ঢাকা   শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৬ পৌষ ১৪৩১

রাজপথে নামবে জাতীয় পার্টি!

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:০০ পিএম | আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম

জনশ্রোত সরকারের বিপক্ষে চলে যাওয়ায় রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় পার্টি। পাতানো নির্বাচনের বদলে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি অসহনীয় দ্রব্যমূল্যসহ অন্যান্য ইস্যু থাকতে পারে। তবে এখনই কোন জোটে ঝুঁকছে না জাতীয় পার্টি। রাজনৈতিক গতিবিধির উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝে রাজপথে নামার পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে নীতিনির্ধারণী ফোরাম। ইতোমধ্যেই দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধানসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে আলোচান হয়েছে এবং জাপা থেকে জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের কথা জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট জাতীয় পার্টির বনানী কার‌্যালয়ে পার্টির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামে রাজপথে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যগণ অংশ নেন। অন্যান্য সময়ে এই ধরণের বৈঠকে পার্টির দপ্তরের লোকজনকে রাখা হতো বক্তব্য নোট করার জন্য। এবারই প্রথম রূদ্ধদ্বার বৈঠক করেন জিএম কাদের।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, রাজপথে কর্মসূচি নিয়ে নামার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও দাবির বিষয়ে চূড়ান্ত হয় নি বৈঠকে। কারণ বিএনপি যে ভাবে মাঠ দখল করেছে, তাতে জাপা ঘরে বসে থাকলে একুলওকুল দুকূল হারাবে। জনগণের সঙ্গে জাতীয় পার্টি থাকতে চায়। আরেকজননেতা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ঘোষণায় সরকারের মেরুদ- ভেঙ্গে গেছে। মানুষ এখন বিএনপির পিছনে ছুটছে। আওয়ামী লীগ নেতারা যে হম্বিতত্বি করছে তা কর্মীদের চাঙ্গা রাখার জন্য। তারা জানেন তাদের সময় ফুরিয়ে আসছে। এ সময় জাতীয় পার্টিকে রাজপথে নামিয়ে মানুষের ভোটেরঅধিকার আদায় করতে হবে, জনগণের পাশে থাকতে হবে।

জানা গেছে, গত ১ আগস্ট ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির বিশেষ সভায় সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামার ইঙ্গিত দিয়েছেন জিএম কাদের। ওই সভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, বিশ্ববাসী বর্তমান পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে, জাপাকে নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদের ব্যাপারে সজাগ আছে। এমন বাস্তবতায় আমরা ঘরে বসে থাকলে দলের রাজনৈতিক বিপর্যস্ত হবে। জনগণের কাছে এটি মুক্তির লড়াই, জনগণ এই অবস্থা থেকে মুক্তি চায়। যারা জনগণের মুক্তির জন্য লড়াই করবে, জনগণ তাদের পক্ষে থাকবে। আমাদের রাজনীতি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। সত্যিকারের নির্বাচনের জন্য যে আন্দোলন তাতে সমর্থন দিতে হলে মাঠেই দিতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা যে বিপর্যস্ত এ নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। নির্বাচন ব্যবস্থা সঠিক করতে আমাদের কাজ করা উচিত।

এর আগে জিএম কাদের বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনের আগেই আসন ভাগাভাগি করে তাহলে নির্বাচনে প্রয়োজন কি? আমরা আর পাতানো নির্বাচনে যাব না। বাতাসে শোনা যায়, জামায়াতকে ৫০টি আসন দেবে, জাতীয় পার্টিকে বলেছে আপনার সংগঠন আরো শক্তিশালী করুন বেশি আসন পাবেন। সে ধরনের নির্বাচনে আমরা যাব না। সুত্রের দাবি বেগম রওশন এরশাদের অনুসারিরা এখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচনের পক্ষ্যে অবস্থান নিয়েছে। কয়েকদিন আগে রওশন এরশাদ বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, জাতীয় পার্টি সংবিধানের অধীনেই নির্বাচন চায়।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ’৯০ এ এরশাদের পতনের পর ১৯৯৬ সালে জামায়াত, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। আবার ১৯৯৯ সালে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী ঐক্যজোট সে সময়ের আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে চার দলীয় জোটের ব্যানারে। ওয়ান ইলেভেনের আগে রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন অংশ বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন দিয়ে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সে সময় এইচ এম এরশাদ বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন জোটে ছিলেন। পরে অবশ্য ফখরুদ্দিন-মঈন ইউ আহমদের নেতৃত্বে ওয়ান ইলেভেনের সরকার ক্ষমতায় এলে ২২ জানুয়ারির ওই পাতানো নির্বাচন হয়নি। এর মধ্যে ২০১৪ সালে এরশাদ পাতানো নির্বাচনে অংশ নিতে না চাইলেও রওশন এরশাদ আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচনে অংশ নেন। সে সময় এরশাদকে বাধ্যতামূলকভাবে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। ২০১৮ সালে অসুস্থ এরশাদকে হাসপাতালে রেখে রওশন এরশাদ আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করেছিল।

উল্লেখ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ায় জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের ওপর বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে আদালত সে বিধি নিষেধ তুলে নেয়।


বিভাগ : রাজনীতি


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ম্যাচের আগে হঠাৎ বরখাস্ত এভারটন কোচ

ম্যাচের আগে হঠাৎ বরখাস্ত এভারটন কোচ

চীনের অবিশ্বাস্য সামরিক উত্থানে টনক নড়েছে ভারতের

চীনের অবিশ্বাস্য সামরিক উত্থানে টনক নড়েছে ভারতের

পারমাণবিক বোমা সজ্জিত নতুন যুদ্ধজাহাজে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন কিম

পারমাণবিক বোমা সজ্জিত নতুন যুদ্ধজাহাজে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন কিম

ধর্ষণের প্রতিশোধে বাবাকে হত্যা, গ্রেফতার ২ কিশোরী

ধর্ষণের প্রতিশোধে বাবাকে হত্যা, গ্রেফতার ২ কিশোরী

আমাকে ধর্ষণ করার ভিডিও দেখে স্বামী

আমাকে ধর্ষণ করার ভিডিও দেখে স্বামী

হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা নির্ধারণে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই

হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা নির্ধারণে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই

ফিলিপাইনে ৪০০ বিদেশি অনলাইন প্রতারক গ্রেফতার

ফিলিপাইনে ৪০০ বিদেশি অনলাইন প্রতারক গ্রেফতার

ইসরাইলি ৪শ’ সেনা নিহত গাজায় স্থল অভিযানে

ইসরাইলি ৪শ’ সেনা নিহত গাজায় স্থল অভিযানে

কুষ্টিয়ায় কৃষি যন্ত্র বিতরণে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক

কুষ্টিয়ায় কৃষি যন্ত্র বিতরণে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক

জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা করতে হবে

জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা করতে হবে

শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজ ড্র করল বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজ ড্র করল বাংলাদেশ

ভোলায় শীতার্তদের মাঝে জেলা প্রশাসকের কম্বল বিতরণ

ভোলায় শীতার্তদের মাঝে জেলা প্রশাসকের কম্বল বিতরণ

গাজীপুরে বিএনপি নেতার উপর  হামলা

গাজীপুরে বিএনপি নেতার উপর হামলা

চাঁদপুরে হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা জসিম গ্রেপ্তার

চাঁদপুরে হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা জসিম গ্রেপ্তার

বিভিন্ন বিভাগ ছোট হচ্ছে পাকিস্তানে

বিভিন্ন বিভাগ ছোট হচ্ছে পাকিস্তানে

আশুলিয়ায় চাঁদার দাবিতে প্রকাশ্যে দিবালোকে দোকানীকে গুলি

আশুলিয়ায় চাঁদার দাবিতে প্রকাশ্যে দিবালোকে দোকানীকে গুলি

গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি নিয়ে ট্রাম্পকে সতর্ক করল জার্মানি-ফ্রান্স

গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি নিয়ে ট্রাম্পকে সতর্ক করল জার্মানি-ফ্রান্স

৪ ভূখ-কে অন্তর্ভুক্ত করে ইসরাইলি মানচিত্র প্রকাশ

৪ ভূখ-কে অন্তর্ভুক্ত করে ইসরাইলি মানচিত্র প্রকাশ

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

চলতি বছর বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমার পূর্বাভাস

চলতি বছর বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমার পূর্বাভাস