কাজ শেষ করে বাজার নিয়ে ঘরে ফিরতে পারলেন না পুলিশের গুলিতে নিহত মিজানুর
০৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:১১ পিএম | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:১১ পিএম
‘ঘরে বাজার নেই, তিন চারজনে সংসার, কাজে না গেলে না খেয়ে থাকতে হবে। বাধ্য হয়েই স্বামীকে কাজে বের হতে বলেছিলাম। তবে কাজ শেষ করে বাজার নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেননি তিনি। ফেরার পথে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন তিনি। দুই অবুঝ ছেলে মেয়ে নিয়ে এখন আমার কি হবে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেছেন ঢাকায় কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় নিহত ঠেলা গাড়ি শ্রমিক বরগুনার মো. মিজানুর রহমানের (৩০) স্ত্রী জাকিয়া আক্তার শিরিন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত মো. মিজানুর রহমান বরগুনা সদর উপজেলার ৮ নম্বর ইউনিয়নের কালির-তবক নামক এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন দুলালের বড় ছেলে। প্রায় ৮ বছর আগে জীবিকার তাগিদে বরগুনা ছেড়ে কাজের উদ্দ্যেশে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় ওঠেন তিনি। যখন যে কাজ পেতেন তখন সেই কাজই করতেন মিজানুর। তবে বেশিরভাগ সময়ই তিনি বাবার সঙ্গে ঠেলাগাড়ি চালানোর কাজ করতেন।
গত ১৯ জুলাই সকাল ৮টার দিকে প্রতিদিনের মতো মিজানুর তার স্ত্রী, সন্তান ও বাবাকে বাসায় রেখে কাজের উদ্দেশ্যে বের হন। কাজ শেষে বিকেলের দিকে বাসায় ফেরার পথে মানিকনগর বিশ্বরোড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এ সময় সঙ্গে থাকা কয়েকজন মিলে তাকে ঢাকা মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে ওই দিন রাতেই মিজানুরের মরদেহ বরগুনার উদ্দেশ্যে নিয়ে আসেন স্বজনরা। পরদিন সকালে তার নিজ গ্রামের বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়।
বরগুনায় মিজানুরের গ্রামের বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, ৮ বছর বয়সী মেয়ে সামিয়া আক্তার পিংকি বাবা হারানোর বেদনায় নির্বাক আর ৪ বছর বয়সী ছেলে সাজিদুল ইসলাম এখনো খুঁজে বেড়ায় তার বাবাকে। খেলতে খেলতে মাঝে মধ্যে বলে ওঠে বাবার বুকে গুলি করা হয়েছে। অপরদিকে মিজানুরের গ্রামের বাড়িতে নিজের কোনো ঘর না থাকায় দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে দেবরের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তার স্ত্রী জাকিয়া আক্তার শিরিন। স্বামীকে মনে পড়লেই কবরের কাছে গিয়ে নীরবেই চোখের পানি ফেলছেন তিনি। এছাড়া বড় ছেলেকে হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মিজানুরের মা শাহিনুর বেগম।
নিহত মিজানুর রহমানের ঢাকার এক প্রতিবেশী ও একই গ্রামের বাসিন্দা নিজাম বলেন, মিজানুর ঢাকায় ঠেলা গাড়ি চালাতো, মাঝে মধ্যে রিকশাও চালাতো। আমি ঢাকায় সিএনজি চালাতাম, একত্রে মিজানুরের সঙ্গে পাশাপাশি বাসায় ছিলাম। মিজানুরের একার আয় দিয়েই তার নিজের সংসার ও দুই ভাইয়ের পড়ালেখার খরচও চালিয়েছেন। সে যে মারা গেছে আমার বিশ্বাস করতে এখন কষ্ট হয়। দীর্ঘ প্রায় ৭ থেকে ৮ বছর আমরা একত্রে পাশাপাশি বাসায় থেকেছি।
স্বামীর মৃত্যুতে ছোট ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত মিজানুরের স্ত্রী জাকিয়া আক্তার শিরিন বলেন, আমার মেয়ে বড় হওয়ায় গ্রামের বাড়ি দাদির কাছে ছিলো। ছোট ছেলেকে নিয়ে আমরা ঢাকায় বসবাস করতাম। আমার শ্বশুরও আমাদের বাসায় থেকেই কাজ করতো। ঘরে খাবার না থাকায় আমার স্বামীকে আমিই কাজে পাঠিয়েছি। কাজে গিয়েও আমার সাথে ফোনে কথা বলেছে। ছেলের জন্য কি নিয়ে আসবে তাও জানতে চেয়েছে। মৃত্যুর খবর পাওয়ার কিছু সময় পূর্বেও তার সঙ্গে আমার কথা হয়।
এর পরপরই খবর পাই তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এখন আমি ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় থাকব। আমার মা-বাবাও অসহায় তাদের কাছেও থাকার কোনো যায়গা নেই। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই, ছেলে মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে ওদেরকে নিয়ে যাতে আমার জন্য থাকার একটা জায়গা করে দেয়। স্বামীই একমাত্র উপার্জন করে সংসার পরিচালনা করতো, আজ সে নেই আমাকে যদি একটা কর্মের ব্যবস্থা করে দেয়া হয় তাহলে অন্তত ছেলে মেয়ে নিয়ে তিনবেলা খেয়ে বেঁচে থাকতে পারব।
ছেলে হারানোর শোকে অসুস্থ হয়ে পড়া মা শাহিনুর বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ছেলে ঢাকায় ঢেলা গাড়ি চালাতো। যেদিন মারা গেছে সেদিন সকালে আমাকে বলেছে মা আমি কাজে যাই। আমি ওর কাছে গন্ডগোলের মধ্যে কাজে বের হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আমাকে বলে মা আমি তো গন্ডগোলের ছেলেনা, আমি কোনো রাজনীতি করিনা, আমার ঘরে চাল নেই মেয়ের কোরআন শরিফ পড়ার টাকা দিতে হবে, কিস্তির টাকা দিতে হবে, ঘরে বাজার করতে হবে। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে খবর পাই আমার ছেলের বুকে গুলে লেগে মারা গেছে।
মিজানুর রহমানের বাবা জাকির হোসেন দুলাল বলেন, আমার ছেলে কোনো আন্দোলনে ছিল না। আমার ছেলে ঢাকায় আমার সাথে একত্রে দিনমজুরের কাজ করতো। আমি সেদিন অসুস্থ থাকায় মিজানুর একাই কাজ করতে বের হয়। কাজ থেকে ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে আমার ছেলে মারা গেছে। বাবার সামনে ছেলে মারা যাওয়ার কষ্ট কি তা একমাত্র বাবাই বোঝে। ছেলে মারা যাওয়ায় আমরা বুঝতে পারছি আমাদের পরিবার কতটা অসহায় হয়ে গেছে। আমার ছেলে তার ছোট দুইটা ছেলে মেয়ে রেখে গেছে, তারা এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? কি করবে? কাদের কাছে থাকবে? আমার বয়স হয়েছে আমি নিজেই এখন অসহায়, তাদেরকে কিভাবে লালন পালন করবো। সরকারের কাছে দাবি জানাই আর কোনো মায়ের কোল যেন বিনা কারণে এভাবে খালি না হয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজনৈতিক সংকট ,অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন আদালতে হাজির হননি
সালথায় দু'গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫, বাড়ি-ঘর ভাঙচুর
শুধু নির্বাচনের জন্য মানুষ জীবন দেয়নি : আসিফ মাহমুদ
নোয়াখালীর কবিরহাটে ১৩ বান্ডেল জাল ডলার ও টাকা জব্দ, গ্রেপ্তার-১
জম্মু-কাশ্মীরে ৫ ভারতীয় সেনা নিহত
অ্যাবারক্রোম্বি সিইও যৌন পাচার মামলায় অভিযুক্ত
চাঁদপুরে সেভেন মার্ডার: নৃশংসতার বর্ণনা দিলো র্যাব
ধার্মিক জামাই পেলে শোবিজ ছাড়বেন প্রিয়াঙ্কা, শেষ ইচ্ছা হাফেজ হওয়া
আন্দোলনে নামলেন এবার ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা
রূপগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক নিহত
চাঁদপুরে জাহাজে সাতজনকে হত্যা: সেই ইরফান গ্রেপ্তার
নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় মোজাম্বিকে নিহত ১০৩
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের দেশের গর্ব : সেনাপ্রধান
ব্যারিস্টার ফুয়াদের ছবি সম্পাদনা করে ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার
সৈয়দপুরে তালাবন্ধ ঘর থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার
পাকিস্তান থেকে সরাসরি আসছে জাহাজ, আমদানি বেড়েছে ২১ শতাংশ
হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশের ও নিজের সর্বনাশ করেছে, বাপকে ডুবিয়েছে, দেশকে ডুবিয়েছে: ফজলুর রহমান
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের
স্বৈরশাসক হটানোর পর গণতন্ত্র পুনঃনির্মাণে শিক্ষার্থীরা
সার্চ কমিটি করে গ্রহণযোগ্যদের স্থানীয় সরকারে প্রশাসক নিয়োগ করার দাবি