ছাত্র-জনতার ঐক্য ধরে রাখা সময়ের দাবি : প্রতিবিপ্লবে মূষিক প্রসব
১৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:২১ এএম | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:৩২ এএম
অবশেষে ১৫ আগস্ট প্রতিবিপ্লবের নামে ‘পর্বতে মূষিক প্রসব’ ঘটেছে। শেখ মুজিব হত্যা দিবসকে (আওয়ামী লীগের শোক দিবস) কেন্দ্র করে হিন্দুত্ববাদী ভারতের সহায়তায় প্রতিবিপ্লব ঘটানোর তর্জনগর্জন, হম্বিতম্বি করা হয়। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত কয়েক দিন থেকে এ নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়। একদিকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ফেইক ছবি; অন্যদিকে প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদলের ষড়যন্ত্র। দিল্লি থেকে শেখ হাসিনা হুঙ্কার ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে সজীব ওয়াজেদ জয়ের আস্ফালন ১৫ আগস্ট ১০ লাখ লোক ঢাকার রাস্তায় নামবে। কিন্তু সাধারণ মানুষ দূরের কথা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও হাসিনার ডাকে সাড়া দেয়নি। বরং গতকাল ১৫ আগস্ট বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও সাংস্কৃতির সংগঠন গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। শেখ হাসিনাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরে এনে বিচারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ-মানববন্ধন করা হয়েছে।
গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গিয়ে কার্যত এক‚ল-ওক‚ল দুই ক‚লই হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্র্মী ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের বিপদে ফেলে পালিয়ে দিল্লি যাওয়ায় শেখ হাসিনাকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে অভিহিত করেছে। ঢাকার চেয়ে কলকাতাকে অতি আপন মনে করেন এমন কয়েকজন সুবিধাভোগী সাংস্কৃতিক কর্মী গতকাল বনানীতে কবর জিয়ারত করেছে। আগের রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি ‘মোমবাতি প্রজ্বলন’ করতে গিয়ে গণপিটুনি খেয়ে রোকেয়া প্রাচী নামের এক অভিনেত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। পলাতক শেখ হাসিনার নির্দেশে শেখ মুজিব প্রেমে ‘গদগদ’ হয়ে ঢাকার রাজপথে নেমে ‘রাত পোহালে শোনা যেত’ কোরাস গাওয়ার আহাম্মকি কেউ করেনি। মূলত দিল্লির পুতুল বাংলাদেশে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত শেখ হাসিনাকে ‘লালকার্ড’ দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারাই। ‘খেলা হবে’ চিৎকার হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। তবে দু-চারজন ‘মুজিব প্রেমী’ আহম্মকী করে ৩২ নম্বরে যাওয়ার চেষ্টা করে ‘রশি থেরাপি’ খেয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী ও আমজনতা তাদের ধরে উত্তম-মাধ্যম দিয়ে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায় কয়েকজনকে হাতে রশি বেঁধে রাখা হয়েছে। দুইজনকে গণপিটুনি দেয়া হচ্ছে। ১৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ভারতের সহায়তায় মুজিবকন্যার প্রতিবিপ্লবের প্রত্যাশার বেলুন চুপসে গেছে।
‘যে একবার বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে, তাকে বিশ্বাস করো না’ (শেক্সপীয়ার)। কবির ওই ভবিষ্যদ্বাণী মর্মে মর্মে উপলব্ধি করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে আর বিশ্বাস করছেন না। তারা শেখ হাসিনাকে কেউ ‘লাল কার্ড’ কেউ ‘হলুদ কার্ড’ দেখিয়েছেন। হাসিনার ওপর বিক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যরা বিদেশে থাকে। শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে দিল্লিতে নিরাপদে রয়েছেন। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে রয়েছি। এখন আমরা কেন পতিত নেত্রীর উস্কানিতে রাস্তায় নেমে গণপিটুনির শিকার হব? পলাতক হাসিনা ও তার পুত্র জয় প্রতিশোধপরায়ণ ব্যাক্তি। তারা মোদির শিখিয়ে দেয়া স্ববিরোধী কথাবার্তা তোতাপাখির মতো বলেই যাচ্ছেন। তারা ১৫ আগস্ট ‘আওয়ামী শোক দিবস’ ঘিরে প্রতিবিপ্লবের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন। আমরা তাদের সঙ্গে নেই।
ভারতের মদদে শেখ হাসিনার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের নামে পাল্টা আক্রমণ করবে। তাদের প্রত্যাশা ছিল আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন ছাড়াও ১৫ বছরের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ১৫ আগস্ট মুজিবের জন্য ঢাকার রাজপথে নেমে জান কোরবান দেবে। কিন্তু মানুষ সেটা দেয়নি। ফলে ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে তর্জনগর্জন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা, ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের ‘জেগে ওঠার প্রেরণা’ কোনো কিছুই কাজে আসেনি। শুধু তাই নয়, হাসিনাকে পুনর্বাসনে ভারতের মোদি সরকারের সব অপচেষ্টা ‘মাঠে মারা’ গেছে। দেশপ্রেমী ছাত্র-জনতা দিল্লিতে পলাতক শেখ হাসিনার সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের নিয়ন্ত্রণ তারা আগের রাতেই নিয়েছিল। সারা ঢাকা শহরে বিক্ষোভ, মানববন্ধন করে হাসিনার বিচারের দাবি জানিয়েছে।
১৫ আগস্ট উপলক্ষে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার স্বাক্ষরিত দুই পৃষ্ঠার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘আগামী ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৯তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস যথাযথ মর্যাদার সাথে পালন করবে আওয়ামী লীগ। শোক দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের জন্য আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সকল সহযোগী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনসমূহের প্রতি আহŸান জানাচ্ছে আওয়ামী লীগ। একই সাথে আওয়ামী লীগের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সমস্ত শাখার নেতৃবৃন্দকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গৃহীত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে সঙ্গতি রেখে কর্মসূচি পালনের অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।’ গ্রেফতারের ভয়ে পলাতক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাড়া দেয়নি। শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১৫ বছর যাদের ঘুষ-দুর্নীতি, লুটপাটের সুযোগ করে দিয়ে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবে পরিণত করেছেন; তারাও মনে করছেন কাউকে না জানিয়ে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে গিয়ে তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। ফলে তারা শেখ হাসিনা ও জয়ের ডাকে সাড়া দেননি।
এর আগে ১৫ আগস্ট উপলক্ষে একটি অডিও বার্তায় ১০ লাখ লোক রাস্তায় নামার আহŸান জানিয়ে হাসিনা বলেছেন, ‘সবাই ঢাকায় চলে আসবে, মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু ভবনে ফুল দিতে হবে। বাংলাদেশের সব এলাকা থেকে ঢাকায় এসে ফুল দিতে হবে। যাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে তাদের থানায় জিডি করতে হবে।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই অডিও ছড়িয়ে পড়েছে। শেখ হাসিনার এই আহŸান কাজে আসেনি। তবে দিল্লির অনুগত ও হাসিনার ১৫ বছরের দুঃশাসনের সময় উচ্ছিষ্টভোগী দেশীয় কিছু গণমাধ্যম ১৫ আগস্টের শোক র্যালির ছবি ফলাও করে প্রকাশ করছে। সচিত্র প্রতিবেদনগুলোতে দেখা যায়, কয়েকটি জেলা ও উপজেলায় ১০ জন থেকে ৩০ জন মানুষ শেখ মুজিবের ছবি সংবলিত কালো ব্যানার নিয়ে মিছিল করছেন। টিভি ক্যামেরা এবং ইউটিউব এক্টিভিস্টদের ক্যামেরায় ছবি তোলা হলেই তারা গণপিটুনির ভয়ে সটকে পড়ছেন। রাজধানী ঢাকার বনানী কবরস্থানে কয়েকজনকে ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্টে নিহতদের কবর জিয়ারত করতে দেখা যায়। সংস্কৃতিসেবী নামের কয়েকজন উচ্ছিষ্টভোগী এবং নাটক-সিনেমার নায়িকা-অভিনেত্রী নামের কয়েকজন শিল্পীকে (নায়িকার সাইনবোর্ডে রাতের রানী) মৌন মিছিল করতে দেখা যায়। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাঠকর্মীদের ধোলাইয়ের ভয়ে ৫/৭ মিনিট বিক্ষোভের ফটোসেশন করে চলে যায়।
প্রবাদে রয়েছে ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’। অর্থাৎ গ্রামের লোকেরা না মানলেও নিজেই নিজেকে গ্রামের কর্তা বলে জাহির করা কার্যত মূর্খতার নামান্তর। শেখ মুজিবুর রহমানকে জোর করে জনগণের ওপর ‘জাতির পিতা’ উপাধি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। ১৫ আগস্ট সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। মৃত্যু একজন মানুষের (শেখ মুজিব) এত প্রচারণা এত মায়াকান্না দেশের মানুষের কান বিষাক্তময় করে তুলেছে। অথচ দেশের লাখ লাখ পরিবার তিন বেলা খাবার যোগাড় করতে পারেন না। লাখ লাখ পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছেন। চিকিৎসার অভাবে প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী পালনে দুই হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। জোর করে স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্লাসে শেখ মুজিবের ওপর গল্প কবিতা লিখে শিক্ষার্থীদের ‘মুজিবনামা’ পড়তে বাধ্য করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মকে তথা যার বর্তমান বয়স ৩২ বছরের নিচে তিনি জন্মের পর থেকে ভোট দিতে পারেননি। হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে মানুষ ভোটের অধিকার হারিয়েছে। জোর করে শেখ মুজিবকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়তে বাধ্য করা হয়েছে। বিসিএস থেকে শুরু করে পিয়ন, এমনকি মালি-দারোয়ান পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ইন্টারভিউ বোর্ডে শেখ মুজিবকে নিয়ে চাকরি প্রত্যাশীদের প্রশ্ন করা হয়। বাস্তবতা হচ্ছে সম্মান অর্জন করার জিনিস, এটি জোর করে চাপিয়ে দিয়ে পাওয়া যায় না। পতিত হাসিনা ১৫ বছর মুজিবকে চাপিয়ে দিয়েছেন জাতির মাথায়। এতে করে নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা মুজিবকে নিয়ে ত্যক্তবিরক্ত। ফলে ১৫ আগস্টে মুজিবের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শেখ হাসিনা যে প্রতিবিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছিলেন তা শিক্ষার্থীরা চূরমার করে দিয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা
বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই
দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ
সিদ্দিরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই শ্রমিকের মৃত্যু
নাচোলে পিয়ারাবাগানে এক গৃহবধূ খুন
৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মোটর থেকে বৈদ্যুতিক তার খুলতে প্রাণ গেল যুবকের
কারখানায় আগুন, পরিদর্শনে হাতেম
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার
কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই
ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০
আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি
সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক
প্রশ্ন: কিসব কারণে বিয়ের বরকত নষ্ট হয়ে যায়?
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অনুপম দৃষ্টান্ত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)
আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)
ভারত উপমহাদেশে মুসলিম সভ্যতার জাগরণে আবুল হাসান আলী নদভির শিক্ষাচিন্তা