বর্বর ইসরায়েলের গণহত্যা কিছুদিনের জন্য থেমে ছিল। যুদ্ধবিরতি চুক্তিভঙ্গ করে গাজায় ফের ইসরাইল নির্মম হত্যাযজ্ঞে মেতেছে। রোযাদার নিরপরাধ মুসলিমদের নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় গোটা দুনিয়ার শান্তিপ্রিয় মানুষ মর্মাহত।

গত সোমবার রাতের ভয়াবহ বিমান হামলায় ফিলিস্তিনিরা আবারও নৃশংসতার শিকার হলো। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চার শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেক শিশু ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলার অনুমতি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। হামলার পরপরই এলাকাবাসীকে দ্রুত এলাকা ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়, যা মূলত জোরপূর্বক উচ্ছেদ। এতে নতুন করে স্থল অভিযান শুরুর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গণহত্যাকারী ইসরায়েলের দাবি, হামাস যুদ্ধবিরতির শর্ত মানেনি; যদিও ইসরায়েল নিজেই বারবার সেই শর্ত লঙ্ঘন করেছে।

গাজার মানুষ ৫২৯ দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ওপর চালানো ভয়াবহ নৃশংসতার ছবি ও ভিডিও শেয়ার করছেন এই আশায় যে বিশ্ব একদিন জেগে উঠবে এবং এই গণহত্যা বন্ধ হবে। এমনই একটি লোমহর্ষক দৃশ্য ভাইরাল সামাজিক মাধ্যম।

পোস্টে দেখা যায়, রঙিন পোশাক পরা একটি শিশুর নিথর দেহ পড়ে আছে; এক বাবা শেষবারের মতো মেয়ের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন; সাদা কাপড়ে মোড়ানো পুরো পরিবার পড়ে আছে। এ ধরনের অগণিত ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। হতভাগ্য এসব মানুষের নাম কোনো সরকারি নথিতে থাকবে না। অথচ এর আগে কখনো কোনো যুদ্ধাপরাধ এত স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়নি।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইসরায়েল কীভাবে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের হত্যা করেছে, বন্দীদের ওপর ভয়াবহ যৌন নির্যাতন চালিয়েছে—যেখানে সবজি থেকে শুরু করে ঝাড়ুর কাঠি পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে। এমন নৃশংসতার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। একের পর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইসরায়েল কীভাবে গাজার ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ ও গির্জা ধ্বংস করেছে। পুরো গাজার ৮৩ শতাংশ গাছপালা, ৮০ শতাংশের বেশি কৃষিজমি ও ৯৫ শতাংশ গবাদিপশু নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে ৮০ শতাংশের বেশি পানি ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে, যাতে গাজায় মানুষের জীবনযাপন অসম্ভব হয়ে পড়ে। ইসরায়েল সুপরিকল্পিতভাবে গাজাকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে। এ কারণেই অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইসরায়েল এখনো গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইসরাইলের গণহত্যায় মর্মাহত গোটা দুনিয়া। ক্ষোভে তোলপাড় চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। হতবাক করা ইসরাইলি এমন বর্বরতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর যেন উপযুক্ত ভাষাই খুঁজে পাচ্ছেন না নেটাগরিকরা‌।‌ গাজায় সেই কান্না বিজড়িত কণ্ঠে আযান দেওয়ার হৃদয়বিদারক দৃশ্য কাঁদিয়েছে গোটা বিশ্বকে। সবার একটাই প্রশ্ন- ইসরাইলি নৃশংসতার শেষ কোথায়? আবার কেউ কেউ লিখেছেন, চুক্তিভঙ্গের পর মক্কা বিজয় হয়েছিল, গাজাও বিজয়ী হবে ইনশাআল্লাহ।

ইহুদিদের ধ্বংস নিয়ে ভবিষ্যৎ বাণী মহান আল্লাহ ইহুদিদের মাঝে বহু নবী-রসুল পাঠিয়েছেন। তাদেরকে আসমানি কিতাবও দিয়েছেন। তাই তাদের বলা হয় আহলে কিতাব। মহান আল্লাহর কুদরত, নিয়ামত ও শাস্তি সরাসরি দেখার পরও তারা শিক্ষা গ্রহণ করেনি। বরং নিজেদের অন্যায়-অনাচার ও দুশ্চরিত্রের ফলে মহান আল্লাহর রহমত থেকে ছিটকে পড়েছে। কুফর, শিরক, অন্যায়-অনাচারে তারা সকল সীমা অতিক্রম করেছে। বহু নবীকে তারা হত্যা করেছে। কিয়ামতের আগে ইহুদিদের বিরুদ্ধে মুসলিমরা যুদ্ধ করবে।

হাদিসে এসেছে। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না তোমরা ইয়াহূদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এমনকি কোন ইয়াহূদী পাথরের আড়ালে লুকিয়ে থাকলে, পাথর বলবে, ‘হে মুসলিম, আমার পেছনে ইয়াহূদী আছে, তাকে হত্যা কর।’ (মুসলিম ৫২/১৮ হাঃ ২৯২২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭২২)

পবিত্র কোরআনের প্রথম সুরা ফাতেহা। আমরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে তেলাওয়াত করি। এখানে الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ ‘যাদের প্রতি গজব নাজিল হয়েছে’ বলে যে জাতিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, তারা হলো ইহুদি জাতি। এদের থেকেই আমরা প্রতি নামাজের প্রতি রাকাতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। ইহুদিরা হচ্ছে সত্য জানার পরও হঠকারিতা ও বিদ্বেষবশত তা গ্রহণ করেনি। উপর্যুপরি বিদ্বেষ ও হঠকারিতার কারণে তাদের ওপর আল্লাহর গজব নাজিল হয়েছে।

ফেসবুক ব্যবহারকারী শাহিন হোসাইন লিখেছেন, গাজার শিশুর কান্না অভিশাপ হয়ে শুধু নেতানিয়াহুর উপর নয়; বরং নিস্ক্রিয় পুরো মুসলিম উম্মাহর উপর পড়বে। মেরুদণ্ড ওয়ালা কোন মুসলিম শাসক আজ দুনিয়াতে বেচে নাই! শুধু দুয়া করে কাজ হলে আল্লাহর নবী সাঃ যুদ্ধ করতেন না।