খাদ্য মূল্যস্ফীতির ‘লাল’ শ্রেণিতে বাংলাদেশ
০৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:১৫ পিএম | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:১৫ পিএম
খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে ‘লাল’ শ্রেণিতে আছে বাংলাদেশসহ আরও ১৪টি দেশ। গত এক বছরের খাদ্য মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি বিবেচনা করে বাংলাদেশকে এই শ্রেণিতে রেখেছে বিশ্বব্যাংক।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাদ্যনিরাপত্তার হালনাগাদ পরিস্থিতি তুলে ধরে তথ্য–উপাত্ত প্রকাশ করেছে। প্রতি ছয় মাস পরপর এই চিত্র প্রকাশ করে থাকে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংক ১০ থেকে ১২ মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে খাদ্য-নিরাপত্তা–বিষয়ক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে থাকে।
দুই বছর ধরে বাংলাদেশ উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছাড়িয়েছে ১০ শতাংশ। অবশ্য রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অনেক দেশেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এসব দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বড় অর্থনীতির দেশগুলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে পারলেও বাংলাদেশ এখনো পারেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের মানুষকে গড় আয়ের অর্ধেকের মতো খরচ করতে হয় খাবার কিনতে। গরিব মানুষের খাবারের পেছনে ব্যয় আরও বেশি। গরিব মানুষেরা তাদের আয়ের প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ খরচ করেন খাবার কেনার পেছনে। সংকট মোকাবিলায় যে ধরনের অর্থনৈতিক নেতৃত্ব, বিশেষ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যে ভূমিকা থাকার কথা, তা দেখছি না। সমাধানের উদ্যোগগুলো সাময়িক। এতে ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
খাদ্য মূল্যস্ফীতি কোন দেশে কত বেশি, তা বোঝাতে বিভিন্ন দেশকে চার শ্রেণিতে ভাগ করেছে বিশ্বব্যাংক। যেসব দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশ বা তার বেশি, সেসব দেশকে ‘বেগুনি’ শ্রেণিতে; ৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে যেসব দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি, তাদের ‘লাল’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ২ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতির দেশগুলোকে ‘হলুদ’ ও ২ শতাংশের কম মূল্যস্ফীতির দেশগুলোকে ‘সবুজ’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৭২টি দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে সংস্থাটির প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশ গত দুই বছর-জুড়ে লাল শ্রেণিতে আছে। সর্বশেষ গত জুনের হিসাবে, গত এক বছর-জুড়ে ১৫টি দেশ লাল শ্রেণিভুক্ত। এই তালিকায় বাংলাদেশের সঙ্গে আরও আছে কঙ্গো, গাম্বিয়া, গিনি, লাইবেরিয়া, মাদাগাস্কার, অ্যাঙ্গোলা, ক্যামেরুন, পূর্ব তিমুর, কেনিয়া, লেসেথো, মঙ্গোলিয়া, তিউনিসিয়া, ভিয়েতনাম ও জাম্বিয়া।
ছয় মাস আগেও বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে লাল শ্রেণিতে বেশ কয়েকটি উন্নত দেশও ছিল। ওই সময় এই শ্রেণিতে সব মিলিয়ে ছিল ৩৪টি দেশ। ছয় মাসের ব্যবধানে লাল শ্রেণি থেকে বের হয়ে গেছে অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য। মূলত নানামুখী পদক্ষেপের কারণেই এসব দেশ উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছে। তাই দেশগুলোকে লাল শ্রেণি থেকে বাদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
গত এক বছরে বাংলাদেশে খাদ্য-পণ্যে মূল্যস্ফীতি বেশি খারাপ অবস্থায় রয়েছে। বিবিএসের হিসাবে, গত ১২ মাসের মধ্যে ৭ মাসই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। গত বছরের আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উঠেছিল, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সর্বোচ্চ।
সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৭২ শতাংশে, যা অর্থবছরওয়ারি হিসাবে অন্তত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। পুরো অর্থবছরের কোনো মাসেই সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নামেনি। আবার ১০ শতাংশও ছাড়িয়ে যায়নি। অন্যদিকে জাতীয় মজুরি হারের প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ৭ শতাংশের মতো।
অন্য শ্রেণিতে কোন দেশ
উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় বিশ্বব্যাংকের তালিকায় টানা এক বছর ধরে সবচেয়ে খারাপ শ্রেণি বেগুনিতে আছে আটটি দেশ। এই দেশগুলো হলো মালাওয়ি, সিয়েরালিওন, মিসর, মিয়ানমার, আর্জেন্টিনা, লেবানন, তুরস্ক ও ভেনেজুয়েলা।
খাবারের দাম নিয়ে সবচেয়ে ভালো আছে পাঁচটি দেশ। সবুজ শ্রেণিভুক্ত দেশগুলো হলো আফগানিস্তান, ইরাক, সেশেলস, সউদী আরব ও সোমালিয়া। মোটামুটি ভালো অর্থাৎ হলুদ শ্রেণিতে থাকা দুটি দেশ হলো লিবিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। তালিকায় থাকা বাকি ১৪২টি দেশ গত এক বছরে কখনো লাল, কখনো বেগুনি, কখনো–বা হলুদ বা সবুজ তালিকায় রয়েছে। কেউ নিজেদের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতির উন্নতি করেছে, কারও অবনতি হয়েছে।
খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ২২ শতাংশ মানুষ
গত জানুয়ারিতে খাদ্য-নিরাপত্তা মূল্যায়ন জরিপ প্রকাশ করেছে বিবিএস। সেই জরিপের ফল অনুযায়ী, মাঝারি বা তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে দেশের প্রায় ২২ শতাংশ মানুষ। দেশের প্রতিটি পরিবার বা খানায় যে পরিমাণ চাল মজুত রয়েছে, তা গড়ে ৫১ দিন পর্যন্ত পারিবারিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে। গ্রাম এলাকায় এটি ৬৩ দিন, শহরে ৩৫ দিন ও সিটি কর্পোরেশনে ১১ দিন। বিবিএস ২৯ হাজার ৭৬০টি পরিবার বা খানার মতামতের ভিত্তিতে এই জরিপ করেছে।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পুরোনো সংকটের পাশাপাশি নতুন সংকট যোগ হয়েছে। কিন্তু সংকট মোকাবিলায় যে ধরনের অর্থনৈতিক নেতৃত্ব, বিশেষ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যে ভূমিকা থাকার কথা, তা দেখছি না। সমাধানের উদ্যোগগুলো সাময়িক। এতে ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজনৈতিক সংকট ,অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন আদালতে হাজির হননি
সালথায় দু'গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫, বাড়ি-ঘর ভাঙচুর
শুধু নির্বাচনের জন্য মানুষ জীবন দেয়নি : আসিফ মাহমুদ
নোয়াখালীর কবিরহাটে ১৩ বান্ডেল জাল ডলার ও টাকা জব্দ, গ্রেপ্তার-১
জম্মু-কাশ্মীরে ৫ ভারতীয় সেনা নিহত
অ্যাবারক্রোম্বি সিইও যৌন পাচার মামলায় অভিযুক্ত
চাঁদপুরে সেভেন মার্ডার: নৃশংসতার বর্ণনা দিলো র্যাব
ধার্মিক জামাই পেলে শোবিজ ছাড়বেন প্রিয়াঙ্কা, শেষ ইচ্ছা হাফেজ হওয়া
আন্দোলনে নামলেন এবার ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা
রূপগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক নিহত
চাঁদপুরে জাহাজে সাতজনকে হত্যা: সেই ইরফান গ্রেপ্তার
নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় মোজাম্বিকে নিহত ১০৩
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের দেশের গর্ব : সেনাপ্রধান
ব্যারিস্টার ফুয়াদের ছবি সম্পাদনা করে ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার
সৈয়দপুরে তালাবন্ধ ঘর থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার
পাকিস্তান থেকে সরাসরি আসছে জাহাজ, আমদানি বেড়েছে ২১ শতাংশ
হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশের ও নিজের সর্বনাশ করেছে, বাপকে ডুবিয়েছে, দেশকে ডুবিয়েছে: ফজলুর রহমান
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের
স্বৈরশাসক হটানোর পর গণতন্ত্র পুনঃনির্মাণে শিক্ষার্থীরা
সার্চ কমিটি করে গ্রহণযোগ্যদের স্থানীয় সরকারে প্রশাসক নিয়োগ করার দাবি