পঞ্চদশ সংশোধনীর আংশিক অবৈধ ঘোষণায় নেটিজেনদের উচ্ছ্বাস
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৬ পিএম | আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৬ পিএম
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু অংশ অবৈধ ঘোষণা করে যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বহুল আকাঙিক্ষত এই রায়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন নেটিজেনরা। ঐতিহাসিক এই রায়ে জন-আকাঙক্ষার প্রতিফলন ঘটায় প্রধান বিচারপতি সহ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট প্যানেলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে উচ্চ আদালত বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছিল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের সংশোধনী বাতিলের পাশাপাশি ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান বাতিল করাকে বাতিল করা হয়েছে। ফলে সংবিধানের প্রস্তাবনা ও কিছু অনুচ্ছেদ সংশোধনে আজকে রায়ে গণভোটের বিধান ফিরে আসছে।
সচেতন মহল মনে করেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে দেশের দীর্ঘদিনের নির্বাচনী অচলাবস্থা দূরীকরণের পাশাপাশি জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে। আবারও মানুষের আস্থার জায়গায় ফিরেছে দেশের বিচার ব্যবস্থা। পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে রক্তচোষা হাসিনা দলীয় সরকারের অধীনে তিন-তিন বার একতরফা, রাতেরভোট ও ডামি নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করে। ফলে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সংশ্লিষ্ট অংশ বাতিল করায় উল্লিখিত তিনটি নির্বাচন বাতিল ও ক্ষমতালোভী খুনি হাসিনাকে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে দেশে এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
নেটিজেনরা বলছেন, হায়কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানায়। তবে আরো ভাল হবে এটা আর যেন কোন সরকার পরিবর্তন না করতে পারে এই রুল জারি করলে।বাংলাদেশ মানুষ একটু শান্তিতে থাকতো, খুব ভালো সিদ্ধান্ত। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এটা খুব সহায়ক হবে। সংশোধনী কেবল বাকিল নয় এই রায়ের আলোকে বিগত পঞ্চদশ সংশোধনীর আলোকে যা কিছু করা হয়েছে তা অবশ্যই বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
ফেসবুকে রেজাউল করিম লিখেছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা উপযুক্ত। এই একটি ব্যবস্থা না থাকার কারণে সর্বশেষ ১৭টি বছর শুধুমাত্র একটি দলের কাছে বাংলাদেশের জনগণ আবদ্ধ ছিল। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে যত সিদ্ধান্ত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি সঠিক সিদ্ধান্ত এটি। স্বৈরাচার ক্ষমতালোভিরা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য সেই আইনটি বাতিল করেছিল।
মেহেদী হাসান লিখেছেন, বহুল কাঙ্ক্ষিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরেছে। বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার বিকল্প নেই।জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সংষ্কার প্রয়োজন।উপজেলা, ইউপি ও অন্যান্য নির্বাচনে রাজনৈতিক দলীয় প্রতীক পদ্ধতি বাতিল হওয়া উচিত। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন মূলত ইলেকশন হয় না হয় সিলেকশন। ইলেকশনের নামে নাটক মঞ্চস্থ করে ক্ষমতাসীন সরকারের মনোনীত প্রতিনিধিকে সিলেকশন করা হয়।
আতিক মামুন লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সীমাহীন লুটপাট, অর্থপাচার ও দুর্নীতি করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে পালিয়ে গেছে। এমন এক সঙ্কটমুহূর্তে ড. ইউনূসের মতো একজন বিশ্বসেরা অর্থনীতিবিদ ছাত্র-জনতার অনুরোধে দেশের হাল ধরেছেন- এটা আমাদের সৌভাগ্য। তার সুদক্ষ হাত ধরে দেশ সঙ্কট কাটিয়ে এগিয়ে চলেছে। আমরা সাধারণ নাগরিক তাকে নিয়ে খুবই আশাবাদী।
আল আমিন অর্নোব লিখেছেন, ভালো সিদ্ধান্ত! দেশে বিগত ১৬ বছরের যে স্বৈরতন্ত্র ও গণতন্ত্রহীনতা - তার মাস্টারপ্ল্যান ও গোড়াপত্তন হয়েছিলো সংবিধানের এই কুখ্যাত সংশোধনীর মাধ্যমে! বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ভালো নির্বাচনের জন্য "নির্বাচন কালীন তত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা"র বিকল্প নেই! হাইকোর্ট অত্যন্ত সাহসী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে।
বর্তমান প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন পিলখানা হত্যাকাণ্ডসহ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সকল গুমখুন অপকর্মের বিচার হবে বলে আশা রাখি। কারণ পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন আওয়ামী লীগের বিচার করবে কিনা তা নিয়ে জনগণের মাঝে সন্দেহ আছে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়, সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়।
এই সংশোধনীতে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধানও যুক্ত করা হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান থাকলেও ওই সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়টি সংযোজন করা হয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ব্রাইটনের বিপক্ষেও বিপর্যস্ত ইউনাইটেড
‘ন্যায়বিচারকে হত্যা’ করা হয়েছে: পিটিআই
নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের
রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছে অনেক আফ্রিকান সেনা
পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি
বাংলাদেশি কর্মী নিতে প্রস্তুত রাশিয়া: রাষ্ট্রদূত
রাজনৈতিক দলগুলো বেশি কিছু সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন: প্রেস সচিব
এবার ওলমোর ইনজুরি দুঃসংবাদ বার্সার
কুড়িগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ইমন ও আলামিন
এসএমই ফাউন্ডেশনের নতুন চেয়ারপার্সন মো. মুশফিকুর রহমান
বিয়ের ওপর কর বাতিলের দাবি
শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে আ.লীগ : মির্জা ফখরুল
নামাজের প্রথম কাতারে জামাত পড়াবস্থায় অজু ভেঙ্গে যাওয়া প্রসঙ্গে।
কয়েক মিনিটে বাংলাদেশ দখল করে নিতে পারে ভারত: শুভেন্দু অধিকারী
নরসিংদীতে নিখোঁজের ৫ দিন পর নদীতে পাওয়া গেল স্কুল ছাত্রের লাশ
বিএনপি : দেশবাদ যার রাজনীতির মূল কথা
পাহাড়ি উপজাতিরা আদিবাসী নয়
সংস্কার প্রতিবেদন : জাতির নতুন অধ্যায়ে অভিযাত্রা
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিনিয়োগে জোর দিতে হবে
ভারতে ৫ বছর সাজাভোগ করে দেশে ফিরলেন স্বামী-স্ত্রী