দেশে কঠিন দুঃসময় চলছে: মির্জা ফখরুল

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২১ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০ এএম

 

দেশে ‘কঠিন দুঃসময় চলছে’ উল্লেখ এই অবস্থা পরিবর্তনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির। তিনি বলেন, আজকে একটা দুঃসময়, কঠিন সময় আমরা অতিক্রম করছি। রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক সংকট ভয়াবহভাবে আমাদেরকে আক্রমণ করেছে। এখানে বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে দলীয়করণ হয়ে গেছে, অর্থনীতিকে পুরোপুরিভাবে নিজেদের মতো করে তারা লুটপাট চালাচ্ছে। আজকে রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে একেবারে উপড়ে ফেলা হয়েছে। কিছু এখন অবশিষ্ট নেই। ঐক্যের কথা আমরা বলি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা আমরা বলি সেই চেতনার লেশমাত্র অবশিষ্ট নেই এখন। যার জন্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাহেবরা লড়াই করছিলেন। সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যদি আবার আমাদের ফিরিয়ে আনতে হয়, বাংলাদেশকে যদি সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আমরা পরিণত করতে চাই তাহলে আমাদেরকে এখন অবশ্যই সকলকে নতুন করে চিন্তা কর নতুনভাবে আবার বলীয়ান হয়ে জাফরুল্লাহ ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত নাগরিক স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করি, কে কি বললো সেটা ভাবার দরকার নেই, আমাদের মধ্যে যে আশা, যে আকাক্ষা আছে আমরা যারা একাত্তর সালে যুদ্ধ করেছি, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছি, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছে, গুম হয়েছে তাদের সকলকে সেই সম্মানটুকু দেয়ার জন্যে আমাদের আজকে একটা মাত্র দায়িত্ব, সেটা হচ্ছে- আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।

তিনি বলেন, আজকে এই ভয়াবহ দুঃশাসন যারা আমাদের সমস্ত ভালো অর্জনগুলোকে কেড়ে নিয়েছে, আমাদেরকে প্রতিমুহূর্তে পঙ্গু করে ফেলেছে, পুরোপুরি একটা দাসে পরিণত করছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

বিএনপি মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই দুঃশাসনের অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমরা হাত-পা ছুড়ছি। আমরা যারা রাজনীতি করি, রাজনৈতিক কর্মী আছি তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। আমি নিজেই নির্বিচারে নির্যাতিত হচ্ছি, অনেকে তাদের জীবন দিচ্ছেন, প্রাণ দিচ্ছেন। তারপরেও এই দানবকে সরানো যাচ্ছে না। এটা বাস্তবতা। এই কিছুক্ষণ আগে আলাপ হচ্ছিল, একজন কৌশলের কথা বলেছেন। আসলে এখানে প্রয়োজন সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। সব নাগরিক, যারা দেশকে ভালোবাসেন, সব রাজনৈতিক দল, যারা দেশে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি করতে চান, তাদের এখন সবাইকে এক হয়ে সোচ্চার কন্ঠে শুধু রাজপথে বেরিয়ে নয়, সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রকে ঝাঁকি দিতে হবে। তাহলেই হয়তবা ডা. জাফরুল্লাহর যে স্বপ্ন সেই স্বপ্নকে আমরা কিছুটা বাস্তবায়িত করতে পারব।

সরকারের অপশাসনের চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা একটা ভয়াবহ শাসনের মধ্যে পড়েছি। অবলীলায় এখানে হত্যা করা হয়, খুন করা হয়। সানজিদা ইসলামের ভাইকে গুম করেছে প্রায় ১২ বছর পার হয়ে গেছে, তার ভাইসহ ৭/৮ জন, আমাদের সেই ছোট্ট মেয়েটা বাবা ১২/১৩ বছর হলো এখন পর্যন্ত তারা ফিরে আসে না। ডা. জাফরুল্লাহ সারাটা জীবন দেশের জন্য যুদ্ধ করে গেছেন উল্লেখ করে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব।

ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার জীবনে চারটি বিষয়ে মূলত কাজ করেছেন। এর মধ্যে স্বাস্থ্য সেবায় যেখানে সাধারণ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে রাস্তায় বসে পড়তেন সেখানে তিনি মনোযোগী ছিলেন। নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি নারীর সম্মান নিয়ে তিনি সচেতন ছিলেন। নীতি-সার্বভৌমত্ব হচ্ছে স্বাধীন দেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যেটায় অসম্ভব রকমের ঘাটতি রয়েছে। তিনি সেখানে কাজ করেছেন। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিষয়ে তিনি সবসময়ে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। এছাড়া দেশের সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি দিনের পর দিন দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত তার পদচারণা ছিলো। ডা. জাফুরুল্লাহর পূর্ণ জীবনে কোন বিচ্যুতি হয়নি তবে তার অনেক আকাক্সক্ষাও পূরণ হয়নি। তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কার্যকরী কৌশলী জোয়ার দরকার। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই জোয়ার সৃষ্টি করলে দেশ এগিয়ে যাবে।

সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অকুতোভয় ডা. জাফরুল্লাহকে দেশের জন্য প্রয়োজন ছিলো। তিনি সত্যের পক্ষে ছিলেন, দেশের পক্ষে ছিলেন। মানুষের মুক্তির জন্য আজীবন লড়াই করে গেছেন। দেশে মুখোশধারী মুক্তিযোদ্ধার বাইরে তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, যারা এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে তারা এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান জানায়নি। দেশে এখন গুনি মানুষের সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকাটাই কঠিন। বাংলাদেশ এখন দখলদারিত্বে পরিণত হয়েছে। সকল রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে।

গণ সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ডা. জাফুরল্লাহ চৌধুরী মেরুদণ্ডের শক্ত করে রাষ্ট্র ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে মানুষের জন্য কথা বলেছেন, সবাইকে সাহস যুগিয়েছেন। একদিনের জন্যও তিনি হতাশ হননি। এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তিনি সবাইকে এক কাতারে নিয়ে এসেছিলেন। ২০১৪ সালের পর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তিনি রাজনীতি না করলেও প্রতিবাদে সক্রিয় ছিলেন।

গত বছরের ১১ এপ্রিল ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

গণ-সংহতি আন্দোলনের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য জুলহাস নাইম বাবু‘র সঞ্চালনায় নাগরিক সমাজের মধ্যে ব্রতীর শারমিন মুরশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, প্রফেসর আসিফ নজরুল, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, এফবিবিআইয়ের আবদুল হক, মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, বেলা‘র সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের প্রফেসর এজেডএম জাহিদ হোসেন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, ‘মায়ের ডাক’ এর সানজিদা ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

এসময় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির তানিয়া রব, গণঅধিকার পরিষদের নূরুল হক নূর, মিয়া মশিউজ্জামান এবং মরহুম জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মেয়ে বৃষ্টি চৌধুরী এই স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন। জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ‘আজীবন মুক্তিযোদ্ধা’ এবং ‘অকুতোভয় দেশপ্রেমিক’ অভিহিত করে দেশের মানুষের জন্য তার বর্ণাঢ্য কর্মকান্ডর কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন বিভিন্ন পেশার নাগরিকগণ। এই নাগরিক স্মরণ সভায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সহধর্মিণী শিরিন হক ও ছেলে বারীশ চৌধুরীসহ আত্মীয়-স্বজনরা এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

জনপ্রিয় কমেডিয়ান ভারতী সিং হাসপাতালে ভর্তি

জনপ্রিয় কমেডিয়ান ভারতী সিং হাসপাতালে ভর্তি

মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তিতে উচ্ছ্বসিত নেটিজেনরা

মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তিতে উচ্ছ্বসিত নেটিজেনরা

ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলো দুটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়

ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলো দুটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়

সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ওয়াহিদুজ্জামান

সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ওয়াহিদুজ্জামান

ইউরোয় গ্রুপ পর্ব পার হওয়া ফ্রান্সের জন্য কঠিন হবে: দেশ্যম

ইউরোয় গ্রুপ পর্ব পার হওয়া ফ্রান্সের জন্য কঠিন হবে: দেশ্যম

জায়েদ খানের ফোন পানিতে ছুড়ে ফেললেন সাকিব, যা বলছেন নেটিজেনরা

জায়েদ খানের ফোন পানিতে ছুড়ে ফেললেন সাকিব, যা বলছেন নেটিজেনরা

বনানীতে পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট

বনানীতে পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট

গণমাধ্যমকে নানা কারণে আত্মসমর্পন করতে হয় : বাংলাদেশ ন্যাপ

গণমাধ্যমকে নানা কারণে আত্মসমর্পন করতে হয় : বাংলাদেশ ন্যাপ

পান্ডিয়া হবে বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়: আগারকার

পান্ডিয়া হবে বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়: আগারকার

গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা, ২৪ ঘণ্টাও শেষ হয়নি উদ্ধার অভিযান

গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা, ২৪ ঘণ্টাও শেষ হয়নি উদ্ধার অভিযান

দুর্নীতির দায়ে নিষিদ্ধ থমাস

দুর্নীতির দায়ে নিষিদ্ধ থমাস

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে আশাবাদী বাংলাদেশ ও গাম্বিয়া

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে আশাবাদী বাংলাদেশ ও গাম্বিয়া

ছেলের কবরে বেড়া দিতে গিয়ে মারা গেলেন বাবাও

ছেলের কবরে বেড়া দিতে গিয়ে মারা গেলেন বাবাও

১৪ মে চট্টগ্রাম থেকে হজযাত্রা শুরু

১৪ মে চট্টগ্রাম থেকে হজযাত্রা শুরু

এপ্রিল মাসে প্রযুক্তি সংস্থাগুলি থেকে ‘গলাধাক্কা’ খেয়েছেন সাড়ে ২১ হাজার কর্মী

এপ্রিল মাসে প্রযুক্তি সংস্থাগুলি থেকে ‘গলাধাক্কা’ খেয়েছেন সাড়ে ২১ হাজার কর্মী

কঙ্গোতে বাস্তুহারাদের শিবিরে হামলা, শিশুসহ নিহত ৯

কঙ্গোতে বাস্তুহারাদের শিবিরে হামলা, শিশুসহ নিহত ৯

চাঁদের পানে যাত্রা শুরু করলো চীনের ছ্যাং’এ-৬

চাঁদের পানে যাত্রা শুরু করলো চীনের ছ্যাং’এ-৬

শ্রীপুরে ট্রাক-পিকআপ সংঘর্ষে দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহত

শ্রীপুরে ট্রাক-পিকআপ সংঘর্ষে দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহত

শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখলে আন্দোলনের হুমকি, যা বলছেন নেটিজেনরা

শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখলে আন্দোলনের হুমকি, যা বলছেন নেটিজেনরা

৭ দিনের মধ্যে চুক্তিতে সম্মত না হলে হামলা : হামাসকে ইসরাইল

৭ দিনের মধ্যে চুক্তিতে সম্মত না হলে হামলা : হামাসকে ইসরাইল