কুরবানী যাদের উপর ওয়াজিব
২১ জুন ২০২৩, ০৮:০১ পিএম | আপডেট: ২২ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম

ইসলামের বিধান মৌলিকভাবে তিন ধরনের। এক. শুধু শারিরীক ইবাদত। যেগুলোর সাথে অর্থের কোন সম্পর্ক নেই। যেমন নামায, রোযা। এজাতীয় ইবাদত পালনের ক্ষেত্রে সবাই সমান। তবে মাজুর-অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য কিছু বিধান ভিন্ন রয়েছে। দুই. এমন ইবাদত যেগুলোর সম্পর্ক শুধু অর্থের সাথে। যেমন- যাকাত,কুরবানী। তিন. এমন ইবাদত যেগুলোর সাথে শারীরিক শ্রম এবং অর্থ উভয়টার সম্পর্ক রয়েছে। যেমন- হজ্ব। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রকারের ইবাদত পালন করা সবার উপর আবশ্যক নয়; বরং নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পাওয়া গেলে তা পালন করা আবশ্যক হয়। কুরবানী যেহেতু শুধু আর্থিক এবাদত তাই এটাও সবার উপর ওয়াজিব নয়। বরং শুধুমাত্র সামর্থবান ব্যক্তিদের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। হাদিস শরীফে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
‘সামর্থ্য থাকা স্বত্তেও যে কুরবানী করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয় । (ইবনু মাজাহ হাদিস নং- ৩১২৩,মুসনাদে আহমদ-৮২৫৬) এ হাদিস দ্বারা বুঝা যায় কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য সামর্থ্য থাকা শর্ত।
অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ জিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ জিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু এবং ঋণ ব্যতিত নিসাব পরিমাণ অর্থের মালিক হবে তার উপর কুরবানি করা ওয়াজিব। (রদ্দুল মুহতার- ৯/৪৫৪-৫৭ যাকারিয়া)
সুতরাং গরীব, মুসাফির এর উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। তবে নেসাবের মালিক নয় এমন গরীব ব্যক্তি যদি কুরবানির নিয়তে পশু কিনে তাহলে জন্তুটি কুরবানি করা তার জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়। (ফাতওয়ায়ে শামী- ৯/৪৬৫ যাকারিয়া।)
এছাড়া কোন ব্যাক্তি চাই সে ধনী হোক অথবা গরীব যদি কুরবানির মানত করে তাহলে আইয়্যামে নহরে তা আদায় করা আবশ্যক। (বাদায়েউস সানায়ে-৪/১৯২ যাকারিয়া)
কমার্শিয়াল লোন কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় নয়; বরং ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বা জীবিকা নির্বাহের জন্য যে লোন নেয়া হয় একমাত্র এসব লোন-ই নেসাবের ক্ষেত্রে বিয়োগযোগ্য। তাই ব্যবসায়িক ঋণের কারণে কারো থেকে কুরবানী রহিত হবে না। [ফিকহি মাকালাত-৩/১৫৬ যমযম বুক]
কুরবানীর নেসাব: কুরবানির নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে (৭.৫) সাড়ে সাত ভরি, রূপার ক্ষেত্রে (৫২.৫) সাড়ে বায়ান্ন ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হল সেগুলোর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। -(আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫)
কুরবানী ও যাকাতের নেসাবের মধ্যে পার্থক্য: অনেকে মনে করেন, কারো উপর যাকাত ফরয না হলে তার উপর কুরবানীও ওয়াজিব হয় না। তারা মনে করেন কুরবানী এবং যাকাতের নেসাব এক ও অভিন্ন। ফলে অনেকে কুরবানী ওয়াজিব হওয়া স্বত্তেও কুরবানী দেন না। তাদের এমন ধারণা সঠিক নয়। কেননা যাকাত ও কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। কুরবানীর নেসাবের পরিধি যাকাতের তুলনায় ব্যাাপক। মূলত কুরবানী এবং সদাকুতুল ফিতরের নেসাব এক। যাকাতের সাথে এর কিছু পার্থক্য রয়েছে। (হিন্দিয়া-৫/২৯২,তাতারখানিয়া-১৭/৪০৫)
যে ব্যক্তির মালিকানায় কুরবানীর দিনগুলোতে সাড়ে ৫২ তোলা রূপার মূল্য সমপরিমাণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো সম্পদ থাকবে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। এখানে অতিরিক্ত সম্পদ বলতে ব্যাপক অর্থে বুঝানো হইছে। অথ্যাৎ ফিকহী পরিভাষায় কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে সম্পদ টা বর্ধনশীল হওয়া শর্ত নয়। কিন্তু যাকাতের নেসাবের ক্ষেত্রে সম্পদ বর্ধনশীল হতে হয়। আর বর্ধনশীল সম্পদ হলো, স্বর্ণ,রূপা, নগদ টাকা-পয়সা এবং ব্যবসায়ী মাল। এছাড়া জায়গা-জমি, অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ইত্যাদি বর্ধনশীল নয়। তাই যাকাত শুধু টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা ও ব্যবসায়িক পণ্যের উপরই ফরয হয়। এছাড়া অন্য কোনো সম্পদের উপর যাকাত ফরয হয় না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/২৯২ যাকারিয়া, ফাতাওয়ায়ে শামী-৯/৪৫৩ যাকারিয়া)
পক্ষান্তরে কুরবানীর ক্ষেত্রে এগুলো না থাকলেও প্রয়োজন অতিরিক্ত জমি, বাড়ি বা অন্যকোনো আসবাবপত্র নেসাব পরিমাণ থাকলে কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যাবে। সদকাতুল ফিতরও এমন। (আল বিনায়া-৩/৪৮২ আশরাফিয়া, মাজমাউল আনহুর-১/২২৭ বায়রুত)
এছাড়া কুরবানী ও যাকতের নেসাবের মাঝে আরেকটি পার্থক্য হলো, কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে যাকাতের নেসাব পূর্ণ এক বছর থাকা জরুরী-(বাদাযয়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২)
সারকথা, কারো কাছে কুরবানীর দিনগুলোতে টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা ও ব্যবসায়িক পণ্য ছাড়াও সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য পরিমাণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে কোনো সম্পদ থাকলেই তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যায়। অথচ যাকাত শুধুমাত্র টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা ও ব্যবসায়িক পণ্য থাকলেই ফরয হয়। এই তিন প্রকার সম্পদ ছাড়া প্রয়োজনের অতিরিক্ত অন্য কোনো সম্পদের উপর যাকাত আবশ্যক হয় না। (-বাদায়েউস সানায়ে ৬/২৮০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯২) (চলবে)
লেখক: মুহাদ্দিস-জামিয়া ইমদাদিয়া আরাবিয়া শেখেরচর, নরসিংদ
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ভাইরাল ভিডিওতে চিতা পরিবারকে পানি খাওয়ানোর দৃশ্য, তদন্তে কুনো কর্তৃপক্ষ

ফুলপুরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় প্রতিরোধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা, ৪ মামলা

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের বৈঠক

কুয়াকাটায় খাল পরিষ্কার পরিছন্নতা কর্মসূচি উদ্বোধন

ড. ইউনূস নির্মোহভাবে কাজ করছেন, একের পর এক ম্যাজিক দেখাচ্ছেন : মান্না

মহেশপুর দুই কৃষকের ড্রাগন ও পেয়ারা বাগান কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

চাঁদপুরে যৌথ বাহিনী চেকপোস্টে ২৬৩ যানবাহন তল্লাশি, ১৮ চালকের জরিমানা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব ও গণহত্যার প্রতিবাদে মোংলায় ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

মাগুরায় মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রসূতির জীবন বাঁচাতে সেনা সদস্যের রক্তদান ও আজান

ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন

এসএসসি পরীক্ষা : কর্মকর্তাদের জন্য মাউশির কড়া নির্দেশনা

ঝিনাইদহ ফিলিস্তিনে গণহত্যা: ইসরাইলি পণ্য বয়কটের ডাক ছাত্রদলের

চীনা পণ্যে আরো ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের

গাজায় হামলার প্রতিবাদ মুখে কালো কাপড় বেঁধে জাবি ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি

খাল ও নদী ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণের দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

লক্ষ্মীপুরে গুইসাপ শিকারের দায়ে তিনজনের অর্থদণ্ড, গুইসাপ অবমুক্ত

বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় ইমাম গ্রেফতার

নববর্ষ উদযাপন হবে ব্যাপকভাবে, বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা বাতিল ও বহিষ্কারের ঝুঁকিতে ১শ’ ৫০ শিক্ষার্থী

বিক্ষোভের নামে সহিংসতা আইনের শাসনের অবমাননা: প্রেস উইং