নানা প্রতিক‚লতার মধ্যেও তৈরি করছেন দুটি গ্রামের মানুষ
১৭ মে ২০২৪, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ১৭ মে ২০২৪, ১২:১৪ এএম
ঝালকাঠির শীতলপাটি দেশে বিদেশে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। তাই ঝালকাঠির রাজাপুরে ৯০ বছরের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে ৮-১০ বছরের শিশুরাও নিপুন কারুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের জীবন যাত্রার মানের উন্নতি হচ্ছে না। শীতলপাটি শিল্পীর জন্য ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা না থাকায় পুঁজির জন্য শিল্পীরা দাদন ব্যবসায়ী, সুদখোর মহাজনদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকেন। আশার খবর হচ্ছে, বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃতি পাওয়া জিআই পণ্যের মধ্যে শীতলপাটি রয়েছে।
ঝালকাঠির পাটিকরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঝালকাঠির শীতলপাটি বহুকাল ধরে দেশ বিদেশে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। এখানকার চিকনবেতির শীতলপাটির চাহিদাও প্রচুর। পাইত্রা বা মোতা নামে এক ধরনের বর্ষজীবী উদ্ভিদের কাÐ থেকে বেতি তৈরি করা হয়। পরিপক্ক পাটি গাছ কেটে পানিতে ভিজিয়ে ও সিদ্ধ করে তার পর পাটির বেতি তোলা হয়। বেতির উপরের খোলস থেকে শীতলপাটি পরের অংশ তুলে বুকার পাটি এবং অবশিষ্ট অংশ ছোটার কাজে ব্যবহৃত হয়। বর্ষা মৌসুমে পাইত্রা কিনে বেতি তৈরি করে মজুদ করতে হয়। বর্ষা চলে গেলে শুরু হয় পাটি তৈরির কাজ। ঝালকাঠি জেলায় চার’শরও বেশি পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে জেলার রাজাপুর উপজেলার হাইলাকাঠি গ্রামে রয়েছে শতাধিক পরিবার এবং নলছিটি উপজেলার কামদেবপুর গ্রামে তিনশ’ পরিবার। এরা সবাই পাটি বুনে জীবিকা নির্বাহ করে। পুরাতন ঐতিহ্যের কারু হাতে গড়া শীতল পাটির জন্য এ গ্রাম দুটিকে ‘শীতল পাটির’ গ্রামও বলা হয়। এ গ্রাম দুটির শত শত হেক্টর জমি জুড়ে রয়েছে বিশাল নজরকাড়া পাটিগাছের বাগান। এখানে শীতলপাটি, নামাযের পাটি ও আসন পাটি নামে তিন ধরনের পাটি তৈরি করা হয়। একটি পাটি বুনতে তিন-চার জনের দুই-তিন দিন সময় লাগে। যা বিক্রি করে একশ’ থেকে এক হাজার টাকা আসে। মধ্যস্বত্ত¡ভোগীরা (মহাজনরা) প্রতি পাটিতে লাভ করেন পাঁচশ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। পাইত্রা কেনার জন্য প্রচুর মূলধন প্রয়োজন হয়। এ জন্য শিল্পীরা মহাজন ও এনজিওদের কাছে হাত পাততে বাধ্য হয়।
জানা যায়, ঝালকাঠি জেলার ব্রান্ডিং পণ্য শীতলপাটি। শীতলপাটি দিয়ে তৈরি কিছু পণ্য শহরে শোপিস হিসেবে ব্যবহার করা হলেও গ্রামে এটি মাদুর কিংবা বিছানার চাদরের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আরামদায়ক এ পাটির কদর আছে সর্বত্র। নানা প্রতিক‚লতার মধ্যেও বংশ পরম্পরায় এ শীতলপাটি তৈরি করছেন দুটি গ্রামের মানুষ। নারীদের পাশাপশি পুরুষ ও শিশুরাও নিপুন হাতে বুনেন শীতলপাটি। পরিবারের অন্যতম পেশা এটি। বছরের ৬ মাস পাটি বুনিয়ে চলে সারা বছরের জীবিকা। আর এ দুটি গ্রামের উৎপাদিত শীতলপাটি পাইকারদের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও খুলনা হয়ে সারা দেশসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় রফতানি হচ্ছে। তবে সেসব বাজারে এ পাটির চড়ামূল্য থাকলেও ঝালকাঠির পাটি শিল্পীরা কাঁচামাল ও শ্রমের মজুরিসহ এক একটি পাটিতে ২শ’ টাকার বেশি লাভের মুখ দেখছেন না। ফলে সংসারে অভাব দারিদ্র আর মূলধনের অভাবে আজও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি ঝালকাঠির এই আদি কুটির শিল্পটি।
গত দুই বছর ধরে এসএমই ফাউন্ডেশন শীতল পাটি দিয়ে হস্তশিল্প পণ্য তৈরি করার প্রশিক্ষণ দেয়ার পর পাটিকরদের জীবনে এসেছে কিছুটা পরিবর্তন। তারা এখন শীতল পাটি দিয়ে কলমদানি, ট্যিসু বক্স, ট্রে সহ নানা ধরণের পণ্য তৈরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন। বাংলাদেশের শিতল পাটির যে চাহিদা তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ঝালকাঠি থেকেই পূরণ করা হয়। বর্তমানে এখান থেকে বছরে প্রায় ৩ কোটি টাকার শীতল পাটি বিক্রি হচ্ছে।
রাজাপুরের হাইলাকাঠি গ্রামের সুদেব পাটিকর বলেন, ‘এখন গরমের দিনে শীতল পাটির কদর বেশি। আমাদের হাতে বোনা শীতল পাটি দূর-দূরান্ত থেকে খরিদদার এসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আর্থিক দন্যতার কারণে চাহিদা মতো কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না’।
শীতলপাটি ব্যবসায়ী মুনিন্দ্র পাটিকর জানান, কারিকররা পাটি তৈরি করে আমাদের কাছে বিক্রি করে। এ পাটির সারা দেশে চাহিদা প্রচুর। আমরা বিভিন্ন এলাকায় এ পাটি পাঠাচ্ছি। বিদেশেও পাঠানো হচ্ছে শীতল পাটি।
ঝালকাঠির পাটি শিল্পী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক অভিনাস পাটিকর বলেন, ‘আমাদের তৈরি পাটির ব্যাপক চাহিদা আছে। এটি বিদেশে রফতানির সুযোগ হয়েছে। চট্টগ্রাম দিয়ে এখানকার শীতলপাটি বিদেশে নিয়ে যাওয়া হয়। বিদেশে এ পাটির কদর রয়েছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (বিসিক) ঝালকাঠির উপমহা ব্যবস্থাপক ফয়জুর রহমান বলেন, ‘শীতলপাটি শিল্পের জন্য ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের (এসএমই ফাউন্ডেশন) সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মোরশেদ আলম বলেন, প্রতন্ত অঞ্চলের এই শীতলপাটির বাজারজাত, বহুমূখীকরণ, নকশা উন্নয়ন এবং অর্থায়নে সহযোগিতায় কাজ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম বলেন, জেলার ব্রান্ডিং পণ্য শীতল পাটির প্রসার এবং এর সঙ্গে জড়িতদের উন্নয়নের সবসময় সচেষ্ট জেলা প্রশাসন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে
রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল
‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’
হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী
মার্কিনিদের লেবানন ছাড়ার আহ্বান
সংঘাতের মধ্যে নতুন অস্ত্র সামনে আনলো ইরান
ভারতকে পারমাণবিক সাবমেরিন আন্ডারওয়াটার ড্রোন দেবে ফ্রান্স