স্ত্রীর কথা বলতেই কেঁদে ফেললেন আসিফ নজরুল

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৫ এএম | আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৫ পিএম

স্ত্রীর কথা বলতেই কেঁদে ফেললেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় যাদুঘর মিলনায়তনে নিজের লেখা উপন্যাস ‘আমি আবু বকর’ নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।

 

এ সময় স্ত্রীর কথা বলতে গিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, আমি কিন্তু মাঝেমাঝে মন খারাপ করে আমার স্ত্রীকে বলি, আমার কি কোনদিন এই জীবন আসবে কিছু করতে হবে না আমার কিছুই চিন্তা করতে হবে না আমার।আমি শুধু ঘুমাবো আর লিখব আর লিখব।তো আমার স্ত্রী বলছে অবশ্যই আসবে। শখ করে কফি বানানো শিখছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন,বলছে আমি কফি’র দোকান দিব তুমি শুধু লিখবা আর লিখবা।

 

তিনি বলেন, আমার লেখালেখির মাঝখানে প্রায় ১৫ বছর গ্যাপ ছিল।আমি যে ১৫ বছর পর লিখতে পেরেছি এটা আমার স্ত্রীর জন্য।আমি ওর প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ।সবার সামনে বললাম ধন্যবাদ।

 

এমন একটা দেশে বসবাস করতেন উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, আমার দুঃখ লাগে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু সে একজন বড় সরকারী কমকর্তা হওয়ার পর,সে আমাকে বললো আমি আর তোকে ফোন করবো না তুইও আর আমাকে ফোন করবি না। এমনকি তার মেয়ের বিয়েতে, যে মেয়েকে আমি ছোট বেলায় কোলে নিয়েছি তার বিয়েতে আমাকে দাওয়াত দিল না।

 

ছাত্রলীগ নেতার কথা উল্লেখ করে আসিফ নজরুল আরো বলেন, দাওয়াত দিল আমদের ক্লাসমেট এক ছাত্রলীগ নেতাকে।যার সাথে কোনদিন আমাদের কোন রকম ফ্রেন্ডশীপ ছিল না।আমার কাছে তখন মনে হতো আমাকে যদি তার বিয়েতে দাওয়াত দিত তাহলে কি তার চাকরি চলে যেত?

 

তিনি আরো বলেন, শিবির ট্যাগ লিখতে পারে এই ভয়ে কেউ প্রোগ্রামে আসতো না। একমাত্র আমি আসতাম। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা শিবিরের টিচার ছিল তারাও আসতো না। একজনও আসতো না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতপন্থী হওয়ার কারণে যারা ভিসি হয়েছেন তারাও একজন আসতেন না, প্রত্যেকের নাম জানি।

 

আসিফ নজরুল বলেন, সর্বশেষ ঘটনা। রোজার মধ্যে কোরআন শরীফ পড়ানোর প্রতিবাদ করায় কতগুলো ছাত্রকে টেনে নিয়ে পিটালো ছাত্রলীগ। আমি একমাত্র শিক্ষক তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

নিজের লেখা উপন্যাসটি রচনার প্রেক্ষাপট ও প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরতে গিয়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘গত ১৫ বছরে আমরা যে নারকীয় শাসন সহ্য করেছি, এটার পিছনে আমাদের 'কালেক্টিভ' কাপুরুষতা ছিল। জানিনা, আমরা কি পাপ করেছিলাম, যে দেশে শেখ হাসিনার মতো একটা শাসক পেয়েছিলাম। তিনি আমাদের সমস্ত সামাজিক সম্পর্ক নস্ট করে দিয়েছিলেন। ট্যাগের রাজনীতি দিয়ে মানুষকে ভিক্টিমাইজ করার আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে আমরা ঘৃণা করতাম। সেটা আমরা এখনো করে চলেছি।’

তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সন্দেহ করে নয়, বরং নিশ্চিতভাবে জেনে বুঝেই অনেক ছাত্রকে মিথ্যাভাবে শিবির ট্যাগ দেওয়া হতো। তিনি বলেন, তারা জানতো এ ছেলেটা শিবির না, ছাত্রদল না; তা সত্ত্বেও তার ল্যাপটপটা নেওয়ার জন্য, বিনোদন করার জন্য, নিজেকে আরও বড় লিডার বানানোর জন্য বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন করা হতো। গত ১৫ বছরের এই সমস্ত ব্যাধি থেকে আমরা এখনো মুক্ত হতে পারিনি। শেখ হাসিনার সরকারের দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে আমরা জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে মুক্তি পেয়েছি।

আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা গত সরকারের যে নিষ্ঠুরতা, নারকীয়তা, অনাচার, ট্যাগের রাজনীতি, অশ্লীলতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি, সেগুলো থেকে আমাদের অনেক ভালো হতে হবে। না হলে এতো ছাত্র-তরুণ মারা গেল, এতো মানুষের অঙ্গ হানি হলো, তাদের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা হবে।

আসিফ নজরুল বলেন, বিগত সরকারের আমলে অলিখিত নিয়ম হয়েছিল বাংলাদেশে - তিনটা বিষয়ে কথা বলা যাবেনা। এর একটা হলো শেখ হাসিনা সম্পর্কে। দ্বিতীয়টা হলো ভারত সম্পর্কে। আসিফ নজরুল বলেন, সর্বশেষ ঘটনা। রোজার মধ্যে কোরআন শরীফ পড়ানোর প্রতিবাদ করায় কতগুলো ছাত্রকে টেনে নিয়ে পিটালো ছাত্রলীগ। আমি একমাত্র শিক্ষক তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

এফএ কাপে সিটির গোল উৎসব

এফএ কাপে সিটির গোল উৎসব

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার