আ’লীগকে রক্ষার চেষ্টায় জড়িত আনসার কর্মকর্তারা বহাল
২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৩ পিএম | আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৩ পিএম
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সদর দফতরের নিষ্ক্রিয়তায় আনসার বাহিনীতে এখনো ঘাপটি মেরে আছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার উপর নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে গুলি করে হতাহতে জড়িত কর্মকর্তারা। শেষ পর্যন্ত আ’লীগ সরকারকে রক্ষায় এসব কর্মকর্তারা শুধু উচ্চ পর্যায়ে বসে ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দিয়ে বসেছিলেন না, মাঠ পর্যায়ে নির্দেশ বাস্তবায়নে নিজেরাও স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে গুলি করেছেন আন্দোলনকারীদের উপর। এ সব কর্মকর্তাদের অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হলেও বহাল তবিয়তে থেকে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ দোষী বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা এবং নির্দেশদাতাদের বিচারের মুখোমুখি করা শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি। গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর গুলির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় জনমনে রয়েছে ক্ষোভ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আনসার কর্মকর্তা ও সদস্যদের নির্বিচারে চালানো গুলিতে নিহতের পাশাপাশি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন শত শত ছাত্র-জনতা। এদের মধ্যে অনেকেই অন্ধ ও পঙ্গু হয়ে গেছেন। আনসার সদস্যদের সাথে সে সময় সাধারণ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা। অথচ যাদের নির্দেশে আনসার সদস্যরা শত শত ছাত্র-জনতাকে হত্যা এবং হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে পঙ্গু-অন্ধ করেছে সেই আনসার বাহিনী গুলির নির্দেশদাতা কর্মকর্তারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবি। একই সাথে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কাজ হওয়া উচিত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের গুলি করার সাথে জড়িত বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য ও কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা।
জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ভূমিকা ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সরাসরি মাঠে থেকে আন্দোলন প্রতিহত করতে গুলি করার নির্দেশদাতা আনসার কর্মকর্তারা এখন বহাল তবিয়তে রয়েছেন। সালমান এফ রহমানের আর্শীবাদ পুষ্ট কর্মকর্তা যিনি আন্দোলনের সময় গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই ফয়ফুজ্জামান ও আলমগীর এখনও সুবিধাজনক পদে রয়েছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় থেকে রাস্তায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি করা আনসার কর্মকর্তা মুশতাককে ভাল পদে বদলি করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আনসারের কুমিল্লার কমান্ডার জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার উপর হামলার জন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের গাড়ি দিয়ে সাহায্য করলেও তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আনসার কর্মকর্তা আলী রেজা রাব্বিরের বিরুদ্ধে মাঠে থেকে ছাত্র-জনতার উপর গুলি করার অভিযোগ রয়েছে। এর পরেও তাকে সুবিধাজনক পদে পদায়ন করা রহস্যজনক। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর গুলির মাস্টার মাইন্ড আহসান উল্লাহ মোটা অংকের টাকা খরচ করে এখনও সক্রিয় রয়েছে। আ’লীগ সরকারের সময় তার সকল কার্যক্রম ছিল ছাত্রলীগ নেতার মত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা শুক্রবার ইনকিলাবকে বলেন, সরকারী যানবাহন ব্যবহার করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় যারা সাধারন মানুষদের গুলি করে হত্যা ও আহত করেছে তারা এখনও সুবিধাজনক পদে রয়েছেন। শীর্ষ কর্মকর্তারা বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদন্ত করে এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় যে সব আনসার কর্মকর্তারা একের পর এক বৈঠক করে আন্দোলন দমানোর পরিকল্পনা করেছেন এবং ছাত্রদের উপর গুলি করতে সাধারন আনসারদের বাধ্য করেছেন তারা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে তা ওপেন সিক্রেট। ফেস বুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছবি ও ভিডিও রয়েছে তা তদন্ত করছেন ছাত্র-জনতার উপর গুলি-হামলার জড়িতদের বিষয়গুলো শনাক্ত করা যাবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, আনসার বাহিনীতে আন্দোলনের সময় গুলির নির্দেশদাতাদের বিষয়ে তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তে নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশদাতাদের বিষয়ে জানা গেছে। তাদের নির্দেশনাগুলো কতটুকু যৌক্তিক ছিল, বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে মামলার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছ। যারা গুলি করে ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন তাদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
মাঠ পর্যায়ের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আনসার সদস্যদের অনেক স্পটেই গুলি করেছে এমন তথ্য উঠে এসেছে। অনেক স্পটে দেখা গেছে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিজেরাও ছাত্র-জনতার উপর গুলি করছেন এবং আনসার সদস্যদের গুলি করতে নির্দেশ দিচ্ছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সারা দেশে 'কমপ্লিট শাটডাউন' কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে শত শত প্লাটুন আনসার মোতায়েন করা হয়। যারা বেপরোয়ার আচরন করেছেন তাদেরও শনাক্ত করার কাজ চলছে। তবে দ্রুত এদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহর করা না হলে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে এদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকবে। যা মোটেই কাম্য নয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিরলে ৫ দিন ব্যাপি চতুর্থ উপজেলা কাব ক্যাম্পুরীর শুভ উদ্বোধন
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ
তারুণ্যের উৎসবে আনন্দের ঢেউ
মুক্ত বাতাসে বাবরের জুমার নামাজ আদায়
কাপ্তাই জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক ইউনিয়ন সিবিএ কর্তৃক শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ
কুষ্টিয়ায় দুষ্কৃতকারীদের হুমকিতে গড়াই খননকাজ বন্ধ,থানায় অভিযোগ
মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় আবু সাঈদকে নিয়ে প্রশ্ন
কম্বোডিয়ার পরিবর্তে অনৈতিক কাজে সউদী পাঠানোর প্রস্তাব পাসপোর্ট আটকে রেখে টাকা দাবি
গৌরনদীতে দাদাবাড়ি বেড়াতে এসে শিশু খুনের ঘটনায় ২ নারীসহ গ্রেফতার ৪
জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ভালুকা উপজেলা
ব্রাহ্মণপাড়ায় এইচএমপিভি সচেতনতায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রচারণা
চবি ছাত্রদলের প্রীতিভোজে হামলার অভিযোগে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
মতলবে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুর মৃত্যু
ভোট ডাকাতি করে ওবায়দুল কাদের চারবার এমপি হয়েছিল: ফখরুল ইসলাম
দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি নির্বাচন দিয়ে দেশটাকে স্থিতিশীলতায় নিয়ে আসুন : এ্যানি
কুয়েটে ‘ওবিই কারিকুলাম ডিজাইন টিচিং লার্নিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ
স্মার্টফোনের দাসত্ব থেকে মুক্তির উপায়
ডিমলায় ‘স্বপ্ন পূরণের প্রত্যয়ে আমরা, সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ’র ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
দারিদ্র্য বিমোচনে যাকাত : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ