথচারীদের দু’পাশ দিয়ে রীতিমতো আগলে দাঁড়ায় ভিক্ষুক। বিপনিবিতান, শপিং কমপ্লেক্স, কাঁচাবাজার, সবজি, গোশতের দোকান, মাছবাজার, আড়ত, হোটেল-রেস্টুরেন্টের সামনে, মসজিদ, খানকা, মাজারগেট, আদালত প্রাঙ্গণ, ব্যস্ততম গুলিস্তান, মতিঝিল, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, সদরঘাট, কমলাপুর স্টেশন, বাস টার্মিনাল, খাবারের দোকানের সামনে, গাড়িবহুল রাস্তার প্রতিটি ট্রাফিক সিগন্যাল, বাসাবাড়ি, প্রতিষ্ঠানÑ কোথায় দেখা মেলে না ভিক্ষুকের? মসজিদের নগরী হালে যেন পরিণত হয়েছে ভিক্ষুকের নগরীতে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অপ্রতিরোধ্য গতিতে ঢাকায় আসছে দরিদ্র মানুষের মিছিল। ঢাকার যেকোনো স্পটে দাঁড়ালেই মুখোমুখি হতে হয় ভিক্ষুকের। রিকশা, পাবলিক বাস কিংবা ব্যক্তিগত গাড়িতে মানুষ জ্যামে বসে টেনশন ভোগ করছে। দেখা যায়, পেছন থেকে কাপড় ধরে টানছে ভিক্ষুক। বাজারে সবজি, মাছ কিংবা ফলের দোকানের সামনে হয়তো কেউ দাঁড়ালো, আগেভাগেই হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে ভিক্ষুক। মানুষকে বিব্রত ও বিরক্তির চরম সীমানায় পৌঁছিয়ে হলেও ভিক্ষা চাই। রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষ হয়তো স্ট্রিট ফুড খাচ্ছে, মুহূর্তের মধ্যে মুখের সামনে চলে আসে ভিক্ষুকের হাত।
কথিত ‘ভিক্ষুকমুক্ত’ গুলশান, ধানমন্ডি, বনানী, উত্তরার মতো এলাকায়ও কর্কশ কণ্ঠে চেঁচিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে দেখা যায়। ভিক্ষুকের উৎপাতে অতিষ্ঠ নগরবাসীর যেন ভিক্ষুক থেকে কোনো পরিত্রাণ নেই।
প্রচ্ছন্ন দুর্ভিক্ষের কবলে ৪ কোটি মানুষ : ২০২০-২১ অর্থবছরে ঢাকা শহরের ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষিত এলাকাগুলোতে একবার ১৮টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ১৮০ জন পেশাদার ভিক্ষুক আটক করা হয়। এর মধ্যে ৭২ জনকে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে বিভিন্ন মেয়াদে আটক রেখে প্রশিক্ষণ প্রদান ও পুনর্বাসন করা হয়। অবশিষ্ট ১০৮ জনকে পরিবারে পুনর্বাসন করা হয়। ভিক্ষুক পুনর্বাসনের কাজটি পদ্ধতিগতভাবে করার জন্য একটি নীতিমালাও প্রণয়ন করা হয়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভিক্ষাবৃত্তি রোধ এবং ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে কর্মমুখী করার লক্ষ্যে একাধিকবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৩ সালে নেয়া একটি উদ্যোগ ‘এক্সপেরিমেন্ট’ পর্যায়েই ব্যর্থ হয়। ভিক্ষুকদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে রাজধানীর অন্তত ২ হাজার ভিক্ষুককে জরিপের আওতায় আনা হয়। পাইলট কর্মসূচি বাস্তবায়ন পর্যায়ে ১০টি এনজিওকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এনজিওগুলো রাজধানীকে ১০টি জোনে ভাগ করে। ১০ হাজার ভিক্ষুকের ওপর জরিপ পরিচালনা করে তাদের ডাটাবেজ তৈরি করে। কর্মসূচির পাইলটিং পর্যায়ে ভিক্ষুক পুনর্বাসনে সংখ্যা বিবেচনায় প্রাথমিকভাবে ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল ও জামালপুর জেলাকে নির্বাচন করে জেলাওয়ারি ৫শ’ জন করে ২ হাজার ভিক্ষুক পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই বছর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, স্থানীয় এমপিদের উপস্থিতিতে ময়মনসিংহের ৩৭ জন ভিক্ষুকের মধ্যে ১২ জনকে ১২টি রিকশা, ১৭ জনকে ১৭টি ভ্যান ও ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার জন্য ৫ হাজার করে টাকা করে দেয়া হয়। ৮ জনকে ৫ হাজার করে টাকা দিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন হয়। পরবর্তী সময় দেখা যায়, ভিক্ষুকরা রিকশা এবং ভ্যানগুলো বিক্রি করে দিয়েছে। নগদ টাকাগুলোও খরচ করে ফেলেছে। তারা অন্য এলাকায় গিয়ে পুনরায় ভিক্ষাবৃত্তিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। ফলাফলে ব্যর্থ হয় ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্প। বিশ্লেষকদের মতে, ভিক্ষাবৃত্তি আইন ও বিধিবিধান দ্বারা নিরসন সম্ভব নয়। যতক্ষণ না ভিক্ষুক সৃষ্টি হওয়ার কারণগুলো যথাযথভাবে চিহ্নিত করা না যাবে। তাছাড়া পেশাদার ভিক্ষুকদেরই শুধু ‘ভিক্ষুক’ বলতে নারাজ বিশ্লেষকরা। ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকনোমিক রিসার্চ (এনবিইআর)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ে গবেষণার কিছু নেই। কোনো প্রকল্পে কাজ হবে না। শুধু অর্থের শ্রাদ্ধই হয়তো হবে। গলদটা আগে খুঁজে বের করতে হবে। সবার চোখে পড়ছে যে, রাস্তাঘাটে ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়ছে। বাস্তবে না। লোক-লজ্জার ভয়ে হাত পাততে পারছে নাÑ এমন ব্যক্তিদেরও হিসাবে আনতে হবে। যারা প্রকাশ করতে পারছেন না। আমরা নি¤œ মধ্যবিত্তের হাহাকারই হয়তো দেখছি। নিত্যপণ্যের আগুন দেখলেই বোঝা যায় মানুষ কেমন আছে। এটি শুধু পথেঘাটে দৃশ্যমান ভিক্ষুকদের বিষয় নয়। মানুষের বোবা কান্না উপলব্ধি করতে হবে। ভিক্ষাবৃত্তির কারণ দূর করতে হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি যেখানে কর্মসংস্থান বাড়ানোর কথা সেখানে বাড়ছে বেকারত্ব। গার্মেন্টস, কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কর্মহীন হচ্ছে। ঢাকার অ্যাপার্টমেন্টে যেসব সিকিউরিটি গার্ড, ড্রাইভার আছেন, যাদের ৮ থেকে ১৪ হাজার টাকা বেতনে চলতে হচ্ছে, তাদের কি দশা? তাদের আপনি কোন্ সারিতে ফেলবেন? ‘গরিবের অর্থনীতিবিদ’ খ্যাত অধ্যাপক পারভেজ বলেন, আমাদের ভাগ্য ভালো যে, দেশের অর্থনীতি অনেকটা কৃষিনির্ভর। কিন্তু কৃষি শ্রমিকরাও এখন বেকার এবং দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য তিনি বৈশ্বিক মন্দার চেয়ে দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, দেশে এখন প্রচ্ছন্ন দুর্ভিক্ষ চলছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে যাদের ঘুষের অর্থনীতি আছে, যারা ধনী এমনকি যারা রিকশা-ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে এই দুর্ভিক্ষ তাদের হয়তো স্পর্শ করবে না। কিন্তু স্বল্প মাইনের কর্মচারী. গার্মেন্টসকর্মীসহ ৩ থেকে ৪ কোটি মানুষ প্রচ্ছন্ন দুর্ভিক্ষের আওতায় চলে আসবে।
অসম্পূর্ণ আইনে ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ চেষ্টা : ভিক্ষুক সৃষ্টির কারণসমূহে হাত না দিয়ে নীতিনির্ধারক মহলকে সবসময় আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কথাই বলতে শোনা যায়। অথচ ভিক্ষাবৃত্তি রোধে এখন পর্যন্ত স্বয়ংসম্পূর্ণ কোনো আইনই প্রণয়ন হয়নি। ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ কিংবা পুনর্বাসনের চেষ্টা চলে ‘ভবঘুরে নিয়ন্ত্রণ আইন’-এর আওতায়। যদিও ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে কাজে আসছে না ভবঘুরে নিয়ন্ত্রণ আইনও। প্রণয়নের ১৩ বছর অতিবাহিত হলেও এর কোনো সুফল আসেনি। ২০১১ সালে প্রণীত হয় ‘ভবঘুরে পুনর্বাসন আইন’। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এ আইনটি এখন পর্যন্ত কার্যকর করা হয়নি। আইনটির পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভবঘুরে নিয়ন্ত্রণে আইন থাকলেও পুনর্বাসনের প্রশ্নে রয়েছে অস্পষ্টতা। পেশাদার ভিক্ষুকসংখ্যা বৃদ্ধির এটি বড় একটি কারণ। ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’র প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদের মতে, আইনটি জনগুরুত্বপূর্ণ অথচ অসম্পূর্ণ। খসড়ায় অদূরদর্শিতা রয়েছে। বিধান করা না হলে শুধু আইন কখনো সফলতা আনতে পারে না। নগরবাসী ভিক্ষুকদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। অথচ সরকার নাকি কোনো ভিক্ষুকই খুঁজে পাচ্ছে না। সরকারের এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই অসাধু ব্যক্তিরা ভিক্ষাবৃত্তিতে নিত্যনতুন মাত্রা যুক্ত করছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা