মিছিল-সমাবেশে গুলি নিয়ে সাত দফা নির্দেশনা হাইকোর্টের

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০২ এএম

গত বছরের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে থাকা ছয় ছাত্র সমন্বয়কের মুক্তির দাবিতে এবং মিছিল, সমাবেশ ও জনসভায় তাজা গুলির ব্যবহার বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছিল। তার রায়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি সাত দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেখানে বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ মিছিল, সমাবেশ ও জনসভায় অংশগ্রহণের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।

 

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ৪ আগস্ট এ রায় দেন। সম্প্রতি ওই রায়ের অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে।

 

রায়ে বলা হয়েছে, এ রিট আবেদনে জীবন ও স্বাধীনতার অধিকারের বিষয়টি জড়িত, যা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সে কারণে রিট আবেদনটি গ্রহণযোগ্য (মেইনটেনেবল) হতে পারে। আমাদের দৃষ্টিতে ও পূর্বোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এবং রিটকারীদের আইনজীবী কর্তৃক দাখিল করা নির্দেশিকা অনুসরণ করা যেতে পারে। তাই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিম্নলিখিত নির্দেশনা অনুসরণ করার চেষ্টা করবে। সেগুলো হলো–

 

১. বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ মিছিল, সমাবেশ ও জনসভায় অংশগ্রহণের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।

 

২. মানুষের জীবন সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানুষের জীবন ও জীবনের মর্যাদা সমুন্নত রাখাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে।

 

৩. আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যখন কঠোরভাবে প্রয়োজন শুধু তখনই প্রয়োজনীয় পরিমাণে বল প্রয়োগ করতে পারে।

 

৪. দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো মানুষকে সম্মান করবে, মানুষের মর্যাদা রক্ষা করবে এবং সকল ব্যক্তির মানবাধিকার সমুন্নত ও বজায় রাখবে।

 

৫. বৈষম্যহীন : শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা প্রত্যেক নাগরিক সমানভাবে উপভোগ করবে এবং কর্তৃপক্ষের কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা সংস্থার বিরুদ্ধে কোনো কারণে বৈষম্য করা উচিত নয়।

 

৬. সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে (আইন প্রয়োগকারী সংস্থা) অবশ্যই তাদের আইনগত বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে এবং তা পালনে ব্যর্থতার জন্য তাদের পদ্ধতিগত বা আইনগতভাবে দায়বদ্ধ হতে হবে।

 

৭. একটি সাধারণ সমাবেশ বা মিছিল যখন বেআইনি সমাবেশে পরিণত হয় তখন পুলিশ কী করবে– পুলিশ বেআইনি সমাবেশ, দাঙ্গা ও জনস্বাস্থ্যের বিরুদ্ধে অন্যান্য অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ, দণ্ডবিধি এবং প্রচলিত আইনের প্রয়োগ চালিয়ে যাবে। এ পরিস্থিতিতে পুলিশ সংবিধানের প্রাসঙ্গিক অনুচ্ছেদের পাশাপাশি প্রচলিত আইন অনুসরণ করবে। যা নিম্নরূপ:

(ক) সংবিধানের ৩২/৩৩(১)/৩৬/৩৭/৩৮ অনুচ্ছেদ।

(খ) ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১২৭-১৩২।

(গ) পুলিশ রেগুলেশন (পিআরবি) এর ১৫৩, ১৫৪, ১৫৫, ১৫৬ এবং ১৫৭ ধারা এবং

(ঘ) দণ্ডবিধির ৯৬-১০৬ ধারা।

 

রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট আরও উল্লেখ করেন, কেউ আইন লঙ্ঘন করলে পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ব্যবহারের পর তাজা গুলি ব্যবহার করতে পারে। যদি কোনো আইন লঙ্ঘন না হয় বা কোন দাঙ্গা না হয়, তাহলে কোনো তাজা বুলেট ব্যবহার করা যাবে না।

 

তাই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে, আইনের সব দিক এবং নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ভিন্নমত ও গণতন্ত্র যেন হাতে-কলমে চলে এবং আইনের শাসন যেন অবশ্যই প্রাধান্য পায় সেদিকে খেয়াল রেখে পুলিশের কাজ করা অত্যাবশ্যক।

 

এটা বলা যথেষ্ট যে, ছয় জন সমন্বয়ককে তাদের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল এবং কোনো আইনগত কর্তৃত্ব ছাড়াই তাদের অবৈধ হেফাজতে রাখা হয়েছিল। তবে ইতোমধ্যে ছয় সমন্বয়ককে অবৈধ হেফাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যেহেতু রিট পিটিশনের প্রার্থনার দ্বিতীয় অংশ এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তবে এ আদালতের অভিমত যে, এ বিষয়ে আর কোনো আদেশের প্রয়োজন নেই।

 

তবে উপরে বর্ণিত বিষয়টি প্রাসঙ্গিক কারণ, অ্যাটর্নি জেনারেলের দাখিল করা বিষয়বস্তু (আইন ও বিধি) বিবেচনা করে এবং হাইকোর্টের রুলস অনুযায়ী এ আবেদনটি দায়ের না করায় তা খারিজ করা হলো।

 

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, তবারক হোসেন, জেড আই খান পান্না, ব্যারিস্টার অনীক আর হক, মো. ওমর ফারুক, আইনজীবী মানজুর-আল-মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, শেখ মোহাম্মম মোরশেদ, মেহেদী হাসান চৌধুরী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সেলিম আজাদ, আনিস-উল মাওয়া ও নাজমা আফরিন। এ ছাড়া ওই রিটের শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসূফ হোসেন হুমায়ুন, নুরুল ইসলাম সুজন, আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া, শাহ মন্জুরুল হক, মোতাহার হোসেন সাজু, মো. শফিকুল ইসলাম ভূইয়া।

 

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারীদের ওপর তাজা গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ২৯ জুলাই হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটে ‘কথিত আটক’ ছয় সমন্বয়ককে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশনাও চাওয়া হয়।

 

সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী মানজুর-আল-মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা আবেদনকারী হয়ে ওই রিটটি দায়ের করেন।

 

রিটে আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়। ওই রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়।

 

এরপর কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে গত বছরের ৪ আগস্ট রিট আবেদনটি পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে প্রিন্স
স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে এ বছর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে গুরুত্ব পাবে কারখানা স্থানান্তর: প্রেস সচিব
সংস্কার বিষয়ে এখন পর্যন্ত ১১টি দল মতামত দিয়েছে
আরও
X

আরও পড়ুন

স্ত্রী-সন্তানসহ পাপন ও হানিফের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

স্ত্রী-সন্তানসহ পাপন ও হানিফের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মেঘনা ব্যাংকের নতুন চেয়ারপারসন উজমা চৌধুরী

মেঘনা ব্যাংকের নতুন চেয়ারপারসন উজমা চৌধুরী

হাসিনার আস্থাভাজন সচিব ও আমলাদের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ

হাসিনার আস্থাভাজন সচিব ও আমলাদের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ

জুলাই বিপ্লবে শহীদ এবং আহত ৮৫০ পরিবারের পাশে দাঁড়াবে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন

জুলাই বিপ্লবে শহীদ এবং আহত ৮৫০ পরিবারের পাশে দাঁড়াবে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন

জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশের শঙ্কা উত্তরণে ফ্যাসিস্টদের অপতৎপরতা রুখতে হবে

জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশের শঙ্কা উত্তরণে ফ্যাসিস্টদের অপতৎপরতা রুখতে হবে

কৃষি বিপ্লব ঘটিয়ে দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে বিএনপি -কৃষকদলের আলোচনা সভায় বক্তারা

কৃষি বিপ্লব ঘটিয়ে দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে বিএনপি -কৃষকদলের আলোচনা সভায় বক্তারা

বেপরোয়া গাড়ি চাপায় নারীর মৃত্যু

বেপরোয়া গাড়ি চাপায় নারীর মৃত্যু

অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে প্রিন্স

অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে প্রিন্স

কলাপাড়ায় স্কুলছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু

কলাপাড়ায় স্কুলছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু

রাজবাড়ীতে নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদ

রাজবাড়ীতে নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদ

মেডিক্যাল কলেজ বন্ধের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ

মেডিক্যাল কলেজ বন্ধের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ

জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক জুনায়েদের নেতৃত্বে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল

জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক জুনায়েদের নেতৃত্বে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল

দখলে-দূষণে অস্তিত্ব সঙ্কটে কুমার নদ

দখলে-দূষণে অস্তিত্ব সঙ্কটে কুমার নদ

ধামরাইয়ে বেপরোয়া মাটি ব্যবসায়ীরা

ধামরাইয়ে বেপরোয়া মাটি ব্যবসায়ীরা

চিলমারী-রৌমারী রুটে ৯০ দিন ফেরি বন্ধ

চিলমারী-রৌমারী রুটে ৯০ দিন ফেরি বন্ধ

সন্ধ্যা হলেই ঘুটঘুটে অন্ধকার

সন্ধ্যা হলেই ঘুটঘুটে অন্ধকার

স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব

স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব

বাংলাদেশ এখন সবচেয়ে বড় ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে'  - শামা ওবায়েদ

বাংলাদেশ এখন সবচেয়ে বড় ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে' - শামা ওবায়েদ

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে এ বছর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে এ বছর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে গুরুত্ব পাবে কারখানা স্থানান্তর: প্রেস সচিব

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে গুরুত্ব পাবে কারখানা স্থানান্তর: প্রেস সচিব